Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মোটা জীবন কেমন জীবন!

শারীরিক কাঠামোর জন্য দুজনই বেশ আলোচিত শোবিজ মিডিয়ায়। তবে তাদের অভিনয় গুণও রয়েছে বেশ। তাই তো একের পর এক নাটক, টেলিফিল্মে তাদেরকে ভিন্ন সব চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। পাঠক, এই দুজন মানুষের মধ্যে একজনের নাম সুমন পাটওয়ারী আর অন্য জন্য আনন্দ খালেদ। সুমন পাটওয়ারীর ক্যারিয়ার অনেকদিনের। সেই তুলনায় আনন্দ খালেদের ক্যারিয়ার কয়েক বছরের মাত্র! তাতে কী! সুমন পাটওয়ারীর চেয়ে জনপ্রিয়তায় কোনো অংশে কম পিছিয়ে নেই আনন্দ। এমনকি নিজের শারীরিক এমন কাঠামো নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন তারা। বরং তারা মনে করেন এমন স্থূল কাঠামো দেখেই তাদের আজ এত জনপ্রিয়তা। দর্শক তাদেরকে গ্রহণ করেছেন বেশ সানন্দেই। শীতের এক সন্ধ্যায় আনন্দ আলোর কার্যালয়ে আসেন এই দুই তারকা। ছবি তোলা, আড্ডা দেয়া সবই হয় সেই সন্ধ্যায়। লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল।

আড্ডার শুরুতেই ওঠে আসে দু’জনের অভিনয় জীবনের শুরুর দিককার গালগপ্প দিয়ে। এমন শারীরিক কাঠামোর কারণে শুরুতে কেমন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় তা নিয়ে আলাপচারিতার প্রথমেই সুমন পাটওয়ারী বলেন, দেখুন, আমি আমার এমন শারীরিক কাঠামো নিয়ে মোটেও অসন্তুষ্ট নই। বরং আমি এটাকে বেশ উপভোগ করি। আমি আজ এমন বিধায় আনন্দ আলোও ডেকেছেন এই বিষয়ে কথা বলতে। আর আমি ছোটবেলা থেকেই এমন। আমার পরিবার থেকে কখনোই এটাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেনি। বরং আমার বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে মোটা বললেও আমি ক্ষিপ্ত হই নাই কোনোদিন। কারণ জানি আমি যে মোটা। এখন কথা হচ্ছে আমি কী কাজটা করছি এবং সেটাতে কতটা আনন্দ পাচ্ছি সেটা হলো বিষয়। আমি প্রথম আলোতে সাংবাদিকতা করেছি অনেকদিন। এত এজেন্সি থেকে শুরু করে নানান প্রতিষ্ঠানে আমি অনেক ধরনের কাজ করেছি। আর অভিনয়টা আমি করি নেহায়েত একটা ভালো লাগা থেকে। এটাকে আমি কখনোই পেশা হিসেবে নেইনি এবং নেয়ার ইচ্ছাও নেই। আমার ব্রেড এন্ড বাটার হচ্ছে আমার চাকরি। সেই চাকরি করার মাঝে সপ্তাহে যে দুইদিন ছুটি পাই তবেই অভিনয়টা করি। তবে এই অভিনয়টার বিষয় এমন নয় যে, আমাকে শুধু মোটা হিসেবেই উপস্থিত করা হয়েছে। প্রথম প্রথম আমাকে হয়তো কিছুটা ফানি এবং মজার ছলে বিভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপন করা হলেও এখন অনেক সিরিয়াস চরিত্রেও অভিনয় করি। একটি পরিবারের মধ্যে এমন স্থূল কাঠামোর মানুষ থাকতেই পারে এবং তার নানান ধরনের চরিত্রের যে ভিন্নতা তা হয়তো পরিচালকরা আমাকে দিয়ে পেয়ে থাকেন। ফলে আমাকে দিয়ে সেই চরিত্রটি প্লে করান। আর দর্শক গ্রহণ করেছে বলেই হয়তো কাজের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। তবে আমি শতভাগ আগে চাকরিটা করতে চাই তারপর হলো অভিনয় কিংবা অন্যান্য কাজ।

সুমন পাটওয়ারীর এমন দীর্ঘ বক্তব্য পাশের চেয়ারে বসে থাকা আনন্দ খালেদ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। অনেকটা গুরুর মতোই শ্রদ্ধা করে আনন্দ সুমন পাটয়ারীকে শ্রদ্ধা করেন। তাই তো আড্ডার শুরুতেই আনন্দ বলেন, আমি সুমন ভাইকে দেখেই এই অঙ্গনে আসি। কারণ অভিনয় করতে গেলে খুব সুশ্রী, স্মার্ট আর দেখতে হিরোর মতো হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং একদম বেখাপ্পা সাইজের হয়েও যে, চাইলে অনেক সুন্দর ও প্রাণবন্ত অভিনয় করা যায় এবং সেটা দর্শক খুব উপভোগ করেন সেটা আমি সুমন ভাইকে না দেখলে বুঝতামই না। তাই তো আমি অভিনয়ে আসার আগে একটা চাকরি করতাম। অভিনয়টাকে ভালোবাসি বলেই সেটা ছেড়ে দিয়ে তখন পুরোদমে অভিনয় করছি। শারীরিক এমন কাঠামোর জন্য নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা পেতে হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নে আনন্দ বলেন, আমি যখন ২০১২ সালে শোবিজে কাজ শুরু করি তখন কিন্তু আমার আইডল সুমন পাটওয়ারী ভাই অলরেডি তখন স্টার। আর এরও আগে শ্রদ্ধেয় তুষার খান এমন শারীরিক কাঠামো নিয়ে কাজ করে সুপার ডুপার স্টার। তাই আমার সাহসটা তাদেরকে দেখে অনেকাংশে হয়েছে। তবে হ্যাঁ কাজ শুরু করার পর নিজের জায়গাটা, নিজেকে বুঝানোর জন্য টাইমটা লেগেছে। আর দর্শক আমাদেরকে এমন শরীরের জন্য অন্যরকম একটা ভালো লাগা নিয়ে দেখে থাকেন বলে আমার বিশ্বাস। দুইজন জনপ্রিয় তারকার এমন কথোপকথনে আনন্দ আলোর স্টুডিও তখন বেশ সরব হয়ে ওঠে।

আড্ডার এই পর্যায়ে আলোচনা হয় দুজনের একসঙ্গে কাজ করা নিয়ে। দুজনই এক সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন। আড্ডা গল্পে দুজনের রয়েছে কাজের অনেক স্মৃতি। বেশকিছু নাটক, টেলিফিল্মে তারা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। শুটিংয়ের সময় এই দুজন একসঙ্গে থাকা মানে সেদিন সেটে বেশ মজা হওয়া। এই সুমন পাটওয়ারী বলেন, আমাদের দুজন নাটকে থাকা মানে সেদিন পুরো শুটিং স্পটে বেশ মজা হয় অন্যান্য কো আর্টিস্ট থেকে শুরু করে ইউনিটের সবাই খুব হাসি ঠাট্টায় শুটিং শেষ করি। আনন্দ বলেন, একই নাটক টেলিফিল্মে যখন সুমন ভাই থাকেন তখন দেখা যায় অ্যাক্টিং এ যাওয়ার আগে উনাকে কিছু জিনিস জিজ্ঞাসা করে নেই। কীভাবে শটটা দিলে ভালো হবে তাও ভাইয়া আমাকে বলে দেয়। মোটা হওয়া নিয়ে শুটিংয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে আনন্দ বলেন, আমি এটাকে সমস্যা বলতে চাই না। যেমন ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় একটা দৃশ্য ছিল পাহাড় থেকে আমাকে শুভ (আরেফিন শুভ) ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। সেই পাহাড়টা ছিল অনেক উঁচু একটা লাল পাহাড়। আমার উঠতে অনেক কষ্ট হয়েছিল। আমার উঠতে কষ্ট দেখে ইউনিট বলেছিল দৃশ্যটা বাদ দিতে। কিন্তু আমি বলেছিলামÑ না, আমি দৃশ্যটা করবোই। যেই কথা সেই কাজ হলো। আমাকে দুজন ধরে ধরে উপরে উঠালো এবং দৃশ্যটা ধারণ করা হলো। অবশেষে সিনেমায় সেই দৃশ্যটি সংযোগ হয়।

আনন্দের এই কথার সঙ্গে মিল রেখে সুমন পাটওয়ারী বলেন, আনন্দের এমন এনার্জি আছে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ওর এত এনার্জি দেখে আমি অভিভ‚ত। ও খুব সিরিয়াসলি কাজটা করছে। আমার ভালো লাগে এটা দেখে। একই সঙ্গে আমি ওকে ঘৃণাও করি। কারণ চাকরি ছেড়ে দেয়াটা ঠিক হয় নাই। চাকরিটা রেখে অভিনয় করতে পারতো। অভিনয়ের একটা টাইম ফ্রেম আছে। সেই টাইম ফ্রেম একটা সময় চলে যায়। তাই একজন অভিনেতার অবশ্যই সবকিছু চিন্তা ভাবনা রেখে এগিয়ে যাওয়া উচিত। যেমন আমি চাইলে পুরো মাসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয় করতে পারি। কিন্তু সেটা করি না। কারণ আমি বুঝি এই যে আমার ক্রেজ সেটা একটা সময় থাকবে না। এখন কিন্তু আমার মধ্যে হতাশা চলে আসবে। তাই সব বুঝে আমি অভিনয় এবং চাকরিটা করছি। বর্তমানে নিজেদের ব্যস্ততা নিয়ে শুরু হয় আলাপচারিতা। শুরুতে সুমন পাটওয়ারী বলেন, আমি শুক্র ও শনিবার কাজ করি। সপ্তাহে পাঁচদিন আমি অফিস করি। সেজন্য আমি সব সময় একটি মাত্র ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করি। এটা মিডিয়ার সবাই জানে, আমি যে একটি মাত্র ধারাবাহিকে এবং শুক্র ও শনিবার কাজ করায় একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে পারি। বর্তমানে সেই একটি মাত্র ধারাবাহিক হলো ‘চিরকুমার সংঘ’। আর অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে গাজী টেলিভিশনের ‘ক্রিকেট তক্ক’সহ কিছু ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাওয়া। আর সম্প্রতি আমি বসুন্ধরার একটি টিভিসিতে কাজ করেছি। অন্যদিকে আনন্দ খালেদ বলেন, বর্তমানে আমি বেশকিছু ধারাবাহিক ও খÐ নাটকের অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত আছি। এরমধ্যে রয়েছে ‘ক্যান্ডি ক্রাশ’, ‘লিপস্টিক’, ‘গল্পগুলো আমাদের’, ‘ছলেবলে কৌশলে’সহ আরো কিছু ধারাবাহিকে। এছাড়াও রয়েছে কিছু খÐ ও টেলিফিল্মের অভিনয় করা।

আড্ডার প্রায় শেষ পর্যায় হয়ে এলো। শীতের সন্ধ্যা থেকে তখন রাত গভীরের দিকে যাচ্ছে। শহরে শীত যেনো ঝেঁকে বসেছে চারদিকে। আনন্দ আলোর কার্যালয়ে তখনো এই দুই অভিনেতার তুখোড় কথোপকথন চলছে। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দে দুজনে ফটোশেসনও করলেন। সবশেষে দুজনের কাছে প্রশ্ন ছিলÑ নিজেদের ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে। সুমন পাটওয়ারী বললেন, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই। অভিনয়টা অবশ্যই চালিয়ে যাব। তবে অনিশ্চয়তায় জীবনকে ঠেলে দিয়ে নয়। এজন্যই ভালোলাগা আর জীবিকা দুটোকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধকতাই যে মানুষের বাধা হতে পারে না এবং চাইলেই মানুষ নিজের ভালোলাগায় কাজ করতে পারে সেটার প্রমাণ আমি নিজেই। আনন্দ খালেদ বলেন, এই অভিনয়ের জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি এবং আরো করতে চাই। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে থাকতে চাই সারাজীবন। এজন্য ভালো কিছু কাজ উপহার দিতে চাই দর্শকদের। একটি চরিত্র নিয়ে ভেবে তবেই অভিনয়ে যাই আমি। এমনিভাবে কাজ নিয়ে সারাজীবন দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

ছবি: রনি রহমান।