Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাড়ি সিক্যুয়েল বড় বাড়ি ছোট বাড়ি

একজন লেখক গত ১০ বছর ধরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বাড়ি’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের নাটক লিখছেন এটা বিশাল এক কাজ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকের ইতিহাসে অনেক গর্বের একটি বিষয়। ‘বাড়ি’ নিয়ে গত ১০ বছরে ১০টি নাটক প্রচার হওয়ার পর এবার প্রচার হলো- ১১ তম নাটক। প্রতিটি নাটকের গল্প যেমন হৃদয়স্পর্শী তেমনি আবেগ তাড়িত। যারা দেশকে ভালোবাসেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসেন তারা বাড়ি শিরোনামের নাটক দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নাটকে সাধারণত যুদ্ধ, বিভীষিকা, পাকবাহিনীর বর্ববরতা উঠে আসে কিন্তু ‘বাড়ি’ নাটকে এসবই সৃজনশীলভাবে প্রতীকী অর্থে উঠে আসে গল্পের মাধ্যমে। গল্প বলার মাধ্যমে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যিনি সফলভাবে  লিখে যাদু দেখান তিনি বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর ‘বাড়ি’ শিরোনামের নাটকের স্রষ্টা। তার এবারের নাটকের নাম ‘বড় বাড়ি ছোট বাড়ি’। এই নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। লিখেছেন জাকীর হাসান

এই ধরনের নাটক আরও বেশি হওয়া দরকারঅর্ষা

আনন্দ আলো: অর্ষার কাছে জানতে চাই মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘বড় বাড়ি ছোট বাড়ি’তে অভিনয় করার অনুভূতি আপনার কেমন?

Orshaঅর্ষা: নাটকে কাজ করতে আমি বরাবরই ভিশন পছন্দ করি, তবে ভালো মানের কোনো স্ক্রীপ্ট পেলে এবং ভালো কোনো লেখকের লেখা ও ভালো নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে অদ্ভুত একটা আনন্দ থাকে। ভালো স্ক্রীপ্ট হাতে পেলে বাসা থেকে প্রস্তুত হয়ে আসার তাগিত থাকে। গল্পটা আলাদা বা আমরা বিশেষ দিনের কাজ করছি এমন ভাবনা মনের মধ্যে তাড়া দেয়। তো সেই প্রস্তুতির জায়গা থেকে আমরা কিন্তু হোম ওয়ার্কটা করেই আসি। সেটে আসার পর ভালো কো আর্টিস্ট পাওয়া আরেকটা সৌভাগ্যের বিষয়। সব মিলিয়ে এই নাটকটি খুবই ভালো একটা প্রোডাকশন। নাটকটিতে সবার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আমার চমৎকার। নাটকের কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো হুড়োহুড়ি ছিল না। আরামে আরামে ঠান্ডা মাথায় কাজ করেছি। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই টিউনিংটা আমি অনেক সেটে মিস করি। সবসময় দেখা যায় নাটক করতে তাড়াহুড়া, হুমকি-ধমকি লেগেই থাকে। ভালো গল্প হলেও সুন্দর মতো কাজ করা সম্ভব হয় না। এবং তাদের মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়। তো মুক্তিযুদ্ধের এই নাটকটিতে অভিজ্ঞ অভিনেতা-অভিনেত্রী ভালো নির্মাতা আমার প্রিয় একজন লেখকের স্ক্রীপ্টে কাজ করা সৌভাগ্যের ব্যাপার। কাজ করে যথেষ্ট এনজয় করছি। আমি এমনিতেই বেছে বেছে কাজ করি, সেক্ষেত্রে আমার ভাগ্যটা সহায়ক হয় অনেক সময় এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

আনন্দ আলো: এই নাটকের লেখক ফরিদুর রেজা সাগরের জনপ্রিয় সিরিজ ছোট কাকুতে শুরু থেকেই কাজ করে আসছেন। সেই অভিজ্ঞতা তো কাজে লেগেছে?

অর্ষা: ঠিক বলেছেন, সাগর আংকেলের লেখা নাটকে কাজ করে আমি অভ্যস্থ। কোথাও কোথাও তার কাজের প্যাটার্ন সম্পর্কে আমার পোর্টেট চলে এসেছে। মোট কথা তার টোনটা আমি ধরতে পারি। বুঝতে পারি এই রকম একটা ডেলিভারী তিনি চাচ্ছেন। প্রথম যখন আমি ‘ছোটকাকু’ সিরিজে কাজ করি তখন তিনি বলেছিলেন তোমার কাজ আমার ভালো লেগেছে। এটা আমার জন্য বিশাল বড় একটা কমপ্লিমেন্ট।

আনন্দ আলো: মুক্তিযুদ্ধের নাটকে কাজ করা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি কেমন?

অর্ষা: মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার, মহান মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা এমন সুন্দর দেশটাই পেতাম না। আমরা যুদ্ধ না দেখলেও অনুধাবন করি। কতটা কষ্ট কতটা ত্যাগের মাধ্যমে এই দেশটা স্বাধীন হয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই বার্তাটা পৌঁছে দেয়া জরুরি। নতুন প্রজন্মের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে না পারলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও শক্তি এবং দেশকে ভালোবাসার তাগিদ পাবে না তারা।

বড় বাড়ি ছোট বাড়ি নাটকের কথা বলি, এ নাটকে যুদ্ধ বিগ্রহ নেই। আছে মুক্তিযুদ্ধের পরিবারের একটি অজানা গল্প। এই ধরনের গল্প একজন মানুষকে প্রচণ্ড নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আবেগ তৈরি করে। মুক্তিযুদ্ধের কমন বিষয় না হওয়ায় নতুন প্রজন্মেরও আগ্রহ সৃষ্টি হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছোট ছোট অনেক বিষয় আছে, ঘটনা আছে যেগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না। এই নাটকের গল্পটাও তেমন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়, একটি পুরনো বাড়ি যেটাকে ধরে সমসাময়িক কালের ঘটনাকে এবং দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব নিয়ে একটা জায়গায় এসে নাটকটি শেষ হয়। আমার কাছে এ নাটকের গল্পটি চমৎকার লেগেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় এখান থেকে শিখেছি। আমি যুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছি- সেই সময় একটি বাড়ি পুরো পরিবারকে এক সুতোয় বেঁধে রাখতে পারে, এটারও যে একটা ক্ষমতা থাকতে পারে এই স্ক্রীপ্ট না পড়লে বা এই নাটকে কাজ না করলে বুঝতাম না। আমাদের জেনারেশনে কিন্তু এই ধরনের গল্প জানার বা শোনার ক্ষেত্রে গ্যাপ রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের সবারই শ্রদ্ধাবোধের জায়গা আছে। সেই জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অত্যন্ত যত্নশীলভাবে আমি কাজ করি। সবার তাই করা উচিত।

আনন্দ আলো: আপনি বা নতুন প্রজন্মের যারা তাদের মুক্তিযুদ্ধের নাটকে কাজ করা বেশি জরুরি নয় কি?

অর্ষা: নতুন প্রজন্মের অভিনেতা অভিনেত্রীদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকে কাজ করা অবশ্যই জরুরি। তবে সব বয়সী শিল্পীর কিন্তু এ ধরনের নাটকে কাজ করা উচিত। কারণ যুদ্ধ করেছে যারা যুদ্ধ দেখেছে যারা তাদের সঙ্গে কাজ করলে মুক্তিযুদ্ধের আসল লুক ও টোনটা ধরতে পারবো এবং সত্যি ইতিহাসটা জানতে পারব। বড় বাড়ি ছোট বাড়ি নাটকে একজন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ আংকেল অভিনয় করেছেন তার কাছ থেকে ইতোমধ্যে অনেক যুদ্ধের গল্প শুনেছি। এটা আমার জন্য পরম পাওয়া এবং আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

আমরা নাটক, সিনেমা, বই, পত্র-পত্রিকা পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু যুদ্ধ কালীন সময়ের সত্য ঘটনা জানতে মুক্তিযোদ্ধাদের  সঙ্গে কাজ করা এবং তাদের মুখোমুখি হয় আসল গল্পটা জানা জরুরি। কারণ তারাই এখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।

আনন্দ আলো: ছোট কাকু সিরিজ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। আপনি অভিনয় করছেন সে সম্পর্কে বলুন?

অর্ষা: ২০১৭ সালের প্রথম দিকে সম্প্রতি ছোট কাকু কাজ শুরু হবে। এছাড়া আমি শাহারিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত অর্পিতা নামের একটি ছবিতে কাজ শুরু করেছি। ছবির প্রথম লটের কাজ শেষ হয়েছে। দুটো ছবিই ইমপ্রেসের।

আমি সিনেমা জার্নিটা একটু দেরিতে শুরু করেছি কারণ  আমি চেয়েছি আমার অভিনয় অভিজ্ঞতা বাড় ক এবং পলিসড হোক। যেহেতু আমার অভিনয়ে কোনো ব্যাক গ্রাউন্ড নেই, কোথা থেকে শিখে আসিনি। তাই এবার মনে হলো আমার সময় এসেছে সিনেমা করার আমি লাক্স চ্যানেল আই বিউটি কনটেস্টে রানারআপ হওয়ার পর বাবা মা দু’জনেই বলেছেন, তুমি একটি বিউটি কনটেস্টের মাধ্যমে অভিনয়ে এলে, স্ক্রীনে দেখতে চাই ঘষে মেজে ভালো একজন পারফরমার হয়ে উঠেছো। ৮/৯ বছর টিভি নাটকে অভিনয় করার পর এখন মোটামুটি সাহস পেয়েছি।

এইভাবেই সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিতে হবে

-চঞ্চল চৌধুরী

আনন্দ আলো: মুক্তিযুদ্ধের নাটক নিয়ে আপনার নিজস্ব অনুভূতির কথা জানতে চাই?

Chancal-CHowdhury-1চঞ্চল চৌধুরী: আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে নাটক ও চলচ্চিত্রে আরও বেশি কাজ হওয়া দরকার। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের আসল ইতিহাস ও সত্যটা জানা উচিত। অনেক সময় আমাদের ইতিহাস বিকৃত করা হয়, তাই সত্যটা উন্মোচিত হওয়া দরকার। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ স্বচক্ষে দেখেছেন, যারা গবেষনা করেছেন সরেজমিনে তার উপর ভিত্তি করে যে নাটক ও সিনেমা তৈরি হয় সেখানে কাজ করতে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে এবং বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক নাটক করা ইদানিং খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। কারণ ১৯৭১ সালের যে লুক সেটা সঠিকভাবে আনা যায় না। সেট ডিজাইন, প্রপস, পোশাক এগুলো সহজেই স্ক্রীনে আনা সম্ভব হয় না অভিজ্ঞ লোকের অভাবে এবং আমাদের সমৃদ্ধ আর্কাইভও নেই বলে। আর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকের বাজেটও কম। সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক করা খুবই দুসাধ্য।

আমরা আসলে একটি দুর্ভাগ্য জাতি, আমাদের অহংকার মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও নানান কিছু সংরক্ষণ করতে পারিনি। জাদুঘর, আর্কাইভ যেটাই বলি না কেন নাটক ও সিনেমার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান গুলোর সমন্বয় ঘটনার দরকার ছিল সেটা হয়নি। আজ থেকে পাঁচশ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও লেখা বই বেঁচে থাকবে। বই না হয় বিভিন্ন ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যাবে কিন্তু সেলুলয়েডের চিত্রগুলো তো হারিয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

আনন্দ আলো: মুক্তিযুদ্ধের নাটকে শিল্পীদেরও তো দায়বদ্ধতা আছে?

চঞ্চল চৌধুরী: অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে। এ সম্পর্কে আগে বলে নেই ‘বাড়ি’ সিক্যুয়েলের তিনটি নাটকে আমি অভিনয় করেছি। এবারের নাটকসহ আমি কিন্তু আমার অদম্য ইচ্ছা আর আন্তরিকতা নিয়ে এ নাটকে কাজ করছি। ফরিদুর রেজা সাগর ভাইয়ের লেখা এই নাটক বাড়িকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্নমাত্রার নাটক। চমৎকার এবং টানটান গল্প। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পারিবারিক সেন্টিমেন্ট রয়েছে নাটকগুলোতে। বাড়ি নাটকের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে একেবারে কাছ থেকে দেখা। এ ধরনের নাটকে যুদ্ধ দেখানো দরকার নেই। এখানে পরিবারকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের গল্পটাই জরুরি।

মুক্তিযুদ্ধের নাটকে কাজ করতে গিয়ে আমার সবসময় ভালো লাগে। এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাই। যদিও মুক্তিযুদ্ধের পর আমার জন্ম। যখন নাটকে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করি তখন ভেতরের মানুষটি জেগে উঠে। সেই মানুষটি মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে সম্মান করে এবং ভালোবাসে। এই জায়গা থেকে আলাদা একটা দায়বদ্ধতা বোধ করি।

আনন্দ আলো: নতুন প্রজন্মের কাছে নাটক সিনেমার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে পৌঁছে দেয়া যায়?

চঞ্চল চৌধুরী: এবারও প্রচুর মুক্তিযুদ্ধের নাটক প্রচার হবে বিভিন্ন চ্যানেলে। তার মধ্যে সব নাটকতো আর মানসম্পন্ন হবে না। অসংগতি হয়তো কিছু নাটকে থাকবে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নাটক অসংগতি ও মানহীন ভাবে নির্মাণ করা কোনো ভাবেই উচিত নয়। আমাদের বোধ হয় এ ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর ও সতর্ক হওয়া জরুরি। যারা মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও সিনেমা নির্মাণ করেন তাদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার ব্যাপারে নজর দেয়া দরকার। কারণ চলচ্চিত্রে ও নাটকে যদি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না থাকে, মান সম্পন্ন না হয় তাহলে নতুন প্রজন্ম তো ভুল ইতিহাস জানবে। প্রথমেই নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এইভাবে তাদেরকে সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধ কতটুকু জানে, তারা কীভাবে দেখতে চায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এই পাত্রে না সিনেমা নাটকে সেটা জানা খুবই জরুরি।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো- মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও, যাদের বিরুদ্ধে ৭১’এর মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তারা কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায়নি। বিরোধীরা এখনও সোচ্চার। তারা বারবার ছোবল মারার চেষ্টা করছে। নাটক সিনেমায় এই বিষয়গুলো খুবই সচেতনভাবে দেখানো উচিত। তবেই নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আকর্ষণ অনুভব করবে।

আনন্দ আলো: এবারের ‘বড় বাড়ি ছোট বাড়ি’ নাটকে কাজ করে কেমন লেগেছে?

চঞ্চল চৌধুরী: আগেই বলেছি মুক্তিযুদ্ধের নাটকে কাজ করতে গিয়ে আমার ভেতরের মানুষটি জেগে উঠে। আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগি। এই নাটকে কাজ করতে গিয়ে দারুণ লেগেছে। নাটকে আবেগ, অনুভূতি, সেন্টিমেন্ট ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সত্য ঘটনাবলী আছে যা নাটকটিকে সমৃদ্ধ করেছে। অভিজ্ঞ নির্মাতা অরুণ  চৌধুরী অত্যন্ত সুনিপুণভাবে নাটকটি নির্মাণ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ সময়কার পারিবারিক ঘটনাগুলো লেখক চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন

-রাইসুল ইসলাম আসাদ

ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাড়ি সিক্যুয়েলের দুটি নাটকে অভিনয় করেছি। তার একটি বাড়ির নাম স্বাধীনতা অন্যটি বড় বাড়ি ছোট বাড়ি। দুটি নাটকে অভিনয় করে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। আমি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা এক মুক্তিযোদ্ধা। সেই দিক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অভিনয় করতে সবসময় ভালো লাগে। বাড়ি সিক্যুয়েলের নাটকগুলোতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের পারিবারিক নানান ঘটনা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। আসলে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই ঘটনাগুলো আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে।

সাগরে ৫ বছর

অরুণ চৌধুরী

বিশেষ কারণে আমার মন ভালো নেই এখন। স্বাভাবিক জীবনে এক বিস্ফোরণ ঘটে গেছে! অনাকাঙিক্ষত। অপ্রত্যাশিত।

এলো বিজয়ের মাস।

জীবনে সার্থক, সফল, বিজয়ী, একুশে পদক পাওয়া শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর মনে জোর দিতে ডাকলেন। ডেকে বললেন, ‘বিজয়ী বাঙালিদের আখ্যানে যোগ দাও। আমার গল্প নিয়ে বিজয় দিবসের একটা নাটক বানাও যত্ন নিয়ে।’

এমন এক অসাধারণ গল্প বললেন তারপর, দীর্ঘ সময় নিয়ে, যে গল্প নিয়ে নাটক নির্মাণ করতে যত্নের অভাব ঘটবার সুযোগ নেই। সেটা ২০১২ সালের ডিসেম্বর।

কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুসৱাফার ভাষায়, ‘এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মায়ের ভূমিকায় কাজ করে আমি আনন্দিত। অভিনীত জীবনে চমৎকার এক নাটক। যে নাটকের কাহিনি মর্মস্পর্শী।’

নাটকটি ছিল, ‘এই বাড়ি সেই বাড়ি’।

সুবর্ণার একমাত্র ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গেল। বাড়ি দখল হয়ে গেল রাজাকারদের দ্বারা। সেই নিয়ে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা। আত্মাহুতি দিতে হলো- সুবর্ণাকে।

কারণ, মানুষ ধ্বংস হতে পারে। কিন্তু পরাজিত হয় না শেষ পর্যন্ত।

তেরো সালে আবারও ঘটলো বিজয়ের মাসে বাঙালিদের দেশ মুক্তির কাহিনি বয়ানের সুযোগ। সাগরের ‘বাড়ি’ প্রতীকের নাটক ‘গৌরবের সেই বাড়ি’। সাগরের এবারের গল্পের শিল্পী হলেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। কানাডা প্রবাসী মেয়েটি বাড়িতে ঘুরতে এসে জানলো তার বাবার মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ধ্বংস করা হবে গ্যাসকূপ খননের কাজে। মৌ তার প্রতিবাদে সঙ্গী পেলেন চঞ্চল চৌধুরীকে।

পরের বছরের কাহিনিটা অসামান্যভাবে এগোলো, দুই লোভী পুত্র আগুন আর আসিবের অহংকারের বাড়ি ভেঙে বহুতল বাড়ি তৈরির ঘটনায়। এখানেও কাহিনিকার ভাবলেন, পুত্রদ্বয়ের পিতা আবুল হায়াতের বিপরীত স্রোতে ছুটে যাওয়ার দৃঢ়চেতা আদর্শ নিয়ে।

২০১৫ সালে কাহিনিতে কাহিনিকার সাগর একটি ঐতিহ্যময় বাড়ির সঙ্গে এদেশের গৌরবময় স্বাধীনতার সংমিশ্রণ ঘটালেন। বাড়ির পাশের এক স্কুলের কিছু নিষ্পাপ শিশুর প্রশ্নবাণে জর্জর হয়ে আবুল হায়াত, শম্পা রেজা, রাইসুল ইসলাম আসাদ তিন ভাইবোন নাটকীয় মুহূর্ত শেষে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন দেশের স্বপ্ন আদর্শ কখনও ভেঙে গুঁড়ো করা যায় না।

পাঁচবারের মতো গল্পের পরিচালনা করতে গিয়ে দেখতে পেলাম, এবারের গল্প কাহিনিকার বিধৃত করলেন আগে আলোড়ন তোলার মধ্য দিয়ে। অন্যমাত্রায় চিন্তা সেই গল্পটির নাম ‘বড় বাড়ি ছোট বাড়ি’। এখানে বড় বাড়ির সদস্য চঞ্চলের বিয়ে অর্ষার সঙ্গে। বিবাহ অনুষ্ঠানের পূর্বে প্রস্তুতিতে বাড়ির ফুফু দিলারা জামান হাজির। বিপদ ঘটে গেল সেখানেই।

মফস্বল শহরের নিজস্ব বাড়ির আঙিনায় না করার পরামর্শ দিলেন তিনি চঞ্চল আর অর্ষাকে।

ফুফুর তালে তাল মিলিয়ে ওরা পরিকল্পনা করলো রাজধানীর চকচকে কোনো কনভেশন সেন্টার বা পাঁচতারা হোটেলে আয়োজন করবে। সেই টাকার যোগান ঘটবে বড় বাড়ি ভেঙে ছোট বাড়ি কেনার পদক্ষেপে।

পাঁচ বছরে টানা পাঁচ পাঁচটি ভিন্নমাত্রায় নাটক নাট্যরূপ পরিচালনা করার ঘটনার মধ্যে সামান্য নির্মাতার উপলব্ধি হলো নদী-খাল-বিলের বদল ঘটে, কোনোটি ক্ষীণ হয়। কোনোটিবা হয় কৃমাকার। দুর্বল। শুকিয়েও যায় কোনো কোনোটি। সমুদ্র সমুদ্রের ভূমিকায় থাকে। সাগর, কাহিনিকার ফরিদুর রেজা সাগর যেমন আছেন সমান সৃজনশীল মেজাজে। বিশাল সম চেহারায়।

বড় বাড়ি ছোট বাড়ি ২০১৬

বড় ভাই রাইসুল ইসলাম আসাদ। ছোট ভাই চঞ্চল চৌধুরী। ছোট ভাই বিয়ে করবেন প্রেমিকা অর্ষাকে। বিয়ে উপলক্ষে অন্য শহর থেকে বাড়িতে এলেন ফুফু দিলারা জামান। দিলারা জামানের পরামর্শে বড় বাড়িটা ভেঙে চঞ্চল যখন রাজধানীতে কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নেয় তখনই তৈরি হয় মনোমালিন্য। বড় ভাইয়ের আপত্তিতে ছোট ভাই ক্ষুব্ধ হয়। বড় বাড়িটা বিক্রি করে তার ভাগ নিয়ে শহরে দামি ফ্ল্যাট কিনতে যায়। গল্পের মোচড় এখানেই। অভিনয়ে দিলারা জামান, আফরোজা বানু, রাউসুল ইসলাম আসাদ, নীলা, চঞ্চল চৌধুরী, অর্ষা ও নরেশ ভুঁইয়া।

বাড়ির নাম স্বাধীনতা: ২০১৫

দশতম নাটকের নাম বাড়ির নাম স্বাধীনতা। এক বীর মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তান। বড় ছেলে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়, মেঝ ছেলে থাকেন কানাডায় এবং ছোট মেয়ে থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিন ভাই-বোন প্রতিবছর একবার করে দেশে আসেন। এবারও এসেছেন। তবে এবার তাদের দেশে আসার উদ্দেশ্য একটাই তাহলো বাবার রেখে যাওয়া পুরনো বাড়িটি ডেভেলপারকে দিয়ে মাল্টিস্টোরিড এপার্টমেন্ট করা। অসাধারণ কারুকার্যময় এই বাড়িটি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার হতো। মুক্তিযুুদ্ধের অনেক স্মৃতিময় এই বাড়িটি ভেঙে এপার্টমেন্ট করার সব প্রস্তুতি যখন শেষ তখনই ঘটে আচমকা এক ঘটনা। টান টান ক্লাইমেক্সের মধ্যদিয়ে শেষ হয় ‘বাড়ির নাম স্বাধীনতা’ বিশেষ নাটক। নাটকের কাহিনী ফরিদুর রেজা সাগর, নাট্যরূপ ও পরিচালনা অরুন চৌধুরী। অভিনয়ে মামুনুর রশীদ, আবুল হায়াত, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মাহমুদ সাজ্জাদ, শম্পা রেজা, ইরফান সাজ্জাদ, সামিয়া সাঈদ প্রমুখ। প্রচার হবে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭.০০টায় চ্যানেল আইতে।

এই আমাদের বাড়ি: ২০১৪

নবম নাটকের নাম ‘এই আমাদের বাড়ি’। আমীন সাহেব রিটায়ার্ড অফিসার। স্ত্রী মারা গেছেন ক্যান্সারে। আমীন সাহেব মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন ঢাকা ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য। দুই পুত্রকে নিয়ে তিনি একটি পিতৃপ্রদত্ত বড় বাড়িতে থাকেন জীবনভর। আমীন সাহেবের একটি কন্যা ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেই কন্যার ঘরে এক নাতি সুমিত। তরুণ বয়সী ছেলেটির এই বাড়িতে প্রবেশাধিকার নেই। কারণ, ছেলেটি যদি সম্পত্তির ভাগ চায়। আমীন সাহেব যখন সিদ্ধান্ত নিলেন মৃত্যুর পর পুত্রদ্বয়কে সব বন্টন করে দেবেন শুধু বাড়িটি ছাড়া, তখনই শুরু হলো ঝামেলা। আমিন সাহেব চাইছেন বাড়িটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে অক্ষুণ্ন থাকুক। পুত্রদ্বয় চাইছে বাড়িটি ভেঙে বহুতল ভবন বানাতে। সেখানেই শুরু হলো বিপত্তি। নাটকটির নাট্যরূপ ও পরিচালনা করেছেন অরুণ চৌধুরী। অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, সুর্বণা মুসৱাফা, কাদরী, জেনি, আগুন, আসিব ও ম আ সালাম এবং নাতির চরিত্রে ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম আবুল কালাম আজাদ।

গৌরবের সেই বাড়ি: ২০১৩

অষ্টম নাটকের নাম গৌরবের সেই বাড়ি। মফস্বলের একটি বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের পর এ বাড়িতে কেউ থাকে না। তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকা এই বাড়িতে এলাকার মানুষ ভূতের বাড়ি বলে চেনে। বাড়ির মালিক ’৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। তার একমাত্র মেয়ে কানাডা প্রবাসী। হঠাৎ একদিন মেয়েটিকে ফোন করেন তার এক আত্মীয় দেশে আসার জন্য। কারণ এই বাড়ির পাশে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেছে। গ্যাসকূপ খননের জন্য বাড়িটি ভাঙতে হবে। দেশে আসার পর মেয়েটি জানতে পারে এই বাড়িতে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিত, প্রচুর সহযোগিতা করতো। এই রাগে ক্ষোভে পাকবাহিনী তাকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের এমন স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি কুচক্রীরা গ্যাসকূপ খননের নামে দলিল করে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নষ্ট করে দেয়ার চক্রান্ত করে। নাট্যরূপ ও পরিচালনা অরুন চৌধুরী। অভিনয়ে সাদিয়া ইসলাম মৌ, চঞ্চল চৌধুরী, উর্মিলা, আসিফ প্রমুখ।

এই বাড়ি সেই বাড়ি: ২০১২

সপ্তম নাটক এই বাড়ি সেই বাড়ি। মফস্বল শহরের একটি বাড়ি। সেই বাড়িতে বাস করেন চার সদস্য। দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বাড়ির বড় ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। একসময় বাড়িটি দখল করে নেয় স্বাধীনতা বিরোধীরা। বাড়ির তিন সদস্যকে আটকে রাখে তারা। এরপর ঘটতে থাকে একের পর এক ভয়ংকর ঘটনা। সেই বাড়ি দখলমুক্ত করতে শুরু হয় নতুন নাটকীয়তা। নাট্যরূপ ও পরিচালনা অরুন চৌধুরী। অভিনয়ে সুবর্ণা মোস্তফা, পূর্ণিমা, চঞ্চল চৌধুরী, জুঁই প্রমুখ।

নয়ন সমুখে সেই বাড়ি: ২০১১

ষষ্ঠ নাটকের নাম নয়ন সমুখে সেই বাড়ি। বাঙালির অসিৱত্ব মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধ এনেছে স্বাধীনতা। প্রায় সাড়ে চার দশক আগে যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের একজনের সাক্ষাৎকার ছাপা হলো একটি জাতীয় দৈনিকে। সেই সাক্ষাৎকার পড়ে তার কয়েকজন সহযোদ্ধা একত্রিত হলো। মুখোমুখি হলো সোনালী অতীতের। চোখের সামনে ভেসে এলো সেই বাড়ির  ছবিটি। নাটকটি পরিচালনা করেছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। অভিনয় করেছেন পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আহসানুল হক মিনু প্রমুখ।

বাড়ি ২০০৯: ২০১০

পঞ্চম নাটকের নাম বাড়ি ২০০৯। স্মৃতিমাখা পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করবে ওরা। ওরা মানে একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্য। কেউ এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ এসেছে আমেরিকা থেকে, কেউ এসেছে ইউরোপ থেকে। উদ্দেশ্য একটাই পৈত্রিক বাড়ি বিক্রি করে অ্যাপার্টমেন্ট করবে ডেভেলপারকে দিয়ে। চূড়ান্ত হলো ডেভেলপার কোম্পানীর কাছে যেদিন সম্পত্তি হসৱান্তর হবে সেদিন সব অংশীদারকে উপস্থিত থাকতে হবে। এই সিদ্ধানেৱই ক্রমশ তৈরি হতে শুরু করে জটিলতা। নাটকটি পরিচালনা করেছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, খুরশিদুজ্জামান উৎপল, ছন্দা প্রমুখ।

বাড়ি ৭১: ২০০৯

চতুর্থ নাটকের নাম বাড়ি ৭১। একটি বাড়ি। একটি ইতিহাস। এক অসামান্য অহংকারের গল্প বাড়ি ৭১। কানাডা প্রবাসী এক তরুণ একদিন দেশে ফিরে একটি লক্ষ নিয়ে। তার বাবার বহুকালের স্মৃতিময় মফস্বল শহরের বাড়িটি ভেঙে ফার্ম করবে সে। সেখানে ৩৬ বছর ধরে আছে কয়েকটি পরিবার। সেই তরুণ শেষ পর্যন্ত কি বাড়িটি ভেঙে ফেলতে পারে? একা কি মানুষ সব বদলে দিতে পারে? পাল্টাতে পারে গর্বের অতীত। নাটকটি পরিচালনা করেছেন আবুল হায়াত। অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, তৌকির আহমেদ, মৌসুমী নাগ প্রমুখ।

এইতো আমাদের বাড়ি: ২০০৮

তৃতীয় নাটকের এইতো আমাদের বাড়ি। একটি একান্নবর্তী পরিবার। পরিবারের কর্তা নেই। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাকে পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। অপরাধ তার কলম ছিল ক্ষুরধার। চিন্তা ছিল মুক্ত। বাঙালির অধিকার নিয়ে তার সোচ্চার ভূমিকা অপছন্দ ছিল পাকিসৱানীদের। সেই মানুষটির স্মৃতিময় ঘরটির বহু বছর আগলে রেখেছিলেন তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য স্নেহময়ী মা। দ্বিতীয় ছেলের বিয়ের আয়োজনে যখন একটি ঘরের প্রয়োজন হলো তখনই তৈরি হলো নতুন এক সংকট। নাটকটি পরিচালনা করেছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। অভিনয়ে চিত্রনায়িকা মৌসুমী, ঈশিতা, লিটু আনাম প্রমুখ।

এই আমাদের বাড়ি: ২০০৭

দ্বিতীয় নাটকের নাম এই আমাদের বাড়ি। মা ও বাবা কিছুদিনের জন্য গিয়েছিলেন ব্যাংকক। অ্যাপার্টমেন্টে রেখে যান পুত্র ও কন্যাকে। সবই চলছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ একদিন সেখানে এসে হাজির হলেন আমেরিকা প্রবাসী এক ভদ্রলোক। বাবার সিনিয়র বন্ধু। তাকে অনুসরণ করে কয়েকজন সন্ত্রাসী। অ্যাপার্টমেন্ট দখল নেয় প্রবাসীর ডলার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ইচ্ছায়। টানটান উত্তেজনায় এগুতে থাকে এই আমাদের বাড়ি নাটকের কাহিনী। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, মেঘনা, অপি করিম প্রমুখ।

আমাদের বাড়ি: ২০০৬

প্রথম নাটকটির নাম আমাদের বাড়ি। খ্যাতিমান পাখি বিশারদ জামিল ভুঁইয়া। তার দোহিত্রীকে সঙ্গে করে এক সকালে জাহাজে করে গেলেন নদী ভ্রমণে। সেই জাহাজে পরিচয় তিন তরুণের সাথে। হঠাৎ অসাবধানবশত জামিল ভুঁইয়া জাহাজ থেকে পড়ে গেলেন নদীর গভীর পানিতে। অনেক নাটকীয়তার পর বাঁচানো গেলেও তাকে ভর্তি হতে হলো হাসপাতালে। তারপর ঘটনা মোর নিল ভিন্নখাতে। নাটকটি পরিচালনা করেছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। অভিনয়ে শামস সুমন, ঈশিতা, লিটু আনাম প্রমুখ।