Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

প্রশংসায় ভাসছে ঢাকা অ্যাটাক!

মুক্তির পর  থেকেই দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু । বিশিষ্টজনদের অনেকে সিনেমাটি ফেসবুকে পজিটিভ কথা লিখে পোস্ট দিচ্ছেন। দেশের নামকরা তারকারাও সিনেমাটি দেখছেন পালা করে। দলেবলে হলে গিয়ে ছবিটি দেখছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও। দেশের অধিকাংশ সিনেমা হলেই ছবিটির হাউজফুল শো প্রমাণ করে দিচ্ছে দেশীয় সিনেমার উন্নয়ন হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তির পর থেকেই চারদিকে ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা শুরু হয়। অনেক সিনেমা হলে ছবিটি চলছে দ্বিতীয় সপ্তাহেও। ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স এবং বøকবাস্টার হলে ছবিটির ব্যাপারে দর্শকদের আগ্রহ দেখে একটি হলের জায়গায় দুটি হলে পর্যন্ত সিনেমাটির শো চালাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই চারদিকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নিয়েই চলছে মাতামাতি। দর্শকের ভিড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে অধিকাংশ সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর প্রায় সব হলেই মুক্তি পেয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’। বলাকা হলে ছবিটির প্রথম শো’র সেলিং রেকর্ড গড়েছে। অন্যদিকে শ্যামলী সিনেমা হলে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। মুক্তি পাওয়ার পরও সেই ধারা অব্যাহত এবং প্রতিটি শো হাউজফুল চলছে বলে জানান হল কর্তৃপক্ষ। আর হল মালিক ও বুকিং এজেন্টদের কাছ থেকে জানা যায়, ছবিটি যেভাবে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেই হিসেবে এটি আরো কয়েক সপ্তাহ চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশের অন্যতম একটি সিনেমা হল সিলেটের নন্দিতা। তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানানো হয় ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর সাফল্যের কথা। হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুক্রবার (৬ অক্টোবর) নন্দিতা’র কাউন্টার থেকে ৭০% এরও বেশি টিকেট দেয়া হয়েছে। অন্য কোনো সিনেমার বেলায় এই রকম করা হয়নি। নন্দিতায় ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর ওপেনিং ডের সেল তাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে রেগুলার দর্শকের পাশাপাশি প্রচুর অনিয়মিত দর্শক আসার কারণে। সেলের ফিগার কত সেটা টেকনিক্যাল কারণে তারা কখনোই উল্লেখ করেন না বলে জানালেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একই চিত্র দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শকরা ‘ঢাকা অ্যাটাক’ উপভোগ করে তাদের উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। বলা হচ্ছে, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সম্পূর্ণ এন্টারটেইনিং ছবি অর্থাৎ একটি ছবির পুরো প্যাকেজ। এক মিনিটের জন্যও বিরক্তি লাগবে না বলেও দাবি অনেকের। দর্শক যেভাবে ছবিটি গ্রহণ করেছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ হতে যাচ্ছে অন্যতম সফল ও হিট সিনেমা।

দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এবিএম সুমন, শতাব্দী ওয়াদুদ, তাসকিন রহমান, আফজাল হোসেন, আলমগীর, নওশাবা, হাসান ইমাম প্রমুখ। এর কাহিনী লিখেছেন পুলিশ কর্মকর্তা সানি সানোয়ার। ছবিটি প্রযোজনা করেছে পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতি।

এদিকে ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর সফলতা নিয়ে দূর দেশ থেকে প্রশংসা বার্তা পাঠিয়েছেন দেশের মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মুক্তি প্রতীক্ষিত নিজের আসন্ন ‘ডুব’ ছবিটি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতে যোগ দিতে বর্তমানে নির্মাতা ফারুকী আছেন দেশের বাইরে। দেশে না থাকলেও নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন দেশীয় সিনেমার হালচাল সম্পর্কে। বিশেষ করে দীপংকর দীপনের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নিয়ে বেশ আশাবাদী ফারুকী। দীপংকর দীপনকে উৎসাহ দিয়ে ফারুকী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দীপংকর দীপনের ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যে আমি ভীষণ খুশি। মেইনস্ট্রিম ম্যাটারিয়াল বানানোর জন্য আমাদের স্মার্ট পরিচালকদের দরকার। না হলে মেইনস্ট্রিম ম্যাটারিয়ালের নামে শুধু তামিল তেলেগু ছবির কপি চলবে। এবং বাতাসের অবস্থা দেখে যা বুঝতে পারছি, কাজটা সে যথাযথই করেছে। থ্রি চিয়ার্স টু ভ্রাতা দীপংকর দীপন।’ মেইনস্ট্রিম সিনেমায় এমন সফলতা নিয়মিত দরকার এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ফারুকী আরো বলেন, ‘মেইনস্ট্রিম ম্যাটারিয়েল সার্ভ করার জন্য আমাদের স্মার্ট পরিচালক দরকার। না হলে এই বিশাল জায়গাটা বেহাত হয়ে যাবে। সেই দিক থেকে দীপংকর দীপনের ছবির সাফল্য আমাদের ভীষণ আশাবাদী করে।

চলচ্চিত্রপাড়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার পাশাপাশি ছবির অন্যতম জুটি আরেফিন শুভ ও মাহিয়া মাহীকে নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে। শুধু দেশেই নয়, ছবিটি আরব আমিরাত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুক্তি দেয়া হবে। প্রচার-প্রচারণার কাজে ইতোমধ্যে নেমে পড়েছেন ছবির নায়ক-নায়িকা। শুভ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি সিনেমা ঢাকা অ্যাটাক। এই ছবির এত প্রশংসা পাচ্ছি যা সত্যিই কল্পনাতীত ছিল। ছবিতে আমাকে একেবারেই অন্যরকমভাবে দেখা যায়। যা দর্শকদের কাছে ভালো লেগেছে।’ মাহি বলেন, ‘চমৎকার গল্পের একটি ছবি এটি। অ্যাকশন ও রোমাঞ্চে ভরপুর প্যাকেজ। এটা আমারও ক্যারিয়ারের অন্যতম একটি সিনেমা।‘

ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘ছোটপর্দা আর বড় পর্দার পার্থক্যটা আমি বুঝতে পেরেছি বলেই একজন নাট্য নির্মাতা হিসেবে আমার সিনেমাটা অন্যরকম হয়েছে। ছবিটির শুটিংয়ে যাওয়ার আগে অনেকদিন শিল্পীদের নিয়ে মহড়া করেছি। প্রতিটি সিক্যুয়েন্স আলাদা আলাদাভাবে মহড়া করে সেটা ভিডিও করে রেখেছি। আর এটা আসলে সম্ভব হয়েছে টিমওয়ার্কের জন্যই। এজন্য অবশ্যই বাজেট একটা বড় ব্যাপার। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ আমাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করার জন্য। আর ছবির মূল বিষয় হচ্ছে প্রচার। ঢাকা অ্যাটাক মুক্তির আগে থেকে সময় উপযোগী যে প্রচার করেছে সেটাও একটা বিষয় ছবিটি দর্শকদের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশার কথা হচ্ছে ঢাকা অ্যাটাকের মাধ্যমে সিনেমা দেখার জন্য দর্শকরা হলে ফিরতে শুরু করেছে। এটা আমাদের বাংলা সিমেনার জন্য অবশ্যই ইতিবাচক একটা দিক।’

ছবিটির সব আলোচনা ছাড়িয়ে গেছে একজন ভিলেনকে নিয়ে। যার নাম তাসকিন রহমান। তিনি ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের খলনায়ক জিসান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমাপ্রেমীদের সবার প্রশ্ন; কে এই নীল চোখের অধিকারী তাসকিন? প্রকৃত তথ্য হলোÑ তাসকিন ২০০২ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাস করছেন। পড়ালেখা ও চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করেন। তাসকিনের আরেকটি পরিচয় আছে তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় পরিচালক তানিম রহমান অংশুর ছোট ভাই। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দেখার পর দর্শকের মাঝে এখন আলোচনা তাসকিনকে নিয়েও। এর আগে টিভি নাটকে অভিনয় করলেও সেভাবে পরিচিত ছিলেন না তিনি। তবে হঠাৎ করেই ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আলোচনায় এলেন এই অভিনেতা।