Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

হলে গিয়ে দেখি আমার কোনো দৃশ্যই নাই —পুজা চেরী

পূজা চেরী। চিত্র নায়িকা। চলচ্চিত্রে তার শুরুটা হয়েছিল শিশু শিল্পী হিসেবে। টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়ে উঠেছেন। এখন তিনি পুরোপুরি নায়িকা। চিত্র নায়িকা হিসেবে পূজা অভিষিত হন জাজ-এর ‘পোড়ামন ২’ ছবি দিয়ে। রায়হান রাফির পরিচালনায় সিয়ামের বিপরীতে পূজা নিজের নায়িকা জীবনের দারুণ সম্ভাবনার কথাই জানান দিয়েছিলেন সেই ছবিতে। তারই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো বছর শেষে ‘দহন’ সিনেমাতেও। এখানেও তিনি রেখেছেন সাবলীল অভিনয়ের ছাপ। জাজ মাল্টি মিডিয়ার প্রযোজনায় দুটি ছবিতে পূজার সঙ্গে নায়ক হয়েছেন সিয়াম। তবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা ‘নূরজাহান’। এটি কলকাতার রাজ চক্রবর্তীর ছবি। বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছিলো। এবার পূজার আসছে যৌথ প্রয়োজনায় ছবি ‘প্রেম আমার টু’। তাকেই নিয়ে লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
আনন্দ আলো: সেই দিনের ছোট্ট মেয়েটি এখন সিনেমার নায়িকা। অনুভ‚তি কেমন?
পূজা চেরী: অনুভ‚তি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল আমি হিরোইন হবো। সেই স্বপ্নটা আমার পূরণ হয়েছে। এরই মধ্যে আমার অভিনীত তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সবাই আমাকে রেসপন্স করেছে। আমার খুবই ভালো লাগছে।
আনন্দ আলো: ক্যামেরা সামনে প্রথম দিন…
পূজা চেরী: প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘মনের ঘরে বসত করে’ সিনেমার জন্য। তখন আমার বয়স ৭/৮ হবে। শাকিব খানের ছোট বোনের চরিত্র ছিল। শুটিং হয়েছিল বিএফডিসিতে। মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকেই মা আমাকে সাজাতে পছন্দ করেন। মনে পড়ে, শুটিং শুরু হওয়ার আগে মেকআপম্যান আমাকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। মায়ের পছন্দ না হওয়ায় আবার নতুন করে সাজিয়েছি লেন আমাকে। ওই দিন বিএফডিসিতে গিয়ে একটু ভয় ভয় লাগছিল। প্রথম দৃশ্যে আমার কোনো সংলাপ ছিল না। আর তখনতো আমি অত কিছু বুঝিও না। পরিচালক আমাকে বললেন, তুমি কোনো কথা বলবে না। শুধু শাকিব খানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ক্যামেরার দিকে তাকাবে না। ভুল হলে যদি বকা দেন-এ কথা ভেবে আমি বেশ ভয় পেলাম। মা সাহস দেওয়ার জন্য ক্যামেরার পেছনে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছাড়াই দৃশ্যটি ওকে হয়েছিল। সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল তিন দিন। দুঃখের বিষয় সিনেমাটি দেখতে গিয়ে লজ্জায় পড়েছিলাম। মুক্তির প্রথম দিন আয়োজন করে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বাসার পাশে বিডিআর প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি দেখতে গিয়েছিলাম। এক সময় আবিস্কার করলাম, পুরো সিনেমায় আমার কোনো দৃশ্য নেই, ফেলে দেওয়া হয়েছে। সেদিন মা আর আমি কী যে লজ্জায় পড়েছিলাম।
আনন্দ আলো: নায়িকা হিসেবে সিনেমায় অভিনয়ের প্রথম দিনটা কেমন ছিল।
পূজা চেরী: নায়িকা হিসেবে আমি অভিনয় শুরু করি পোড়ামন ২ ছবি দিয়ে। আর বিভিন্ন প্রোডাকশনের কারণে পিছিয়ে যায় ছবির শুটিংয়ের কাজ। প্রথমে শুরু হয় নূরজাহান। সেই হিসেবে প্রথমে আমি ‘পোড়ামন ২’ ছবির প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। হুট করে একদিন জাজ মাল্টিমিডিয়ার আজিজ ভাই বললেন, ‘নূরজাহান’ নামের একটি মুভি আছে। মুভিতে তোমাকে একেবারে লুকসেট করেই শুটিংয়ে ঢুকতে হবে। কথাটা শুনে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। আমি তো এরকমভাবে কোনোদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইনি। তাহলে কীভাবে পারব? পারব কী, পারব না? আমারে মধ্যে কনফিডেন্স ছিল আমাকে পারতেই হবে। এত কম বয়সে আমি নায়িকা হব, আজিজ ভাই আমার ওপর টাকা ইনভেস্ট করছেন, আমার ওপর বিশ্বাস করেছেন, সেই বিশ্বাসটা রাখতে হবে। ‘নূরজাহান’ ছবির পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর কাছে গেলাম। ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমাকে পারতেই হবে। রাজ চক্রবর্তী ওপার বাংলার খুব নামকরা একজন ডিরেক্টর। বাংলাদেশেও তিনি বেশ পরিচিত। আমি যখন প্রথম শর্টটা নিলাম এক শটেই ওকে হয়ে গেল দৃশ্যটি। পরিচালক মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তখন আমার কনফিডেন্স আরও বেড়ে গেল। হ্যাঁ, পরবর্তীতে আমি পারব। ভয়ও ছিল আবার ভালো লাগাটাও কাজ করছিল।

poramon

আনন্দ আলো: সিনেমার নায়িকা হবার ক্ষেত্রে কার কাছে আপনি কৃতজ্ঞ?
পূজা চেরী: সিনেমার নায়িকা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত আমি জাজ মাল্টি মিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ ভাইয়া সহ সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আজিজ ভাই আমাকে হিরোইন বানিয়েছেন। শিশুশিল্পী হিসেবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রথম মুভি ভালোবাসার রঙ এ আমি কাজ করি। তখন আমার অভিনয় দেখে আজিজ ভাই আমাকে পছন্দ করেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, পূজা বড় হলে ওকে নায়িকা বানাব। তিনি কথা রেখেছেন। আর আমার ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে। আমি আমার আম্মুর কাছেও কৃতজ্ঞ।
আনন্দ আলো: নূরজাহান, পোড়ামন এরপর দহন জার্নিটা কেমন ছিল?
পূজা চেরী: প্রথমত শিশুশিল্পী, এরপর নূরজাহান, পোড়ামন টু এবং শেষমেষ দহন, জার্নিটা বলতে গেলে স্বপ্নের মতো। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবাই এখন আমাকে সিনেমার নায়িকা হিসেবে চেনে। ভাবতে ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: এখন তো আপনি সিনেমার নায়িকা। আগের সেই বাঁচ্চামি স্বভাব এখনো কী আছে?
পূজা চেরী: আছে অনেকখানি। আমি তো এখনো সব সময় দুষ্টুমি করি। সিয়ামের সঙ্গে আমার সব সময় কোনো না কোনো খুনসুটি লেগেই থাকে। আমি সিয়াম ও আজিজ ভাই দুজনকেই কিন্তু মিমিক্রি করে দেখাতে পারি।
আনন্দ আলো: দহন ছবিটি নিয়ে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
পূজা চেরী: বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমি অনেকের কাছ থেকেই ফোন পাচ্ছি। ফেসবুকে ভালো ভালো রিভিউ দেখতে পাচ্ছি। ফেসবুকে দেখছি অনেক জায়গায় হাউসফুল যাচ্ছে। আবার অনেক জায়গায় মোটামুটি যাচ্ছে। আপনাদের দোয়ায় ভালোই রেসপন্স পাচ্ছি। অভিনয় জীবনের শুরুতে দর্শক এভাবে ভালোবাসা দেবে ধারণা করিনি। চলচ্চিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করব, ভালো মানের ছবি দিয়ে দর্শক হৃদয়ে যেন বেঁচে থাকতে পারি।
আনন্দ আলো: অভিনয়ের জন্য আপনি নাকি গার্মেন্টসেও কাজ করেছেন?
পূজা চেরী: পোড়ামন-২ ছবির পোস্টারের শুটিংয়ের সময় আজিজ ভাই বললেন সিয়াম আর পূজাকে নিয়ে আরেকটা ছবি করব সেটা হচ্ছে দহন। অফিসে এসে পুরো ঘটনা শোনার পর রাফি ভাই আমাকে বলল, ‘দহন’ ছবিতে তুমি একজন গার্মেন্টস কন্যার চরিত্র অভিনয় করবে। বাসায় এসে ভাবছিলাম, গার্মেন্টসে যে সব মেয়েরা চাকরি করেন তাদেরকে আমি কাছ থেকে চিনিনা-জানিনা। তারা কেমন হন। তাদের আচরণ, হাটাচলা, কথাবার্তা কেমন হয় পুরো লাইফ স্টাইলটা আমার একবার দেখা উচিত। আজিজ ভাই, রাফি ভাইকে জানিয়ে সাধারণত গার্মেন্টসের মেয়েরা যেভাবে সাজে সেভাবে সেজে আমি সাত দিন একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেছি। আমি টেনশনে ছিলাম যদি আমাকে তারা চিনতে পারে। তাহলে আমার কাজটা ঠিকমতো করতে পারব না। আমি নিজেকে প্রস্তুত করেছি একজন পেশাদার গার্মেন্টস কন্যার চরিত্রের জন্য। নূরজাহান ও পোড়ামন ২ ছবিতে সবাই আমাকে যেমন গ্রহণ করেছেন, প্রশংসা করেছেন। ঠিক তেমনি ‘দহন’ ছবিতেও আমাকে নতুন ভাবে গ্রহণ করেছেন দর্শক।
আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রে সিয়াম-পূজা জুটি কী টিকে গেল…?
পূজা চেরী: হা হা হা… তা এখন বলতেই পারেন। দর্শক আমাদের জুটিকে ভালোবেসেছে, গ্রহণ করেছে। আমরা অনেক হলে ইন্টারভেলের পর আর ছবি শেষে ঢুকেছি। সেই মুহূর্তে দর্শক আমাদের দেখে জড়িয়ে ধরবে না কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না। সে সময় অনেকের চোখে জল ছিল।
আনন্দ আলো: সহ শিল্পী হিসেবে সিয়াম কেমন?
পূজা চেরী: এ ক্ষেত্রে আগে বলব, সে একজন ভালো মানুষ। তারপর তার অভিনয়। সে খুবই ভালো অ্যাক্টর। সে সহ শিল্পী হিসেবে খুবই হেল্পফুল। আর অফস্ক্রিনে তার সঙ্গে আমার মারামারি, ঝগড়া, খুনসুটি তো লেগেই আছে।
আনন্দ আলো: ভবিষ্যতে শাকিব খানের সঙ্গে কাজের ইচ্ছে আছে কী?
পূজা চেরী: শাকিব ভাইয়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেক বড় এবং গুণী একজন অভিনেতা। শাকিব ভাইয়ের অভিনয় আমার খুব ভালো লাগে। তার শিকারি, নবাব, চালবাজ সহ অনেক ছবি দেখা হয়েছে। যদি পরিচালক, প্রযোজক তার বিপরীতে আমাকে কাজের সুযোগ দেন, আমি অবশ্যই কাজ করব।
আনন্দ আলো: জাজ মাল্টিমিডিয়ার নতুন আরেকটি ছবিতে দেখা যাবে আপনকে?
পূজা চেরী: নতুন ছবিতে কাজের বিষয়ে আমার সঙ্গে আজিজ ভাইয়ের কথাবার্তা হয়েছে। তবে ছবির গল্প শোনা হয়নি এখনো। ফেব্রæয়ারিতে আমার পরীক্ষা। আপাতত পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
আনন্দ আলো: অভিনয় না গøামার কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন?
পূজা চেরী: আসলে গøামার দেখে কাজ করা শুরু করলে আর অভিনয় হয়ে উঠে না। তাই আমি অ্যাকটিংটা আগে দেখি, পরে নিজের গøামার নিয়ে চিন্তা করি।
আনন্দ আলো: জাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছেন, মাঝে যদি অন্য ব্যানার থেকে ভালো ছবির অফার আসে তাহলে অভিনয় করবেন কী?

পূজা চেরী: হিরোইন হিসেবে জাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছি। ভালো ছবির অফার এলে অবশ্যই করব। এক্ষেত্রে জাজের অনুমতি তো লাগবেই। আর গল্প ও কাজ ভালো হলে কেন তারা অনুমতি দেবে না?
আনন্দ আলো: অভিনয় আর পড়াশোনার সমন্বয় হচ্ছে কীভাবে?
পূজা চেরী: এটা সত্য পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য দিকে মনোযোগ দিতে গেলে একটু হ্যাম্পার হয় ঠিকই, কিন্তু সেই ক্ষতিটা পূরণ করার চেষ্টা করি। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেব। তাই শুটিংএও বই-খাতা নিয়ে যাই। সুযোগ পেলেই পড়ার চেষ্টা করি। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক সহযোগিতা করেন। পরীক্ষার আগে সব রকমেরই শুটিং থেকে নেব দীর্ঘ ছুটি। ভালো অভিনয় শিল্পী হতে হলে ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও জরুরি।
আনন্দ আলো: আপনার প্রিয় গান কোনটি?
পূজা চেরী: আমি আসলে গান শুনতে খুব পছন্দ করি। তাই সব সময়ই গান শুনি। আলাদা করে প্রিয় গানের কথা বলা কঠিন। সব গানই ভালো লাগে।
আনন্দ আলো: আপনি কোন ধরনের অভিনেত্রী হতে চান?
পূজা চেরী: এটা খুবই সুন্দর প্রশ্ন। আমি আসলে একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চাই। যাতে সবাই আমাকে মনে রাখেন এবং ভালোবাসেন।
আনন্দ আলো: মা-বাবা ভাই ছাড়া বিশেষ কাউকে ভালোবাসেন?
পূজা চেরি: না। আপাতত মা-বাবা আর পরিবারের মানুষ ছাড়া কাউকে ভালোবাসি না। তবে বন্ধু ও ভক্তদের ভালোবাসি।
আনন্দ আলো: আপনার প্রিয় রং কোনটি।
পূজাে চেরি: আমার তিনটা রং খুব পছন্দ। খয়েরি, কালো ও বেগুনি।
আনন্দ আলো: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
পূজা চেরী: অভিনয় জীবনের শুরুতে দর্শক এভাবে ভালোবাসা দেবে ধারনা করিনি। চলচ্চিত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করব, ভবিষ্যতেও ভালো মানের ছবি দিয়ে দর্শক হৃদয়ে যেন বেঁচে থাকতে পারি।