Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বাহুবলী প্রেম সিনেমার নতুন যুগ শুরু!

রেজানুর রহমান

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলেও যায়। এই বদলের প্রক্রিয়ায় তথ্য প্রযুক্তির ভ‚মিকাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায় তথ্য প্রযুক্তি ডমিনেট করছে গোটা পৃথিবীকে। চলচ্চিত্রের কথাই যদি ধরি তাহলে এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে একটাই নাম উচ্চারিত হচ্ছে বাহুবলী-টু। দক্ষিণ ভারতের বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক রাজমৌলীর নতুন ছবি বাহুবলী-২: দ্য কনক্লুশন ভারত সহ সারা পৃথিবীতে মুক্তির মাত্র ৩ দিনের মাথায় আয় করেছে ৫০৬ কোটি রুপি। এর মধ্যে ভারতে ৩৮৫টি কোটি এবং বিদেশে ১২১ কোটি রুপি। সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং চমকপ্রদ তথ্য হলো ছবিটির টিকিট সংগ্রহের জন্য ভারতের হায়দরাবাদে নেকলেস রোডের প্রসাদ আইম্যাক্স থিয়েটার হলের সামনে দর্শকের ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন পড়েছিল। ২৮ এপ্রিল ভারতসহ গোটা পৃথিবীতে ছবিটি মুক্তি পায়। কলকাতায় হলে ছবিটি দেখার জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উল্লেখযোগ্য দর্শক কলকাতায় গিয়েছিলেন। ঢাকার একটি পরিবারের উদ্যোগে উড়োজাহাজ ভাড়া করে কলকাতায় ছবিটি দেখতে যাওয়ার খবরও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ও চমকপ্রদ তথ্য হলো বাহুবলীর অন্যতম অভিনেতা প্রভাসকে বিয়ে করার জন্য ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৮ হাজার নারী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীর সিনেমা জগৎ এই মুহূর্তে বাহুবলীর প্রেমে মশকুল। সব শেষ খবরÑ ব্যাংককে মাদাম তুসো জাদুঘরে বাহুবলীর নায়ক প্রভাস-এর মোমের ভাস্কর্য স্থান পেতে যাচ্ছে। এব্যাপারে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের ঘোষণা শুনে বাহুবলীর পরিচালক এস এস রাজমৌলী টুইটারে লিখেছেন, “মাদাম তুসো আমাদের প্রভাসের মোমের ভাস্কর্য স্থাপন করবে এটা বড়ই আনন্দের খবর। প্রভাসই প্রথম দক্ষিণ ভারতীয় যিনি এই সম্মান পাচ্ছেন। শুনেছি ব্যাংককে ভাস্কর্যটি উম্মোচন করা হবে। তারপর ভাস্কর্যটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরিয়ে আনা হবে। এটি হবে প্রভাসের জন্যতো বটেই বাহুবলীর জন্যও বিরল সম্মান।

ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে বড় পর্দার সিনেমা নিয়ে যখন অনেকটাই হা হুতাশ শুরু হয়েছিল তখন পৃথিবীব্যাপি বাহুবলীর জয়জয়কার প্রমাণ করে সিনেমার আসল জায়গা সিনেমা হল। তা নাহলে একটি সিনেমার টিকেট সংগ্রহের জন্য চার কিলোমিটার লম্বা লাইন পড়বে কেন? কি আছে বাহুবলী সিনেমায় যা দেখার জন্য অনেকের ঘুম হারাম হবে। টিকেট না পাওয়ার কারণে অনেকে হা-হুতাশ করবে? আসলে কি আছে বাহুলীতে? একটা সিনেমাই তো! একটি বড় পর্দা। তাতে কিছু ছবি ভেসে উঠলো। চেয়ারে বসে আছেন কিছু দর্শক। এর মধ্যে নতুনত্ব কী? বাহুবলীতে কি এমন আছে যে তা দেখার জন্য টিকেটের ৪ কিলোমিটার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে?

এটাই হলো কোটি টাকার প্রশ্ন। উত্তরটা খুবই সহজ। বাহুবলী সময়কে গুরুত্ব দিয়ে বানানো একটি সিনেমা।  যে সিনেমা টিভি অথবা মোবাইলে দেখে তৃপ্তি মিলবে না। এই সিনেমা দেখতে হলে দর্শককে সিনেমা হলে যেতেই হবে। কেন সিনেমা হলে গিয়েই ছবিটি দেখতে হবে? এই প্রশ্নটা যদি কেউ করেন তারও সহজ উত্তর আছে। অতীতকালে একটি হল ঘরকে অন্ধকার করে রেখে সিনেমা দেখানোর প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল। অন্ধকার হল ঘরের সামনে সাদা পর্দায় সিনেমার চরিত্রেরা আসে যায়। গান গায়, কথা বলে। হাসে, কাঁদে। দৌড়ায়। মোবাইল ফোন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবির্ভাব ঘটায় সিনেমা চলে এলো হাতের মুঠোয়। হাতে মোবাইল ফোন থাকলেই হলো। যেখানে খুশি সেখানে বসে সিনেমা দেখার অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্ট হলো। ফলে সিনেমা হল বিমুখ হতে থাকলো দর্শক। বাসার টেলিভিশন সেট অথবা মোবাইলেই যদি পুরো সিনেমা দেখা যায় তখন কি প্রয়োজন কষ্ট করে সিনেমা হলে যাবার? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রাজমৌলীর বাহুবলী এমন একটি সিনেমা যা দেখতে হলে, দেখে আনন্দ পেতে হলে সিনেমা হলেই যেতে হবে। অবশ্য এ জন্য সিনেমা হলটিকে হতে হবে আধুনিক প্রযুক্তিমান সমৃদ্ধ। কারণ বাহুবলীর নির্মাণ ধারায় আছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। অভিনয় ও নির্মাণ শৈলী তো বটেই। পাশাপাশি আলো, ক্যামেরা ও শব্দের খেলায় ছবিটি এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে ছবি দেখতে হলে বড় পর্দার সামনে বসতেই হবে। আর পর্দা মানেই সিনেমা হল।

বাহুবলী দেখার পর মনে হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির প্রকৃত ছোঁয়া না পাওয়ায় বাংলাদেশের সিনেমা এখনও অনেকটা আদিম যুগেই পড়ে আছে। যদিও চরম প্রতিক‚লতার মধ্যে দাঁড়িয়েও অনেক তরুণ পরিচালক আমাদের চলচ্চিত্রের আঙিনায় আলো ফেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সঠিক জায়গায় সেই আলো পড়ছে না।

নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশে যারা সিনেমা বানান এবং যারা সিনেমা দেখেন তারা প্রায় সবাই কোনো না কোনো ভাবে বাহুবলী দেখে ফেলেছেন। দক্ষিণ ভারতের তরুণ অভিনেতা প্রভাস আমাদের জনপ্রিয় অনেক তারকার চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। হয়তো কেউ কেউ হা হুতাশ করতেও শুরু করেছেন আহারে- আমরা যদি বাহুবলীর মতো এরকম একটা সিনেমা বানাতে পারতাম? তার মানে আমরা কি পারি না? অবশ্যই পারি। উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের ক্রিকেট, আমাদের গার্মেন্টস শিল্প, আমাদের আইটি সেক্টর। ক্রিকেটে পারলে চলচ্চিত্রে কেন নয়?

Bahubali-5শুরুতে বলে ছিলাম যে কোনো ক্ষেত্রে সময়টাই আসল। এখন বস্তির ঘরেও আছে স্মাট ফোন। আছে রঙিন টিভি। আছে ডিশের সংযোগ। কর্মশ্রান্ত হয়ে রাত দুপুরে বাসায় ফিরে অনেকে বিনোদনের খোরাক পেতে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখে। দেশের টিভি, বিদেশের টিভিতে চোখ ধাঁধানো অনেক অনুষ্ঠান। তখন আর রমনা পার্কে বেঞ্চির ওপর বসে বাদাম চিবুতে চিবুতে নায়ক-নায়িকার প্রেমের তথাকথিত সংলাপ অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করে না। মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সকল স্তরেই একথা প্রযোজ্য। অবশ্য উচ্চবিত্তের কাছে ফ্যান্টাসি অনেক আনন্দের। কারও কারও কাছে রগরগা বিনোদন অনেক আকর্ষণীয়। ‘ছোট হয়ে এসেছে আমাদের পৃথিবী’ এই ¯েøাগানটা যখন থেকে কার্যকর হলো তখন থেকেই বদলে যেতো দেশে-দেশে সংস্কৃতির ধারাও। কয়েকদিন আগে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে পড়লাম বাঙালি নারী এখন আর শাড়ি পছন্দ করে না। অনেকের পছন্দের পোশাক সালোয়ার-কামিজ। এটাও সময়ের দাবি। কিন্তু একথাতো সত্য মানুষই সময়কে বদলায়। আবার সময় বদলে দেয় মানুষকে। তবে যে যত আধুনিক ও মেধাবী সে সময়ের কাছে বন্দী হয় না। বরং সময়ই তার কাছে বন্দী হয়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাহুবলী সিনেমা।

যুগের দাবিকে অস্বীকার করা যাবে না। মোবাইল ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গোটা পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। সিনেমার ক্ষেত্রেও একটা বদল দরকার। যার সূচনা করেছে বাহুবলী। এখন দেখার পালা আমরা বাহুবলী থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করি।

 

প্রভাস সম্বন্ধে এই ১০ তথ্য আপনি জানেন?

বক্স অফিসে আপাতত চলছে বাহুবলী ঝড়। অনেক হিসেবই ইতোমধ্যে ভেঙে দিয়ে মাত্র ১০ দিনে (রিপোর্ট লেখার দিন পর্যন্ত) ছবিটির আয় প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। বিশ্বজুড়ে সিনেপ্রেমীদের মুখে এখন একটাই নাম। প্রভাস। ‘বাহুবলী’র তারকা। প্রভাস সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন? এমন কিছু তথ্য হয়তো আছে, যা আপনার অজানা। আসুন জেনে নেই প্রভাসকাব্যÑ

 প্রভাস দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। ১৫ বছরের কেরিয়ারে বহু হিট তেলুগু ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।

এস এস রাজামৌলির সঙ্গে ২০০৫-এ ‘ছত্রপতি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন প্রভাস। তারপরই এই জুটি ‘বাহুবলী’র দুটো পর্ব তৈরি করে।

 পাঁচ বছরের জন্য ‘বাহুবলী’ সিরিজে চুক্তিবদ্ধ প্রভাস। চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ে আর অন্য কোনও ছবিতে সই করেননি তিনি।

 ‘বাহুবলী: দ্য কনক্লুশান’-এ দ্বৈত চরিত্রে দেখা গিয়েছে প্রভাসকে। সে কারণে প্রথমে ২২ কিলোগ্রাম ওজন বাড়ালেও পরে তা কমিয়ে ফেলেন তিনি।

 প্রভাস পড়তে খুব ভালবাসেন। অবসরে যে কোনও বই পড়াটা তাঁর নেশা। বাড়িতে নিজস্ব লাইব্রেরিও রয়েছে।

 জিম করার থেকে ফ্রি-হ্যান্ড এক্সসারসাইজ বেশি পছন্দ করেন প্রভাস। ‘বাহুবলী’র যুদ্ধের দৃশ্যে রিফ্লেক্স ঠিক রাখার জন্য নাকি নিয়মিত ভলিবল খেলতেন তিনি।

 প্রভাস স্বভাবে বেশ লাজুক। অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে তাঁর প্রবল অস্বস্তি হয়। ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে প্রভাস অন্যতম যিনি এত বিখ্যাত হওয়া সত্তে¡ও তাঁকে নিয়ে গসিপ প্রায় নেই বললেই চলে।

 ‘বাহুবলী’তে অভিনয় করার পর প্রায় ছ’হাজার বিয়ের প্রস্তব পেয়েছেন প্রভাস। কিন্তু ব্যস্ততা থাকার কারণে আপাতত বিয়ে নিয়ে কিছুই ভাবছেন না।

‘বাহুবলী’র শুটিং চলার সময় প্রচুর বলিউডি ছবির অফার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন। ১০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের অফারও নাকি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রভাস। তাঁর ডেডিকেশন দেখে মুগ্ধ গোটা ইন্ডাস্ট্রি।

খাঁচায় পাখি পোষার ঘোর বিরোধী প্রভাস। নিজের বাড়ির বাগানে পাখিদের ছেড়ে রাখতে পছন্দ করেন তিনি।

 

আরও কিছু অজানা তথ্য

 প্রভাস নামেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু আসল নামটি বেশ জটিল। ভেঙ্কট সত্যনারায়ণ প্রভাস রাজু উপ্পালাপতি। হ্যাঁ, খাতা-কলমে এটাই প্রভাসের আসল নাম।

 দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তুমুল জনপ্রিয় হলেও অজয় দেবগণ আর সোনাক্ষী সিনহার সঙ্গে বলি ডেবিউ করেছেন প্রভাস। বলিউড ছবি ‘অ্যাকশন জ্যাকসন’-এর একটি গানে অতিথি হিসেবে পারফর্ম করেছিলেন ‘বাহুবলী’।

বাহুবলীতে প্রভাসের পেশীবহুল শরীরের প্রেমে মজেননি এমন ফ্যান কমই আছেন। কিন্তু এই শরীরের পিছনের আসল রহস্যটা জানেন? ‘বাহুবলী’র পরিচালক ছবির শুটিং শুরুর আগে শরীরচর্চার জন্য ১.৫ কোটি টাকার জিমের সরঞ্জাম উপহার দিয়েছিলেন প্রভাসকে।

২০১০ এর মিস্টার ওয়ার্ল্ড, লক্ষণ রেড্ডি ‘বাহুবলী’ ছবির জন্য তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

অভিনয় তার তো পেশা। কিন্তু ভলিবল খেলা তাঁর নেশা।