Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

চল ঘুরে আসি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে

মোহাম্মদ তারেক: আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নবনির্মিত সুদৃশ্য ভবনটির দ্বিতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়ল ছাদের সঙ্গে টাঙানো একটি যুদ্ধ বিমান। নাম ‘হকার হান্টার’। আসন একটাই, চালকের। ভেতরে প্রস্তুত থাকত কামান, মিসাইল ও বোমা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হকার হান্টার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বেশকিছু ঘাঁটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত সেই নিদর্শন ঠাঁই পেয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরের তলায় উঠতেই বিশাল করিডরে দেখা মিলল শিখা চির অ¤øানের। চারপাশে পানি আর মাঝখানে শহীদের স্মৃতি নিয়ে জ্বলছে শিখা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়েছে এই শিখা চির অ¤øান। শুধু যুদ্ধবিমান নয়, শিখা চির অ¤øান নয়, বাঙালির গৌরবের অনন্য সব স্মৃতির সম্ভারে সেজেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দেশের প্রথম জাদুঘর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগে জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ। ৫ সেগুন বাগিচার ছোট্ট দোতলা বাড়িটিতে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ বস্তু আছে এই জাদুঘরে। তবে প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর নিজস্ব ভবনে স্থান্তরিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। নতুন ঠিকানা এফ ১১/এ বি সিভিক সেক্টর, আগারগাঁও। শুধু নতুন ভবনই নয়, এটির পরিসরও বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন নির্দেশনা। জনসাধারণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারের দেয়া তহবিলে জাদুঘরের নয়তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।

১৬ এপ্রিল ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক ভাবে এর উদ্বোধন করেন। তিনিই ২০১১ সালের ৪ মে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে নির্মাণ কাজের সূচনা করেছিলেন।

দৃষ্টিনন্দন ও স্থাপত্য শৈলীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ভবনটি আগারগাঁও পঙ্গু হাসপাতালের উল্টো দিকে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পাশে অবস্থিত। ছাদের ওপর আর সামনের দেয়াল থেকে কামান-বন্দুকের নলের মতো নানা আকারে কংক্রিটের নল বেরিয়ে এসেছে। কাছে গেলে দেখা যায় দেয়ালের উপর কিছু কিছু ক্ষত চিহ্ন। এমন ক্ষত চিহ্নগুলো দেখে স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্ষতের একটি আবহ তৈরি হবে দর্শনার্থীর মনে। এমনটিই মনে করেন স্থপতি তানজিম হাসান।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ইতিহাস তুলে ধরতে অনন্য পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে জাদুঘরের গ্যালারি গুলো। প্রতিটি গ্যালারিও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী নানান স্মারক। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ নানা ডকুমেন্ট। একই সঙ্গে রয়েছে নানা স্মারক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তুলে ধরার ব্যবস্থা।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, মরণপণ যুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জাদুঘরে রয়েছে নানা স্মারক ও নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দূলভ আলোকচিত্র, চিঠিপত্র, ভিডিও চিত্র, দলিল, স্মৃতিচিহ্নের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারি সাজানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখানে প্রায় ২৫ হাজার নিদর্শন রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে ঘুরে ফিরে তা দেখা যাবে। এছাড়া রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। অডিও-ভিডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানাতে জাদুঘরে রয়েছে ইন্টার অ্যাকটিভ স্পেস ও ওপেন এয়ার থিয়েটার। এছাড়া রয়েছে তিনটি সেমিনার হল ও ২৫০ আসনের একটি অডিটরিয়াম। তাতে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অন্যান্য পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করার ব্যবস্থা রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার জন্য রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভের স্থানও রাখা হয়েছে। প্রায় আড়াই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তিনটি বেইসমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর রয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ম্যুরাল। নতুন ভবনে রয়েছে বিশাল আকারের চারটি গ্যালারি। গ্যালারিগুলো ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায়। সেগুলোর আয়তন সব মিলিয়ে ২১ হাজার বর্গফুট। লিফটের তিনে উঠতেই এক নম্বর গ্যালারি। গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’। এই গ্যালারিতে রয়েছে প্রাচীন বঙ্গের মানচিত্র, পোড়া মাটির শিল্প, টেরা কোটা ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছবিসহ নানা নিদর্শনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট। ধাপে ধাপে এই গ্যালারিতে উঠে এসেছে সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের সময় পর্যন্ত নানা স্মারক।

দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’। এই গ্যালারিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর বিশাল আকৃতির আলোকচিত্র। সেটি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের। পাশেই পর্দায় দেখানো হয় ভাষণটির ভিডিও চিত্র। তার সামনেই ছোট্ট কাচের বাক্সে রাখা ওই দিন সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও ভাষণের রেকর্ড। এরপর কালো টানেলের পুরোটা জুড়ে রয়েছে ২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার নানা নিদর্শন। আলোকচিত্রে, ভিডিওচিত্রে নানা ভাবে উঠে এসেছে সেই কালো রাতের ভয়াবহতার করুণ ও নির্মম দৃশ্য। এরপর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার গঠনের নানা পর্বও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতার ঘোষণা, ৪ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় যুদ্ধ এবং সারা দেশের  গণহত্যার নিদর্শন রয়েছে এই গ্যালারিতে আর রয়েছে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া বাঙালিদের শরণার্থী হিসেবে ভারতে যাত্রা, সেখানে আশ্রয়, জীবন যাপনের ঘটনাবলী। তৃতীয় গ্যালারির নামÑ ‘আমাদের যুদ্ধ আমাদের মিত্র’। এই গ্যালারিতে রয়েছে যুদ্ধ চলাকালীন সময় অর্থাৎ ১ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল স্মৃতি।

চতুর্থ গ্যালারির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’। এখানে মুক্তিযুদ্ধে চ‚ড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত নানা নিদর্শন দেখানো হয়েছে। ৭১ এর রণাঙ্গনে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা বিলোনিয়া যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচলিতরীতির বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী রণকৌশল নিয়ে ছিলেন। বিলোনিয়া যুদ্ধের এই কৌশল স্যান্ড মডেল নামে পরিচিত। বিলোনিয়া যুদ্ধের সেই রণকৌশল মডেল একটি কাচের টেবিলে সাজানো রয়েছে। এই গ্যালারির একটি বিশেষ অংশে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলার নারীদের ওপর পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরতা আর নির্যাতনের চিত্র। এখানে আরও প্রদর্শিত হয়েছে বিজয় স্মৃতি। বাঙালির প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দশন, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যুদ্ধ, যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, গণমানুষের দুরবস্থা, যৌথ বাহিনীর অভিযান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয়, মিত্রবাহিনীর অংশগ্রহণ, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নির্মমতার নানা আলোকচিত্র, আর ঢাকায়  পাকিস্তানি দখলদারদের আত্মসমর্পণসহ নানা চিত্র ক্রমান্বয়ে দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।

বাছাই করা নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শন করা যাতে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ঘটনা উঠে আসে। বাকি গুলো সংরক্ষিত আছে জাদুঘরের আর্কাইভে। একজন কর্মকর্তা জানান, গবেষকরা আর্কাইভে এসব নিদর্শন তাদের গবেষণা কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র এখানে গড়ে তোলা হয়েছে। ওপরের ছয়টি তলায় অফিস, মিলনায়তন, গবেষণা কেন্দ্র, ক্যানটিন, প্রদর্শনীকক্ষ এসব রয়েছে। শিখা অনির্বাণও রয়েছে প্রথম তলায়। ১২ বছরের সন্তান ফাহিমকে সঙ্গে নিয়ে জাদুঘর ঘুরে দেখছিলেন বাসাবোর বাসিন্দা ইমরান হক। তিনি বললেন, ছেলের পরীক্ষা শেষ। এই ফাঁকে ওকে নিয়ে ঘুরতে এলাম জাদুঘরে। মুক্তিযুদ্ধ তো আমাদেরই গৌরবের প্রতীক। সেই প্রতীকগুলো দেখাতে ছেলেকে এখানে নিয়ে এসেছি। জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। তবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে। রবিবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য খোলা থাকবে। গ্রীষ্মকালীন সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কর্মকান্ড

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন। এর বিশেষ লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভুমির জন্য গর্ব ও দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হবে।

আউটরিচ কর্মসূচি: ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহন যোগে জাদুঘর পরিদর্শনে নিয়ে আসা হয়। তারা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র দেখে, গ্যালারি পরিদর্শন করে, কুইজ পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং সবশেষে আলোচনায় মিলিত হয়। আউটরিচ কর্মসূচির যাত্রা সূচিত হয় ১৯৯৭ সালে।

ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর: একটি বৃহৎ আকারের বাসের অভ্যন্তরে প্রদর্শনী সাজিয়ে একে পরিণত করা হয়েছে খুদে জাদুঘরে। বাংলাদেশ জুড়ে পরিভ্রমণ দ্বারা বাসটি জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। ২০০১ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বাসটি বিভিন্ন জেলায় যেতে শুরু করেছে। ২০০৩ সাল থেকে বিশেষ ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার, শান্তি ও সম্প্রীতির শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি শিক্ষার্থীর কাছে বিশেষ উপস্থাপনা করে থাকে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তাদের পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে যারা একাত্তরের দিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের কোনো একজনের অভিজ্ঞতার বিবরণী শুনে তা নিজ ভাষায় লিখে জাদুঘরে প্রেরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬,০০০ এরও বেশি প্রত্যক্ষদর্শী ভাষ্য সংগৃহীত হয়েছে তা আর্কাইভে সংরক্ষিত হচ্ছে।

জল্লাদখানা বধ্যভুমি স্মৃতিপাঠ: পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগী আলবদর আলশামস দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বহু বধ্যভুমি তৈরি করেছিল। এমনি একটি মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভুমি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘বধ্যভুমি স্মৃতিপাঠ’ গড়ে তুলেছে। একই সঙ্গে এখানে বাংলাদেশের সকল বধ্যভুমি ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণহত্যার পরিচয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন: একাত্তরের ভয়াবহ গণহত্যার বাস্তবতা বিশ্বসমাজের কাছে মেলে ধরা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার, তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আহরণ ও সহায়তা গ্রহণ ইত্যাদি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে আসছে ২০০৮ সাল থেকে। সম্মেলনে প্রণীত সুপারিশমালা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়।

মুক্তি ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব আয়োজন করে আসছে। যুদ্ধ, গণহত্যা, মানবাধিকার, শান্তি ও সম্প্রীতি বিষয়ক তথ্যচিত্রতে প্রদর্শিত হয়। এছাড়া প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বজলুর রহমান স্মৃতি পদক: প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বজলুর রহমান স্মৃতি পদক প্রদান চালু করেছে ২০০৮ সাল থেকে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবছর সংবাদপত্রের জন্য একজন এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের জন্য একজনকে এই পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য একলাখ টাকা।

শান্তি ও সহনশীলতা বিষয়ক এশীয় তরুণদের ক্যাম্প: ২০০৬ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সবরমতী গান্ধী আশ্রম, আহমেদাবাদের সহযোগিতায় সেই ঐতিহাসিক স্থানে যুব ক্যাম্প পরিচালনা করে আসছে। ক্যাম্পে প্রতিবছর বিভিন্ন এশীয় দেশের যুব প্রতিনিধি শান্তি এবং সহনশীলতা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। বিগত দুই বৎসর একই ধারায় বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৩৫ জন যুব প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশে বিশেষ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্বেচ্ছাকর্মী: জাদুঘরের নানামুখী কর্মকাÐ পরিচালনার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছাকর্মী দল গঠন করেছে। স্বতঃস্ফ‚র্ত আন্তরিক ও দক্ষ স্বেচ্ছাকর্মীর দল বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনায় সহযোগিতামূলক ভুমিকা রাখছে।

মুক্তির উৎসব: আউটরিচ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ঢাকা নগরীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবছর বিশাল ভাবে ‘মুক্তির উৎস’ আয়োজন করা হয়। এতে বিশিষ্টজনেরা যোগ দেন এবং নিবেদিত হয় চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে দিনভর অনুষ্ঠান শেষ হয়। মুক্তির উৎসব শুরু হয় ২০০১ সালে। প্রতিবছর এতে অংশ নেয় প্রায় ১৫,০০০ কিশোর-তরুণ বয়সী ছেলে-মেয়েরা।

অন্যান্য অনুষ্ঠান: স্বাধীনতা উৎসব। বিজয় উৎসব। বইমেলা। চিত্র প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বরণ দিবস। তাজউদ্দীন আহমেদ জন্ম দিবস। মিরপুর মুক্ত দিবস। মিরপুর জল্লাদ খানা বধ্যভূমি স্মৃতিপাঠ প্রতিষ্ঠা দিবস। শিক্ষক সম্মেলন। গণঅভ্যুত্থান দিবস। সার্জেন্ট জহুরুল হক দিবস। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। বিশ্ব জাদুঘর দিবস। বিশ্ব শরণার্থী দিবস। হিরোশিমা দিবস। বর্ষবরণ। বজলুর রহমান স্মৃতি পদক ইত্যাদি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আন্তর্জাতিক জাদুঘর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্কোয়ালিশন অব সাইটস অব কনসান্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব মিউজিয়ামের সদস্য। আইকম-বাংলাদেশের সদস্য।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর: ঠিকানা-প্লট#এফ-১১/এ-বি, আগারগাঁও শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭,  ফোন-৮৮০-২-৯১৪-২৭৮১-৩, ফ্যাক্স-৮৮০-২-৯১৪-২৭৮০, ই-মেইল: সঁশঃর.লধফঁমযধৎ@মসধরষ.পড়স, ওয়েব: ষরনবৎধঃরড়হধিৎসঁংবঁসনফ.ড়ৎম.পড়স

সময়সূচি: গ্রীষ্মকালীন- সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালীন- সোমবার থেকে শনিবার ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। প্রবেশ মূল জনপ্রতি ২০ টাকা। তবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবে।