Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

গভীর রাতে মানুষ আসে দল বেঁধে এ এক দারুণ অনুভূতি…-আবুল খায়ের লিটু

২৪ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৫ম বারের মতো শুরু হবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। নান্দনিক এই আয়োজনের প্রাণ পুরুষ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু এবারের উৎসব নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দ আলোর সাথে। লিখেছেন রাজু আলীম।

প্রশ্ন: চার বছরের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আপনার নেতৃত্ব আবারও ঢাকায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অনুভূতি জানতে চাই।

আবুল খায়ের লিটু: এ এক দারুণ অনুভূতি। আমি মনে করি দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা ও বিকশিত করা আমাদের জরুরি কর্তব্য। সে জন্যই আমরা বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি। সেই ধারাবাহিকতায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব আয়োজনে উদ্যোগী হই। প্রথম বছর আয়োজনটা ছিল ছোট পরিসরে ভিন্ন রকমের। এরপর থেকে বড় পরিসরে উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমার ধারণা পৃথিবীর আর কোথাও এত বড় আয়োজনে একটানা ৫ দিন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উৎসব হয় না। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এবারের উৎসব বিগত বছরগুলোর তুলনায় আরও বর্ণাঢ্য ও রঙিন হবে।

প্রশ্ন: উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মতো গুরু গম্ভীর একটা বিষয়কে আপনি মাঠে ময়দানে নিয়ে এলেন কেন?

আবুল খায়ের লিটু: যে কোনো উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করে আয়োজনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার ওপর। আমরা কথায় কথায় বলি সাধারণ মানুষ  উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শুনতে চায় না। এই ধারণাটা পুরোপুরি সত্য নয়। আয়োজনের ক্ষেত্রে যদি আন্তরিকতা থাকে, পরিবেশ যদি ভালো হয় তাহলে নান্দনিক যে কোনো উদ্যোগের প্রতিই সাধারণ মানুষও আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। সারারাত ধরে উৎসব চলে। দল বেঁধে মানুষ আসে। কেন আসে? গান শুনতেই আসে। সবার মাঝে একটা বিশ্বাস জন্মেছে, এই উৎসবে গেলে ভালো, সুন্দর পরিবেশে গান শোনা যাবে। অনেকের ধারণা তরুণ-তরুণীরা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পছন্দ করে না। এই ধারণাও ভুল। আমাদের উৎসবের বিরাট সংখ্যক শ্রোতা দর্শক তরুণ-তরুণী।

প্রশ্ন: উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের এই আইডিয়াটা কীভাবে এসেছিল? কোন ধারণা থেকে এর শুরু?

আবুল খায়ের লিটু: শুরু করেছিলাম অনেকগুলো ভাবনা থেকে। সঙ্গীত গুরু রবী শংকর, উদয় শংকরসহ অনেকেরই নাম বলা যাবে যারা এক সময় এই বাংলাদেশেরই মানুষ ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জীবিকার প্রয়োজনে তারা ভারতে চলে যান। মজার ব্যাপার হলো- সঙ্গীত গুরু আলী আকবর খান, উদয় শংকর, রবী শংকর, বেলায়েত খান যারা শুধু ভারতে না সারা পৃথিবীতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে পপুলার করেছেন তারা সকলেই বাঙালি বাংলাদেশের মানুষ। কেউ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কেউ গৌরীপুর, কেউ ময়মনসিংহ, কেউ কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জে বড় হয়েছে। তার মানে আমাদের দেশেই তো উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মূল শেকড় ছিল। একটা জেনারেশন পার হয়ে গেছে মাত্র। এখন যে জেনারেশন বেড়ে উঠছে তাদেরকে এই শেকড়ের সন্ধান দিতে হবে। এই ভাবনা থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের যাত্রা শুরু হয়।

প্রশ্ন: তার মানে আপনি শ্রোতা-দর্শক হিসেবে ইয়াংদেরকেই টার্গেট করেছিলেন?

আবুল খায়ের লিটু: ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়। অগ্রসরমান পরিবারের সবাই যেন এই উৎসবে আসে সেটাই আমরা চেয়েছিলাম। তবে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ আমাদের দারুণ ভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রশ্ন: দিনে দিনে এই উৎসবটি গানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি শ্রেষ্ঠ আয়োজন হয়ে উঠেছে। নিশ্চয়ই এ জন্য গর্ববোধ হয়?

আবুল খায়ের লিটু: এই গর্ব আমাদের একার নয়, গোটা বাংলাদেশের। যখন দেখি গভীর রাতেও শহরের মানুষ  দল বেঁধে  গাড়িতে করে? হেঁটে গান শুনতে আসে তখন শুধু অবাক হই না গর্বও হয়। গভীর রাত। মঞ্চে হয়তো চৌরাশিয়া বাঁশি বাজাচ্ছেন। দর্শক সারীতে বসা হাজার হাজার মানুষ। পিন পতন নীরবতা। সত্যি এ এক অসাধারণ দৃশ্য। দারুণ এক অনুভূতি। সবকিছু দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠে। গর্বভরে বলতে ইচ্ছে হয়- এই তো আমাদের গানের দেশ… প্রসঙ্গক্রমে একটা তথ্য উল্লেখ করতে চাই। বিগত ৪ বারের উৎসবে ৩ বারই শহরে হরতাল ছিল। তবুও শ্রোতা দর্শকের ভিড় কমেনি। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের মানুষ ছুটেছে উৎসবস্থল আর্মি স্টেডিয়ামের দিকে। এটাকে কি বলবেন? সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয়ই? আমাদের দেশের মানুষ গান শুনতে ভালোবাসে। এজন্য ভালো গানের পাশাপাশি ভালো আয়োজনও দরকার। আমরা প্রতিবছর এই কাজটি করে যাচ্ছি। এজন্য বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটি করতে পেরে আমরা অনেকটাই চাপ মুক্ত থাকি। এছাড়া আমাদের সহযোগী সকল প্রতিষ্ঠানকে আয়োজনটির সঙ্গে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।