সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
দেখলে মনে হবে আরে এতো বাংলাদেশেরই কোনো কিশোর। শীতের পোশাক পরা হাসি-খুশি প্রাণবন্ত চেহারা। বিপুল আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করে চলেছে। কিন্তু না, সে বাংলাদেশের কিশোর নয়, ভারতের। থাকে কলকাতায়। বাবা মা ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের শিশুতোষ সিনেমা ‘ছোটকাকু’ দেখে দারুণ উচ্ছ্বসিত। সে একা নয় উৎসবে আগত বিপুল সংখ্যক কিশোর-কিশোরী ও তাদের বাবা-মায়েরাও ছোটকাকু সিরিজের সিনেমা দেখে মুগ্ধ। সকলের অভিন্ন মন্তব্য-আমাদের এখানে বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা দেখার কোনো সুযোগ নাই। অথচ বাংলাদেশ যে কত সুন্দর, বাংলাদেশের সিনেমা যে কতটা আধুনিক তা ‘ছোটকাকু’ দেখে আবার বুঝলাম। ঢাকা ও কলকাতা দুই জায়গারই ভাষা এক। হাজার বছরের সংস্কৃতিরও মিল রয়েছে। কাজেই কলকাতা ঢাকার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের উদ্যোগ আরও জোরদার ও আন্তরিক হওয়া জরুরি।
কলকাতার নন্দনের ৩টিসহ শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সদনের ৫টি মিলনায়তনে শুরু হয়েছে ৮ দিন ব্যাপি এই আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবে বাংলাদেশ-এর ৪টি ছবিসহ বিভিন্ন দেশের ৩০০টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে উৎসবে অংশ নেয়া ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর ৪টি ছবি হলো- বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও নাট্যকার ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা ও নন্দিত নির্মাতা আফজাল হোসেন নির্মিত ছোটকাকু সিরিজের ৩টি ছবি যথাক্রমে ‘কক্সবাজারের কাকাতুয়া, লেট করে সিলেটে ও রাত বিরাতে সাতক্ষিরাতে এবং বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের কাহিনি অবলম্বনে তাহের শিপন পরিচালিত ‘একাত্তরের নিশান’। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছোটকাকু সিরিজের ‘কক্সবাজারের কাকাতুয়া’ প্রদর্শিত হয়। এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছোটকাকু সিরিজের স্রষ্টা ফরিদুর রেজা সাগর, নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা কণা রেজা, অভিনেত্রী অর্ষা এবং একাত্তরের নিশান-এর পরিচালক তাহের শিপন। বাংলাদেশের সিনেমা ছোটকাকু সিরিজের কক্সবাজারের কাকাতুয়া দেখে মিলনায়তন ভর্তি পনেরশ’ দর্শক দারুণ খুশি হয়েছেন। কিশোর-কিশোরীরা বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। অভিভাবকদের মধ্যে অনেকে বলেছেন, আমাদের এখানে (কলকাতা) ‘ফেলুদা’ সিরিজ বেশ জনপ্রিয়। তেমনই বাংলাদেশের ছোটকাকু সিরিজের ছবি দেখে দারুণ আনন্দ পেলাম। ক্ষুদে দর্শকদের মন্তব্য, এখন থেকে ছোটকাকু সিরিজের বই চাই এবং ছোটকাকু সিরিজের সিনেমা নিয়মিত দেখতে চাই।
উৎসব উপলক্ষে আয়োজক পশ্চিমবঙ্গ শিশু-কিশোর একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিদিনের একটি বুলেটিনে ছোটকাকু নিয়ে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি ছিল এরকম- “জমজমাট উৎসব চত্বর। বড়দিন উপলক্ষে ‘সিনে-মজা’ উপভোগ করতে ষষ্ঠ কলকাতা আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনে কচিকাঁচাদের ভিড়ে ছয়লাব ছিল নন্দন প্রাঙ্গণ। রবিবার উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ‘বাংলাদেশের ফেলুদা’ অর্থাৎ ‘কক্সবাজারের কাকাতুয়া’ ছবিটিকে উপস্থাপন করতে আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন বিশিষ্ট অতিথি ফরিদুর রেজা সাগর যিনি শুধু এই বিখ্যাত সিরিজ ছোটকাকুর লেখকই নন, সেই সঙ্গে প্রযোজকও। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পরিচালক তাহের শিপন, যাঁর পরিচালিত ‘একাত্তরের নিশান’ও দেখানো হচ্ছে এই উৎসবে। উপস্থিত ছিলেন ছোটকাকু সিরিজের ছবিগুলোর পরিচালক আফজাল হোসেন। দর্শকদের মুখোমুখি হলেন এই ছবির প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর, অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা এবং পরিচালক আফজাল হোসেন। শিশু কিশোর একাডেমির পক্ষ থেকে সচিব গৌতম গাঙ্গুলী তাঁদের সংবর্ধিত করেন। এরপর অতিথিরা উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে এই সিরিজের ছবিগুলোর নির্মাণের প্রেক্ষাপট এবং সেগুলো কীভাবে দর্শকদের ছুঁয়ে গেছে সে বিষয়ে নানা কথা জানালেন।’
আমাদের বিশ্বাস কলকাতায় এবার আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের সিনেমা ও সাহিত্য নিয়ে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তা বেগবান করতে সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ শুরু হবে। বাংলা চলচ্চিত্রের জয় হোক।