Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শত তরুণের ভারত ভ্রমণ ইতিহাসের আয়নায় বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা

পাশের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল ওরা। কেউ পেশায় সাংবাদিক, কেউ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী, কেউ অভিনয় শিল্পী, সঙ্গীত তারকা, মডেল, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী। তরুণ লেখক, প্রকাশকও আছেন তাদের দলে। ওরা ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারতের বিভিন্ন এলাকা দেখতে গিয়েছিল। ভারত কি আমাদের পাশের বাড়ি? হ্যাঁ, পাশের বাড়িই তো। মাঝখানে শুধু কাঁটাতারের বেড়া। ভারত বাংলাদেশ সীমানেৱ এমন বাড়িরও অস্থিত্ব আছে যার একটি ঘর পড়েছে বাংলাদেশে আর অন্য ঘর ভারতে। কাজেই ভারত আর বাংলাদেশ পাশের বাড়িই তো। কিন্তু ঐ যে কাঁটাতারের বেড়া, সেজন্য একবাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে অনুমতি লাগে। ভিসার প্রয়োজন হয়। ওদেরও ভিসা লেগেছে। কিন্তু ও বাড়িতে অর্থাৎ ভারত ঘুরে চলমান জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ আর বিস্ময়কর এক স্মৃতির পাহাড় এঁকে ফেলেছে ওরা। ইতিহাসের আয়নায় বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার ভারতকে নতুন করে দেখেছে সবাই। যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে লাগবে। ৭ দিনের এই আনন্দ ভ্রমণে বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক ও তথ্য) রাজেশ উইকে। সফরের চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আর প্রতিনিধিদলের প্রদর্শক ছিলেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের সমন্বয়ক (গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি) কল্যাণ কানিৱ দাস। ভারত থেকে ফিরে বিসৱারিত লিখেছেন সৈয়দ ইকবাল

বাংলাদেশের একশ তরুণ-তরুণীর ভারত দর্শনের শুরুটা একটু অন্যরকমই হলো। জেট এয়ারে বসে আকাশ থেকে পাখির চোখে যে দীর্ঘ পাহাড়শ্রেণি দেখা দিল উত্তর-পশ্চিম কোণে, তার তুলনা কেবল ছবিতে দেখা মনলোভা হিমালয়, অন্নপূর্ণা কিংবা কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গেই হতে পারে। ফ্লাইট ১ ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ায় অরেঞ্জ ও আপেল জুস শাহজালাল আনৱর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনালেই অপেক্ষমান বিমানে পরিবেশন করেন কেবিন ক্রুরা। পরে হাফ ডান ওমলেট, চিকেন নাগেট, বনরুটি, পেঁপে, তরমুজসহ মজাদার ফ্রেশ খাবারও পরিবেশন করা হয় বিমানে। একশ জনের দলে বিভিন্ন মিডিয়ার তরুণ সাংবাদিক, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিনয় শিল্পী, মডেল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক-প্রকাশকের মধ্যেকারও কারও ক্ষেত্রে এটাই প্রথমবার বিমানে ওঠা, প্রথম দেশের বাইরে যাওয়া। সেটা তাদের উত্তেজনা দেখে টের পাওয়া যাচ্ছিলো।

সম্পর্কিত

India-Tourবিমান উড্ডয়নের পর এক পর্যায়ে হিমালয় দেখার সময় ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক… পড়লো অনবরত। সেই সঙ্গে ডানে বামে জানালার পাশে সিট পরিবর্তন করার হিড়িক শুরু হলো। আকাশ থেকে হিমালয় দেখা! সত্যি অসাধারণ এক অনুভূতি! নীলাকাশে পাহাড়চূড়া সাদা বরফে ঢাকা। সৌন্দর্য কখনও কখনও বিস্ময়কর হয়। সেরকমই বিস্ময় জাগাল হিমালয় কন্যা।

ইন্ডিয়া গেট টু মেট্রোরেল: সোয়া দুই ঘণ্টা আকাশে উড়ার পর দুপুরে দিল্লির ইন্দিরাগান্ধী এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে আমাদের বিমানটি। ভারত সফরের প্রথম দিন লাঞ্চ শেষে নয়াদিল্লিতে প্রতিনিধিদলের সকল সদস্যকে দেখান হলো ভারতের জাতীয় জাদুঘর। যেখানে রয়েছে ভারতের অতীত ইতিহাসের কালজয়ী সব তথ্য। আরো রয়েছে ভারতের পুরাতত্ত্ব, মুদ্রা, মানব বিবর্তন, কারুশিল্প ও বস্ত্র বীথির যাবতীয় ইতিহাস। ভারতবর্ষের শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস-সভ্যতা জানার জন্য জাদুঘরে সংক্ষিপ্ত চক্কর। অবশ্য যে জাদুঘর দেখার জন্য সময় প্রয়োজন কয়েকদিন, তাতে আমরা সময় পেলাম মোটে ঘণ্টাখানেক। ২ লাখ শিল্পকর্ম রয়েছে এখানে, যার মধ্যে অনেকগুলো ৫ হাজার বছর আগের। এগুলোই জাদুঘরের প্রাণ। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে রয়েছে প্রাক-সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ। কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সাজান হয়েছে জাদুঘরটি। স্থাপত্যশিল্প, শিলালিপি, বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের জন্য আলাদা ভাগ, এন্টিকস, জুয়েলারি, নৃতত্ত্ব, ব্রোঞ্জশিল্প, কাঠশিল্প, কয়েন প্রভৃতির আলাদা কক্ষ। মুঘল, ব্রিটিশ শাসনামলের নানান নিদর্শন, ইতিহাস হয়ে রয়েছে জাদুঘরটিতে। পাথর, ব্রোঞ্জ, টেরাকোটার দুর্লভ সংগ্রহ সমৃদ্ধ করেছে জাদুঘরটিকে।

জাতীয় জাদুঘর দেখার পর আমরা সবাই ছুটলাম ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া গেট দর্শনে। এই সেই ইন্ডিয়া গেট যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত হয়। এদেশের মানুষ যে কতটা দেশপ্রেমিক তা ইন্ডিয়া গেটে এসে বুঝা গেল। কারণ প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ইন্ডিয়া গেটে হাজার হাজার মানুষ জুড়ো হন শুধু শহীদদের স্মরণ করার জন্য। ইন্ডিয়া গেটে আরেকটি বিষয় বেশ লক্ষণীয় ছিল তা হলো- অনেক পিতা-মাতা তাদের সনৱানদের নিয়ে আসেন শুধু এই ইতিহাস জানানোর জন্য। ৪২ মিটার উঁচু গেটটির ডিজাইনার নতুন দিল্লির ডিজাইনারদের মধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ এ স্থপতির নাম এডউইন। সন্ধ্যা গড়াতেই যেন অন্যরকম সুন্দর রূপ নিল গেটটি। লাল ভরতপুর পাথরের মিশ্রণে গড়ে ওঠা এ স্থাপনায় গ্রানাই ও বালিপাথরও ব্যবহার করা হয়েছে। গেটের চূড়ায় বড় করে লেখা ইন্ডিয়া ও ভারত। খিলানের গায়ে খোঁদাই করা আছে ১৩ হাজারের বেশি ব্রিটিশ ও ভারতীয় সৈন্যের নাম। নয়াদিল্লির প্রধান প্রতীক হয়ে ওঠা এ গেট একেক সময় একেক রূপ পায়। ইন্ডিয়া গেট দর্শনের পর আমরা চলে যাই মেট্রোরেলের রোমাঞ্চিত সময় উপভোগ করার জন্য। কতটা নিয়ম মেপে মানুষ চলতে পারে তা মেট্রোরেলের যাত্রীদের দেখেই বোঝা গেল।

India-Tour-1গান্ধীর সমাধিসৌধ এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ: ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন ছিল আরো রোমাঞ্চিত এবং স্মৃতিময়। দ্বিতীয় দিন সকালে দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধ, ঐতিহাসিক লালকেল্লা, দিল্লি জামে মসজিদ দেখান হলো আমাদেরকে। দুপুরে লাঞ্চ শেষে সবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার জন্য। কড়া নিরাপত্তা এবং তল্লাশী বিষয়ক আনুষ্ঠানিকতা পার করে আমরা সবাই রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজায়। লাল গালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনা পার হয়ে আমরা প্রবেশ করলাম রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরে। ভবনটিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সকলে একবাক্যে বলে উঠলেন, ‘ওয়াও’…। চোখ ধাঁধানো সাজসজ্জা এবং ভারতীয় নানান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা এই ভবনটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সকলে মুহূর্তেই যেন আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। দরবার হলটি চারটি বড় গম্বুজের নকশাকাটা। রাষ্ট্রপতির চেয়ারের পিছনে উপর পর্যনৱ ডিজাইন করা মখমল কাপড়ের ছাউনি। ঠিক পিছনেই অশোকচক্র। চেয়ারের ডান-বামে দুইটি আয়না পদ্মপাতার আদলে। তার পাশে দু’ধারে মহাত্মা গান্ধীর বড় দুটি হাতে আঁকা প্রোট্রেট। সামনে শ’তিনেক চেয়ার। সেখানে বসা অতিথিরা।

নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর লাল গালিচায় হেঁটে এসে আসন নিলেন সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সবার প্রিয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। একটু বাদেই ডায়াসে দাঁড়িয়ে একগ্লাস পানি মুখে দিয়ে স্বাগত জানালেন অতিথিদের। ভারত-বাংলাদেশ দুদেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে শুরু করলেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। বললেন- ১৯৩১ সালে এই দরবার হল তৈরি। ১৯৪৭ এর আগ পর্যনৱ চারজন ব্রিটিশ ভাইসরয় থেকেছেন এ ভবনে। প্রায় ২শ বছর শাসন-শোষণের পর লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন জওহর লাল নেহেরুর হাতে এখানেই (নিজের চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে) ক্ষমতা হসৱানৱর করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। আমাদের দেশের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যাসহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ২০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলাদেশেরও প্রায় তাই। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নতুন নয়। বহুদিনের সম্পর্ক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু দুই দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন বলে নন, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্‌দীনও আমাদের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক। পদ্মা, গঙ্গা, কপোতাক্ষও তাই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। দুই দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্পর্কের বিকাশে তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। জানান বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা। এভাবে একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের তরুণদের শুভেচ্ছা জানান তিনি।

সপ্তম আশ্চর্য তাজমহল এবং আগ্রা ফোর্ট দর্শন: তৃতীয় দিন প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করে আগ্রার তাজমহল ও মূঘল শাসকদের নির্মিত আগ্রার দুর্গ বা আগ্রাফোর্ট। দিল্লি থেকে ভোরের কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আগ্রার উদ্দেশ্যে বাসে রওয়ানা দেই আমরা। চমৎকার রাসৱা দিয়ে চারটি বাস দ্রুত গতিতে ছুটে চলে তাজমহল দর্শনের জন্য। সবার মধ্যে বেশ উত্তেজনা। হতেই হবে। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য হচ্ছে এই তাজমহল। যুগ যুগ ধরে মুঘল সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক তার স্ত্রী মমতাজের জন্য নির্মিত এই আশ্চর্য ভবনটি দেখতে যাওয়ার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দিয়েছে সবার মাঝে। সাই করে ছুটে চলা বাসগুলো কুয়াশার চাদরে মোড়া গ্রামের পথ-ঘাট পেরিয়ে যাচ্ছে। তিন ঘণ্টার বাস জার্নি শেষে আমরা এসে পৌঁছালাম আগ্রার তাজমহলে। বায়ু দূষণকারী যানবাহন তাজমহলের কাছে আসা নিষিদ্ধ। তাই, পর্যটকদের গাড়ি রাখার স্থান থেকে পায়ে হেঁটে উটের গাড়িতে চড়ে অথবা বৈদ্যুতিক বাসে করে তাজমহলে আসতে হয়। আমাদেরকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে করেই তাজমহলে প্রবেশের গেটে নেয়া হলো।

যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমরা কি সত্যি তাজমহলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হ্যাঁ, সত্যি দাঁড়িয়ে আছি। ওয়াও… বলে সবাই মুঠোফোন এবং ক্যামেরায় ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে দেখা শুরু হলো ইতিহাসের অন্যতম এই নিদর্শন। প্রতিটি দলে একজন করে ট্যুরিস্ট গাইড দেয়া হলো।

তাজমহল মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন। এর নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত। তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ মহল-এর মৃত্যুতে প্রচণ্ডভাবে শোকাহত হয়ে পড়েন। মমতাজ মহল তাদের চতুর্দশ কন্যা সনৱান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাজমহলের নির্মাণ কাজ মমতাজের মৃত্যুর পর পরই শুরু হয়। মূল সমাধিটি সম্পূর্ণ হয় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে এবং এর চারদিকের ইমারত এবং বাগান আরও পাঁচ বছর পরে তৈরি হয়। পূর্ববর্তী মুঘল ইমারতসমূহ তৈরি হয়েছিল লাল বেলে পাথরে। কিন্তু সম্রাট শাহজাহান চালু করেছিলেন সাদা দামি মার্বেল পাথরের প্রচলন। যে পাথর সূর্যের আলোতে একেক সময় একেক বর্ণ ধারণ করে। সকালে তাজমহল খুব উজ্জ্বল সাদা দেখালেও দুপুরে দেখা যায় ক্রীম কালার। আবার রাতে চাদর আলোতে তাজমহল হালকা গোলাপি রং ধারণ করে। তাজমহলের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে। তাজমহল তৈরি হয়েছে সারা এশিয়া এবং ভারত থেকে আনা বিভিন্ন উপাদান সামগ্রী দিয়ে। নির্মাণ কাজের সময় ১,০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল নির্মাণ সামগ্রী বহন করে আনার জন্য। আলো-প্রবাহী অস্বচ্ছ সাদা মার্বেল পাথর (যার নাম ছিল মাখরানা) আনা হয়েছিল রাজস্থান থেকে, ইয়াশ্‌ব্‌- লাল, হলুদ বা বাদামি রংয়ের মধ্যম মানের পাথর আনা হয়েছিল পাঞ্জাব থেকে। চীন থেকে আনা হয়েছিল ইয়াশ্‌ম্‌- কঠিন, সাদা, সবুজ পাথর এবং স্ফটিক টুকরা। তিব্বত থেকে বৈদূর্য- সবুজ-নীলাভ (ফিরোজা) রঙের রত্ন এবং আফগানিসৱান থেকে নীলকানৱমণি আনা হয়েছিল। নীলমণি (উজ্জ্বল নীল রত্ন) এসেছিল শ্রীলঙ্কা এবং রক্তিমাভাব, খয়েরি বা সাদা রংয়ের মূল্যবান পাথর এসেছিল আরব থেকে। এই আটাশ ধরনের মহামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেল পাথরের উপর বসানো রয়েছে। সাদা মার্বেল পাথর খোদাই করে তাতে এসব রঙিন দামি পাথর বসানোর ডিজাইনটি সম্রাট শাহজাহান সংগ্রহ করেছিলেন ইটালি থেকে। বিশেষ ধরনের এ ডিজাইন তৈরির কাজকে বলা হয় পিয়েট্রা ডিউরা। কথিত আছে তাজমহল নির্মাণের পর এর কারিগরদের আঙ্গুল কেটে নেওয়া হয় যাতে অন্য কেউ দ্বিতীয় তাজমহল নির্মাণ করতে না পারে। ইতিহাস থেকে জানা যায় তাজমহল নির্মাণে ২০,০০০ শ্রমিকের ২২ বছর সময় লেগেছিল।

India-Tour-3তাজমহল দর্শন শেষে পুরো টিম চলে আসে আগ্রাফোর্টে। তাজমহল যদি আগ্রার হৃদয় হয়, আগ্রাফোর্ট তার হৃদস্পন্দন। ইতিহাস, প্রেম ও স্বপ্নকে বুকে ধারণ করেই আগ্রার দিনযাপন। মমতাজ-বিরহে সিক্ত হয়েই তো প্রেমিক শাহজাহানের উত্থান। তাজমহল? সেতো বিরহেরই অশ্রুমালা। কিন্তু প্রেমেরও তো আছে রকমফের। নর-নারীর প্রেমই তো সর্বস্ব প্রেম নয়। আছে প্রকৃতির প্রেম, মানবপ্রেম, ক্ষমতার প্রেম আরো কত কি! মুঘল সাম্রাজ্য তো নর-নারীরপ্রেম আর ক্ষমতা প্রেমেরই এক উপাখ্যান। হয়তো সব সম্রাটের জীবনেই এরকম কাহিনি থাকে। জাহাঙ্গীর বা সেলিমের জীবনে যেমন এসেছিল নূরজাহান, শাহজাহানের জীবনেও এসেছিলেন মমতাজ। আর আনারকলিকে তো জীবনের বিনিময়েই রক্ষা করতে হয়েছিল মুঘল শান-শওকত। নিজের জীবনের বিনিময়ে সেদিন রক্ষা করেছিলেন শাহজাদা সেলিমের জীবনও।

ক্ষমতার এ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছেন বাবরের সব উত্তরাধিকারীরাই। হুমায়ুন থেকে শুরু করে এ ধারাবাহিকতা বজায় ছিল বাহাদুর শাহ পর্যনৱ। পিতার বিরুদ্ধে পুত্র, পুত্রের বিরুদ্ধে পিতা, ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই- ক্ষমতা দখলের এ ফয়সালা রণাঙ্গনেও গড়িয়েছে কম না। আর মুঘল সাম্রাজ্যের সব কিছুই হয়েছে এই আগ্রাফোর্ট-এ। আগ্রাফোর্ট এখনো অনেক জীবনৱ। আগ্রা শহরের ঠিক মাঝখানেই আগ্রাফোর্ট অবস্থিত। পুরনো আর নতুনের মাঝে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আগ্রাফোর্ট।

স্বাগতম গুজরাট-আহমেদাবাদ: গুজরাট-আহমেদাবাদ- এ এসে প্রথমেই গান্ধী আশ্রম পরিদর্শন করলাম আমরা। সবরামতী নদীর তীরে ছায়াঘেরা এই আশ্রমে মহাত্না গান্ধী ছিলেন বহুদিন, অসহযোগ আন্দোলনের জন্মও হয়েছিল এই আশ্রমে। গান্ধীজির নিজের ব্যবহৃত চরকা দেখে মনে পড়ে স্বদেশি আন্দোলনের কথাও। শানৱ নিস্তরঙ্গ নদীর পাশের চৌচালা একটি ঘর থেকেই শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ রাজ বিতাড়নের নীল নকশা। গান্ধীর আশ্রমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একশ তরুণের চোখে-মুখে এসব কথা খেলা করতে থাকল। বর্তমানে আশ্রমটিতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের কলতানে মুখরিত থাকে। গান্ধীর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে একটি প্রজন্ম। পাশেই গান্ধী মিউজিয়াম।

আমরা এবার যাই টাটা ম্যানুফ্যাকচারিং- এ। টাটা গাড়ি তৈরির কারখানা পরিদর্শন করে বাংলাদেশী যুবার দলটি বিস্মিত হয়। একটি গাড়ি কীভাবে তৈরি হয় তা এই ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ না করলে কোনোভাবেই জানা হতো না এই তরুণ দলের। অভিজ্ঞতাটি সত্যিই অসাধারণ। এরপর আমরা যাই গুজরাট টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে অংশ নেই প্রীতি ফুটবল ম্যাচে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেখানো হয় ভারত-বাংলাদেশের সংস্কৃতির নানা দিক। আরো ছিল গুজরাটের আহমেদাবাদে নান্দনিক‘স্টেপ ওয়েল’, ধীরুভাই আম্বানি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে গড়ে তোলা জাদুঘর ‘ডান্ডি কুটির’ ঘুরে দেখা। আরো ছিল গুজরাটে বসে কাহানি-২ মুভি দেখার আনন্দঘন মুহূর্তও।

সুর-বাদ্যে বাংলাদেশ-ভারতের সংস্কৃতি বিনিময়: ভারতের পশ্চিমের শহর, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এলাকা আহমেদাবাদের গুজরাট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমাদের ভ্রমণ কার্য্যক্রমের দিন সন্ধ্যায় এল জে কলেজ ক্যাম্পাস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় দু’দেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বিনিময়। অনুষ্ঠানটি আহমেদাবাদে হওয়ায় ভারতের শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য দেয় মূলত গুজরাটি সংস্কৃতিকে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আগে ক্যাম্পাসের খেলার মাঠে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আমাদের টিম শুরুতে এক গোলে এগিয়ে থাকলেও পরে ৩-১ গোলে হেরে যায়। খেলা শেষে সন্ধ্যার পর মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গুজরাট টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজুল গাজ্জাল, যুব মন্ত্রণালয়ের রিজিওনাল ডিরেক্টর কমল কুমার, বিশ্ববিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্বেতা বাম্বুওয়ালা, অনুষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর সিএস সাঙ্গুভি, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া) কল্যাণ কানিৱ দাশ প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানের পর মিকি মাউস, ছোটা ভিমসহ কয়েকটি কার্টুন চরিত্রের মিমিক্রি করে মঞ্চ মাতান শিক্ষার্থী আরশাভি ভুজ। তার পরিবেশনায় লতা মুঙ্গেশকর, ঊষা উত্থুপ ও কণিকা রাওয়ের গান-কথার অংশটিও ছিল দারুণ উপভোগ্য।

এরপর ঘোষণা আসে মঞ্চে লাইভ চিত্রাঙ্কন হবে। জয়দ্বীপ বাড়ৈ সাদা কাগজ সরিয়ে কালো ক্যানভাসে শুরু করেন রংয়ের খেলা। সেই বিখ্যাত গান ‘গিভ মি ফ্রিডমের’ সঙ্গে  তাল মিলিয়ে মানুষের মাথা সদৃশ চিত্রটি মিনিট দুয়েক পর উল্টে দিলেন। সোজা হওয়ার পর সবাই তো থ। কি আশ্চর্যের বিষয়, এতো আইনস্টাইন! সব মিলিয়ে মাত্র তিন মিনিটে অসাধারণ একটি পেইন্টিংস এঁকে তিনি তাক লাগিয়ে দিলেন সবাইকে।

রবিন জোসেফ মঞ্চে এসে গুজরাট, মুম্বাই, সাউথ ইন্ডিয়া, রজনীকানেৱর বিট বক্সিং শো করেন। পরে স্বীকৃতি আবার ফিরিয়ে নিয়ে যান ক্ল্যাসিকালে।

গান শেষ হতেই গুজরাটের ট্র্যাডিশনাল পোশাকে একদল বাজিয়ে তুললেন ঢোল, করতাল, বাঁশির ঝংকার, ট্র্যাডিশনালের পাশাপাশি বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের সুর তুলে মাতিয়ে রাখলেন কিছুক্ষণ। পরে গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী গারবা নৃত্য দেখে সত্যি মন ভরে যায় সবার। যেমন সংগীত, তেমনই নান্দনিক নৃত্য।

ভারতীয়দের পর্ব শেষ হলে মঞ্চে দলীয় সংগীত নিয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশনের একদল সদস্য। অতুল প্রসাদের ‘আমি বাংলার গান গাই’ দিয়ে শুরু করে সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী দিয়ে শেষ হয়। মাঝে  চলে কয়েকটি গানের সিনক্রোনাইজিং। এরপর আরিক আনাম খানসহ আরো দুই তরুণ কবিতা আবৃত্তি করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজু রায় তার সহপাঠীকে নিয়ে সেলফির সেলফি শিরোনামে যে মুকাভিনয় পরিবেশন করেন তা মুগ্ধ করে দর্শকদের। হালের সেলফি ম্যানিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তার  বাস্তব দৃশ্য নাট্য ছিল এ পারফরম্যান্সে। সবশেষে নৃত্য পরিবেশন করেন, নাজিবা বাশার, ইমা, প্রিষুতি, সোমা ও শারমিন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান শেষে খোলা মাঠে ডেলিগেশন টিম ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গোল হয়ে একত্রে নেচে-গেয়ে দু’দেশের সাংস্কৃতিক হৃদতা বাড়ায় আরও।

এবং কলকাতা ভ্রমণ: সপ্তম দিন ভোরে আহমেদাবাদ থেকে বিমানে উড়াল দিয়ে আমরা আসি কলকাতায়। সকাল নয়টায় কলকাতা এয়ারপোর্টে নেমেই সোজা চলে যাই স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িতে। এরপর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এ। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন নিয়ে কলকাতায় দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সত্যিই মুগ্ধ করেছে সবাইকে। ব্রিটিশ শাসনামলের নানান অধ্যায়, তখনকার কলকাতার দৃশ্যসহ দুইশ বছরের ইংরেজ শাসনের পুরো চিত্রই রয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এ। ১৯০১ সালে ৯৪ বছর বয়সে মহারানী ভিক্টোরিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে সাদা মার্বেল পাথরের এই ভবনটি নির্মিত হয়। লর্ড কার্জন এই স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৯০৬ সালের ৪ জানুয়ারি এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রিন্স অফ ওয়েলস হিসেবে ভারত সফরে আসা পরবর্তীকালের রাজা পঞ্চম জর্জ এবং ১৯২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলস ও পরবর্তীকালের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড। ৬৪ একর জমির উপর লন, পুকুর, গুল্মরাজি ও লতাপাতায় ঘেরা বিশাল উন্মুক্ত অঙ্গনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংস্থাপিত।

এই মিউজিয়ামে আছে বিভিন্ন সময়ে ভারতবর্ষে আসা বিখ্যাত ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রতিকৃতি। আছে কেশবচন্দ্র সেন,  মাইকেল মধুসূদন দত্ত,  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর পিতামহ  দ্বারকানাথ ঠাকুর এর প্রতিকৃতি। এছাড়াও আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিভিন্ন নিদর্শনাদি, যেমন- রানী মেরী, পঞ্চম জর্জ ও অন্যনদের আবক্ষ মূর্তি, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে দখলকৃত ফরাসি কামান ইত্যাদি।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধান আকর্ষণীয় বসৱু হলো- রানী ভিক্টোরিয়ার বিশাল একটি মূর্তি। এর দুদিকে রয়েছে দুটি সদৃশ্য জলাশয়। এই মূর্তিটি থেকে পানির চারটি ধারা চারটি পথে প্রবহমান, যা ভারতের চার প্রধান নদী- সিন্ধু, গঙ্গা, যমুনা ও কৃষ্ণার প্রতীক। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বর্তমানে বহু চিত্রকর্ম,  প্রাচীন পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলের বহু স্মৃতি বহন করে চলেছে। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৩,৫০০টি নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে কলকাতায় পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল।

শেষ দিন আমরা ইডেন গার্ডেন, প্রিন্সেস ঘাট সৌধ ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যাই। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি অর্থাৎ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই কানে ভেসে এলো রবীন্দ্রসঙ্গীত। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি প্রতিকৃতি। এরপর সিঁড়ি বেয়ে ঠাকুর বাড়িতে প্রবেশ করতেই অদ্ভুত এক ভালোবাসা ও মায়া পেয়ে বসে সবাইকে। কারণ এই সেই বাড়ি যেখান থেকে বিশ্বকবির জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। বাড়ির রান্নাঘর, স্নানের ঘর, কবির লেখার ঘর, আড্ডার ঘর, পারিবারিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঘর এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ঘরটিও এখনো তেমন করেই সাজানো রয়েছে। কবির ব্যবহৃত অনেক জিনিসপত্রও আছে সাজানো। আরো রয়েছে কবির ব্যবহৃত গাড়িটিও। পাথরের একটি টেবিলের দিকে সকলের চোখ আটকে গেল। কারণ এই টেবিলে বসেই কবি লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব গান-কবিতা-গল্প ও উপন্যাস। সেই টেবিলটিতে যেন কবির স্পর্শ এখনো লেগে আছে। আরো রয়েছে কবির বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের তালিকা, হাতে আঁকা ছবি ও হাতে লেখা বিভিন্ন কবিতার অংশ বিশেষ।