Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৬ এবার পেলেন আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার

অগ্রগামী স্বাপ্নিক এক ব্যক্তিত্ব। আজ থেকে প্রায় ৬৫ বছর আগে এদেশে শক্তিশালী গণমাধ্যম চলচ্চিত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখন উর্দু, হিন্দি ও কলকাতার বাংলা সিনেমা এই ভূখণ্ডের মানুষের চলচ্চিত্র পিপাশা নিবারণ করতো। সেই সময় অর্থাৎ ১৯৫১ সালে কতটা সাহসী হলে মফস্বল শহরে বসে চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ ও সিনেমা নির্মাণের কথা ভাবতে পারেন। কারো কাছে অবাস্তব মনে হলেও সত্য এই যে, ১৯৫০ সালে বগুড়া শহর থেকে ‘সিনেমা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে এদেশে সিনেমা শিল্পের গোড়াপত্তন করেন এই স্বপ্ন পুরুষ। তাঁর নাম আবু তাহের মোহাম্মদ ফজলুল হক। সবার কাছে ফজলুল হক নামে তিনি পরিচিত এবং ইতিহাস হয়ে আছেন।

ফজলুল হকের ‘সিনেমা’ পত্রিকা প্রকাশের ৬ বছর পর এদেশে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ নির্মিত হয়। তিনি সিনেমা পত্রিকা প্রকাশ করার ১৬ বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে নির্মাণ করেন ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি সিনেমা। যা পরবর্তিতে সান অব পাকিস্তান নামে মুক্তি পায়। সিনেমা নির্মাণ ও সিনেমা পত্রিকা প্রকাশ একসঙ্গে অবিরামভাবে চালিয়ে গেছেন। জাতীয় ঐতিহ্যরক্ষা ও বাঙালিয়ানা উদ্দীপনায় ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে চালু করেন খাবারের দোকান পিঠাঘর। যা এখন শুধু পিঠাঘর নামেই ঐতিহ্যবাহী। ১৯৬৯ সালে তিনি আবাসিক প্রকল্প লিমিটেড নামে শুরু করেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আকাশবাণী কলকাতায় ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ নামে নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের জন্য বাংলা নামে ঘড়ি নির্মাণ ও বাজারজাত শুরু করেন। ইনল্যান্ড নামে একটি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখান থেকে অনেক খ্যাতিমান লেখকের বই প্রকাশ হয়েছে।

মাত্র ৬০ বছর জীবদ্দশায় ফজলুল হক এতগুলো সৃজনশীল কাজ করেছেন যা ছিল ঐ সময় অকল্পনীয়। আসলে তিনি ছিলেন এক আলোকবর্তিকা। মানুষের জীবন যাপন ও বিনোদনকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অন্য এক উচ্চতায়। যে কারণে তিনি আলোর দিশারী হয়ে তাঁর মেধা মননও প্রজ্ঞা দিয়ে আলো জ্বালিয়ে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য।

বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তাঁর অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ফজলুল স্মৃতি কমিটি ২০০৪ সাল থেকে একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও একজন সেরা চিত্র পরিচালককে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই পুরস্কারের প্রবর্তক ফজলুল হকের সহধর্মিণী বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের অনেক গুণী চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক এ পুরস্কার পেয়েছেন। এবারও পেলেন দুই গুণী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। পরিচালক হিসেবে এবার পুরস্কার পেয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ও গুণী নির্মাতা আজিজুর রহমান। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন বিনোদন পত্রিকা নিপুন-এর এক সময়কার সম্পাদক ও বর্তমান সময়ের তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তফা জব্বার।

২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এ পুরস্কার এবার ১২ বছর পেরিয়ে ১৩ বছরে পড়ল। ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন এবার উপস্থিত থাকতে পারেননি অসুস্থতার কারণে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট, উত্তরীয়, নগদ অর্থ মূল্য ও একটি সনদপত্র তুলে দেয়া হয়। পুরস্কার পাওয়ার পর নিজ নিজ অনুভূতি ব্যক্ত করেন আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ফারজানা ব্রাউনিয়া। এর আগে শহিদুল আলম সাচ্চু নির্মিত ‘দি ফ্রন্টায়ারস ম্যান ফজলুল হক’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তথ্য উপাত্ত ও উপস্থাপনায় অসাধারণ এই তথ্যচিত্র অণুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। এরপর ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও তার স্বপ্ন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষাবিদ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, টিভি ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সাংবাদিক চিন্ময় মুৎসুদ্দী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন, নারী উদ্যোক্তা কনা রেজা, ফজলুল হকের কনিষ্ঠ পুত্র ফরহাদুর রেজা প্রবাল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক মতিন রহমান, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজানুর রহমান, ফজলুল হকের কন্যা বিশিষ্ট রন্ধন তারকা কেকা ফেরদৌসী, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক শহিদুল হক খান, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, এডিটর গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু, অভিনেত্রী মাহবুবা রেজানুর, রোকেয়া প্রাচী, কুসম শিকদার প্রমুখ। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদানকে সামনে রেখে তাঁর জীবন, কর্ম ও পারিবারিক অ্যালবাম নিয়ে প্রকাশ হয়েছে ফজলুল হক: অগ্রগামী স্বাপ্নিক নামে একটি বই। এটি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাযহার। প্রকাশ করেছে অন্য প্রকাশ।

সেই স্বপ্ন হাতে করে নিয়ে গেলেন-সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী

আমি তখন বোম্বের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়ি। আমার সঙ্গে তখন বাদল রহমানও পড়তো। সারাদিন আমাদের কঠিন সব ছবি দেখানো হতো ক্লাসে। রাতে হালকা বিনোদন মূলক ছবি দেখতাম। একদিন রাতে ছবি দেখছি, বাদল রহমান ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রিসিপশন থেকে খবর এলো বাংলাদেশ থেকে এক ভদ্রলোক এসেছেন। বুকের মধ্যে ধরাক করে উঠলো-মাকেতো একা রেখে এসেছি। তার কি কিছু হলো? রিসিপশনে গিয়ে দেখি ফজলুল হক সাহেব বসে আছেন। সাথে আরও কয়েকজন। আমি চমকে উঠলাম। তখন বললেন, আমি গ্রীনউড নামে একটি ফিল্ম সিটি করবো, সেখানে ইনস্টিটিউটও থাকবে। তাই এই ইনস্টিটিউটটি দেখতে এলাম। রাতে খাওয়ার পর গেস্ট হাউজে থাকলেন। দিনে আমরা তাকে সব ঘুরে ঘুরে দেখালাম। দেখার পর আর দেরি করলেন না চলে গেলেন। কিন্তু হাতে করে নিয়ে গেলেন গ্রীনউড করার স্বপ্নটাকে।

হক ভাই সব সময় নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করতেন-আজিজুর রহমান

আমি হক ভাইয়ের দ্বিতীয় ছবি আজান-এর সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। তাঁর সঙ্গে আমি বহুদিন ছিলাম। তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অসাধারণ এক মনের মানুষ ছিলেন তিনি। সহজ, শান্ত কিছুটা বেখেয়ালীও ছিলেন। সাধারণত সৃজনশীল মানুষেরা একটু বেখেয়ালী হন। হক ভাইও তেমনি ছিলেন। হক ভাই সব সময় ভালো চিনৱা করতেন, নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করতেন কিন্তু ওই যে সহজ সরল মনের কারণে কোনো কিছু চেপে রাখতে পারতেন না। অকপটে সব বলে দিতেন। এর ফলে সেটা হতো অন্যরা তাঁর কাছ থেকে সব চুরি করে আগেই তা বাস্তবায়ন করে ফেলতেন। হক ভাই পরিকল্পনা করলেন রূপবান সিনেমা বানাবেন, সব কিছু ঠিকঠাক কিন্তু তার আগেই সালাহউদ্দিন সাহেব রূপবান নির্মাণ করে ফেলেন। এ ভাবে অনেক ছবির পরিকল্পনা করার পর সেগুলো চুরি করে অন্যরা নির্মাণ করেছেন।

আমার আপনজন ফজলুল হক ভাই-এর নামে প্রবর্তিত ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৬ তে আমাকে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পুরস্কার দেয়ায় আমি আনন্দিত, উচ্ছ্বাসিত এবং কৃতজ্ঞ। হক ভাই আমাদের মাঝে শত শত বছর বেঁচে থাকুন এই কামনা করি।

এটাই তার জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য-আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

ফজলুল হক সাহেব একজন করিৎকর্মা পুরুষ ছিলেন। নানান জনের নানান রকম মেধা থাকে, ভূমিকা থাকে, কিন্তু তার ভূমিকা ছিল পাইওনিয়ার অর্থাৎ অগ্রপথিকের। সে কারণে তার মাঝে ক্ষিপ্রতা ও বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। এদেশে সিনেমা নির্মাণের আগে সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা বের করেছেন। আমাদের দেশে রিয়েল স্টেট কোম্পানির পাইওনিয়ার বলা হয় শিল্পপতি জহুরুল ইসলামকে। কিন্তু জহুরুল ইসলামের আগেও ফজলুল হক সাহেব রিয়েল স্টেট কোম্পানি করে কাজ শুরু করেছিলেন। ঘড়িতে বাংলা অক্ষর দিয়ে বাংলা ঘড়ি বানিয়েছেন। ঐ সময় আইপিএস বানিয়েছেন। এত দিকে একজন মানুষ কাজ করেছেন এটা ভাবতেও অবাক লাগে। একজন মানুষের মধ্যে দেশের জন্য, ভালো করার ক্ষিপ্ততা না থাকলে এত দিকে যাওয়া যায় না। এটাই তার জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমাকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছিলেন দেখ বাবা এই দেশে কে কার কবরে মোমবাতি জ্বালায়। একমাত্র ছেলে-মেয়েরাই বাবা-মার কবরে আলো জালিয়ে রাখে। আমাদের ঘরে আত্মার সনৱান খুব কমই জন্মায়। কিন্তু সব সময়তো আর সনৱানরা প্রকৃত আত্মার সনৱান হয় না। ফরিদুর রেজা সাগরসহ ফজলুল হক সাহেবের অন্য তিন সনৱান প্রকৃতপক্ষে আত্মার সনৱান। এখন পর্যন্ত তারা বাবার স্মৃতির আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। অভিনন্দন তাদেরকে।

তার কর্মকাণ্ড দেখে বিস্মিত হয়েছি-মোস্তফা জব্বার

আমি এই ধরনের একটি পুরস্কার পাবো সেটা আমার ভাবনার মধ্যেও ছিল না। কেউ যদি আমাকে তথ্যপ্রযুক্তি বা কম্পিউটার বিষয়ক কোনো পুরস্কার দিতেন তাহলে হয়তো স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারতাম। এই পুরস্কারটি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সময়কে। এই সময়টায় আমি একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ফজলুল হক সাহেবকে নিয়ে প্রকাশিত অগ্রগামী স্বাপ্লিক বইটি তে সেই রূপান্তরের চিত্রটি আছে। বইটিতে সিসার হরফের লেখা আছে, আছে আমার উদ্ভাবিত ডিজিটাল হরফও। বইটি দেখে আমার অসাধারণ লেগেছে।

আমি এই রকম একটি পুরস্কার পাবো এটা কখনোই ভাবনার মধ্যে ছিল না। আজকে পুরস্কার গ্রহণ করতে এসে ফজলুল হক সাহেব সম্পর্কে তাকে নিয়ে রচিত বই তার উপর নির্মিত তথ্যচিত্র দেখে বিস্মিত হয়েছি। অবাক হয়েছি তার উদ্ভাবিত আইপিএস ও বাংলা ঘড়ির কথা শুনে। এই জাতি এবং পৃথিবীতে আমার উদ্ভাবিত ৩৫ কোটি বাঙালি যারা ডিজিটাল বাংলা হরফ ব্যবহার করে তাদের পক্ষ থেকে আমি একজন আলোর দিশারী ফজলুল হককে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

আমরা অনুপ্রাণিত হই- গাজী মাজহারুল আনোয়ার

ফজলুল হক সাহেব শুধু একজন স্বাপ্নিক মানুষ ছিলেন না। একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখে গেছেন, রেখে গেছেন সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে শুধু তার পরিবার কেন আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিত। আজ থেকে প্রায় ছয় দশকের বেশি সময় আগে ফজলুল হক সাহেব যে কাজগুলো করেছেন সেগুলো পর্যালোচনা করলে আমরা অনুপ্রাণিত হই এবং এমন ধারার উদ্ভাবনী চিনৱা চেতনা করতে আমাদেরও উৎসাহ জাগে। তেমনিভাবে বাবার জন্য ফরিদুর রেজা সাগর ও তাঁর পরিবার যে কাজগুলো করছে এবং বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এতে আমরা আরো বেশি অনুপ্রাণিত হচ্ছি বাবা মার প্রতি কর্তব্য পালনে।

বাবা ছেলের এমন চরিত্র আমি লিখতে পারিনি-দেলোয়ার জাহান ঝন্টু

একজন পরিচালক প্রযোজক হিসেবে আমি অনেক ছবি করেছি। স্ক্রীপ্ট লিখেছি প্রায় পাঁচশ ছবির। সেই সব ছবিতে পিতা পুত্রের কত ধরনের যে পজেটিভ ঘটনা তুলে ধরেছি তার হিসেব নেই। কিন্তু ফজলুল হক সাহেব ও তাঁর ছেলে ফরিদুর রেজা সাগরের মধ্যে যে সম্পর্ক, যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, বাবার স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য ছেলের প্রানান্তকর চেষ্টা এমন বাস্তব ও সত্য ঘটনা আমি কোনো স্ক্রীপ্টে লিখতে পারিনি। জানি না কখনো লিখতে পারব কি না।

দায় আমাদেরও আছে-আলী ইমাম

আমাদের দেশে স্বপ্ন দেখা মানুষের অভাবতো আছেই। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মতো মানুষের অভাব তারচেয়ে বেশি। জীবদ্দশায় একজন ফজলুল হক স্বপ্ন দেখেছেন, পরিকল্পনা করেছেন, এটা অনেক বড় কাজ। এক জীবনে স্বপ্ন দেখে তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবুও ফজলুল হক অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন। যেমন- দেশে সিনেমা নির্মাণের আগে সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা বের করেছেন এটা অনেক বড় একটি কাজ। ওই সময় সিনেমা নির্মাণই সেখানে দুঃসাধ্য ছিল। সেখানে তিনি শিশুদের নিয়ে ছবি নির্মাণ করে আলোড়ন তুলেছেন। এছাড়া ফজলুল হক সাহেব কত যে প্রজেক্ট করেছেন, কত যে পরিকল্পনা রেখে গেছেন তার হিসেব নেই। এই কাজ বাস্তবায়নের জন্য রেখে গেছেন সুযোগ্য সনৱানদের। তারাই একে একে সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করছেন। এখানে আমাদেরও দায় আছে যারা মিডিয়াতে কাজ করছি।

হক ভাইয়ের কাছে আমরা ঋণী-এমডি নূরুল আলম (বাবু চাচা)

হক ভাই মানে ফজলুল হক ভাই আমার হৃদয়ে কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছেন সেটা পরিমাপ করতে পারব না। সবাই জানে তিনি আমার অভিভাবক, বড় ভাই কিন্তু এর চেয়েও তিনি আমার কাছে বড় কিছু। আমি একসময় তার কাজের সঙ্গি ছিলাম। আইপিএস বলেন, বাংলা ঘড়ি বলেন কিংবা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি বলেন, আমি এই প্রজেক্ট গুলোর সাথে ছিলাম। কিন্তু কোনো দিন তিনি আমার কাছে হিসাব চাননি। আজ তিনি নেই কিন্তু তার আদর্শ রেখে গেছেন। একটি পথ দেখিয়ে গেছেন। যে পথ দিয়ে আমরা হাঁটলে সফলতা লাভ করতে পারব।

পুরো দেশ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে-চিন্ময় মুৎসুদ্দী

আমি ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পাওয়ার পর একটি বিষয়ে আমি গর্ব অনুভব করি তাহলো ফজলুল হক এর মতো একজন মানুষের সঙ্গে আমার নামটি যুক্ত হয়েছে। একটি ছোট গল্প বলি, মৃত্যু পথযাত্রী এক প্রবীণ ব্যক্তি তাঁর তিন ছেলেকে তিনটি রুপার টাকা দিয়ে বললেন, এমন কিছু কিনে আন যা দিয়ে আমার এই ঘরটি ভরে যায়। গোধুলী লগ্নে তিন সনৱান ফিরে এলো। প্রথম জন বলল এক টাকা দিয়ে কি আর কেনা যায়। আমি কিছু শুকনো ঘাস কিনেছিলাম। সেই ঘাস দিয়ে ঘরটি ভরে রাখা যেত কিন্তু পথে ঝড় শুরু হয়েছিল ঘাসগুলো সব উড়ে গেছে। দ্বিতীয় সনৱান বলল  বাবা এক টাকার রৌপ্য মুদ্রা দিয়ে আমি সস্তায় অনেক বস্তা লবণ কিনেছিলাম কিন্তু লবণ আনতে নদীর মাঝখানে নৌকা ডুবে সব লবণ পানিতে মিশে যায়। তানাহলে লবণ দিয়ে এই ঘর ভরিয়ে ফেলতে পারতাম। এবার তৃতীয় সনৱান এসে বললেন, বাবা তোমার জন্য একটা মোমবাতি কিনে এনেছি। এটি জ্বালিয়ে দাও ঘরটি আলোয় ভরে উঠবে। ফজলুল হক সাহেব আসলে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে গেছেন। মোমবাতির সেই আলো এখন আমাদের সবার মাঝে। যদি মিডিয়া এই আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে তবে পুরো দেশ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।