Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

৭৫তম জন্মদিনে হাশেম খান কোনদিন ভাবিনি এতো ভালোবাসা পাব!

তিনি গেরুয়া রঙের পাঞ্জাবী পরেছেন। আলো ঝলমলে মঞ্চে বসে হাসছেন মিটিমিটি। বিদ্যুতের আলোয় সেই হাসিটা চমৎকার লাগছে। কিন্তু গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনা হেনা, বেলী, দেশী বিদেশী নানা ফুলের সত্মূপের কারনে তাঁকে ঠিক দেখা যাচ্ছে না মুখটি ছাড়া। কেউ একজন বললেন, ফুল গুলো এক পাশে সরিয়ে দিন। ফুলগুলো সরানো হলো কিন্তু খানিক বাদে আবারও সেই ফুলের সত্মূপ। তাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা, অভিনন্দন আর তাজা ফুলের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা এবং লেখক, সাংবাদিক ও তার বন্ধুরা। ১৬ এপ্রিল ১৯৪২ সালে জন্মেছিলেন তিনি। সেই হিসেবে আজ তার ৭৫ তম জন্মদিন। বাংলাদেশের একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, সবার প্রিয় হাশেম খান।

ছবির কবি হাশেম খানের ৭৫তম জন্মদিনের জাকজমক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে। আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন ১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আকার্ইভ ও জাদুঘর, বাংলাদেশ চর্চা (মুনতাসীর ফাতেমা ট্রাষ্ট), হাশেমখান-পারভিন ট্রাষ্ট, চন্দ্রাবর্তী একাডেমি, জার্নিম্যান বুকস ও গ্যালারী ’২১।

আয়োজক কমিটির আহবায়ক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে হাশেম খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে কথা বলেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ। অভিনেতা কেরামত মওলা, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, শিল্পী মনিরুল ইসলাম, কবি মুহম্মদ সামাদ। অনুষ্ঠানে হাশেম খানের লেখা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কিশোর উপন্যাস ও তাঁর চিত্রকলা নিয়ে বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের লেখা ‘হাশেম খানের কাজ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, কবি কাজী রোজী, শিশু সাহিত্যিক আসলাম সানী, আমীরুল ইসলাম, প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার, আনজির লিটন, হুমায়ন কবীর ঢালী প্রমূখ ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান শিল্পী হাশেম খানকে।

জীবনের ৭৫-এ পা দেয়ার এই শুভক্ষনে শিল্পী হাশেম খান বলেন, কোনো দিন ভাবিনি মানুষের এতো ভালোবাসা পাব। আমি মা বাবার আদেশ পালন করেই ৭৫-এ পা দিলাম। সাত ভাই সাত বোনের মধ্যে আমি ৬ষ্ট। আমার বাবা বলেছিলেন মানুষের ভালোবাসা অর্জন করো সেটাই হবে আসল কাজ। তাদের আদেশ নিয়ে আজ আমি ৭৫-এ।

ছবির কবি হাশেম খানের শুভ জন্মদিনে কেক কাটা, ফুল উপহার দেয়া এবং তাঁর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশিষ্টজনের বক্তব্য, সব কিছু মিলেয়ে ওই দিন জাতীয় জাদুঘরের আঙ্গিনা হয়ে উঠেছিল আনন্দময়।

বাংলাদেশের একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হাশেম খান। ১৯৬০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যনত্ম পঞ্চান্ন বছর ধরে নিরলস ভাবে চিত্রকলা চর্চার মাধ্যমে দেশের চিত্রকলার ভূবনটা আলোকিত করেছেন, সমৃদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি দেশে শুদ্ধ সংস্কৃতি বিকাশে রয়েছে তার বিশেষ ভূমিকা ও অবদান। তিনি লেখক, সম্পাদক ও সংগঠক। রুচিস্নিগ্ধ ও সুশোভন পুসত্মক প্রকাশনায় তাঁর অনেক ভূমিকা রয়েছে। ছোটদের বইয়ের ইলাস্টেশনে দক্ষ শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৫৮ সাল থেকে এদেশে শিশুচিত্রকলা-চর্চা মূলত তিনিই শুরু করেছেন। আজ ঘরে ঘরে শিশুরা আনন্দ নিয়ে ছবি আঁকছে। তারই ঐকানিত্মক চেষ্টায় ২০১৪ সাল থেকে স্কুলের অষ্টম শ্রেণী পর্যনত্ম আবশ্যিক পাঠ্য-বিষয় হিসেবে চিত্রকলা অনত্মর্ভুক্ত হয়েছে।