Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ফারুকের স্থাপত্য ভাবনা

স্থাপত্যশিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন এ বি ফারুক আহমদ। বুয়েটে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৭ সালে তিনি যোগ দেন চট্টগ্রামের ‘প্রণয়ন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মে। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর ‘ডিজাইন এসোসিয়েট লিমিটেড’-এ যোগ দেন। সেখানে তিনি নয় বছর চাকরি করেন। এ যাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। স্কুল জীবনে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন। ভ্রমণ ছিল তাঁর পছন্দের বিষয়। ফুটবল ভালো খেলতেন। ২০১৪ সাল থেকে এখনো পর্যনত্ম কনকর্ড গ্রুপের চীফ আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক

এক ভাই চার বোনের মধ্যে আর্কিটেক্ট এ বি ফারুক আহমদ সবার বড়। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠা পুরনো ঢাকার নয়াবাজারে। ফারুক আহমদের বাবার নাম এ এম সালেহ জওহার। তিনি রূপালী ব্যাংকের এজিএম ছিলেন। মা লতিফা বেগম রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন।

ফারুকের মধ্যে আঁকাআঁকির বীজটা ছোটবেলা থেকেই রোপণ হয়েছিল। স্কুলজীবন থেকে আঁকআঁকির প্রতিই ছিল তাঁর আগ্রহ। যেখানেই ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই তাঁকে দেখা যেত। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিল আর্কিটেক্ট হওয়ার। ড্রইং চর্চা করতে করতে আজকে তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি।

সেন্ট গ্রেগোরিজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। তাঁর সহপাঠি বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি প্যাটরিক, শাবাব রায়হান কবির ও নাঈম আহমেদ কিবরিয়া। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, শামীম আরা ম্যাডাম।

POLICE-PLAZA-CONCORD Sheltech-Bithika,Mirpurস্থপতি এ বি ফারুক আহমদ বুয়েট থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই যোগ দেন চট্টগ্রামের ‘প্রণয়ন’ নামে একটি ফার্মে। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এরপর স্থপতি এ বি ফারুক আহমদ যোগ দেন ‘ডিজাইন এসোসিয়েট লিমিটেড’-এ। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে নয় বছর চাকরি করেন। ২০০৬ সালে যোগ দেন প্রোফাইল লিমিটেড (ডোমিনো ডেভেলপমেন্টস)-এ।

২০০৮ সালে শেলটেক-এ চীফ আর্কিটেক্ট হিসেবে তিন বছর চাকরি করার পর যোগ দেন ‘নাভানা লিমিটেড’-এ। সেখানে তিনি তিন বছর চাকরি করেন। ২০১৪ সালে স্থপতি এ বি ফারুক আহমদ যোগ দেন কনকর্ড গ্রুপে। সেখানেও আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থপতি ফারুক আহমদ দেশের নামকরা রিসোর্ট, এয়ারপোর্ট, হল, মসজিদ, কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিসসহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে সিলেটের এমএজি ওসমানী এয়ারপোর্টের ডিজাইন, বাংলাদেশের ৮টি জেলার পল্লীবিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসার্স কোয়ার্টার, ঢাকা ইউনিভার্সিটির কার্জন হলের বর্ধিত অংশের ডিজাইন, মিরপুর মাজার রোডের শেলটেক বীথিকা হাউজিং প্রজেক্টের ডিজাইন, গুলশান-২ এর কনকর্ডের পুলিশ প্লাজার বর্ধিত অংশের ডিজাইন, চট্টগ্রামের কনকর্ডের খুলশি টাউন সেন্টার, ঢাকার ভুলতা রোডের জামে মসজিদ, চট্টগ্রামের কনকর্ডের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের বর্ধিত অংশের রিসোর্ট ডিজাইন, খিলক্ষেতের কনকর্ড লেকসিটির বর্ধিত অংশের ডিজাইন, তেজগাঁও এর এহসানুল হক খানের কমার্শিয়াল বিল্ডিং, সাভারের নাভানার কুটুরিয়া গেটওয়ে, চট্টগ্রামের খুলশিতে মি: আকরামের ৮তলা আবাসিক ভবন, ধানমন্ডির ড: এনামুল কবির রেসিডেন্স বিল্ডিং, গুলশানের সাবেক বিচারপতি মোসত্মফা কামালের রেসিডেন্স বিল্ডিং, ধানমন্ডির অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামের রেসিডেন্স বিল্ডিং, চট্টগ্রামের আলী মঞ্জিল, ডেমরার রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোতালেবের ৮তলা রেসিডেন্স বিল্ডিং, মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় নূরুল করিমের রেসিডেন্স বিল্ডিংসহ অসংখ্য বিল্ডিংয়ের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তিনি।

ফারুক আহমদ তাঁর সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। ২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তামান্না খান। এই দম্পতি দুই সনত্মানের জনক-জননী।

আর্কিটেক্ট এ বি ফারুক আহমেদ বলেন, আমি মনে করি একটি বাসযোগ্য আবাসন মানে এই নয় যে, একটি সুরম্য অট্টালিকা। যার দেয়াল থেকে শুরু করে ছাদ পর্যনত্ম সর্বত্র শুধু দামি ফিনিশিং আইটেমের যথেচ্ছ ব্যবহার। বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজনের শেষ আছে, কিন্তু ভোগের শেষ নেই। তাই ভোগবিলাসের ঊর্ধ্বে প্রয়োজনকে আমি ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখার চেষ্টা করি। খুব ভালো দৃষ্টিনন্দন বিল্ডিং ডিজাইন করতে গিয়ে যদি তাঁর অভ্যনত্মরীণ স্পেস আমরা নষ্ট করে ফেলি, তবে সেটা হবে বসবাসকারীর জন্য মূল্যহীন।

তিনি আরো বলেন, শুধু উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত সকলের জন্য বাসযোগ্য আবাসন আমার ডিজাইনের পূর্বশর্ত। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের দেশের ডেভেলপার কোম্পানিগুলো একধাপ এগিয়ে সর্বসত্মরের মানুষের অভিষ্ট লক্ষে বিরাট ভূমিকা রাখছে। সেই সাথে সকলের সদিচ্ছা ও আনত্মরিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি এ বি ফারুক আহমদ।