সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
সৈয়দ ইকবাল: দূর থেকে ভিড়টা ভালোই বুঝা গেল। ভিড়ের সঙ্গে কিঞ্চিৎ হট্টগোলও আছে। ভিড়ের কাছে যেতেই স্পষ্ট হলো- বিষয়টা। অভিনয়শিল্পী বাঁধন, নাঈম, নাসিম আর ঊর্মিলাকে একসঙ্গে পেয়ে উৎসুক মানুষের অটোগ্রাফ-সেলফি আর আলাপচারিতায় আঁটকে যান তারা। আর তাই তো উৎসুখ মানুষজনও ঘটনাস্থলে বাড়তে থাকে। ঘটনাটি নগরীর উত্তরার আশ্রয় শুটিং স্পটে। ‘মেঘে ঢাকা শহর’ শিরোনামের নতুন একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং চলছিল সেই শুটিং বাড়িতে। অবশেষে ভক্তদের সঙ্গে সেলফি আর কুশল বিনিময় করে টিভি নাটকের এই তারকারা ছাড়া পেলেন। শুটিং বাড়ির ভেতর যেতে যেতে বাঁধন তো বলেই ফেললেন, ‘নাটক তাহলে মানুষ দেখে। যদি না- দেখতো তাহলে মানুষ আমাদের চিনলো কি করে!’ বাঁধনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নাঈম বলল, ‘অবশ্যই মানুষ আমাদের নাটক দেখে। আগের চেয়ে বরং বেশি নাটক দেখে। এখন দর্শক টিভিতে কোনো নাটক দেখা মিস করলে ইউটিউবে দেখতে পারেন। ফলে দর্শকদের দেখার বাইরে এখন কোনো নাটকই থাকে না।’ শুটিং বাড়ির ভেতরে যেতেই দেখা গেল অন্যরকম একটি দৃশ্য। শুটিং বাড়ির নীচতলায় একটি ক্যামেরায় বিশিষ্ট অভিনেত্রী ডলি জহুরকে ক্লোজ শট দিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। এরপর বাড়িটির ছাদে যেতেই দেখা গেল অভিনেতা নাসিম আর নাঈমের একটি শট নেয়ার প্রসৱুতি চলছে। তারমানে একই সঙ্গে দুটি কামেরায় শুটিং চলছিল ধারাবাহিকটির। বিষয়টা নিয়ে কথা হয় নাটকটির পরিচালক সাখাওয়াৎ মানিকের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘দুই ক্যামেরায় শুটিং করার সুবিধা অনেক। একই সঙ্গে দুটি করে দৃশ্য নামানো যায়। আর আমার এই নাটকে এক সঙ্গে অনেক অভিনয়শিল্পীর কল থাকে। যেমন- এবারের লটে আমি ডলি জহুর, বাঁধন, নাসিম, নাঈম, ঊর্মিলা, সামিয়া, মুকুল সিরাজ, কবির তিথিসহ অনেক আর্টিস্টের একসঙ্গে কল থাকে। ফলে আমি যদি একটি ক্যামেরা দিয়ে কাজ করতাম তাহলে অনেক শিল্পীই বসে থাকতো। আরেকটি বিষয় হলো- আমার টিমের সঙ্গে বসে প্ল্যানিং করে শট নামানোর ফলে বাজেট অনুযায়ী কাজটা করা যাচ্ছে। কারণ এখন তো নাটকের বাজেট একটা বিশাল ফ্যাক্টর। তাই যেভাবে কাজের কোয়ালিটি মেনটেইন করে খরচটা বাজেটের মধ্যে রাখা যায় সেই চেষ্টা করি।’
খানিকবাদে ছাদে নাসিম আর নাঈমের সেই শটটি নেয়া হলো। এরপর ছাদে চলল আনন্দ আলোর জন্য ফটোসেশন। ছবি তোলার একফাঁকে বিশিষ্ট অভিনেত্রী ডলি জহুর বলে উঠলেন, ‘সবাই সবার সঙ্গে ছবি তুলে রাখ। কে কখন দুনিয়া থেকে চলে যায় সেটার গ্যারাান্টি নাই। মেকআপ আর্টিস্ট ফারুকের সঙ্গে এত কাজ করেছি। কিন্তু সে মারা যাওয়ার পর তার সঙ্গে তোলা একটিমাত্র ছবি পেলাম। তাই আমার সঙ্গে সবাই ছবি তুলে রাখ। আমিও তো চলে যেতে পারি যেকোনো সময়।’ ডলি জহুরের এমন কথায় একটু আগে সবার মুখে থাকা হাঁসি যেন কিছুটা ম্লান হলো। বাঁধন তখন ডলি জহুরকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, ‘এভাবে বলে না মা। তাহলে তোমার এই সন্তানদের কী হবে!’ শুটিং স্পটে একজন আর্টিস্টের প্রতি আরেকজন আর্টিস্টের সহমর্মিতা মুগ্ধ করল সবাইকে। ডলি জহুরের কথা মতো সবাই এক সঙ্গে ছবি তুললেন।
তারকাবহুল ধারাবাহিক ‘মেঘে ঢাকা শহর’ লিখেছেন রুদ্র মাহফুজ। একটি একান্নবর্তী পরিবারের গল্প এটি। শহুরে একটি পরিবারকে ঘিরে এই নাটকটির গল্প এগিয়ে যাবে। জীবনের ভালোলাগা, মন্দলাগায় নতুন উপলব্ধির গল্প ‘মেঘে ঢাকা শহর’। এতে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, শম্পা রেজা, লুৎফর রহমান জর্জ, আহসান হাবিব নাসিম, অপূর্ব, নাঈম, ড. ইনামুল হক, নাদিয়া, ডা. এজাজ, সাজু খাদেম, সামিয়া, মৌরি সেলিম, তানভীরসহ আরও অনেকে। পরিচালক জানান, গল্পের প্রয়োজনে আরও অনেক অভিনয়শিল্পী ধারাবাহিকটিতে কাজ করবেন। নাটকটি প্রযোজনা করেছে টাইম ইনোভেশন। শুটিং স্পটে বসেই ধারাবাহিকটি নিয়ে কথা হয় ডলি জহুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানিকের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। নাটকের গল্প বেশ ভালো লেগেছে আমার। তাই সিডিউল নিয়ে ব্যস্ততা থাকলেও কাজটি করছি বেশ আগ্রহ নিয়ে। ‘মেঘে ঢাকা শহর’ নাটকের গল্প একেবারেই আমাদের জীবন থেকে নেয়া। মনে হয়েছে এ যেন আমাদের জীবনেরই গল্প। আশা করি বেশ ভালো একটি নাটক হবে।’ বাঁধন বলেন, ‘নতুন একটি ধারাবাহিক আমার কাছে মনে হয় জীবনের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা। অনেক মন দিয়ে কাজটি করেছি। নাটকের সংলাপগুলো বেশ চমৎকার। আশা করি প্রচারের পর বেশ দর্শকপ্রিয়তা পাবে নাটকটি।’
প্রকৃতিতে তখন সন্ধ্যা। ইনডোরে একটি সেট ফেলা হলো। বাঁধন ও নাসিমের একটি শট নেয়া হবে। প্রসৱুত লাইট-ক্যামেরা। সেটে এলেন নাসিম ও বাঁধন। পরিচালক লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশান বলতেই নীচ থেকে গাড়ির একটি হর্ণ শোনা গেল। ফলে কিছুটা সময় নেয়া হলো শুটিং শুরু করতে। আবারো শুরু হলো শুটিং। নেয়া হলো শটটি। শুটিং বাড়ি থেকে আনন্দ আলো টিম রওয়ানা দিল তাদের গন্তব্যে। বাড়ির ভেতর চলতে থাকলো ‘মেঘে ঢাকা শহর’এর শুটিং। মেঘে ঢেকে রাখা শহুরের কোনো পরিবারের গল্প শোনাবে যে নাটকটি। যে গল্পের সঙ্গে হয়তো কারো কারো জীবনের গল্পও মিলে যেতে পারে। কেননা জীবন থেকেই তো গল্পের শুরু আবার সেই গল্পও কারো কারো জীবনের গল্প।