Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বসবাসযোগ্য নগর গড়ার স্বপ্ন দেখেন আবু সাঈদ

এদেশের আদি স্থাপত্য রক্ষার কাজ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন স্থপতি ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ। ১৯৯৭ সালে জার্মানির কার্লস রুহেল ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি এশিয়া প্যাসেফিক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন করেছেন। স্কুল জীবনে টেকনিক্যাল ড্রইংয়ে পারদর্শী ছিলেন। লেখালেখি তার পছন্দের বিষয়। তার সম্পাদনায় স্থাপত্যের আদি ইতিহাস নিয়ে কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন- মোহাম্মদ তারেক

ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ এ দেশের কৃতী আর্কিটেক্টদের একজন। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শনীয় স্থাপনার কাজ করে তিনি অনেকের কাছে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে স্থপতি ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ চতুর্থ। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার আগ্রায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আবু সাঈদের বাবার নাম আব্দুর রশীদ। তিনি কুমিল্লা শহীদ শামসুল হক পলিটেকনিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। মা হেলেনা বেগম গৃহিনী। স্কুলে পড়াকালীন আবু সাঈদের টেকনিক্যাল ড্রইংয়ের প্রতি ছিল বেশ আগ্রহ। বিভিন্ন মডেল বানানো, ঈদ কার্ড বানানো ছিল পছন্দের বিষয়। তবে ড্রইংয়ের প্রতি ঝোঁকটা ছিল বেশি। স্কাউটিং এর সাথেও জড়িত ছিলেন।

নিজের ইচ্ছা থেকেই আর্কিটেক্ট হওয়া তার। সফল একজন স্থপতি হয়েছেন। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮৩ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই আবু সাঈদ যোগ দেন ইসিবিএল নামক কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে চার বছর চাকরি করেন। এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই স্থাপত্য বিষয়ে অনেক কিছু শিখেছেন তিনি। এরপর স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ মাস্টার্স করার জন্য পাড়ি জমান জার্মানিতে। ১৯৯১ সালে জার্মানির কার্লস রুহেল ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স পাস করেন।

১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে দেশে ফিরে আসেন স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ। দেশে এসেই যোগ দেন, এশিয়া প্যাসেফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে। বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। দেশের নামকরা স্থপতিদের নিয়ে স্থাপত্যের ডিজাইন স্কুল তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ স্থপতি ইনসটিটিউটে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইতোমধ্যে আবু সাঈদ এম আহমেদ দেশের নামকরা মসজিদ, একাডেমি ভবন, ছাত্রাবাস, গেষ্টহাউস, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিসসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, প্রধান স্থপতি আবু হায়দার ইমাম উদ্দিনের সাথে ফুলবাড়িয়ার ‘নগর ভবন’ শাহবাগে ঢাকা ক্লাবের গেষ্ট হাউস, যশোরে বিএএফ এর বীর মতিউর রহমান একাডেমি, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমি, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেন্ট্রাল লাইব্রেরী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেন্ট্রাল মসজিদ, যশোরের বিএএফ এর জিমনেশিয়ান, জার্মানির ফরচিয়েমের ফায়ার ব্রীজ স্টেশন ও দুরলেচ রেসিডেন্স বিল্ডিং, ঢাকা বকসিবাজারের ইসিবিএল এর অফিস বিল্ডিংসহ অসংখ্য রেসিডেন্স বিল্ডিং। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ তার সব ধরনের কাজ রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন।

১৯৯১ সালে হোমায়রা ইয়াসমীন এর সংগে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন তিনি। এ দম্পতি দুই সনত্মানের জনক-জননী। স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, এদেশের স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করে থাকি।

আমাদের আদি বিল্ডিংগুলো সভ্যতার নিদর্শন। ওই বিল্ডিং গুলো যদি বের করতে পারি, তাহলে আমাদের সভ্যতা কত পুরাতন ছিল সেটা বের করা যায়। আমরা শুধু সংরক্ষণের কাজ করি। বাংলাদেশ স্থাপত্য অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষণের কাজ কিছু হয়েছে। আবার বেসরকারিভাবেও বেশ কিছু কাজ হয়েছে। আমাদের কাজের মধ্যে অন্যতম একটা কাজ হচ্ছে ঢাকার নিমতলী দেউরী এই নিমতলী দেউরী ঢাকার প্রথম প্যালেস। মোঘল আমলের শেষের দিকে সরদারদের প্যালেস ছিল। সেখান থেকে একটা দরজা আমরা সংরক্ষণ করি। সেই দরজা এখন গেইট হাউস। ঢাকা এশিয়াটিক সোসাইটির ক্যাম্পাসের ভিতরে আছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের মুঘল মসজিদ ছিল সেটাকেও সংরক্ষণ করি।

বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বড় যে কাজটি চলছে তা হচ্ছে সোনারগাঁও মিউজিয়াম বড় সর্দারের বাড়ি। এটাকে আমরা জাতীয় লোকশিল্প জাদুঘর তৈরি করব। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে জাদুঘরটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর আমরা সোনারগাঁওয়ের পানামকে সংরক্ষণ করব। এছাড়াও সংরক্ষণের কাজের মধ্যে থাকবে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। এখন আমাদের কাজ তাঁর আদি বাড়িটা সংরক্ষণ করা।

তিনি আরো বলেন, আমার মূল ফোকাস হলো, এদেশের আদি বিল্ডিং গুলোকে সংরক্ষণ করা। বিল্ডিং গুলো আদিতে যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া।

স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, বসবাসযোগ্য একটি শহর, নগর গড়ার স্বপ্ন দেখি এটাই আমরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।