Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

পার্বত্য জনপদে সম্প্রীতির মেলা

পার্বত্য জনপদের সংস্কৃতি ও জীবনমানকে উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে প্রতি বছর চ্যানেল আই-এর উদ্যোগে বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠে লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। এবার ছিল এর ষষ্ঠ আয়োজন। এ উপলক্ষে পার্বত্য জনপদে উৎসবের ঢেউ লেগে ছিল। পারিবারিক ভাবে দল বেঁধে মেলায় এসেছেন অনেকে। বিশেষ  করে মেলায় পার্বত্য এলাকার ১৬টি নৃ-গোষ্ঠীর অংশ গ্রহন ছিল বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন করা হয় পার্বত্য এলাকার প্রিয় দর্শিনীকেও। মেলার মূল স্পন্সর ছিল কিউট। এই নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন-

পার্বত্য জনপদে মানুষে মানুষে এ যেন এক মহা মিলন মেলা বসেছিল সেদিন। বান্দরবানের ঐতিহাসিক রাজার মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যে দিকে চোখ যায় শুধুই মানুষ আর মানুষ। শুধু মাঠেই নয় মাঠের চার পাশের বাসা-বাড়ির ছাদে, গাছের উঁচু ডালে যেখানেই চোখ যায় শুধুই হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণোচ্ছ্বল মানুষেরই মুখ যার যেমন সামর্থ্য তেমনই সেজে গুজে এসেছে। মেলা যেখানে সেখানে সাজগোজ তো থাকবেই কিন্তু কিউট চ্যানেল আই আয়োজিত বান্দরবানের এই লোকজ মেলায় স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের সাজগোজ আর আন্তরিক অনুভবের প্রকাশটা যেন একটু বেশিই ছিল। চ্যানেল আই-এর উদ্যোগে ষষ্ঠবারের মতো এই পার্বত্য লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। অন্যবারের চেয়ে এবার এলাকার মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আর মেলাকে ঘিরে পারস্পরিক সম্প্রীতির আলো যেন ছিল আরও বেশি উজ্জ্বল। পার্বত্য লোকজ মেলা উপলক্ষে গোটা পার্বত্য এলাকায় রীতিমত আনন্দ উৎসবের ঢেউ খেলে যায়। রাজার মাঠে মেলার মূল মঞ্চে পার্বত্য এলাকার প্রায় সকল নৃ গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা ছিল লোকজ মেলার অন্যতম আকর্ষণ।

সম্পর্কিত

Parvota-Lokojo-Mela-1দিনটি ছিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কিন্তু গোটা পার্বত্য এলাকা জুড়ে সাজ সাজ রব। সকাল ১১টায় বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে পার্বত্য লোকজ মেলার উদ্বোধন পর্বেই বেজে ওঠে আনন্দের সুর। বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলীর পরিচালনায় চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদেগান রাজের শিল্পীদের যৌথ কণ্ঠে যখন ভেসে ওঠে দেশের গান তখনই চ্যানেল আই-এর কল্যাণে শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কোটি কোটি বাংলা ভাষাভাষি মানুষ মুহূর্তে একাত্ম হয়ে যান পার্বত্য লোকজ মেলার সঙ্গে। গুণী উপস্থাপক ফারজানা ব্রাউনিয়ার মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স মেলার উদ্বোধন পর্বে চ্যানেল আই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈ শ্য হ্লা, চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, মৌসুমী ইন্ড্রাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল, ইউনিভার্সেল ফুড লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসাইন ও পার্বত্য লোজক মেলার প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান বক্তৃতা করেন। উদ্বোধন পর্বে মে হ্লা প্রু ও চতৈসহ স্থানীয় শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। গুণী শিল্পী ফেরদৌস আরার কণ্ঠে দেশের গান ছিল উদ্বোধন পর্বের বিশেষ আকর্ষণ। বেলা ১২ টায় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

বিকেল সাড়ে ৩টায় বান্দরবানের রাজার মাঠে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ততক্ষণে রাজার মাঠ ও এর আশে-পাশের এলাকায় হাজার হাজার মানুষের আনন্দ মুখর উপস্থিতিতে রীতিমত সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। মেলা মাঠে বসেছে লোকজ পণ্যের পসরা নিয়ে বিভিন্ন স্টল। সব মিলিয়ে মাঠের কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এমনই পরিবেশে রাজার মাঠে মেলার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈ শ্য হ্লা। এসময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জুবায়ের সালেহীন এনডিইউ, পিএসসি, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজা, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো: ইসলাম বেবীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের বক্তৃতা পর্ব শেষে ফারজানা ব্রাউনিয়ার উপস্থাপনায় শুরু হয় পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চাকমা, গারো, বম, মণিপুরী, ত্রিপুরা, খাসিয়া, হাজং, রাখাইন, লুসাই, খিয়াং, খুমি, চাক, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, মারমাসহ প্রায় ১৬টি নৃ-গোষ্ঠীর পক্ষে শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।

Parvota-Lokojo-Mela-2Parvota-Lokojo-Mela-3শেষে ছিল পার্বত্য এলাকার প্রিয়দর্শিনী নির্বাচনের জন্য এক বিশেষ প্রতিযোগিতা পর্ব। পাবর্ত্য এলাকার প্রায় প্রতিটি নৃ- গোষ্ঠীর মেধাবী প্রতিনিধি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন জনপ্রিয় চিত্র নায়ক ফেরদৌস, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী খুরশিদ আলম ও পার্বত্য লোকজ মেলার প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহমান। বিচারকদের রায়ে মারমা সম্প্রদায়ের মেধাবী প্রতিনিধি মা ম্যা চিং মউ পার্বত্য প্রিংদর্শিনী ২০১৭ নির্বাচিত হন।

ততক্ষণে সময় অনেকটা পেরিয়ে গেছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এসেছে। কিন্তু জনতার ঢল এতটুকু কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে। মেলার স্টলগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছিল। রাতে মনোজ্ঞ ফায়ার ওয়াক্সের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। তখন দর্শকের মুখে মুখে শুধুই চ্যানেল আই ও কিউট-এর প্রশংসা। আবার দেখা হবে আগামী বছর স্বপ্নের এই কথাটাই মুখে মুখে ছড়িয়ে যাচ্ছিল…

উল্লেখ্য, মেলার নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আমিনুল ইসলাম রাজু, প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে হাবিবুল হুদা, প্রযোজক হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান নান্টু, কবীর দর্পন ও সেহাঙ্গেল বিপ্লব দায়িত্ব পালন করেন।