Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা দরকার -ড. রুবানা হক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মোহাম্মদী গ্রæপ

ড. রুবানা হক বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় নারী উদ্যোক্তা । দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন বলে খ্যাত তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। শ্রমিক অধিকার, নারীর উদ্যোগ ও তৈরি পোশাক খাত প্রভৃতি বিষয়ে সোজাসাপ্টা কথা বলতে অভ্যস্ত একজন সদালাপী নারী তিনি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আনিসুল হক এর সহধর্মিনী। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজু আলীম।

আনন্দ আলো: আপনি বিশাল একটি সা¤্রাজ্য পরিচালনা করেন। খুব কম নারীই আছেন, এই রকম উচ্চ পর্যায়ে দক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পোশাক শিল্প নিয়ে আমাদের স্বপ্ন অনেক বড়। ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। আবার রানা প্লাজার মতো বিব্রতকর ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিক প্রেক্ষিতে আমাদের চ্যালেঞ্জটা কোথায়?

ড. রুবানা হক: প্রথমত আপনি আমার ক্ষেত্রে যতগুলো বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তার যোগ্য বোধকরি আমি নই। পোশাক খাতে আমাদের অগ্রগতি হলো- রানা প্লাজার মতো বিব্রতকর ঘটনার পরও পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে?  আমরা আমাদের বিল্ডিংগুলো শক্ত করেছি, আগুন নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। সব মিলিয়ে মোটামুটিভাবে যদি বলেন, সবচেয়ে কমপ্ল্যায়েন্ট সরবরাহকারী হিসেবে আমরা নিজেদের দাবি করতে পারি। মুশকিলটা অন্য জায়গায়- মুশকিলটা হলো যে, আমরা কম রেটে কাজ করি, তাই আমাদের মূল্য সংযোজন নাই এবং এই ভ্যালু এডিশনের জন্যে যতটুকু আরএনডি করতে হবে, এটিও আসলে আমরা ঠিকমতো করতে পারছি না। কারণ যারা বিদেশি তারা মনে করেন যে, আমরা বেটার প্রোডাক্ট করতে পারব না। ধরেন, একজন ক্রেতা এসে বললেনÑ এই শার্টটি দেখেন। দেখে এই শার্টটি কপি করে দেন। যদি বড় থাকে তাহলে একটু ছোট করে দেন তা না হলে তো আমি আবার কপি রাইটের ঝামেলায় পড়বো। এই হলো সাধারণ অঙ্গভঙ্গি পোশাক শিল্পের ক্রেতাদের। এই কারণে আমরা অনেক গুটিয়ে গেছি আসলে। ভালো পণ্য তৈরি করতে পারছি না। আরএনডি তে বিনিয়োগ করছি না। যার কারণে আমাদের ভালো ফ্যাশন ইন্সটিটিউট নেই। একটি আছে- ওটিও এত ভালো না। ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি ২০২১ সালে আমরা পৌঁছাব কি না এই প্রশ্নের জবাবে চাঁচাছোলা উত্তর দেই, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না। ২০১৩ সালে যখন রানা প্লাজার ঘটনা ঘটেছিল তখন এই ডিক্লিয়ারেশনটা তৎকালীন আমাদের বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট অনেক সাহসের সঙ্গে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতা বুঝতে হলে আমাদের মানতে হবে অনেক অবকাঠামোগত দুর্বলতা আছে। নতুন অনেক কারখানা হয়েছে- গ্যাস নাই, বিদ্যুত নাই। এই জায়গাগুলোতে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছি। কাজেই বিশাল বিশাল কারখানা আমরা করছি অনেকেই ব্যাংকের টাকা নিয়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছাব তা বলা মুশকিল। আমি বলব ২০২১ সাল নাগাদ ৩৫/৩৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।

আনন্দ আলো: আইটি সেক্টরে করণীয় কি?

ড. রুবানা হক:  আমরা কৃষিও শুরু করেছি এবং সেটি খুব ইন্টারেস্টিং। আমরা সব সময়ই বলি যে, বয়সের একটা বিরাট সুবিধা আছে। আমার ছোট মেয়ে হঠাৎ করে দেখলাম পঞ্চগড়ে গিয়ে জমি কিনছে। আমি বললাম, কেন তুমি এটা করছো? ও বলল, আমি অর্গানিক চা রপ্তানি করব। যদিও আমার কর্তাবাবু এতে রাজি না, মেয়ে তাও আবার কৃষি কাজে যাবে। আমি কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাকে উৎসাহ দিচ্ছি। কারণ আমি মনে করি এটি খুব ভালো সেক্টর কাজ করার জন্যে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, সাড়ে নয়শো কোটি টাকা প্রণোদনা দেবে যারা নতুন করে চা উৎপাদনে যাবে। যখন দেখি ছোটছোট ছেলে-মেয়েরা এমন চিন্তা করছে তখন আমি খুব আশান্বিত হই। আর আইটি নিয়ে আমাদের অনেক বন্ধু বান্ধব যারা সিলিকন ভ্যালিতে থাকতো তারা অলরেডি কিন্তু দেশে চলে এসেছে এবং আইটি সেক্টরে কাজ করছেন। তার মানেই হলো হাওয়া কিন্তু বদলাচ্ছে। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। আইটিতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। এরপরে হয়তো আমরা অন্য কিছু করবো। ধরেন, ওয়ালটনের মতো আরও ১০/১৫টি প্রতিষ্ঠান যদি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের চেহারাই বদলে যাবে। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও বড় বড় কাজ করা সম্ভব। আমাদের আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা দরকার।

আনন্দ আলো: আপনার হাতে হঠাৎই দায়িত্বটা চলে আসে। আনিসুল হক সাহেব নিজে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সবকিছু দেখাশোনা করতেন। তিনি তো এখন ঢাকার মেয়র।আপনার উপরে কি এখন কাজের চাপটা খুব বেশি এখন?

ড. রুবানা হক:  না, এইখানে আপনার ভুলটা ধরিয়ে দেই। গেল ২০ বছর ধরে আমি ব্যবসা করি এবং আমার স্বামী কিন্তু আপনাদের সঙ্গে বসে এফবিসিসিআই এবং বিজিএমইএ পরিচালনা করেছেন। আমাদের একজন ক্রেতাও তার নাম জানেন না। না আমাদের তিনি গার্মেন্ট ডিভিশন দেখতেন, না তিনি রিয়েল এস্টেট দেখতেন? কিছুই দেখেন না, শুধু তিনি কিছুদিন আমাদের এনার্জি বিভাগ দেখতেন। বহু বছর শুধু লাগেজ এ স্যাম্পল ভরে ক্রেতার দ্বারে দ্বারে ঘুরে উদ্যোক্তা হয়েছি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, দুটো জায়গায়। আমাদের গার্মেন্ট এ ৮০ শতাংশই কিন্তু নারী শ্রমিক। কিন্তু এই সেক্টরে উদ্যোক্তা কিন্তু তিনজনও নেই। আরেকটি ব্যাপার হলো- আমরা এত নারী অধিকার নিয়ে কথা বলি কিন্তু যখন ট্রেড ইউনিয়নে যাই সেখানে একজনও নারী নেত্রী নাই।  এত নারী শ্রমিক রয়েছে কিন্তু নারী সুপারভাইজার নাই, নারী নেত্রী, নারী উদ্যোক্তা নাই তার মানে আপনারা পুরুষেরা সমানে আমাদের শোষণ করে চলেছেন। আর এই ধরনের অপপ্রচার চলছে যে, উনি চালাতেন কিন্তু এখন তিনি মেয়র তাই এখন ইনি চালান। অথচ ২০ বছর ধরে আমিই ব্যবসা করছি।