Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

মানুষের জন্য স্থাপত্য এটাই বিপ্লবের ভাবনা

শৈল্পিক ও আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে স্থাপত্যশিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন আর্কিটেক্ট সেলিম আলতাফ বিপ্লব। বিপ্লব নামেই তিনি বন্ধু মহলে পরিচিত। বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৮ সালে তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন তৈরি করেছেন। স্কুল জীবন থেকেই ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লবের বাড়ি নড়াইল জেলায়। সেখানেই তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তার বাবার নাম ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। মা নাজমা সুলতানা গৃহিনী। পরিবারে তিন ভাই বোনের মধ্যে স্থপতি সেলিম আলতাফ দ্বিতীয়। স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে ছবি আঁকার প্রতি ছিল তার প্রচন্ড নেশা। গান শোনা আর গল্পের বই পড়া ছিল পছন্দের বিষয়। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। বিপ্লবদের বাড়ির পাশেই ছিল চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি। খুব কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ পান তিনি। তাঁর কাজ দেখতেন। মাঝে মধ্যে কথা বলতেন। তখন থেকেই অনত্মরে একটা তাগিদ অনুভব করতেন ক্রিয়েটিভ বিষয়ে কাজ করার জন্য। নড়াইল ঘেষে বয়ে চলা চিত্রার চরের ঘন সাদা কাশফুল দেখতেন এবং আশে পাশের প্রকৃতির ছবির আঁকতেন। ছবি আঁকতে আঁকতেই আজকে তিনি একজন সফল স্থপতি। তবে এই স্থপতি কখনো ভাবেননি ছবি আঁকার এই কল্পনা বিলাস একসময় প্রফেশনাল জীবনের অংশ হবে। নড়াইল সরকারি হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। বুয়েটের সুন্দর পরিবেশ, সিনিয়র, জুনিয়রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক ও শিক্ষকদের সহযোগিতা সব সময় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তার কাছে। সেলিম আলতাফ বিপ্লব ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই বিপ্লব ‘আইকন’ নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্মে যোগ দেন। সেখানে তিনি ছয় মাসের মতো চাকরি করেন।

১৯৯৮ সালে স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘সিনথেসিস আর্কিটেক্টস’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হিসেবে আছেন স্থপতি প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, তামান্না সাঈদ ও তানভীর হাসান।

Shah-Cement-1শ্যামলীতে খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ আর্কিটেক্টসহ মোট ৪০ জন কর্মী কাজ করছেন। ইতিমধ্যে সেলিম আলতাফ বিপ্লব দেশের নামকরা অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্যাক্টরী, হসপিটাল, কমর্শিয়াল টাওয়ার, ক্লাব, অফিস বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন করেছেন। উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে প্রগতি সরনীর সিনহা সেন্টার, বনানী-১২ নম্বরে আরবান ফরেস্ট, উত্তরার মাহমুদ সেন্টার, সল্টলেকের (কলকাতা) রেসিডেন্স বিল্ডিং, হাতির ঝিলের হোসনে আজিজ ভিলা, উত্তরার ব্র্যাক আড়ং কমার্শিয়াল বিল্ডিং, বনানীর নাজির অ্যাসুরেন্স কর্পোরেট টাওয়ার, গাজীপুরের হোয়াইট ফরেস্ট হলিডে হোম প্রকল্প, বনানীর প্যারাডাইম অফিস সুইট, ধানমন্ডির কনডোমিনিয়াম অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, কক্সবাজারের নাভানা গ্রুপের হোটেল, ধানমন্ডির ব্র্যাক আড়ং টাওয়ার, চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপি জেডের ইকো ফ্রেন্ডলী ফ্যাক্টরী, চট্টগ্রামের খুলশীর রয়েল রিজ অ্যাপার্টমেন্ট, ভোলতার সানসাইন নিটিং এন্ড ফ্যাশন লিমিটেডের ওয়ার্কাস ডর্ম, গুলশান-২ এর ওয়েস্ট উড অ্যাপার্টমেন্ট, গুলশান লিংকরোডের ইমপেটাস সেন্টার, বনানীর মুনস ট্রি আবাসিক ভবন সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন। বিশ্বায়ণের এই যুগে তার সৃষ্টি কর্মগুলো দেশীয় অবয়বের পাশাপাশি সার্বজনীনতা পেয়েছে। বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছে সিনথেসিস আর্কিটেক্ট।

সেলিম আলতাফ বিপ্লব তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তামান্না সাঈদ। তিনিও একজন আর্কিটেক্ট। স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব বলেন,গ্রাম বাংলার সহজ সরল আটপৌঢ়ে জীবন যাত্রা আর সেই সাথে দাদা বাড়ীর একান্নবর্তী পরিবারের মাঝে বেড়ে ওঠা জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি। কর্মজীবনে সহপাঠী, বন্ধু ও পার্টনার প্যাট্রিক ডি রোজারিওর মতো অসাধারণ একজন স্থপতির সাথে কাজ করতে করতে স্থাপত্যের প্রতি ভালোবাসা প্রগাঢ় হয়েছে। সেই ভালোবাসা আরো বেড়েছে বয়সে বেশ ছোট কয়েকজন স্থপতির স্থাপত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগ দেখে। যাদের মধ্যে নিরু, হিমুন, রাজির, হাসান, তেশা, ফুয়াদের নাম না বললেই নয়।

Shah-Cement-2তিনি আরো বলেন, কাজের শুরু থেকেই ‘মানুষের জন্য স্থাপত্য’ এই বিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে করতে এখন আমাদের দেশের আধুনিক স্থাপত্যের রূপ কি হওয়া উচিত সেই লক্ষই প্রধান হয়ে উঠেছে। তাই এখনকার কাজ গুলোতে আমাদের দেশের জলবায়ুকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ বান্ধব স্থাপত্যের স্বার্থক রূপ খুঁজে বের করার চেষ্টা স্পষ্ট। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে ঠিক রেখে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনের দিকে নজর দেন তিনি। এই স্থপতি তার নিজের কাজ সততা ও নিষ্ঠার সাথে করতে ভালোবাসেন। পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সাথে শেষ করতে চান স্থপতি সেলিম আলতাফ বিপ্লব।