সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
-হাফিজুর রহমান খান, চেয়ারম্যান, রানার গ্রুপ অব কোম্পানীজ
রেযা খান: দেশের অটোমোবাইল শিল্পের ক্ষেত্রে অতি পরিচিত নাম রানার। সম্প্রতি বাংলাদেশে মোটর সাইকেল তৈরি ও বাজারজাত করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে রানার গ্রুপ। নিজস্ব প্রযুক্তিতে মোটর সাইকেল তৈরি এবং ভবিষ্যতে তা আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। রানার মোটর সাইকেলের গুণগত মান, দাম এবং সামগ্রিক কর্মকান্ড নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান।
‘মোটর সাইকেল আমদানীকারক দেশ থেকে রপ্তানীকারক দেশে বাংলাদেশ যেতে পারলো, এই সফলতা কিভাবে এলো?’ এই প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান খান বলেন- ‘আমরা যখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম যে, আমরা মোটর সাইকেল নিজেরাই তৈরি করব। তখন থেকে মূলতঃ পরিবর্তনটা দেখা দেয়। এই দেশে মোটর সাইকেলের বাজার যখন থেকে সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে তখন থেকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিও বাড়তে শুরু করেছে। মাথা পিছু আয় বাড়তে শুরু করেছে তখনই আমরা দেখলাম আমাদের চাহিদা এক লাখ পার হলো। তখনই মনে হলো এখানে একটা ইন্ডাষ্ট্রি প্রতিষ্ঠা করা যাবে। সেই থেকেই মোটর সাইকেল তৈরির চিন্তা শুরু করেছি আমরা।’
‘কোন সালে আপনারা ইন্ডাষ্ট্রি করেছেন?’ প্রশ্নের জবাবেণ্ড হাফিজুর রহমান খান জানান- ‘আমরা ২০০৭ সালে প্রথম এক অংশ স্থাপন করি। বাকীটা বিদেশ থেকে নিয়ে আসতাম। এক পর্যায়ে ২০১১ সালে আমরা ইন্ডাষ্ট্রি সম্পুর্ণ করি এবং ২০১২ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়।’
‘এখন কি আপনারা পুরো মোটর সাইকেল তৈরি করেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘লোহার যত জিনিস হয় সব তৈরী করি এখানে। একটা মোটর সাইকেলের বড় অংশই হলো আয়রন অব ষ্টিল জাতীয় জিনিস। এর বডি থেকে শুরু করে চেসিস সবকিছুই আয়রন ষ্টিলের। ভেন্ডার ডেভলপ করেছি প্লাষ্টিক আইটেমের জন্যে।’
‘এইটা কি লোকালি হয়?’ হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘লোকালি হয়। কিন্তু আমরা নিজেরা করি না। ভেন্ডার থেকে করি, তাদের কাছ থেকে নেই আর কি। চারটা আইটেমের জন্যে সিট, প্লাষ্টিক আইটেমের জন্যে ইনডিকেটর, হেড লাইট, চেন- এগুলো টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট আমরা দিয়েছি তারা ইন্ডাষ্ট্রি করেছে ফরিদপুরে, দিনাজপুরে তারা সাপ্লাই করে। আর অন্যান্য অংশগুলো এখনো আমদানী হয়। পর্যায়ক্রমে এগুলো যাতে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা যায় কিংবা ভেন্ডারদের দ্বারা করে নিতে পারি সেই প্রক্রিয়া চলছে।’
‘এখন মোটর সাইকেল এর বাজার কি রকম অবস্থায় আছে?’ প্রশ্নের উত্তরে হাফিজুর রহমান খান বলেন- ‘বর্তমানে মোটর সাইকেল এর বাজার উঠা নামার অবস্থায় আছে?’
‘মোটর সাইকেলের চাহিদা কি বাড়ছে নাকি কমছে?’ হাফিজুর রহমান খান বলেন- ‘বাড়ছে, বাড়তে বাড়তে ২০০০-২০১১ সাল পর্যন্ত নিয়মিভাবে গড় প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ছিল। কোন বছর কম আবার কোন বছর বেশি। ২০১১ সালের পরে রাজনৈতিক অবস্থা বা বিভিন্ন কারণে মার্কেট কমে প্রায় অর্ধেক এর কাছে চলে যায়। ২০১১ সালে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মোটর সাইকেলের মার্কেট হয়ে গিয়েছিল। তারপরে কমে আবার দেড় লাখে চলে আসে। কিন্তু তারপরে পর্যায়ক্রমে আবার বাড়ছে। গত বছর থেকে এই বছর মার্কেটের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ বেড়েছে।’
‘আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কতোটা মার্কেট শেয়ার করছে?’ হাফিজুর রহমান খান এমন প্রশ্নের উত্তরে জানান, ‘দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রানার ই প্রধান। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে। মোটর সাইকেলের বাজারের ২০ শতাংশ দেশীয় কোম্পানী এবং ৮০ শতাংশ আমদানী করতে হচ্ছে।’
‘আপনি কি মনে করেন এক সময় আমরা পুরো বাজার দখল করতে পারবো?’ এই প্রশ্নের জবাবে দৃঢ়তার সঙ্গে হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘অবশ্যই, এখন যেসব কোম্পানী আমদানী করছে- তারা এই দেশেই তৈরি করবে এবং এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। যেমন, হোন্ডা বা্ংলাদেশে ফ্যাক্টরি করবে। এই ব্যাপারে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। অন্য কোম্পানীর কারখানা নির্মাণের জন্যে কাজ শুরু করেছে।’
‘এতে তো প্রতিযোগিতা বাড়বে?’ হাফিজুর রহমান খান বলেন- প্রতিযোগিতাকে আমরা সবসময় উৎসাহিত করি। প্রতিযোগিতা থাকলে কাজ ভাল হয়। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকা অবশ্যই ভাল।’
‘এই ধরণের প্রতিযোগিতায় আসারও তো যোগ্যতা লাগবে?’ হাফিজুর রহমান খান বলেন- ‘হ্যা, বিনিয়োগ করতে হবে। ভেন্ডার উন্নয়নের এর কাজ চলছে। অটোমোবাইল শিল্প এমন একটি শিল্প যার সাথে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প জড়িত। এই খাতগুলো গড়ে উঠছে আস্তে আস্তে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও একশোটা ভেন্ডার গড়ে উঠবে।’
‘আপনি মোটর সাইকেল রপ্তানীর পর্যায়ে কেমন করে গেলেন?’ এই প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন- ‘যে কোন একটা লক্ষ্য নিয়ে মানুষ কাজ করে। আমরা যখন মোটর সাইকেল তৈরির কথা চিন্তা করেছি সেই সময়ই আমরা চিন্তা করেছি আমরা বিশ্ববাজারে যাব। প্রথমে আমরা স্থানীয় মার্কেটে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’
‘দাম কমিয়ে নাকি মান এবং দাম দুইটা মিলিয়ে আপনি বাজার ধরার চেষ্টা করছেন?’ হাফিজুর রহমান খান মৃদু হেঁসে উত্তর দেন- ‘ প্রস্তুত কারকের প্রথম লক্ষ্য থাকে সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌছে দেয়া। সাথে এটাও মাথায় রাখতে হয় কোন ধরণের পণ্য ক্রেতা পছন্দ করবে। ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্য তৈরী করি আমরা। আবার রপ্তানীর ক্ষেত্রে কিন্তু ভিন্ন দেশের ক্রেতার চাহিদা পূরণ করতে হয়। এটা জানা এবং সেই অনুপাতে পণ্য তৈরি করতে হয়। এই সব বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি এবং আগামীতে আমরা আরও ভাল মানের মোটর বাইক তৈরি করবো। আমরা বর্তমানে আফ্রিকার বাজার নিয়ে কাজ করছি। দেশে দেশে ক্রেতাদের চাহিদা ভিন্ন রকম। এই সব বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।’