Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তবুও অভিনন্দন, শুভেচ্ছা!

রেজানুর রহমান

তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন এই জন্য যে দলটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। খেলা শুরু হয়েছিল ৮ দল অর্থাৎ ৮টি দেশের মধ্যে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশর মধ্যে। প্রথম পর্বের খেলায়ই তো বাংলাদেশের ছিটকে পড়ার কথা ছিল। কারণ গ্রæপ পর্বে বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। আর তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গ্রæপ পর্ব পার করতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ তার গ্রæপ পর্বে রানার্স আপ হয়ে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা পেল। ব্যস শুরু হয়ে গেল যৌক্তিক, অযৌক্তিক অনেক স্বপ্ন দেখা। কেউ কেউ ভেবেও বসলেন বাংলাদেশ ফাইনালে খেলবে। বিশেষ করে ক্রিকেট পরাশক্তি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দূর্বল দলের তকমা পাওয়া পাকিস্তান যখন ফাইনালে খেরার যোগ্যতা অর্জন করলো তখনই বাংলাদেশের জয়ের পক্ষেই প্রত্যাশার বেলুন ফুলতে শুরু করলো। ফেসবুকে বাংলাদেশের এক ক্রিকেট ভক্তের স্ট্যাটাস পড়ে অবাক হলাম। তিনি লিখেছেনÑ শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গেই আমাদের ফাইনাল খেলতে হবে।

সম্পর্কিত

কী এক আত্মঘাতি স্বপ্ন! ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তি যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেখানে কোন ভরসায় আমরা এরকম মন্তব্য করি। অবশ্য ওই ক্রিকেট ভক্তকেই বা দোষ দেই কি করে? বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল তো বলে দিয়েছিলেনÑ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের না জেতার কোনো কিছু দেখি না। ভারত অনেক শক্তিশালী দল। ব্যাটিংটা ওদের দুর্দান্ত। কোহলি দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। নিজেদের দিনে যে কোনো প্রতিপক্ষকেই রীতিমতো ‘খুন’ করে ফেলতে পারে। ওদের ভালো স্পিনার আছে। ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য যে কঠিন পরীক্ষা তাতে কোনো সন্দেহ নাই। তবে সামর্থ্যরে দিক থেকে বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে নাই। বরং আমাদের মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও তামিমের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। কাজেই আমার তো মনে হয় ঠাÐা মাথায় খেললে এই মাচে বাংলাদেশের না জেতার কোনো কারণ নাই।

আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কথার সঙ্গে দেশের সকল ক্রিকেট ভক্তই মোটামুটি একমত পোষণ করেছিলেন। অনেকে এও ভেবেছিলেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠতে না পারলেও সেমিফাইনালে যোগ্যতর দল হিসেবেই ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবে। খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। বাংলাদেশ না জিতলেও ভারতের সঙ্গে অসহায় আত্মসমর্পণ যেনো না করে।

Cricket-1অথচ বাস্তবে ঘটলো সেটাই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আবার ভারতের সঙ্গে খেলে পরাজিত হলো। এটাকে ঠিক পরাজিত বলা যায় না। বলতে হবে অসহায় আত্মসমর্পন। যা কেউই আশা করেনি। বাংলাদেশ দারুন দাপটের সঙ্গে খেলে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ফলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনন্য এক মর্যাদা পায়। সেমিফাইনাল টপকে বাংলাদেশ যদি যেতে পারত ফাইনালের দরজায় তাহলে মর্যদার জায়গাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো? অনেকে হয়তো ভাবছেন এধরনের আকাশ কুসুম কল্পনা করার তো কোনো মানে হয় না। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার কেলা। আগের দিন পারফরমেন্স ভালো হয়েছে বলে পরের দিনও ভালো হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। যার উদাহরণ তো ইংল্যান্ড। কোনো ম্যাচ না হেরে যে দল চ্যাম্পিয়ন্ ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে এলো সেই দলই দুর্বল প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে পরাজয় বরণ করলো। কাজেই ক্রিকেটের একটি ম্যাচের পরাজয়কে বড় করে দেখার কোনো যক্তি নাই। অনেকে হয়তো ভাবছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এভাবে অসহায় আত্মসর্ম্পন করলো কোন যক্তিতে? তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করিÑ একই রকম প্রশ্ন তো নিউজিল্যান্ডের বেলায়ও হতে পারে। নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে হেরে গেল কোন যুক্তিতে? তার মানে নিউজিল্যান্ড কি বাংলাদেশের চেয়ে দূর্বল দল?

এই তর্কের বোধকরি কোন শেষ নাই। কাজেই তর্কটি আপাতত থাকুক। কিন্তু বাংলাদেশÑ ভারত সেমিফাইনাল ম্যাচ নিয়ে একটু তর্ক করতে চাই। তর্ক এক. ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে নামলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা একটু যেনো দূর্বল চেহারার হয়ে ওঠে। শারিরীক ভঙ্গিতে ভয়ের লক্ষণ থাকে। কেন? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের ক্রিকেট লড়াইয়ে বাংলাদেশ দলের অনেকের চেহারায় এমনই ভঙ্গি ছিল। ওরা কি ভয় দেখায়? ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন ভিরাট কোহলির প্রতি সম্মান রেখেই বলছি বাংলাদেশের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে লড়াই করার সময় খেলার মাঠে বেশ কয়েকবার তিনি এমন কিছু শারিরীক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন যা শুধু অশোভনই নয় দৃষ্টিকটুও বটে। বাংলাদেশের একটি উইকেটের পতনের সময় তিনি মুখের জিহবা লম্বা করে বাইরে টেনে নিয়ে যে ভাবে বুনো উল্লাস করছিলেন তা একটি বড় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনের কাছে আশা করা যায় না। পুরো খেলায় তার চোখের চাহনি, আচার-আচরণ দেখে মনে হয়েছে সারাক্ষণ বাংলাদেশীকে অবজ্ঞাই করে যাচ্ছেন। মনে মনে খিচতি আওড়াচ্ছেন বাংলাদেশ কেন ক্রিকেট খেলে? সাহস কতো আমাদের সঙ্গে লড়াই করতে চায়? শুনেছি বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে চ্যাম্পয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ার পর পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা ইমরান খান নাকি বিরূপ মন্তব্য ছুড়েছিলেন। তার মন্তব্য ছিল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ায় টুর্নামেন্টটি তার জৌলুস হারিয়েছে। কী এক আপত্তিকর মন্তব্য। ভেবেছিলাম এই মন্তব্যের জবাব দেওয়ার জন্য হলেও বাংলাদেশ যোগ্যতার সঙ্গে ভারতের সঙ্গে ক্রিকেটের লড়াই করবে। কিন্তু লড়াইতো দূরের কথা ভারতের কাছে বাংলাদেশ যেনো দাঁড়াতেই পারল না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অসহায় আত্মসমর্পনের দৃশ্য দেখে দেশের অনেক ক্রিকেট ভক্ত চোখের পানি ফেলেছেন। প্রশ্নটাতো এসেই যায়। খেলা মানেই জয় আর পরাজয়ের দৃশ্য। একজন হারবে, অন্যজন জিতবে। ক্রিকেটও একটি খেলা। ভারত জিতেছে। বাংলাদেশ হেরেছে। সেখানে এত প্রশ্নই বা উঠছে কেন? সহজ উত্তর। প্রশ্নটা উঠেছে এই কারণে যেÑ ক্রিকেট তো বাংলাদেশের মানুষের কাছে শুধু মাত্র একটি খেলা নয়। ক্রিকেট বিশ্বাস ও ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট হাসলে বাংলাদেশের মানুষও হাসে। এবারের ঈদ উৎসবে ক্রিকেটকে আনন্দের অন্যতম অনুষজ্ঞ করতে চেয়েছি দেশের মানুষ! কিন্তু সেটা হলো না।

তবুও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সকল সদস্যের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা রইলো। আজ সাফল্য আসেনি কিন্তু কাল নিশ্চয়ই আসবে এই প্রত্যাশা সবার। জয় হোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের।