Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

লাইট ক্যামেরা অ্যাকশন ভাবনায় নুহাশ হুমায়ূন

রাজু আলীম: এমনটা অবশ্য আগেই ভেবেছিল দেশের মানুষ। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত-পাঠকেরা তো বটেই। হুমায়ূন পুত্র নুহাশ। ছোটবেলা থেকেই দারুণ মেধাবী। বাবার জীবদ্দশায় বাবার নির্দেশনায় অনেক টিভি নাটকের নির্মাণ কাজ কাছে থেকে দেখেছেন। বাবা হুমায়ূন আহমেদ বোধকরি স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলেন বড় ছেলে নুহাশ আহমেদকে নিয়েÑ দেখিস একদিন নুহাশও এই দেশে অনেক নাম করবে। বাবার চেয়েও এগিয়ে যাবে। সে কারণে বাবার কোনো কোনো নাটকের বিশেষ বিশেষ দৃশ্যের পরিচালকও হয়েছেন নুহাশ। বাবা কাছে থেকে দেখতেন আর খুশি হতেন।

হুমায়ূন পুত্র বলে নয়, নুহাশের মেধার গুণে তারও ভক্ত পাঠকের সংখ্যা কম নয়। এই যে ‘পাঠক’ শব্দটা ব্যবহার করলাম, তার কারণ কি? নুহাশ কি গল্প, কবিতা অথবা উপন্যাস লেখেন? না। সাহিত্যের পথে এখনো সেভাবে হাঁটতে শুরু করেননি। তবে নাটক, টেলিছবি নির্মাণ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝে তার লেখা প্রকাশ হয়। সেখান থেকেই বোঝা যায় তার পাঠক সংখ্যা কেমন? গত ঈদে একটি টিভি চ্যানেল নুহাশ হুমায়ূনের বিশেষ নাটক ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসে। তার নির্দেশনায় নাটকটিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেশের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

সময়ের আলোচিত নির্মাতা অমিতাভ রেজা এবং মেজবাউর রহমান সুমন-এর পরিকল্পনায় সাত নবীনের সাতটি নাটক তৈরি হয় গত ঈদে একটি টিভি চ্যানেলের জন্য। সেই সাতটি নাটকের একটি নুহাশ হুমায়ূন-এর ‘অ্যালবাট্রস’ নাটকে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। নাটক তৈরির সময় ক্যামেরার পেছনে অ্যাকশন বলছেন নুহাশ। আর সংলাপ বলছেন অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। প্রথমবারের মতো এমন দৃশ্যের কথা চিন্তা করতে আনন্দ অন্য রকমের। নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান নূর-এর অনুভূতিও ছিল প্রেরণাদায়ক। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘নুহাশের তো কেবল যাত্রা শুরু হলো। তবে ওর মধ্যে মেধা আছে। ওর মধ্যে শক্তি আছে। এই প্রজন্মের একজন নির্মাতা হিসেবে ওর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো তার চিন্তা-ভাবনার অংশ। ও লেগে থাকলে অনেক ভালো করবে।’

বরাবরই ভালো স্ক্রিপ্ট লেখেন নুহাশ। ক্যামেরার পেছনে আগেও কাজ করেছেন নুহাশ হুমায়ূন। তৈরি করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তবে অমিতাভ রেজার আগ্রহে নাটক তৈরি করতে চরিত্র চিত্রণে চেয়েছেন আসাদুজ্জামান নূরকে। এই বিষয়ে নুহাশ বলেন, ‘আমি আসলে অল্প বয়স থেকেই শর্ট ফিল্ম নিয়ে কাজ করতাম ফ্রেন্ডসদের সঙ্গে। ওই ফ্রেন্ডসদের বদৌলতেই নূর চাচার সাথে কাজ করা খুবই আনন্দের অভিজ্ঞতা। আমার কাছে সবচেয়ে এক্সাইটিং জিনিস যে, আমার স্টোরি আমি পড়বো। এটি টিভিতে, ইউটিউবে বা কে দেখছে এটি চিন্তা না করে নিজের কথা বলা, ওইটা নিজের জন্যে খুবই পাওয়ারফুল একটা জিনিস।

নুহাশ আর নূর এর এই কেমিস্ট্রির পেছনের মানুষ গুণী নির্মাতা অমিতাভ রেজা। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘কিছু ভালো গল্প দিয়ে আপনাদের বিনোদিত করতে চাই। যেটা দর্শককে মানবিক করে তুলবে এবং তাদেরকে ভাবাবে। মানুষের চিন্তায় এক ধরনের খোরাক তৈরি করবে। সেই জায়গায় নুহাশ খুবই ভালো কাজ করেছে।’ হোটেল অ্যালবাট্রস নামের একটি ফিকশনাল হোটেলকে নিয়ে নাটকের গল্প। কয়েকটি শেফের চরিত্র আছে গল্পটিতে। একটা রাতের ঘটনা। এক রাতে তারা ওই হোটেলে আটকা পড়ে থাকে কোনো একটা কারণে। এরপরে তাদের মধ্যে ঘটতে থাকে নানা নাটকীয়তা, মানসিক দ্ব›দ্ব আর সারা রাতের ঘটনার মধ্যে দিয়ে আবর্তিত হয় হোটেল অ্যালবাট্রস-এর গল্প। নাটকটি নির্মাণের প্রথম থেকে মানুষের প্রত্যাশা ছিল খুব বেশি। হুমায়ূন আহমেদ-এর ছেলে হিসেবে নাটক নির্মাণে আসার জন্যে নুহাশের ভেরিফাইড পেজে সকলের কমেন্ট ছিল ‘নুহাশের জন্যে শুভ কামনা’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, টেলিভিশন এবং পত্রপত্রিকায় হোটেল অ্যালবাট্রস নাটক নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যমের উচ্ছ¡াস প্রকাশ পেয়েছে। সবাই সানন্দে গ্রহণ করেছে নুহাশের প্রথম কাজ। যা নুহাশের সামনের দিনগুলোয় ভালো কাজ করার প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

একথা সবাই জানেন, ছোটবেলা থেকেই নুহাশ সাংস্কৃতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছে। বাবার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই শুটিং দেখেছেন, বাবার লেখালেখি, স্ক্রিপ্টিং, নির্দেশনা দেয়া নিজের চোখে দেখেছেন। রক্তে মেধা মননে শিল্প সাহিত্য নাটক চলচ্চিত্র নিয়েই বেড়ে উঠেছেন তিনি। এই প্রথম নাটক নির্মাণ করেই নুহাশের পথচলা শুরু নয়। এর আগে বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করে নিজের প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন। চলতি মাসে ঢাকা লিট ফেস্টে প্রদর্শিত হবে তার চিত্রনাট্যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘পেপার ফ্রগস’। গ্রামীণ ফোন গুড নিউজ Nuhash-Humayonবিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে তাকে দেখা গেছে টেলিভিশনে। বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে সামনে নুহাশকে আরও কোনো বিজ্ঞাপনে দেখা যাবে কি মডেল হিসেবে? এই সব নানা বিষয়ে সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলেন নুহাশ হুমায়ূন। ‘বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ধীরে ধীরে লেখক বা নির্মাতা হয়ে ওঠা। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়টি কীভাবে অনুভব করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নুহাশ বলেন, ‘যখন আমার কোনো কাজ নিয়ে ঘোষণা আসে তখনই মিডিয়া এবং পত্র-পত্রিকায় নিউজ হয়, হেডলাইন হয় হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নাটক নির্মাণে এসেছে বা এমনকিছু। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া পড়ে। অনেক অনেক কমেন্ট আসে। আমি সেগুলো পড়ি এবং মানুষের ফিডব্যাক বোঝার চেষ্টা করি। সবাই কিন্তু আমাকে উৎসাহ দেয় এবং অনুপ্রাণিত করে। টেকনোলজি সবকিছু এখন ওপেন করে দিয়েছে। সবার সব ধরনের রিঅ্যাকশন পাওয়া যায় সরাসরি। আমি আমার যে কোনো কাজের আপডেট সবার আগে ফেসবুকে দেই। সেখান থেকেই এইগুলো প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রযুক্তিগত সুবিধা আমরা যারা সৃজনশীল কাজ করছি তাদের জন্যে অনেক সহযোগিতার। টেকনোলজি আমার কাজের চ্যালেঞ্জ অনেক সহজ করে দিচ্ছে।’

হোটেল অ্যালবাট্রস নাটক টেলিভিশনে অনএয়ারের অভিব্যক্তি সম্পর্কে বলেন নুহাশ, ‘টিভিতে কাজ করা একটি ডিফরেন্ট চ্যালেঞ্জ। আমি সাধারণত ফিল্মে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আর্টি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম এবং ডিফরেন্ট সব প্রজেক্টে। নাটকের ক্ষেত্রে যেটি হয় একটি টাইম ফ্রেমের মধ্যে একটি ফিনিশড প্রডাক্ট দিতে হয়। আমি পারফেক্টশনিষ্ট- অনেকটা টাইম নিয়ে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল এই নাটকের প্রডাকশনে এই টাইম লাইনটা। ঈদের প্রথম দিনে নাটকটি প্রচার হওয়াতে এর গুরুত্বও ছিল বেশি। আমার কাছে খুবই চিন্তার ছিল যে, মানুষ আমার মেকিংকে কীভাবে দেখবে কারণ আমি রোমান্টিক কোনো স্টোরি বলিনি। ট্রিপিক্যাল যে ধরনের নাটকের স্টোরি দেখা যায় নাটকে- আমার নাটকে আসলে ওই অ্যাঙ্গেলে যাই নাই। ঈদের প্রথম দিনে রিলিজ করায় একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিল ছিল আমার মধ্যে। আগে একটা কনসেপ্ট ছিল যে, মানুষ এটা খাবে না বা নেবে না এই রকমের। কিন্তু অনলাইনের কারণে মানুষের রুচি কিন্তু বদলে যাচ্ছে। অনলাইনে বসে সবাই সারা পৃথিবীর কনটেন্ট দেখছে। এখন আর কেউ বলতে পারবে না, এটা বাংলাদেশের জন্যে ভালো। কারণ পৃথিবীর সবাই এখন সবকিছু দেখছে।’

গ্রামীণফোন-এর মডেলিংয়ে দেখা গেছে নুহাশকে কিন্তু মডেলিংয়ে নিয়মিত হবার কোনো ইচ্ছা তার নাই। ফিল্মের স্টোরি লাইনেই কাজ করতে চান।’ ‘একটা টিভি কমার্শিয়ালে কাজ করার পর নিউজ হয়ে গেলো নুহাশ হুমায়ূন এখন মডেল। আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। আমি চাই রাস্তায় সেলিব্রেটি হিসেবে মানুষ আমাকে না চিনুক, তারা আমাকে জানুক চিনুক আমার কাজ দিয়ে। আমি এটা চাই। আমরা টেকনোলজির ব্যাপারে খুবই স্ক্রেয়ার্ড, কীভাবে এটাকে হ্যানডেল করবো? আমরা শিল্পের কনটেন্ট ভুলে গিয়ে জনপ্রিয় হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। কীভাবে কনটেন্ট ভাইরাল করা যায়? সাবসটেন্স কনটেন্ট স্টোরি থাকতে হবে। স্টোরি যখন রিচ করবে তখন মানুষ কিন্তু তাকে একটা লেভেলে পৌঁছে দেবেন। এখন কিন্তু প্রত্যেকটি নাটক, ফিল্মের মাস অডিয়েন্স ততটা হবে না। ভালো কাজগুলো কিন্তু দেশের সবাই একসঙ্গে বসে দেখবে না। আজকে একজন দেখবে, পরবর্তীতে এটি ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিটি কাজেরই টেস্ট এবং রুচি আছে।’

অ্যালবার্টস নাটকে আসাদুজ্জামান নূরকে অভিনেতা হিসেবে পেয়ে দারুণ উচ্ছ¡সিত হন নুহাশ। তার বিনীত মন্তব্যÑ নূর আংকেল আমার নাটকে কাজ করেছেন এই অভিজ্ঞতা ছিল অ্যামেজিং। তিনি শুটিং স্পটে আসা মাত্রই পরিবেশ বদলে যেতো। কোথা থেকে যেন একটা সাহস পেতাম। এজন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন।