Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সামস উদ্দিনের স্থাপত্য ভূবন

মোহাম্মদ তারেক: দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে চলেছেন সামস উদ্দিন আহমেদ ববি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ¯œাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দেন বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড-এ। সেখানে চার বছর চাকরি করার পর প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস প্রাইভেট লিমিটেড-এ। সেখানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ১১ বছর কাজ করেন। ২০০৭ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘এ এ আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এযাবৎ তিনি অসংখ্য দর্শনীয় হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র কাজে যুক্ত ছিলেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

স্থাপত্য পেশায় ক্রমপরিবর্তনশীল বৈশ্বিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুনত্ব অনিবার্য। স্থাপত্যকে শুধু শিল্পে সীমাবদ্ধ না রেখে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে একে গভীর ভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং ক্রমবর্ধমান আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প কারখানা, বিনোদন, ল্যান্ড স্কেপিংসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশ ও ঐতিহ্যগত ভারসাম্য বজায় রেখে প্রয়োজনীয় ইন্ট্রাস্ট্রাকচার তৈরি করতে হবে। আমি এই লক্ষ্যেই কাজ করে যেতে চাই। কথাগুলো বললেন স্থপতি সামস উদ্দিন আহমেদ ববি। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। জন্ম চট্টগ্রামে। বেড়ে ওঠা ঢাকায়। সামস উদ্দিনের বাবার নাম ফখরুউদ্দীন আহমেদ। তিনি জুট মিলস কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ছিলেন। মা সেলিনা গৃহিণী।

Buildingস্কুল জীবন থেকেই আঁকাআঁকি আর বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। নিজের ইচ্ছা থেকে আর্কিটেক্ট হয়ে ওঠা তার। মিরপুরের মনিপুর হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৮৯ সালে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি শাবাব রায়হান, আজিজুর রহমান, গোবিন্দ, প্যাট্রিক ডি রোজারিও ও বিপ্লব। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষক হলেন প্রফেসর সামসুল ওয়ারেস। সামস উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগদেন বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডে। সেখানে চার বছর চাকরি করেন। ২০০২ সালে তিনি প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন ‘ভিস্তারা আর্কিটেক্টস’ প্রাইভেট লিমিটেড-এ। সেখানে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ১১ বছর কাজ করেন। তারপর ২০১৩ সালে তিনি ডিরেক্টর ডিজাইন হিসেবে যোগ দেন ইউনিক গ্রæপে। সেখানে দুই বছর কাজ করার পর পিএফআই প্রপার্টিজ লিমিটেডে চীফ আর্কিটেক্ট হিসেবে যোগ দেন। চাকরির পাশাপাশি ২০০৭ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘এ এ আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। বনানীতে খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে সামস উদ্দিন আহমেদ দেশের নামকরা আন্তর্জাতিক মানের ফাইভস্টার হোটেল, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, কমার্শিয়াল টাওয়ার, মসজিদ, অফিস বিল্ডিংসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। ভিস্তরা আর্কিটেক্টস লিমিটেড-এ থাকাকালীন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ

Projectপান্থপথের ইউনিক ট্রেড সেন্টার, ইস্কাটনের বোরাক রেড ক্রিসেন্ট টাওয়ার, গুলশান-২ এর হোটেল ওয়েস্টিন, সোনারগাঁও রোডের এ এম এল ফাইনানশিয়াল ডিসট্রিক, বসুন্ধরায় বসুন্ধরা গ্রæপের সিক্স স্টোরিড অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা গ্রæপের বসুন্ধরা ফিটনেস সেন্টার, বসুন্ধরা কনভেনশন হল, গুলশান-১ এর নাফি টাওয়ার ও লিভ গার্ডেন, পুরানা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকের হেড কোয়ার্টার, প্রগতি সরণির এজে হাইয়েটস, গুলশান, লিংক রোডের এসপিএল ওয়েস্ট্রান টাওয়ার, র‌্যাংগস বাবিলোনিয়া,  বনানীর আরভিং বনানী অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং-১,২, ধানমন্ডির র‌্যাংগস সুলতান, গুলশান এভিনিউর ইবিএল এর হেড অফিস, গুলশান-১ এর লোটাস কামাল টাওয়ার, তেজগাঁও এর কনকা সেন্টার, উত্তরার সোসাইটির মসজিদ, সিয়াম টাওয়ার, কালাচাঁদপুরের আমাদের বাড়ি, গুলশানের ডেলভিস্তা ইরজান, কল্যাণপুরের বিএসি ডেলভিস্তা, চট্টগ্রামের রেডিন্সন বে ভিউ হোটেল ইত্যাদি। বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেডে থাকাকালীন তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ বনানীর শেরাটন ঢাকা হোটেল এন্ড রিসোর্ট, গুলশান-২ এর হায়াৎ ঢাকা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ মিরপুর শেন পাড়ার এ্যারোবিকস রহিম অ্যাপার্টমেন্ট, রামপুরার অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, রাজশাহীর বিশ্বাস সেন্টার, সাভারের ডেনিটেক্স গামেন্টস, আশুলিয়ার ঢাকা থাই লিমিটেড কর্পোরেট বিল্ডিং, মানিকগঞ্জের জামে মসজিদ, গুলশানের এনবি টাওয়ার, বোরাক রিয়েল এস্টেটের ইউনিক গ্র্যান্ড, গুলশানের রেসিডেন্স বিল্ডিং, বসুন্ধরার বোরাক গ্রীণ লিভিং, গুলশান-২ এর সাউথ পার্ক, রামপুরার নর্থ গিভেন কমার্শিয়াল কামশপিং কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র কাজ করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজ করছেন। সামস উদ্দিন তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সালমা আক্তার। তিনি একজন শিক্ষক। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। স্থপতি সামস আহমেদ বলেন, একটি দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবন-যাত্রা একজন স্থপতির সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইন সুপরিকল্পিত স্ট্রাকচার, সীমিত স্থানের উপযুক্ত ব্যবহার, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ বিধিমালাকে প্রাধান্য দিয়ে আমি যে কোনো কাজ ও পরিকল্পনা করে থাকি। আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাব মোকাবিলার জন্য ভবনের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব, প্রাকৃতিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, ভ‚মির সংকীর্ণতা, গ্রীণ বিল্ডিং, মাল্টি ফাংশনাল বিল্ডিং ও অনুমোদিত আইন এসবই বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন স্থপতির প্রধান বিবেচ্য হওয়া উচিত। আমার চিন্তায় ও কাজে এসব বিষয়কেই আমি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দেন তিনি। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সামস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্র জীবনে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শামসুল ওয়ারেস স্যারের শিক্ষা ও কর্মজীবনে স্বনামধন্য স্থপতি শ্রদ্ধেয় মোস্তফা খালিদ পলাশ ভাইয়ের একযুগের সান্নিধ্যে আমি যে দিক নির্দেশনা লাভ করেছি সেই অভিজ্ঞতাগুলোই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের কাজের প্রেরণা।