Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

১৯৭১ এবং ২০২১ কী চমৎকার মিল!


মামুনুর রহমান


খেয়াল করেছেন কি মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ এবং চলমান ২০২১ সালের মধ্যে অবাক করা মিল রয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একেবারে হুবহু মিল।কিন্তু এধরনের মিলের কারণ কি? তাহলে কি ধরেই নেয়া যায় প্রতি পঞ্চাশ বছর পর পর এমনটা হবে? যেমন ঘড়ির কাটা গুলো রাত বারোটায় মিলে যায় সেভাবে? এর মানে কি আরও পঞ্চাশ বছর পর অর্থাৎ ২০৭১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবো তখনও কি দিনপঞ্চির মিল ঘটবে? তারপর কি আরও পঞ্চাশ বছর পর ২১২১ সালেও কি এমনটা হবে?
বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। তাহলে এবার এমন হলো কেন নিশ্চয়ই কৌতুহল হচ্ছে? তাহলে চলুন এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ফিরে যাই দিনপঞ্জির কাছে।
গাণিতিক ভাষায় পৃথক বছরের দিন বা বারের মধ্যে হুবহু মিল থাকলে তাকে বলা হয় আইডেন্টিক্যাল ক্যালেন্ডার ইয়ারস বা অভিন্ন দিনপঞ্জির বছর। শুধু নির্দিষ্ট কোন বছর নয়, যে কোন বছরে এমন অনেক গুলো অভিন্ন দিন মিলে যাওয়া সম্ভব। শ্রেফ গাণিতিক নিয়মেই এমনটি ঘটছে।
১৯৭১ থেকে ২০২১ এই পঞ্চাশ বছরের দিনপঞ্জি পর্যালোচনা করে দেখা যাক। মজার বিষয় এমন অভিন্ন বছরের ঘটনা এরই মধ্যে আরও চার বার ঘটেছে। যা আমরা আগে খেয়াল করিনি। ১৯৮২, ১৯৯৩, ১৯৯৯ ও ২০১০ সালে এমন ঘটনা ঘটে গেছে। এমনকি আগামী পঞ্চাশ বছরে ২০২১ সাল থেকে ২০৭১ সাল পর্যন্ত এমনটা ঘটবে আরও পাঁচ বার। ২০২৭, ২০৩৮, ২০৪৯, ২০৫৫ ও ২০৬৬ সালের বছর গুলোতেও ঘটবে এমনটা।
এর অর্থ দাঁড়ালো ১৯৭১ থেকে ২০৭১ সাল এই ১০০ বছরে হুবহু অভিন্ন বছরের সংখ্যা পাওয়া গেল মোট ১১টি। নিশ্চয়ই জানতে চাইছেন কোন যুক্তিতে বা কিসের হিসেবে এমনটা বলতে পারছি আমরা? বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করি। গ্রেগরীয় বা খ্রিষ্টীয় বর্যপঞ্জির যে কোনো প্রথম দিন ১ জানুয়ারি স্বাভাবিক ভাবে সপ্তাহের ৭টি দিনের (রবি-শনি) একটি দিনে হবে। আর বছরটি যদি ৩৬৫ দিনের হয় তাহলে হবে সাধারন বছর। আর ৩৬৬ দিনের হলে হবে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ।
সাধারণ বছর সাতটি দিনের একে দিনে শুরু হলে সম্ভাব্য দিনপঞ্জি পাওয়া যাবে। আবার অধিবর্ষের ক্ষেত্রেও এই ভাবে আরও সাতটি সম্ভাব্য দিনপঞ্জি পাওয়া যাবে। এভাবে দুই ধরনের বছরে ১৪টি সম্ভাব্য দিন পঞ্জি আছে। যে কোনো বছরের দিনপঞ্জি এই ১৪টি দিনপঞ্জির যে কোন একটির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে।
কত বছর পর পর এমন অভিন্ন বছর পাওয়া যাবে এটা চট করে বলে দেয়া মুশকিল। কারণ সাধারণ বছর হয় ৩৬৫ দিনের অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহ ও ১ দিন। আর অধিবর্ষের ক্ষেত্রে এই হিসাব ৫২ সপ্তাহ ২ দুই দিন, অর্থাৎ ৩৬৬ দিন। ফলে কোনো বছরের শুরুর দিনটি অন্য কোন বছরের শুরুর দিনের সঙ্গে মিলে গেলে প্রথমে দেখতে হবে দুটো বছরের কোনোটি অধিবর্ষ কিনা। যদি দুটো বছরের একটি সাধারণ বছর ও অন্যটি অধিবর্ষ হয় তাহলে তারা কখনোই অভিন্ন হবে না। যদি দুটো বছরই সাধারণ, আবার দুটোই যদি অধিবর্ষ হয় তাহলেই তারা অভিন্ন বছর হবে।
১৯৭১ সাল ছিল ৩৬৫ দিনের অর্থাৎ সাধারন বছর। আর উল্লিখিত এই শতকের সব গুলো বছরের দিকে দেখুন সব বছরই সাধারণ বছর। আবার গেল ২০২০ সালটি যেমন অধিবর্ষ, বিংশ ও একবিংশ শতকের চলতি বছরটি অভিন্ন বছর গুলো হলো ১৯০৮, ১৯৩৬, ১৯৬৪, ১৯৯২, ২০৪৮ ও ২০৭৬ যে বছর গুলো অধিবর্ষ।
গাণিতিক হিসেবে দেখা গেছে দুটো অভিন্ন বছর পেতে সর্বনিম্ন ৬ বছর থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কারণ দুটো অভিন্ন বছরের মধ্যে সময় থাকতে পারে ২ হাজার ১৯১ দিন (যদি ৩ বছর তফাৎ হয়) ৪ হাজার ১৮ দিন (যদি ১১ বছর তফাৎ হয়) ৪ হাজার ২৮২ দিন (যদি ১২ বছর তফাৎ হয়) ১০ হাজার ২২৭ দিন (যদি ১৮ বছর তফাৎ হয়) ১৪ হাজার ৬০৯ দিন (যদি ৪০ বছর তফাৎ হয়)। ২০২১ সালের আগের বছরটি যেমন ছিল ১১ বছর আগে এবং পরের অভিন্ন বছরটি আমাদের গাণিতিক হিসেবে আসবে ২০২৭ সালে।
স্বাভাবিক গাণিতিক নিয়মেই ২০২১ সালের দিনপঞ্জি ১৯৭১ সালের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মতো একটি বৃহৎ উপলক্ষে এ ধরনের মিল স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেশের মানুষের মনে গভীর আবেগের সঞ্চার করেছে।