Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলায় ডাবিং বিদেশী সিরিয়াল

আনন্দ আলো প্রতিবেদন: একটা সময় অর্থাৎ আমাদের বিটিভি যুগে বিদেশি টিভি সিরিয়াল বেশ জনপ্রিয় ছিল। ডালাস, ম্যাকাইভার, ডাইন্যাস্টি, এক্স ফাইল, চার্লিস এঞ্জেলস, ফলগাই, রুটস নামের একাধিক বিদেশি টিভি সিরিয়াল বিটিভিতে প্রদর্শন করা হয়েছে। নাটকের ভাষা ইংরেজি। তবুও দর্শক ছিল প্রচুর। শুধু শহরে নয়। গ্রামাঞ্চলেও এই সব টিভি সিরিয়ালের দর্শক ছিল বেশ। যদিও তখনকার দিনে বর্তমান সময়ের মতো গ্রামাঞ্চলে টেলিভিশনের এত দর্শক ছিল না। শহরেই দর্শক ছিল বেশি। সে কারণে ইংরেজি ভাষার বিদেশি টিভি সিরিয়াল বিটিভিতে নিয়মিত প্রচার করা হতো। সবাই যে ইংরেজি ভাষা বোঝতো তা নয়। টিভি সিরিয়ালগুলোর নির্মাণ শৈলী বিশেষ করে পারিবারিক কাহিনীই দর্শকদের আগ্রহের মূল বিষয় ছিল। সপ্তাহে একবার প্রচার করা হতো সিরিয়ালগুলোর নতুন পর্ব। তা দেখার জন্য অনেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এই টিভি সিরিয়ালগুলোর দর্শক ছিল বেশি। মহিলা দর্শকদের আগ্রহও কম ছিল না। এমনও হয়েছে বিদেশি এই টিভি সিরিয়াল দেখার জন্য অনেকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতেন। রাতে যখন বিটিভিতে টিভি সিরিয়ালগুলো চলতো তখন শহরের রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যেত।

বিদেশি টিভি সিরিয়ালের প্রতি দর্শকের এই আগ্রহের প্রেক্ষিতেই মূলত: বিটিভিতে তখনকার দিনে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষায় ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  নন্দিত কথাসাহিত্যিক নির্মাণের মহান কারিগর প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই তালিকায় আরও রয়েছেন মমতাজ বেগম, মামুনুর রশীদ, ইমদাদুল হক মিলন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুস্তাফিজুর রহমানসহ অনেকে। বিশেষ করে মমতাজ বেগমের লেখা ধারাবাহিক নাটক সকাল সন্ধ্যা দর্শকদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। তবে বিটিভি যুগে ধারাবাহিক নাটকের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘এইসব দিন রাত্রি’ সহ তাঁর একাধিক টিভি সিরিয়াল আমাদের টেলিভিশন দর্শকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। শুধু দেশে নয় পাশের দেশ ভারতের কলকাতায়ও  আমাদের ধারাবাহিক নাটক টিভি দর্শকের আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় এলুমিনিয়ামের পাতিলের সাহায্যে বিকল্প ডিশ এন্টেনা বানিয়ে অনেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক দেখার প্রতিযোগিতায় মেতে  উঠেছিল।

সময় বদলায়। সময়ের প্রয়োজনে বদলে যায় পরিবেশ পরিস্থিতি। সময়ের প্রয়োজনেই আমাদের দেশে শুরু হয় টেলিভিশনের নতুন যুগ। অর্থাৎ স্যাটেলাইট টেলিভিশনের আধুনিক যুগে পা ফেলে আমাদের দেশ। দেখতে দেখতে বেসরকারি পর্যায়ে একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের জন্ম হয়। শুরুর দিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলা ভাষায় নিজস্ব টিভি সিরিয়াল বেশ জনপ্রিয় ছিল। আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মাসুম রেজা, সালাহউদ্দিন লাভলুসহ অনেক নাট্যকার নির্মাতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে ততদিনে একটা জায়গায় আমাদের টিভি মাধ্যম পিছিয়ে যায়। এক সময় যে কলকাতার দর্শক আমাদের টেলিভিশন নাটক দেখার জন্য উম্মুখ হয়ে বসে থাকত তাদের জন্য কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলো নড়েচড়ে বসে। তারা তৈরি হতে থাকেন। এগিয়ে যাবার পথ খোঁজেন। আমরা বোধকরি পিছিয়ে যেতে থাকি। ফলে একসময় বিটিভি একা যা করতে পেরেছিল বর্তমানে আমাদের ২৫/২৬টি কার্যকর টিভি চ্যানেল বোধকরি তা করতে পারছে না। আমাদের এত টিভি চ্যানেল থাকার পরও দেশের একশ্রেনির টিভি দর্শককে দেশমুখী করা যাচ্ছে না। তারা বিদেশি সিরিয়ালের প্রতি যেন অধিক মাত্রায় ঝুঁকছে। বিদেশি যে সব নাটক তারা দেখছে তার মধ্যে আমাদের সংস্কৃতির কোনো যুগসূত্র নাই। বরং আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থি বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়ালের প্রতিই একশ্রেণির দর্শকের আগ্রহ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো।

dubbed-film dubbed-film-1টেলিভিশন সংস্কৃতিতে এই যে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় কী? এ নিয়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে বিস্তর আলোচনা। ‘দীপ্ত’ নামে একটি নতুন টিভি চ্যানেলে ‘সুলতান সুলেমান’ নামে বাংলায় ডাবিং করা একটি বিদেশি টিভি সিরিয়াল চালু হওয়ার পর মূলত: সবার মাঝে এক ধরনের ‘নড়েচড়ে’ বসার মতো ভাব লক্ষ্য করা যায়। ‘সুলতান সুলেমান’ অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক কাহিনীর ওপর নির্মিত একটি পারিবারিক টিভি সিরিয়াল। সিরিয়ালটির প্রতি দর্শকের বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এর একটাই কারণ আমাদের টিভি দর্শক একটি পারিবারিক কাহিনী পেয়েছে। যেখানে অনেক চরিত্র। ঘটনার অনেক বাঁক। মূলত: সুলতান সুলেমান এর সাফল্যই দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকে আবার বিদেশি টিভি সিরিয়ালের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। চ্যানেল আইতে  আসছে তুরস্কের বহুল আলোচিত টিভি সিরিয়াল ‘ফরবিটেন  লাভ’ এর বাংলা ভার্সন ‘লুকানো ভালোবাসা’। মাছরাঙা টিভিতে চলছে বহুল আলোচিত টিভি ধারাবাহিক ‘টিপু সুলতান’। গাজী টিভিতে আসছে বহুল আলোচিত টিভি সিরিয়াল ‘আলিফ লায়লা’।

আনন্দ সংবাদ। তুরস্কে নির্মিত বিশ্বখ্যাত টিভি সিরিয়াল ‘ফরবিটেন লাভ’ এর বাংলা সংস্করণ ‘লুকানো ভালোবাসা’ চ্যানেল আইতে আসছে। ইতিপূর্বে পৃথিবীর ৪০টিরও বেশি দেশে এই টিভি সিরিয়ালটি প্রদর্শিত হয়েছে। বাংলা ডাবিংএ চ্যানেল আইতে এর প্রচার শুরু হচ্ছে ১০ নভেম্বর ২০১৬ থেকে সপ্তাহে ৩দিন- বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাত ৮টায়।

চ্যানেল আইতে আসছে

forbideen-love-1লুকানো ভালোবাসার বাংলা ডাবিং করা হয়েছে চ্যানেল আইতে নিজস্ব শিল্পী ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। দেখে মনে হবে এটি কোন ডাবিং সিরিয়াল নয়। এটি বাংলা ভাষাতেই নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের টিভি দর্শক পৃথিবীখ্যাত এই টিভি সিরিয়ালে নতুন কিছু খুঁজে পাবেন একথা নিশ্চিত করে বলা যায়।

যে ভালোবাসা থাকে মনের অন্তরালে, লোক চক্ষুর আড়ালে এবং মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি করে- সেটাই লুকানো ভালোবাসা। দেশের প্রথম ডিজিটাল টিভি মাধ্যম চ্যানেল আইতে আসছে এক লুকানো ভালোবাসার গল্প নিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে আলোড়ন তোলা পারিবারিক গল্পের এক দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক। চ্যানেল আইতে আগামী ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে এই নতুন টিভি সিরিয়াল। এটি সাধারণ কোনো টিভি সিরিয়াল নয়।

৪০টি দেশে সম্প্রচার

বিশ্বের অনেক দেশেই এই টিভি সিরিয়ালটি তাদের নিজ নিজ ভাষায় ডাবিং করে প্রচার হয়েছে। আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, হিব্রু, মালয়, চীনা, ইতালিয়ান, জার্মান, স্প্যানিশ, ফরাসিসহ আরও অনেক ভাষায় ডাবিং করে এটি টিভিতে প্রচার হয়েছে। বসনিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, সৌদি আরব, ইজিপ্ট, লেবানন, ইরান, বুলগেরিয়া, মনটেনেগরো, মরক্কো, টিউনিশিয়া, ক্রোশিয়া, হাঙারি,  োভেনিয়া,  োভাকিয়া, রোমানিয়া, চীন, ইসরায়েল, কাজাকিস্তান, উজভেকিস্তান, ম্যাকেধোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, আলবেনিয়া, জর্জিয়া, চিলি, লাটভিয়া, ইসেৱানিয়া, ইকুয়েডর, পেরু এবং আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের প্রায় চশ্লিশটিরও বেশি দেশে এটি ডাবিং হয়ে প্রচার হয়। আর বর্তমানে বাংলাদেশে এটি চ্যানেল আইতে আগামী ১০ নভেম্বর থেকে প্রচার শুরু হবে। প্রতি সপ্তাহের বুধ, বৃহস্প্রতি ও শুক্রবার রাত ৮টায় চ্যানেল আই এর দেশ বিদেশের কোটি কোটি দর্শক এই টিভি সিরিয়াল দেখতে পাবেন।

বিশ্বখ্যাত একঝাঁক অভিনয়শিল্পী

তুরস্কের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘ফরবিডেন লাভ’- এর বাংলা সংস্করণ ‘লুকানো ভালোবাসা’ শিরোনামে চ্যানেল আইতে প্রচার হবে। তুরস্কের ভাষায় এই টিভি সিরিয়ালের নাম ‘আশক-ই মেমনু’। যার বাংলা অর্থ ‘নিষিদ্ধ ভালোবাসা’ আর ইংরেজি নাম ‘ফরবিডেন লাভ’। বিশ্বের প্রায় চল্লিশটিরও বেশি দেশে ডাবিং হয়ে তুর্কি ভাষার এই সিরিয়ালটি প্রচার হয়েছে। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বিশ্বখ্যাত এই টিভি সিরিয়ালটি এবার চ্যানেল আই নিয়ে এসেছে। প্রেম-ভালোবাসা আর প্রতিশোধের উত্তেজনাময় কাহিনী নিয়ে এগিয়ে যায় এই ২০০৮ সালে নির্মিত এই সিরিয়ালের গল্প। সিরিয়ালটির রচনায় রয়েছেন  এচে ইয়রেঞ্চ ও মেলেক গেঞ্চগুন্ড এবং পরিচালনা করেছেন হিলাল সারাল ও বারীশ ইয়শ। তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী এই সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। সিরিয়ালটিতে বেইতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন বেরেন সাত, বাহলুল চরিত্রে কিভাঞ্চ তাতলিতুগ, আদনান চরিত্রে সেলচুক ইয়নেৱম, ফেরদৌস চরিত্রে নেবাহাত চেহরে, দেনিয দে কারতন চরিত্রে যেরিন তেকিন্দর, নিহাল চরিত্রে হাযাল কায়া, বুলেন্ত চরিত্রে বাতুহান কারাচাকায়া, পেইবার ওনাল চরিত্রে নূরু ফেত্তাখগুন্ড, নিহাত চরিত্রে ইকার কিজামাস অভিনয় করেছেন। আরো অভিনয় করেছেন হিল্মি, আয়নুর, বশির, সুলায়মান, শায়েস্তা, জমিলা, নাসরিন, সায়িদ, কাদিয়া, বালিন, আরসান।

সিরিয়ালটি তুরস্কের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল ‘ক্যানাল ডি’ তে সম্প্রচারিত তুর্কি রোমান্টিক টেলিভিশন ধারাবাহিক। এটি হালিত জিয়া উশাক্লিগিল রচিত একই নামের ১৮৯৯ সালের উপন্যাসের নাট্যরূপ। তবে এতে মূল উপন্যাসের কাহিনীতে উনিশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটের পরিবর্তে সমসাময়িক ইস্তাম্বুলের পটভূমিতে কাহিনী চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে উপন্যাসটি অবলম্বনে প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক নির্মিত হয়। এছাড়াও প্যাশন প্রহিবিডা নামে ল্যাটিন ভাষাতেও ধারাবাহিকটি পুনঃনির্মিত হয়। তুরস্কে বর্তমানের রেকর্ড ভঙ্গকারী এবং সর্বোচ্চ রেটিংপ্রাপ্ত টিভি ধারাবাহিক এটি। পাকিস্তানে এর শেষ পর্বের রেটিং ছিল ১১.৯ যা একসঙ্গে ৯ কোটিরও বেশি দর্শক দেখেছিল। তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে এটি পাকিস্তানে একটি টিভি চ্যানেলে দ্বিতীয়বার সম্প্রচার করা হয়।