Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ঈদ আনন্দে ত্বকের যত্ন

একটা কথা প্রচলিত আছে। সঠিক যতœ করলে নাকি মরা গাছেও প্রাণ ফিরে আসে। তেমনি ত্বকের যতœ নিলে রুপ হয়ে যাই খোলতাই। বোধকরি খোলতাই শব্দটার একটা ব্যাখা প্রয়োজন। খোলতাই মানে খোলামেলা, ঝকঝকে তকতকে লাবণ্যময়। দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। ত্বকের সৌন্দর্যের ওপর মেয়েদের সঠিক সৌন্দর্য নির্ভর করে। আমরা যখন ত্বকের ক্ষেত্রে ‘দুধে-আলতা’ বিশেষণ ব্যবহার করি তখন বুঝতে হবে লাবণ্যময় ত্বকের কথাই বলা হচ্ছে। আসলে ত্বকের লাবণ্যই নারীর রূপের লাবণ্য ঠিক করে দেয়। ঈদের মতো পবিত্র গুরুত্বপূর্ণ উৎসব সহ সকল উৎসব-পার্বনে নারীর চেষ্টাই থাকে নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার। সাজ পোশাকের মতো এক্ষেত্রে ত্বকের যতœও গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠে।

পবিত্র ঈদ উৎসব তো এসেই গেল। প্রকৃতির আবহাওয়া বেশ একটা সুবিধার নয়। প্রকৃতির সেই মোলায়েম ভাবটা এখন নেই। গরম আর বৃষ্টি¯œাত আবহাও যায় অনেকের হাসফাস অবস্থা। এই সময়ে সবচেয়ে বেশী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে নারীর কোমল ত্বক। মুখমÐলের ত্বক থেকে শুরু করে হাত, পা সহ শরীরের খোলা অংশই এই সময়টায় বেশী যতœ চাচ্ছে। এনিয়ে অনেকেই হয়তো ভাবনায় পরেছেন। ভাবছেন কিভাবে ত্বকের যতœ নিবেন। ত্বক যদি সুন্দর ও কোমল না থাকে তাহলে তো নিজেকে অন্যের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলা যাবে না। অথচ এধরনের ভাবনা অথবা দুশ্চিন্তা যাই বলি না কেন আদৌ তার কোনো কারণ নাই। একটু সচেতন থাকলেই নিজেই নিজের ত্বকের সঠিক যতœ নেওয়া সম্ভব। ত্বকের যতœ নেওয়ার জন্য বাজারে অনেক ক্রীম ও প্রশাধনী পাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে এসব প্রসাধনী ব্যবহার করতে পারেন। আবার স্ব-উদ্যোগেও ত্বকের যতœ নিতে পারেন। নারীর রূপর্চ্চার ক্ষেত্রে অর্থাৎ ত্বকের যতেœ খাটি দুধ, শিশির ঝরা ফুলের রেনু, নিম পাতার রস, গোলাপের সুগন্ধি, কাঁচা হলুদের নির্যাস, মেহেদীর রঙ, চন্দন কাঠ, ঘৃত কুমারী, কচি ডাবের শাস, রিঠা, বিভিন্ন ফুলের নির্যাস, গাছের ছাল বাকলের রঙ বেশ কার্যকর। যদিও বর্তমানের যান্ত্রিক যুগে এসব উপাদান খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তবে একটু সচেতন যারা তারা ত্বক চর্চার এই উপাদান গুলোকে বেশ গুরুত্ব দেন।

আসছে ঈদ উৎসবের কথাই ধরি। অনেকে বেশ দুশ্চিন্তায় পরেছেন। কিভাবে সাজবেন, সাজটা কেমন হবে? বাসায় না পার্লারে গিয়ে সাজবেন? আর ত্বক? ত্বকের রুক্ষèতা দূর করবেন কিভাবে এধরনের কত ভাবনাই না পেয়ে বসেছে। তাদের জন্য সহজ-সরল একটা সমাধান বাতলে দিতে পারি।

আমরা কথায় কথায় বলি পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু একথা অনেকেই জানিনা প্রতিদিন পরিমান মতো বিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীর তরতাজা হয়ে ওঠার পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্যও বাড়ে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করলে শুধু কিডনীই সুস্থ থাকে না ত্বকও সুস্থ থাকে। ত্বকের ভাজ কমে যায়। বিশুদ্ধ পানি পান শুধু সুস্থ কিডনীর জন্যই প্রয়োজন বলে মনে করা হতো এতোকাল। কিন্তু বিশুদ্ধ পানি ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা এবং খাদ্য পরিপাকে ও এসিডিটি লাঘবে সহায়ক। তাই যারা ত্বকের যতœ নিতে চান তাদের উচিৎ প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গøাস বিশুদ্ধ পানি পান করা।

কোমল ত্বকই নারীর শরীরের সৌন্দর্য বাড়ায়। তবে তার সৌন্দর্যের অনেক খানি নির্ভর করে তার খাদ্যাভ্যাসের ওপরও। সঠিক ও পরিপুর্ণ খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সহজেই ত্বকের লাবন্য ফিরিয়ে আনা ও লাবন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন ত্বকের জন্য অত্যন্ত জরুরি উপাদান। রঙিন সবজি ও ফলে থাকে বিটা ক্যারোটিন। কাজেই ত্বকের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত প্রচুর পরিমানে সবজি ও ফল খাওয়া উচিত। পায়ের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হলো নখ ও গোড়ালি। অনেকের বেলায় এমন হয়, গায়ের রঙ সুন্দর, ফর্সা… কিন্তু তার পায়ের দিকে তাকালেই একটু যেন হোচট খেতে হয়। পায়ের গোড়ালি ফেটে গেছে। এজন্য অনেকে বিউটি পারলারে যেতে চান। অথচ বাসায় নিজেই এর সমাধান করতে পারেন। বালতিতে রাখা কুসুম কুসুম গরম পানিতে পা কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। তারপর ঝামা অথবা ব্রাশ দিয়ে পায়ের গোড়ালির মরা চামড়া ঘষে পরিস্কার করুন। এরপর পায়ে ময়েশ্চরাইজার অথবা বডিলোশন লাগান। গোড়ালি ফাটার সমস্যা কমে যাবে।

অনেকের ত্বক সুন্দর, কোমল এবং লাবণ্যময় কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অংশে অবাঞ্ছিত লোমের কারণে ত্বকের সৌন্দর্য অনেকাংশে ঢাকা পড়ে যায়। এক্ষেত্রে প্লাকিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। প্লাকিং হলো চিমটা দিয়ে শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করা।

বাজারে অনেক ধরনের লোমনাশক ক্রীম পাওয়া যায়। কাজেই ক্রীম ব্যবহার করেও শরীরের বিভিন্ন অংশের অবাঞ্চিত লোম অপসারণ করা সম্ভব। এছাড়া হট ওয়াক্সিং, থ্রেডিং এবং লেজার রশ্মি ব্যবহার করেও শরীরের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করা যায়।

সবচেয়ে বড় কথা সৌন্দর্য নির্ভর করে ব্যক্তিত্বের ওপর। একটি মেয়ের গায়ের রং অনেক সুন্দর, কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব নেই, শরীরের প্রতি মোটেই নজর দেয় না। সে তার সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে। অনেক সময় আমরা দেখি একটি কালো মেয়ে সবার মাঝেই সৌন্দর্যের আলো ছড়াচ্ছে। কিভাবে এটা সম্ভব? সহজ উত্তর। সে নিয়মিত তার ত্বকের যতœ নেয়। পরিমিত আহার করে। পরিমিত পানি পান করে। ত্বকের যতেœ সে খুবই নিষ্ঠাবান একটি মেয়ে। তাই ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতিদিন একটা নিয়মের মধ্যে চলে সে। বাইরে নানা কাজে সে বের হয়। এজন্য হাতেও পায়ের ত্বক অনেক সময় লাবন্য হারায়। তাই সে নিয়মিত পেডিকিওর, মেনিকিওর করে। পার্লারে না গিয়ে বাসায় নিজেই এসব করে সে। শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে সে মাঝে মঝে লোম নাশক ক্রীম ব্যবহার করে।

মোটকথা, স্বাস্থ্য সচেতন নারীর ত্বক কখনও উজ্জ্বলতা হারায় না। ত্বকের যতেœ আপনি যত পদ্ধতিই অবলম্বন করুন না কেন আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না থাকেন তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। সহজ একটা ফর্মুলার কথা বলি। প্রতিদিন পরিমিত আহার করুন, পরিমিত পানি খাবেন, নিয়মিত হাটবেন অথবা ব্যায়াম করবেন। খাবারের তালিকায় সবুজ শাক সবজি থাকা ভালো। বাইরে থেকে এসে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিবেন। রাতে শোবার আগে হাতে পায়ে ভালো মানের ক্রিম মাখবেন। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি নিয়মিত এই অভ্যাস মানলে আপনার ত্বক উজ্জ্বলতা হারাবে না। ত্বক সুন্দর তো আপনিও সুন্দর। কাজেই ত্বকের যতেœ এই অভ্যাসটা আজ থেকেই শুরু করুন। আসছে ঈদ উৎসবে নিজেকে পরিপাটি ও সুন্দর করে সাজাতে আজই একটা নিয়মের মধ্যে ত্বকের যতœ শুরু করুন। সৌন্দর্যের অনুভ‚তি নিয়ে ভিট তো আপনার সঙ্গে আছেই। গুডলাক প্রিয় সুন্দরী।