Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

তিন বন্ধুর আর্কি গ্রাউন্ড

বন্ধুত্ব আসলে কী? কেউ বলেন বন্ধুত্ব মানে আস্থা আর নির্ভরতা। কেউ বলেন বিপদে-আপদে যে মানুষটি সব সময় পাশে এসে দাঁড়ায় সেই হলো প্রকৃত বন্ধু। আবার কেউ বলেন বন্ধুত্বই সব কিছু। যার কোনো ভালো বন্ধু নেই তার চেয়ে অভাগাও কেউ নেই। তাহলে বন্ধুত্বের সাথে যুক্ত হলো ‘ভালো’ শব্দটি। এই ভালো মানে কী? এই ভালো মানেও আস্থা আর নির্ভরতা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বন্ধুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য একটা কথা প্রচলিত হয়ে গেছে- যার বন্ধু ভাগ্য ভালো সেই জগতে সবচেয়ে সুখি। হ্যাঁ, জীবন গড়ার ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধুর ভূমিকা অনেক। এই বাসত্মবতায় ওরা তিন জন স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমিন, জুবায়ের হাসান ও লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ অনেক ভালো বন্ধু। ।

দেশের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখা, সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে স্থাপত্যশিল্পে কাজ করে চলেছেন তিনজনই। সকলে বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগ থেকে ২০০৬ সালে পাস করেছেন। তিন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন ‘আর্কি গ্রাউন্ড’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। যা এখন এ দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট প্রতিষ্ঠান। আর্কি গ্রাউন্ডকে একটা আস্থার জায়গায় আনার পেছনে রয়েছে এই তিন বন্ধুর নিরলস সংগ্রাম ও পরিশ্রম। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন তৈরি করে অনেকের নজর কেড়েছে। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তিন বন্ধুকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

দুই ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় আর্কিটেক্ট নবী নেওয়াজ খান শমিন। তার গ্রামের বাড়ি নরসংদী জেলায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শমিনের বাবা মৃত এ কে ডি নেওয়াজ মোহাম্মদ খান বি আই ডব্লিউ টি এ কর্মকতা ছিলেন। মা দিল আফরোজ গুলবাহার খান গৃহিনী। স্কুল জীবন থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। আঁকাআঁকির প্রতি ছিল তার প্রচন্ড নেশা। বই পড়া ছিল তার পছন্দের বিষয়। খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন। তবে ছবি আঁকার ঝোঁকটা ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। উদয়ন হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। স্ত্রী তাসনিয়া আজিজ ও এক কন্যাকে নিয়েই তার সুখী সংসার।

স্থপতি জুবায়ের হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে। তার বাবা কে এম নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন এডভোকেট। মা জেসমিন সুলতানা গৃহিণী। দুইভাই এক বোনের মধ্যে হাসান মেঝ। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জে। সেখানে জেডিপি হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। স্ত্রী তাহমিদা আফরোজ একজন আর্কিটেক্ট। এই দম্পত্তি একপুত্র সনত্মানের জনক-জননী।

তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট স্থপতি লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ। তার জন্ম চাঁদপুর শহরে। রিয়াজের বাবা শফিউদ্দিন আহমেদ ব্যবসায়ী ছিলেন। মা মনোয়ারা বেগম গৃহিনী। রিয়াজের স্ত্রীর নাম খাদিজা রহমান তানচি। এই দম্পতি এক ছেলে সনত্মানের জনক-জননী। হাসান আলী সরকারি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৬ সালে। ১৯৯৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটে।

তিন বন্ধুই ২০০৫ সালে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর বিভিন্ন ফার্মে কাজ করেন তারা।

Shah-Cement-1২০০৮ সালে তিন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন ‘আর্কি গ্রাউন্ড’ লিমিটেড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। লেক সার্কাস কলাবাগানে তারা খুব সুন্দর করে একটি অফিস সাজিয়েছেন। একই রুমে তিন বন্ধু পাশাপাশি বসে অফিস করেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ স্থপতিসহ মোট ৩০ জন কর্মী কাজ করছেন। ইতিমধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের নামকরা অফিস কমপ্লেক্স, কমার্শিয়াল টাওয়ার, ফ্যাক্টরী, ইউনিভার্সিটি, মসজিদ, স্কুল, কলেজ, ব্যাংক সহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- বাড্ডার ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্র্সিটি, গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্ট, খুলনার ভ্যাকেশন হাউস রামপাল, গাজীপুরের ডেনিম হ্যান্ড লুমসেড ফ্যাক্টরী, ধানমন্ডি-২৭ এর বেঙ্গল আর্ট সেন্টারের রেনুভিশনের কাজ, নারায়নগঞ্জের রেস্ট হাউজ, গাজীপুর মাওনার এবিএসএস এর গ্রীণ ফ্যাক্টরী, মুন্সিগঞ্জের প্রাইমারি স্কুল, লক্ষীপুর বহমিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন ফাউডেশনের মসজিদ ও স্কুল, নড়াইলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এসএম সুলতান আর্ট স্কুল, নারায়নগঞ্জ ভোলতার স্মার্ট ফ্যাক্টরী, গাজীপুর জৈনা বাজারের এনকিউ গার্মেন্স, বাড্ডার কল্পনা আজিজ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, সাভারের মেগপাই কম্পোজিট ফ্যাক্টরী, উত্তরার আন্না অ্যাপার্টমেন্ট, আগ্রাবাদের ইউসিবিএল ব্যাংক, নিটকনর্সান এর বিভিন্ন অফিসের ইন্টেরিয়র, ক্রিয়েটিভ গ্রুপের হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, মেগপাই গ্রুপের অফিসের ইন্টেরিয়র, বিভিন্ন স্থানে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইন্টেরিয়র, অ্যাম্বার লাইফ স্টাইলের সবগুলো আউটলেটের ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তারা। স্থাপনার কাজে আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের রয়েছে অসম্ভব সাফল্য। প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিয়ে তারা পুরস্কৃত হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে তাদের সাফল্যের ঝুড়িতে জমা হয়েছে সেরা কর্মের স্বীকৃতি। অসংখ্য পদক, সম্মাননা আর প্রশংসায় তারা গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেননি। বরং নিত্য নতুন আইডিয়া, পরিবেশ সচেতনতা এবং মানবিক মূল্যবোধকে সবার আগে স্থান দিয়েছেন। আর তাই দেশের সচেতন মানুষের কাছে ‘আর্কি গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠেছে আস্থার জায়গা।

‘আর্কিগ্রাউন্ড’ প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমিন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি প্রকৃতির বুকে গাছপালা, বৃক্ষরাজি জন্মানোর সময় ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও জলবায়ুর কারণে বিভিন্ন দেশের বা স্থানের গাছপালার প্রকার ও গঠন যেমন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তেমনি প্রকৃতির বুকে একটি স্থাপনা ও ঐ স্থানের ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। আমরা চেষ্টা করছি, আমাদের স্থাপনা গুলো যেন বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং স্থানীয় সহজলভ্য উপাদান এই বিষয় গুলোকে সন্তুষ্ট করার পাশাপাশি সমসাময়িক বিশ্ব স্থাপত্যের আধুনিকতাকেও প্রতিনিধিত্ব করে। এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশী আধুনিক স্থাপত্য করার চেষ্টা করছি আমরা।

আর্কি গ্রাউন্ড এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যদি বলতে হয়, তাহলে বলবো আমরা আরো নতুন নতুন প্রতিভাবান স্থাপতিদের সমন্বয়ে আরো বড় পরিসরে দেশের প্রত্যনত্ম অঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই এবং বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশের স্থাপত্যকে পরিচিত করতে চাই।