Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

আবু মুসার স্থাপত্য ভূবন

স্থাপত্য শিল্পে আধুনিকতা ও সৃজনশীল কাজ করে চলেছেন আবু মুসা ইফতেখার। মুসা নামেই তিনি বন্ধু মহলে পরিচিত। বুয়েটে থেকে পড়াশোনা করেছেন। ২০১০ সালে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। ২০১২ সালে তিনি আবুধাবীর ‘এইসি’ কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসেবে যোগদেন। সেখানে একবছর চাকরি করার পর দেশে ফিরে এসে নিজের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন এ যাবাৎ তিনি দেশে বিদেশে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি আবু মুসা ইফতেখারের জন্ম কুমিল্লা জেলায়। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তার বাবার নাম মো: হানিফ। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মা রওশন আরা গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে স্থপতি আবু মুসা ইফতেখার সবার বড়। মুসার মধ্যে আঁকাআঁকির বীজটা ছোটবেলা থেকেই রোপন হয়েছিল। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার আগ্রহ। যেখানেই ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই তাকে দেখা যেত। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আর বাবা-মা চাইতেন তাদের ছেলে যেন বড় হয়ে ডাক্তার হয়। ডাক্তার কিংবা এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেনি বলে তার কোনো আপসোস নেই। তিনি হয়েছে একজন সফল আর্কিটেক্ট।

বগুড়া পুলিশ লাইন স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে ঢাকার বিসিআইসি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। বুয়েটে তার সহপাঠী হিসেবে পেয়েছেন স্থপতি রিয়াজ, সৌমিন, হাসান ও শহীদুল্লাহ। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস স্যার ও মঞ্জুর মোর্শেদ। আবু মুসা ইফতেখার ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ২০০৬ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘ক্লিক হাউস ডেনিস নামের একটি ফার্মে। সেখানে তিনি একবছর চাকরি করেন। ২০০৭ সালে মুসা যোগদেন ‘ইন্ডেজিনিয়াস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিন বছর চাকরি করেন। এরপর ২০১০ সালে সুব্রত সরকার, মোশারফ হোসেন, হারুন রশীদ এই তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। গুলশান নিকেতনে খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ স্থপতি সহ মোট ১৬জন কর্মী কাজ করছেন।

SHah-Cement২০১২ সালে স্থপতি আবু মুসা ইফতেখার পাড়ি জমান আবুধাবীতে। সেখানে তিনি এইসি কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসেবে যোগদেন। আবুধাবীতে তিনি বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করে অনেকের নজর কেড়েছেন। ইতিমধ্যে আবু মুসা ইফতেখার দেশের নামকরা কিছু অ্যাপার্টমেন্ট, হসপিটাল, গেষ্টহাউস, অফিস বিল্ডিং সহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের কিডনি ফাউন্ডেশন হসপিটাল, রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি গেষ্ট হাউস, স্যালুটিং ডায়াস ও গ্যালারী, ভূতের গলির মি: সাকলাইন রেসিডেন্স বিল্ডিং, গুলশানের বাংলা ক্যাট প্রতিষ্ঠানের মালিকের বাসভবন গুলশান হাউস, মিরপুর-১২ মুসলিম সুইট এর মালিক আমিনুল ইসলামের রেসিডেন্স বিল্ডিং, মিরপুর পল্লবীর ইষ্টার্ণ হাউজিং অ্যাপার্টমেন্ট, বসুন্ধরার মোসৱাফিজুর রহমান রাজুর অ্যাপার্টমেন্ট, মুন্সীগঞ্জের মি: শাহজাহান ভিলা, ফেনির মুন্নার রেসিডেন্স বিল্ডিং, মোহাম্মদপুর বসিলার আলহোসেন চিশতির রেসিডেন্স বিল্ডিং, মিরপুর-১২ এর মি: লাভলুর অ্যাপার্টমেন্ট সহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন।

এছাড়াও স্থপতি মুসা আবুধাবীতে থাকাকালীন বেশ কিছু স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। যেমন- দুবাই এর জাবেল আলী এয়ার পোর্টের ভিআইপি টার্মিনাল, আবুধাবীর আল জাহিলী আল আইন প্যালেস, শেখ হামাদ বিন জায়েদ ভিলা, আব্দুল্লাহ ওথমান ভিলা, ক্যাপিটাল সেন্টারের হোটেল প্রজেক্ট, চার্জ মুসাফা। বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেড।

আবু মুসা ইফতেখার তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্য নীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ২০১৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম ফারজানা ফাল্গুনী। এই দম্পতি এক কন্যা সনৱানের জনক-জননী। মেয়ের নাম আর্যা অরোরা।

আর্কিটেক্ট আবু মুসা ইফতেখার বলেন, আধুনিকতাই আমার মূল প্রেরণা। এর প্রেক্ষিতে বাহুল্যতা বর্জন এবং সৃজনশীলতার প্রয়োগে আমার স্থাপত্যের ব্যবহারকে সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সরলীকরণের চেষ্টায় প্রধান গুরুত্ব পায়। তবে আমাদের সংস্কৃতি ও আনৱর্জাতিকতার প্রভাবে উত্তরাধুনিকতাও কোনো ভাবেই এড়াতে পারা যায় না। সব শেষে কাজের যৌক্তিকতাই স্বসিৱ। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি আবু মুসা ইফতেখার। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চেষ্টা করেন। স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আবু মুসা ইফতেখার বলেন, আমি অবিরাম নিরলস স্থাপত্যচর্চার মাধ্যমে পেশাদারিত্বের বিকাশ, স্বদেশীয় স্থাপত্যকলায় নতুনত্ব আনা ও নিদর্শন স্থাপন করতে চাই। ছবি: রাকিবুল হক ও সংগ্রহ