Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ছবিটা মুক্তি পেলেই জন্ম রহস্য বলব

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আনন্দ আলো: অবশেষে আপনার নতুন ছবি ‘ডুব’ সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছে। অনুভ‚তি জানতে চাইÑ
ফারুকী: আমরাতো ছবি বানাই দর্শকের কাছে পৌঁছানোর জন্য। নতুন ছবির সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়া মানেই দর্শকের কাছে যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার হওয়া। ফলে আনন্দ তো হচ্ছেই। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় বলতে চাই। আমার যে কোনো নতুন ছবি মুক্তির আগেই নার্ভাস ফিল করতে থাকি। শুধু ছবি মুক্তির আগেই নয় শুটিং শুরুর আগে থেকে নার্ভাস ফিল করতে থাকি। তবে আমি মনে করি এই নার্ভাস নেসটা কাজ করে বলেই আমি প্রতিটি ছবির ক্ষেত্রে নতুন কিছু চিন্তা করি। কারণ আমি যদি নিশ্চিন্ত হয়েই যাই যে ইতিপূর্বে যা করেছি তার সবটাই ভালো ছিল, তাহলে তো ভবিষ্যতে আর ভালো কিছু করা যাবে না। এই ব্যাপারটি সব সময় মাথায় থাকে। ডুব সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছে। অনুভ‚তি এক কথায় চমৎকার। দর্শকের কাছে যাব। তাদের ফিডব্যাক কেমন হয় সেই অপেক্ষায় আছি।
আনন্দ আলো: ‘ডুব’ এর জন্মের গল্পটা একটু বলবেন?
ফারুকী: (একটু ভেবে নিয়ে) আপতত গল্পটা বলতে চাই না। ছবিটা মুক্তি পেলেই জন্ম রহস্য বলব।
আনন্দ আলো: ছবির নাম ‘ডুব’ কেন?
ফারুকী: হ্যাঁ ছবির নাম ডুব কেন? এটা একটা প্রশ্ন বটে। ছবির একটা ইংরেজি নাম আছে। যার বাংলা করলে দাঁড়াবে ‘জীবন ফুলের বিছানা নয়’। অনেক বড় নাম। আমি ইংরেজির বাংলা করতে চাইনি। চেয়েছি বাংলায় আলাদা একটি নাম। অনেক নাম খুঁজতে খুঁজতে ‘ডুব’ নামটিই পছন্দ হলো। এই নামের একটি যুক্তিও আছে। একটা হচ্ছেÑ গল্পটি দর্শককে আহŸান করবে ডুব দিতে। আবার অন্যভাবে দেখলে বোঝা যায় মানুষ যখন পানিতে ডুব দেয় তখন ‘সাফোকেশন’ সৃষ্টি হয়। এই ছবির ৪টি চরিত্রই কিন্তু ঐ ডুবের ভেতরেই আছে। ফলে তাদের যে সাফোকেশন… তাদের মধ্যে যে দমবন্ধ অবস্থা… সেটা ছবিতে ফুটে উঠেছে। তাই ছবির নাম ডুব…
আনন্দ আলো: ব্যাচেলর থেকে টেলিভিশন, তারপর থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মেড ইন বাংলাদেশ, পিঁপড়া বিদ্যা এবং সব শেষে ডুবÑ জার্নি বাই ফিল্ম… অনুভ‚তি জানতে চাই।
doob-posterফারুকী: ফিল্ম মেকার হিসেবে আমার জার্নি… (ভেবে) আমি ছবি বানাই আমার মতো করে। দেখলেই বুঝবেন আগেরটার সঙ্গে পরেটার কোনো মিল নাই। একটা ছবি বানালাম। প্রশংসা পেল বলেই পরের ছবিটাকে আগেরটার মতো করে বানানোর কথা কখনই ভাবি না। সব সময় নতুন রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টায় থেকেছি। এবং একই সময়ে আমি আমার ভয়েজটা বোঝার চেষ্টা করেছি। প্রতি ছবিতে নিজেকে ইনভলব করা। নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করার চেষ্টা করেছি। যেমন শামসুর রাহমানের কবিতা পড়লে বোঝা যায় এটি শামসুর রাহমান। আল মাহমুদের লেখা পড়লে বোঝা যায় এটিই আল মাহমুদ… সে রকমই আমি চেষ্টা করছি আমার ছবি দেখলে যেন আমাকে বোঝা যায়, আমার লেঙ্গুয়েজটা যেন সবার কাছে পরিষ্কার হয়। ছবিতে আমাকে যেন খুঁজে পাওয়া যায়। আমার চরিত্র, আমার ব্যক্তিত্ব যেন ছবিটির মধ্যে ফুটে ওঠে।
আনন্দ আলো: আপনাকে নিয়ে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে চাই। যাব?
ফারুকী: হ্যাঁ, চলেন যাই…
আনন্দ আলো: এত কাজ থাকতে নাটক সিনেমায় আগ্রহী হলেন কেন?
tisa---(13)ফারুকী: একথা বহুবার বলেছি। জীবনে বহু কিছু করার চেষ্টা করেছি। ফাইভ স্টার হোটেলে চাকরি করব ভেবেছিলাম। সোনারগাঁও হোটেলের জিএমকে (বিদেশি) চিঠি লিখব বলে ইংরেজি শিখেছি। ইন্টামিডিয়েট পাস করার পর তার কাছে চাকরি চাইতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ডেকেছিলেনও। তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে আমার ব্যাপারে পজিটিভ অর্থে কিছু করা যায় কি না তাও বলে দিয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো ঐ সময় সোনারগাঁও হোটেলে কর্মচারীরা দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য প্রথম ধর্মঘট করে। ফলে জিএম এর চাকরি চলে যায়। সে কারণে আমার চাকরিটাও আর হয়নি। সোনারগাঁওয়ে চাকরি হলে জীবনটা হয়তো অন্য রকম হয়ে যেতো। সৃষ্টিকর্তা বোধকরি আমাকে সেভাবে গড়ে তুলতে চাননি। আমি মনে করি নিয়তি আমাকে এইখানে টেনে এনেছে। পিঁপড়া বিদ্যার ছবির নায়ক তো আমিই। তার মতো আমিও এক সময় গুলশানের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। ভেবেছি কোনো একটা দূতাবাসে আমার যদি চাকরি হয়ে যেতো! এক সময় লেখালেখির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এই সময় আমার বন্ধু আতিকসহ অন্যারা মিলে ফিল্ম সোসাইটির নেতৃত্বে বিভিন্ন ছবি দেখা শুরু করলাম। ছবি দেখে বেড়িয়ে রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে আতিকের কাছে চাপা মারতামÑ আতিক আমিতো একটা স্ক্রীপ্ট লিখছি। ও বলতÑ তাই নাকি! অথচ আমি কোনো স্ক্রীপ্ট লিখিনি। তাৎক্ষণিক ভাবে একটা গল্প দাঁড় করিয়ে তাকে শোনাতাম। প্রায় প্রতিদিন একটা করে স্ক্রীপ্ট শোনাতাম তাকে।
কবি বেলাল চৌধুরীর ভারত বিচিত্রার অফিস ছিল আমার আড্ডার স্থল। কখনও কখনও আশ্রয়স্থলও হয়ে উঠেছিল। তার কাছে যেতাম। প্রতিদিন তাকেও একটি করে গল্প শোনাতাম। গল্প শুনেই তিনি মুগ্ধ হয়ে বলতেনÑ আহ! দারুণ তো… ফারুকী তুমি তো মিয়া একটা জিনিয়াস… এমনও হয়েছেÑ তিনি আমাকে হোটেলে নিয়ে গেলেন। বিরানী খাওয়ালেন। তারপর হাতে পাঁচশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেনÑ লেগে থাকো তুমি অনেক দূর যাবে… এভাবেই আমার বন্ধুরা, আমার প্রিয় মানুষেরা আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। এই যে তারা আমাকে উৎসাহ দিয়ে বলতেনÑ ফারুকী তুমি জানো না তুমি কি করতে যাইতেছ… তাদের ওই উৎসাহই আমাকে সাহসী করেছে। আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছি।
আনন্দ আলো: প্রথম টিভি নাটক নির্মাণের গল্প জানতে চাই।
ফারুকী: একথা বহুবার বলেছি। আবারও বলি। ধার-দেনা করে একটা নাটক বানাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রিয় অভিনেতা খালেদ খানকে বললামÑ আপনাকে পারিশ্রমিক দিতে পারব না। আমার নাটকে অভিনয় করবেন। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। গাড়ির তেল খরচ করে তিনি প্রতিদিন আমার শুটিং স্পটে যেতেন। সাদেক ভাই নামে আমার এক শুভাকাঙ্খীর বাসায় শুটিং হতো। ভাবী রান্না করে খাওয়াতেন। ভাবী প্রতিদিন ২০/২৫ জনের জন্য বিরানি রান্না করতেন। এই দিয়ে আমাদের খাওয়াÑদাওয়া চলত। আমার সঙ্গে ক্যামেরাম্যান হিসেবে ছিল নাভিদ। সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধুও ছিল। এই ভাবে আমরা নাটকটি বানিয়ে ইটিভিতে জমা দিলাম। কিন্তু ইটিভি নাটকটি রিজেক্ট করলো। নাটকটির নাম ছিল ‘ওয়েটিংরুম’। ইটিভি থেকে বলা হলো এই নাটক তারা চালাবে না। তখন আমি ধরে নিলাম আমাকে দিয়ে এইসব নাটক বানানোর কাজ হবে না। আমার পুরানা আড্ডার জায়গা শাহবাগে ফিরে গেলাম।
ঘটনার তিনমাস পর ইটিভি থেকে ফোন এলো। আপনি একটু ইটিভিতে আসেন। ঘটনা কি? গেলাম ইটিভিতে। ওরা বললÑ আমরা আপনার নাটকটি আবার প্রিভিউ করেছি। নাটকটি ইটিভিতে প্রচার করা হবে। আপনাকে কনগ্রাচুলেশন। প্রথম নাটক ওয়েটিংরুম ইটিভিতে প্রচার হলো। ব্যাপক ফিডব্যাক পেলাম। আস্থা ফিরে পেলামÑ হ্যাঁ আমাকে দিয়ে হবে…
আনন্দ আলো: প্রথম ছবি ব্যাচেলর নির্মাণের গল্পটা কেমন?
ফারুকী: ওয়েটিং এর সাফল্যের পর আমি নিয়মিতই ইটিভির জন্য নাটক বানাতে শুরু করলাম। হঠাৎ ইটিভি বন্ধ হয়ে গেল। ফলে বেকার হয়ে পড়লাম। ‘একান্নবর্তী’ নামে একটি সিরিয়াল বানিয়েছি। ইটিভি বন্ধ। কোথায় চালাব ভেবে ক‚লকিনারা পাচ্ছি না। আনিসুল হক ভাইয়ের চেষ্টায় প্রডাকশনটা চ্যানেল আইতে প্রচার শুরু হলো। ‘একান্নবর্তী’ তুমুল জনপ্রিয়তা পেল। তখন মনে হলো এবার আমার মূল জায়গা নিয়ে ভাবা দরকার। ফিল্ম বানাব। আনিস ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ‘ব্যাচেলর’ নামে একটি স্ক্রীপ্ট চ‚ড়ান্ত হলো। একদিন আনিস ভাইকে বললামÑ চলেন চ্যানেল আইতে সাগর ভাইয়ের কাছে যাই। তাকে বলব আমরা একটা ছবি বানাব। উনি যেন চ্যানেল আইতে ছবিটির ফ্রি বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ করে দেন।
আনিস ভাই যেতে রাজি হলেন। সাগর ভাইয়ের কাছে গেলাম। সব কিছু খুলে বললাম। তিনি খুশি হয়ে বললেনÑ চ্যানেল আইতে বিজ্ঞাপন প্রচার হবে এটাতো একটা ছোট্ট সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু তুমি ছবি যে বানাবে, টাকা জোগাড় হয়েছে?
টাকার কথা শুনে বললামÑ পুরো টাকা জোগাড় হয়নি। হাবিব ভাই (প্রযোজক হাবিবুর রহমান) বলেছেন ৫ লাখ টাকা দিবেন। বাকি টাকাও নিশ্চয়ই জোগাড় হয়ে যাবে। ধার- দেনা করে জোগাড় করে ফেলব। আমার কথা শুনে সাগর ভাই কিছু বললেন না। ইন্টারকমে কাউকে আসতে বললেন। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একজন তরুণ রুমে ঢুকল। সাগর ভাই পরিচয় করে দিয়ে বললেনÑ ওর নাম হলো ইবনে হাসান খান। এই প্রথম হাসানের সঙ্গে আমার সামনা সামনি পরিচয় ঘটলো। সাগর ভাই প্রসঙ্গ তুলে বললেনÑ হাসান শোনো… আনিস আর ফারুকী মিলে একটা ছবি বানাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবিটা আমরাই প্রডিউস করবো। কত টাকা লাগবে ব্যবস্থা করো। সাগর ভাইয়ের কথা শুনে আমি তো অবাক। এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মতো অবস্থা। পৃথিবীতে কোনো তরুণ চিত্র পরিচালকের শুরুর জীবনে এত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। নিজেকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘটনাটি কি সত্যি সত্যি ঘটছে। এত সহজে আমার প্রথম ছবির অর্থের সংস্থান হয়ে যাবে আমি তো কল্পনাও করিনি। বোধকরি আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন সাগর ভাই। জিজ্ঞেস করলেনÑ তোমার ছবির বাজেট কত?
বললামÑ ৭৫ লাখ।
সাগর ভাই বললেনÑ সবই ঠিক আছে। এখন ১০/১৫ লাখ টাকা নিয়ে যাও। যত তাড়াতাড়ি পারো ছবির কাজ শুরু করো। অবিশ্বাস্য রকমের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ‘ব্যাচেলর’ ছবির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনো চিত্র পরিচালকের ক্ষেত্রে এই ধরনের আনন্দের ঘটনা ঘটেছে কি না। অথবা অন্য কোনো প্রযোজক কোনো তরুণ চিত্র পরিচালককে এইভাবে প্রেরণা দিয়েছেন কি না। এজন্য আমি সাগর ভাইয়ের কাছে সত্যি কৃতজ্ঞ।
Doob-2আনন্দ আলো: আবার ডুব প্রসঙ্গে আসি। ছবি মুক্তি পাচ্ছে কবে?
ফারুকী: ডুবের মুক্তির ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কয়েকটি সম্ভাবনা নিয়ে এগুচ্ছি। একটা হতে পারে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, অক্টোবরের মাঝামাঝি বা শেষ সপ্তাহ অথবা নভেম্বরের শুরু। বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কখনও কখনও ডিসেম্বরও আলোচনায় উঠে আসছে। আপাতত ছবির গান রিলিজ হবে।
আনন্দ আলো: এটি কি যৌথ প্রযোজনার ছবি?
ফারুকী: হ্যাঁ এটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার ছবি। প্রযোজক বাংলাদেশ থেকে জাজ মাল্টিমিডিয়া, কলকাতা থেকে এসকে মুভিজ, সহযোগী প্রযোজক হিসেবে আছেন বোম্বে থেকে এরফান খান।
আনন্দ আলো: ছবির অন্যতম অভিনেতা এরফান খান কী ছবি মুক্তির সময় বাংলাদেশে আসবেন?
ফারুকী: হ্যাঁ ছবি মুক্তির সময় এরফান খান অবশ্যই ঢাকায় আসবেন এবং তাকে ঘিরে আমরা একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠান করবো।
আনন্দ আলো: যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে এদেশে বিতর্ক আছে। আপনার অভিমত কি?
ফারুকী: হ্যাঁ, যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে এদেশে বিতর্ক আছে। কিছুদিন আগে আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম। তখন আমাকে সম্ভবত ‘এবেলা’ পত্রিকার একজন সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় বললেন ওদের ওখানেও যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে বিতর্ক চলছে। ওদের ইন্ডাস্ট্রিও নাকি যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে। তখন তাকে বললামÑ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিও তো যৌথ প্রযোজনার বিপক্ষে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আমি কিন্তু যৌথ প্রযোজনার পক্ষে। তবে ঢালাও ভাবে অন্যদেশের ছবি আসুক এটা আমি চাই না। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ প্রযোজনার ছবি একটা বৃহৎ সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করতে পারে। কারণ অন্যদেশের ছবির ক্ষেত্রে ভাষা নিয়ে একটা সমস্যা আছে। কিন্তু ঢাকা-কলকাতার যৌথ ছবিতে সেই সমস্যা নাই। উভয় অংশের মানুষের ভাষা এক। কাজেই একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা অনুসরণ করে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মিত হলে ঢাকা ও কলকাতা উভয়ই লাভবান হবে।
আনন্দ আলো: দেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক আপনি। দেশের সিনেমার ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন!
ফারুকী: আমি জনপ্রিয় পরিচালক কি না জানি না। তবে আমি আমার ছবির দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমার ছবি দেখে, নতুন ছবির জন্য অপেক্ষায় তাকে। এজন্য আমি সত্যি সত্যি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সিনেমার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বলি আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সম্ভাবনাকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ পরিচালকদের প্রতি আমার একটি পরামর্শ আছে। আপনার প্রতিটি ছবিকেই শেষ ছবি মনে করবেন। কারণ এর পরে ছবি বানানোর সুযোগ নাও পেতে পারেন। কাজেই সেরা কাজটিই দেবার চেষ্টা করবেন।
আনন্দ আলো: সিনেমা পাড়ায় বয়কট আন্দোলন চলছে। এসব বিষয় কি আপনাকে ভাবায়…
ফারুকী: আমি মনে করি এটা এক ধরনের অপরিপক্ব ভাবনা। চলচ্চিত্রে কাউকে বয়কট করে সমস্যার সমাধান করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে দুই পক্ষেরই আচরণ আমার ভালো লাগে নি। তবে আমি মনে করি সিনেমা পাড়ার এই ‘বয়কট, বয়কট’ আন্দোলন নিয়ে সিনেমার মানুষজন মোটেই শংকিত নয়।
আনন্দ আলো: ব্যক্তি ফারুকীকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।
ফারুকী: হ্যাঁ, করেন…
আনন্দ আলো: আপনার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন কেমন? কখন কাজ করেন, কখন ঘুমান?
ফারুকী: আমার দৈনন্দিন রুটিন হচ্ছে। প্রতি রাতে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখি। বছরে দশ মাস খেলা দেখি। শুরু করি রাত ১০ টায়। এই যেমন এখন টিভিতে ফুটবল খেলা দেখতে শুরু করবো। রাতে ঘুমাই একটু দেরি করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরি। তারপর দিনের রুটিন কাজ চলতেই থাকে। কখনও কাজ, কখনও আড্ডা… চলতেই থাকে। আমার কোনো ছুটি নাই। নো হলিডে।
আনন্দ আলো: আপনার মাথায় সব সময় একটা ক্যাপ থাকে কেন?
ফারুকী: এইটা যে কেমন করে আমার সঙ্গী হয়ে গেল বুঝি না। অবশ্য এর বোধহয় একটা কারণ আছে। শুরুর দিকের ঘটনা। তখনও চারপাশের হাব-ভাব তেমন একটা বুঝি না। নাখাল পাড়ায় বেড়ে উঠেছি। শাহবাগে যাওয়া-আসা শুরু করলাম। সেখানে দেখি সব আধুনিক লোকজনের আনাগোনা। শিল্প-সাহিত্যের কথা বলে। মনে হলো নাখালপাড়ার একটা ছেলে কই আইস্যা পড়লাম। তার ওপর ‘দেখতে শুনতে’ তেমন একটা সুবিধার না। কোনো কিছুই তো পারি না। তখন হঠাৎ একদিন মাথায় একটা ক্যাপ দিয়া হাটার সময় বুঝলাম কোথায় জানি একটা শক্তি পাইতেছি। ভাব নিয়ে হাঁটা চলা করা যায়। তারপর থাইক্যা অজান্তে ক্যাপটা-আমার পার্ট অব লাইফ হয়ে উঠল। আমার ধারণা ক্যাপ মানুষের মাঝে একটা পাওয়ার তৈরি করে। আপনি যখন ‘র‌্যাং’ পান মাথঅয় ক্যাপ পড়িয়ে দেওয়া হয় একটা ক্যাপ। রাজার মাথায় ক্যাপ থাকে। অবচেতন ভাবে ক্যাপটা বোধকরি আমার মাঝেও শক্তি যুগিয়ে চলেছে। তবে মজার ব্যাপার হলো এই ক্যাপটার কারণে আমার মাথার চুল পড়া শুরু করেছে। হা: হা: হা:
আনন্দ আলো: প্রেম আপনার কাছে কী?
ফারুকী: প্রেম আমার কাছে হলো নিজের গুরুত্বটা বুঝতে শেখানো। প্রেম আমাকে শেখায়Ñ আই হ্যাভ এ পাওয়ার। আমার নিজের একটা গুরুত্ব আছে।
আনন্দ আলো: পরিবার আপনার কাছে কী?
ফারুকী: পরিবারই আমার কাছে সবকিছু। আপনারা বাইরের যে ফারুকীকে দেখেন সেটাতো শোরুম। এই শোরুমের ভেতর যে প্রডাক্ট দেখতে পান সেটাই প্রতিদিন তৈরি করে আমার পরিবার। কাজেই পরিবার ছাড়া ফারুকী তো টিকবে না…
আনন্দ আলো: বন্ধু আপনার কাছে কী?
ফারুকী: বন্ধু আমার কাছে সেই ব্যক্তি যার কাছে আমার সব কথা শেয়ার করতে পারি।
আনন্দ আলো: বন্ধুত্ব টিকে থাকে কিসে?
ফারুকী: গোপনীয়তা রক্ষায়।
আনন্দ আলো: ব্যক্তি ফারুকীকে যদি প্রশ্ন করিÑ বলেন তো পরিচালক ফারুকী মানুষ হিসেবে কেমন?
ফারুকী: নিরাপেক্ষভাবে যদি বিচার করি তাহলে বলব ফারুকী পরিচালক হিসেবে এখনও শিশু। নিজের মনের আনন্দে শিশুরা যেমন বলে রঙতুলি নিয়ে আঁকে ফারুকীও তেমনি…
আনন্দ আলো: পরিচালক ফারুকীকে পরামর্শ?
ফারুকী: একটাই পরামর্শ, ধৈর্য আরও বাড়াতে হবে।
আনন্দ আলো: চলচ্চিত্র কর্মীদের প্রতি কোনো পরামর্শ আছে কী?
ফারুকী: আমরা যে যেই অবস্থানে আছি সেই জায়গাটাকে আগে ভালোবাসতে শিখতে হবে। আমরা কাজ করি প্রাণের টানে। প্রতিটি কাজের একটা ভ্যালু আছে। কাজের মাধ্যমেই ব্যক্তিগত ভ্যালু, সামাজিক ভ্যালু, রাষ্ট্রীয় ভ্যালু তৈরি হয়। কাজেই আমাদের কাজটা দিয়ে এমন একটা ভ্যালু তৈরি করতে পারি যে ভ্যালু আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের চেয়েও সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা ভ্যালু এড করবে। রাষ্ট্রের জন্য একটা ভ্যালু এড করবে। তাহলেই আমরা যখন চলে যাব তখন হয়তো এই কাজটা ইতিহাসের কোনো অংশ হয়ে উঠবে। আমি যখন ফিল্ম বানানো শুরু করি তখন আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কেন আমাদের ফিল্মকে বলিউডের মতো অথবা কলকাতার ছবির মতো হতে হবে? প্রশ্নটার উত্তর নিজের মতো করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি আমার মতো করে ছবি বানানোর চেষ্টা করেছি, করে চলেছি।
ভারত একটি বিরাট দেশ। ওদের কালচার অনেক পুরনো। ভারতের কলকাতার মানুষের সঙ্গে আমাদের অনেক মিল আছে। কাজেই আমরা যদি ওদের মতো করেই সিনেমা বানাই তাহলে আইডেনটিটি ক্রাইসিস থেকেই যাবে। অনেকে ভাববে আরে এটাতো কলকাতার সিনেমা। কাজেই সিনেমায় আমাদের নিজস্ব স্বতন্ত্রধারা তৈরি করা জরুরি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চয়ই কাজটা পারবে।