Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

কেয়ারিং + শেয়ারিং = ভালো বিয়ে!

-মাহিয়া মাহি, চিত্রনায়িকা

সেলিব্রেটিরা নাটক, সিনেমা বা গানের বাইরে তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও আলোচিত হয়ে উঠেন অনেক সময়। হতে পারে সেটা বিয়ে, সনৱান নেয়া, প্রেম-ভালোবাসা বা নিজস্ব নানা কাজে। হালের এক জনপ্রিয় নায়িকার বিয়ে এ বছরের ‘টক অব দ্যা টাউন’ উপাধি পেয়েছে। নায়িকা বিয়ে করার পর তার পরিচিত এক যুবক দাবি করেন নায়িকার সঙ্গে তার প্রেম ছিল এবং তারা বিয়ে করেছিলেন। একসময় নায়িকা মামলা করেন ঐ যুবকের বিরুদ্ধে। পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় যুবককে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রমাণ মিলেনি বিয়ের সত্যতা। আমরা বলছি জনপ্রিয় নায়িকা মাহির বিয়ের কথা। প্রিয় পাঠক, আমরা মাহির বিয়ে নিয়ে তার সত্যি জীবনের গল্প বলব আজ। চলুন শোনা যাক।

বিয়ে হচ্ছে বাঙালি নারীর শাশ্বত চাওয়া। প্রতিটি বাঙালি নারী স্বপ্ন দেখে- একটি সুন্দর সাজানো গোছানো সংসারের। ভালোলাগা আর ভালোবাসায় স্বামীর সঙ্গে জীবন কাটাতে চায়। এমন স্বপ্ন আমিও লালন করেছিলাম। অনেকের কাছে শুনেছি নায়িকারা অন্য জগতের মানুষ। তারা চাইলেই পছন্দের কাউকে ভালোবাসতে পারেন, বিয়ে করতে পারেন। অর্থবিত্ত দিয়ে সবকিছু কিনতে পারেন। কিন্তু এ কথা ভুল। চাইলেই ভালোবাসা পাওয়া যায় না, চাইলেই ভালোলাগে যারে তাকে ছোঁয়া যায় না। আর অর্থবিত্ত দিয়ে ভালোবাসা এবং সংসারের সুখ-শানিৱ কেনা যায় না। এটা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি মনে করি ভাগ্যে না থাকলে অনেক কিছুই হয় না।

তবে আমি ভাগ্যবান। আমি ভাগ্যে খুবই বিশ্বাসী। প্রথম যখন অভিনয় শুরু করলাম তখন কি ছিলাম? কিছুই না। আমার ভাগ্যই আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। চলচ্চিত্রে এখন যে অবস্থানে আমি আছি সেটা নেহাত মন্দ না। আমি একক নায়িকা হিসেবে এ পর্যন্ত ২০টি ছবিতে অভিনয় করেছি। দেশে এবং দেশের বাইরে প্রচুর সিনেমা দর্শক আমাকে পছন্দ করে এবং একনামে তাদের কাছে আমি পরিচিত। এত বিশেষণের বাইরে আমি একজন সাধারণ বাঙালি নারী। কোটি বাঙালি নারীর মতো আমারও মূল্যবোধ, চাওয়া পাওয়া, সাদ- আহলাদ আছে।

এভাবেই আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে একজন সুন্দর মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। মানুষটিকে প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছে সহজ সরল এবং আত্মবিশ্বাসী। এরপর দুজনের মধ্যে ভালোলাগা এবং ভালোবাসা জন্মে। কথা হতো, দেখা হতো। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম এই মানুষটিকে নিয়ে ঘর বাঁধার। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তব। নিজেদের ভালোলাগা, ভালোবাসার কথা দুই পরিবার জানার পর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। পারিবারিকভাবেই আমাদের বিয়ে হয়। আমার স্বামী পারভেজ মাহমুদ অপু একজন ব্যবসায়ী। মনের দিক দিয়ে সে অত্যন্ত উদার এবং আধুনিক। আমি অভিনয় করি এটা অপু কখনোই অপছন্দ করে না বরং আমাদের ভালো অভিনয় করার ব্যাপারে উৎসাহ যোগায়। আমি যেমন ওর প্রতি কেয়ারিং ও তেমনি আমার প্রতিও কেয়ারিং ও শেয়ারিং। অপু ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমিও ওর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি মনে করি স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে কেয়ারিং আর শেয়ারি সমান থাকলে বিয়েটা আনন্দের হয়।

অনেকেই বলেন, নায়িকারা সংসার করতে পারে না। এবং বিয়ের পর তাদের ছবি চলে না। আমি সেটা বিশ্বাস করি না। শাবনাজ আপু, মৌসুমী আপু, পূর্ণিমা আপু বিয়ের পরও স্বমহিমায় উজ্জ্বল সিনেমায় এবং তাদের সিনেমা দর্শকরা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে দেখছে। বিয়েতো তাদের সমস্যা হয়নি।

আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজন কিন্তু চান সিনেমায় অভিনয় থেকে বিদায় যেন না নেই। তবে খুব ব্যস্ত হওয়া চলবে না। আমি যদি স্বেচ্ছায় বিদায় নেই তাতেও তাদের সমস্যা নেই। বিয়ের পর ভক্ত দর্শকদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় আমার ফেসবুক ইনবক্স ভরে গিয়েছিল। ভক্তদের কেউ আমার বিয়েকে নেগেটিভ চোখে দেখেনি। এ থেকে বোঝা যায়, বিয়েটা হয়তো আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিবে।

mahi-1মাঝেমধ্যে মনে হয়, যদি সিনেমা একদিন আমাকে ছেড়ে দেয় বা আমি সিনেমা ছেড়ে দেই বিয়ের কারণে তখন কি হবে? পরক্ষণে মনে হয় সিনেমা যদি ছেড়ে দেই তাহলে কি করবো? সিনেমা ছেড়ে দিলে শ্বশুর বাড়ি সিলেটে চলে যাব। সেখানে স্বামী সনৱান নিয়ে সংসার করবো। হয়তো মাঝেমধ্যে কষ্ট হবে। তবে ভালোই থাকবো সবাইকে নিয়ে।

বিয়ের পর অনেকেই হানিমুন করতে বিদেশে যায়। আমি বিদেশে হানিমুন করার পক্ষে ছিলাম না। অনেককেই বলেছি এদেশে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে, তোমরা বিদেশে যাও কেন? তাই আমি দেশেই হানিমুন করেছি।

আমার বন্ধুরা মাঝেমধ্যে বলে তুইতো সময় সুযোগ পেলে একটু দুষ্টমি, ফান করিস। তোর স্বামী এতে মন খারাপ করে না? আমি সত্যিকারেই সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি, ফান করি, মজা করি অপু এতে কখনো কিছু মনে করে না। ও এসব এনজয় করে, মজা পায়। অপু খুব শান্ত স্বভাবের, একেবারে ঘরকুনো। আমি মাঝেমধ্যে যেমন শিশুসুলভ আচরণ করি ও তেমন কখনো করে না। খুবই ভদ্র, নরম স্বভাবের একজন মানুষ। ওকে প্রায়ই আমার একটু বোকা সোকা টাইপের মানুষ মনে হয়। এই জন্যই অপুকে আমার এত ভালোলাগে।

অপু আমার ছবির দারুণ ভক্ত। আমার অভিনীত ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ওর খুবই ভালো লেগেছে। এর আগে আমার অনেক সিনেমা দেখেছে এবং কোন ছবি কেমন লেগেছে সেটা আমার কাছে অত্যন্ত সোজা সাপ্টা করে বলেছে।

একজন মানুষের জীবনে তিনটি পর্ব থাকে। প্রথম জীবন শিশু-কৈশোর, দ্বিতীয় জীবন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বৈবাহিক জীবন এবং সর্বশেষ বৃদ্ধকাল। এর মধ্যে বৈবাহিক জীবনটা যেমন- সুন্দর, চ্যালেঞ্জিং ও কালারফুল, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। এই জীবনে কোনো ভুল করলে সর্বশেষ জীবনে তার মাসুল দিতে হয়। বৃদ্ধ বয়স কষ্টে কাটে। আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে পথ চলতে হয় খুব সাবধানে। হতে হয় খুব সাবধান। যাতে পরবর্তী জীবন সুন্দর, সাবলীল ও ঝামেলামুক্ত হয়। আমার অগণিত ভক্ত দর্শকের বেশি বেশি দোয়া ও ভালোবাসা চাই যাতে বাকি জীবন সৎ, সুন্দরভাবে কাটিয়ে দিতে পারি।