Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

একটি জন্মদিন ও শেকড়ের গল্প!

তার নাম কিশোরী। দেশ বরেণ্য কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের আদরের নাতনী। অস্ট্রেলিয়ায় বাবা-মায়ের সাথে থাকেন। কিশোরীর বাবার নাম ফরহাদুর রেজা প্রবাল। তিনি রাবেয়া খাতুনের ছোট ছেলে। দীর্ঘ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া সরকারের গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। বছরে একবার হলেও বিশেষ করে মা রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন উপলক্ষে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে আসেন ফরহাদুর রেজা প্রবাল। এাবরও এসেছেন।
২৭ ডিসেম্বর ছিল রাবেয়া খাতুনের ৮১তম জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর গুলশানস্থ ওয়েস্টিন হোটেলে রাবেয়া খাতুনের জন্মদিন পালন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে এবার মেধা ও মননের দ্যূতি ছড়ালেন রাবেয়া খাতুনের নাতি-নাতনীরা।
প্রথমে বক্তব্য রাখেন কেকা ফেরদৌসীর বড় মেয়ে সোনালী। তারপর বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ফরহাদুর রেজা প্রবালের মেয়ে কিশোরী। নানী রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে সোনালীর সম্পর্ক অনেকটা বান্ধবীর মতোই। নানী-নাতনীর আন্তরিক সম্পর্কের আলো ছড়িয়ে সোনালী মঞ্চ থেকে নেমে যাবার পর এক পর্যায়ে কিশোরীকে মঞ্চে আহ্বান জানান হয়। অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা কিশোরী প্রথমেই দর্শকদের উদ্দেশে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন আমার বাংলা উচ্চারণ হয়তো ভালো হবে না। তবুও আমি চেষ্টা করছি। এরপর কিশোরী যখন বক্তব্য রাখতে থাকেন তখন উপস্থিত অতিথিরা ক্রমান্বয়ে বিমোহিত হয়ে ওঠেন।
কিশোরী বলেন, রাবেয়া খাতুন আমার দাদী একথা ভাবলেই গর্বে বুকটা ভরে যায়। আমি তার অনেক লেখা পড়েছি। সর্বদাই ভাবি আমি যদি দাদীর মতো হতে পারতাম। দাদীর আদর্শ আমাকে প্রতিনিয়ত ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করে। দাদীই আমার আইডল।
রাবেয়া খাতুন শুধু কী তাঁর নাতনী কিশোরীর আইডল? না তা নয়। সারাদেশে অগ্রসয়মান অসংখ্য পরিবারের আইডল তিনি। একথা তো সত্য আজ বাংলাদেশের টিভি মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে পরিবারটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে সেটি রাবেয়া খাতুনেরই পরিবার। রাবেয়া খাতুনের বড় ছেলে ফরিদুর রেজা সাগর দেশের একজন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক। বেসরকারী পর্যায়ে বাংলা দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন প্রতিষ্ঠান চ্যানেল আই এর কর্ণধার তিনি। বাংলাদেশের টেলিভিশন মাধ্যমে যা কিছু আধুনিক ধারার সৃষ্টি তার প্রায় সব কিছুরই সূচনা ফরিদুর রেজা সাগরের চিন্তা থেকে। ফরিদুর রেজা সাগরের স্ত্রী কনা রেজা দেশের একজন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা। সাগর ও কনা দম্পতির রয়েছে মেঘনা ও মোহনা নামে দু’জন মেধাবী কন্যা। মেঘনা চিকিৎসক। আর মোহনা স্থপতি। মাত্র কয়েকদিন আগে মেঘনার বিয়ে হয়েছে। তার স্বামীও একজন চিকিৎসক।
রাবেয়া খাতুনের বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী দেশের একজন নামকরা রন্ধন বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের টেলিভিশন মাধ্যমে রান্নাকে একটি জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠানে পরিণত করেছেন তিনি। কেকা ফেরদৌসীর স্বামী মুকিত মজুমদার বাবু চ্যানেল আই এর অন্যতম পরিচালক। তিনি একজন প্রকৃতিবিদ। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। সব চেয়ে বড় কথা দেশের প্রকৃতি নিয়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি দেখিয়েছেন অদম্য দৃষ্টান্ত। চ্যানেল আইতে তার পরিচালনায় নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নামে একটি আলোচিত অনুষ্ঠান। কেকা ও বাবু দম্পতির বড় মেয়ে সোনালী ফেরদৌসি একজন উদীয়মান রূপবিশেষজ্ঞ। তার স্বামীর নাম মুবারাজ হোসেন খান। তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা। সোনালীর একমাত্র ছোট ভাইয়ের নাম মেহেদী ফেরদৌস মজুমদার (আকাশ)। তিনি বোস্টন থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেছেন।
রাবেয়া খাতুনের দ্বিতীয় মেয়ে কাকলী একজন সুগৃহিনী। তার স্বামী জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন চ্যানেল আই এর অন্যতম পরিচালক। পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে পরিচালিত হেলিকপ্টার সার্ভিস ইমপ্রেস এভিয়েশনের মূল নেতৃত্বে রয়েছেন। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম ফায়জা মাহমুদ। তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। তার স্বামীর নাম দস্তগীর শেখ। যিনি একজন প্রবাসী উদ্যোক্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞ। মামুন ও কাকলীর একমাত্র ছেলের নাম আদনান ফাইয়াজ মাহমুদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএর ছাত্র।
RABEYA-KHATUN-Birthdayরাবেয়া খাতুনের ছোট ছেলের নাম ফরহাদুর রেজা প্রবাল। তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসাবে গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একজন নামকরা উপস্থাপক। তার স্ত্রীর নাম নিগার আশফাক রেজা। তিনি একজন স্থপতি। তাদের রয়েছে দুই কন্যা যথাক্রমে নাবিলা তাহসিন রেজা (কিশোরী) ও নাবিহা তাহসিন রেজা (অদ্বিতীয়া)। কিশোরী অস্ট্রেলিয়ার একজন তরুণ আইনজীবি। আর অদ্বিতীয়া পেশাদারী অভিনেত্রী ও নৃতশিল্পী।
এই যে এত উজ্জ্বল মেধাবী কিছু পরিবারের কথা বলা হল তাদের মূল শেকড়ে রয়েছেন রাবেয়া খাতুন। কথায় আছে-বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়। রাবেয়া খাতুনের ছেলে মেয়ে, তাদের জামাই, বউ ও ছেলে-মেয়েদের দেখে সত্যি এই কথাটির মর্মার্থ সহজেই ধরা পড়ে। সেদিন রাবেয়া খাতুনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাঁর নাতনীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখে একজন বক্তা তো বলেই ফেললেন- আজ আমি একজন নয় অনেক রাবেয়া খাতুনকে দেখছি। রাবেয়া খাতুনের নাতনীদের দেখে মনে হচ্ছে তারাও এক একজন রাবেয়া খাতুন।
আসলেও তাই। রাবেয়া খাতুনের পরিবার মানেই মেধাবী, সৃজনশীল আদর্শে গড়া দেশ প্রেমিক মানুষের প্রেরণার উৎস। দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ব্যবসা বানিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবারটির সদস্যরা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সেদিন রাবেয়া খাতুনের জন্মদিনের আলোচনায় বক্তারা অভিন্ন সুরে এসব অর্জন ও অহংকারের কথাই বলছিলেন। অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রাবেয়া খাতুনের কর্মময় জীবনের সংগ্রাম মুখর নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, রাবেয়া খাতুন শুধু সাহিত্য ক্ষেত্রে নয় পারিবারিক ক্ষেত্রেও আমাদের সকল প্রেরনার উৎস। তাঁর পরিবারের মেধাবী সদস্যরাই আজ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা বানিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল ভূমিকা পালন করছেন। এজন্য অশেষ কতৃজ্ঞতা রাবেয়া খাতুনের প্রতি। হ্যাপি বার্থ ডে রাবেয়া খাতুন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আনিসুল হক, আলী ইমাম, নায়ক রিয়াজ, ফারজানা ব্রাউনিয়া, রাবেয়া খাতুনের বড় জামাতা মুকিত মজুমদার বাবু, দুই পুত্রবধু কনা রেজা ও নিগার আশফাক রেজা, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী, আদরের নাতনী সোনালী ও কিশোরী।
ওয়েস্টিনের বলরুমে জন্মদিনের এই অনুষ্ঠানে ‘কথা প্রকাশ’ কতৃক প্রকাশিত ‘স্মৃতি সংগ্রহ’ নামে রাবেয়া খাতুনের একটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাযহার। অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পক্ষে রাবেয়া খাতুনকে ফুলের শুভেচ্ছা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষে রাবেয়া খাতুনকে ফুলের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়। অধ্যাপক রফিকুল ইসরাম, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, হাবিবুর রহমান খান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, কাজী রোজি, মুহম্মদ জাহাঙ্গীর, আলী ইমাম, আনিসুল হক, আসমা আব্বাসী, বিশিষ্ট ব্যাংকার শাহ আলম সারোয়ার, বিশিষ্ট শিল্পপতি নূর আলী, নাসির আহমেদ, আসলাম সানী, রেজাউদ্দিন স্টালিন, আমীরুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান সুরুয, মুশফিকুর রহমান গুলজার, গীতালী হাসান, শিরিন রকুল, আফরোজা বানু, প্রকাশকদের মধ্যে মনিরুল হক, ফরিদ হোসেন, মিলন নাথ, জসীম উদ্দিন, চলচ্চিত্র তারকা রিয়াজ, ওমর সানী, অরুণা বিশ্বাস, ফারজানা ব্রাউনিয়া, রাবেয়া খাতুনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বড় ছেলে ফরিদুর রেজা সাগর, তাঁর স্ত্রী কনা রেজা, ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল, তার স্ত্রী নিগার আশফাক রেজা, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী ও তার স্বামী মুকিত মজুমদার বাবু, ছোটমেয়ে কাকলী ও তার স্বামী জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন এবং তাদের ছেলে মেয়েরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে রাবেয়া খাতুনের সদ্য বিবাহিতা আদরের নাতনী ফরিদুর রেজা সাগর ও কনা রেজার বড় মেয়ে মেঘনা তার স্বামী রাফায়াতকে নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হলে অতিথিরা বিপুল করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানায়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশেষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সাদী মুহম্মদ মাকে নিয়ে লেখা একাধিক গান গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে মাহাদি ও অরুনা বিশ্বাসও গান গেয়ে শোনান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। উপস্থাপনায় ছিলেন লুৎফর রহমান রিটন ও মৌসুমী বড়ুয়া।