সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে পরিবেশ। বদলে যাচ্ছে চিরচেনা দৃশ্যপট। বদলানোই নিয়ম, তাই বলে এত তাড়াতাড়ি! দেখতে দেখতে ঢাকা শহরের আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবাদি জমি আর প্রকৃতি ধ্বংস করে ঢাকার আশপাশে গড়ে উঠছে আরেক নতুন ঢাকা। যে কামরাঙ্গীর চরে পানি ছাড়া ক’বছর আগেও কিছু ছিল না আজ সেখানে গিজগিজ করছে মানুষ। উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভারে মাঠের পর মাঠে ছিল সবুজ ধানের ক্ষেত। সোনালি ফসল ফলত। কৃষকের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠতো সে ফসলের হাসি দেখে। অথচ আজ সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর উঁচু উঁচু ভবন দখল করে নিয়েছে। কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বাতাস। ক্ষতিকর বর্জ্য গিয়ে মিশছে জলাশয়ে। ইটিপি ব্যবস্থা না থাকার কারণে পরিবেশের দূষণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি পরিবেশ বিপন্ন ঢাকার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে। সবুজ কেরানীগঞ্জ, শানৱ বছিলা, ছায়া সুনিবিড় আমিন বাজার, বলিয়ারপুরের মতো গ্রামগুলো শহরে রূপানৱরিত হচ্ছে চোখের সামনেই। কাটা পড়ছে গাছ, কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। খাল-পুকুর ভরাট হচ্ছে। নদী দখলের চলছে অসাধু তৎপরতা। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে বেড়ে উঠছে দ্রুতবর্ধনশীল প্রজাতির গাছ, পরিকল্পিতভাবে না লাগানোর ফলে যে গাছগুলো আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করছে। ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, সেগুন যে যেভাবে পারছে রোপণ করছে।
দেখতে দেখতে ঢাকার শহর বদলে যাচ্ছে। ইটের পর ইট দিয়ে তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে বিশাল বিশাল ইমারত। যেন প্রতিযোগিতা চলছে কে কার চেয়ে বেশি বড় ভবন নির্মাণ করতে পারে। এই ভবনগুলোর আশপাশে কোনো গাছের চিহ্ন নেই। অথচ প্রকৃতিবান্ধব বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের বাড়ি নির্মাণের অনুমতি মিলেছে।
রাজপথগুলো দখল করে রয়েছে বৈধ-অবৈধ অসংখ্য গাড়ি। যেখানে সেখানে হর্ন বাজিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে তারা। পরিবেশ যাতে ভালো থাকে তার জন্য টু স্ট্রোক, থ্রি স্ট্রোক ছেড়ে শহরে এসেছে ফোর স্ট্রোকের গাড়ি। অথচ অবৈধভাবে চলাচল করা হাজার হাজার গাড়ির কালো ধোঁয়া উদগীরণের মাধ্যমে বিষিয়ে তুলছে রাজধানীর বাতাস। আর এর শিকার হচ্ছে শহরের অধিকাংশ মানুষ।
পরিবেশ দূষণ ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষ কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। গ্রামেও রয়েছে ইটের ভাটা, সেখানে হাজার হাজার গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষি জমিতে ঘর-বাড়ি তৈরি হচ্ছে, বন উজাড় করা হচ্ছে, নতুন রাসৱা নির্মাণ হচ্ছে, হাট-বাজারের সংখ্যা বাড়ছে। ভরাট হচ্ছে খাল-বিল-পুকুর। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার স্বকীয়তা।
কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আরেক কারণ। কৃষক বুঝে না বুঝে যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে তাতে পরিবেশবান্ধব অনেক কীটপতঙ্গ মারা যাচ্ছে। আবার বৃষ্টির কারণে কীটনাশক ছিটানো ফসলি ক্ষেতের পানি নদী, পুকুর কিংবা নালাতে গিয়ে জলজ উদ্ভিদের ক্ষতি করছে। তাই জৈব বালাইনাশকের পাশাপাশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রকৃতি বিরূপ হলে সে তার মতো করে প্রতিশোধ নেবে। আইলার ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখেছি। সিডরের তাণ্ডব দেখেছি। খরা দেখেছি। বন্যা দেখেছি। শুধু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশই নয়। উন্নত দেশগুলোও রক্ষা পাবে না বৈরী জলবায়ুর কবল থেকে। তাই সময় থাকতে আর প্রকৃতি ধ্বংস নয়, জীববৈচিত্র্যের বিনাশ নয়। আসুন সুন্দর প্রকৃতিতে গড়ি সুস্থ জীবন।
লেখক: চেয়ারম্যান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন