Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

স্থাপত্য পড়ার কারিগর ফারুক আহমদ

এবি ফারুক আহমদ। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর ‘প্রণয়ন’ নামের একটি ফার্মে কিছু দিন কাজ করার পর যোগ দেন ‘ডিজাইন এসোসিয়েটস লিমিটেড’এ। ২০০৪ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত কনকর্ড গ্রæপের চীফ আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে স্থপতি ফারুক আহমেদ সবার বড়। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ফারুকের বাবার নাম এ এম সালেহ জওহর। তিনি রূপালী ব্যাংকের এজিএম ছিলেন। মা লতিফা বেগম ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। ফারুকের মধ্যে আঁকাআঁকির বীজটা ছোটবেলা থেকেই রোপন হয়েছিল। স্কুল জীবন থেকে আঁকাআঁকির প্রতিই ছিল তার আগ্রহ। যেখানেই ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা হতো সেখানেই তাকে দেখা যেত। ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। হয়েছেনও সফল একজন স্থপতি। সেন্ট গ্রেগোরিজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে।
ব্যাচেলর অব আর্কিটৈকচার ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯৭ সালে। পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন চট্টগ্রামের ‘প্রনয়ণ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর ঢাকায় এসে যোগ দেন ‘ডিজাইন লিমিটেড’এ। ২০০৬ সালে ফারুক প্রোফাইল লিমিটেড (ডোমিনো ডেভেলপমেন্টস)-এ যোগ দেন। ২০০৮ সালে শেলটেক-এ চীফ আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করার পর যোগ দেন ‘নাভানা লিমিটেডে’। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে তিন বছর কাজ করেন। ২০১৪ সালে যোগ দেন কনকর্ড গ্রæপে। সেখানেই আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থপতি ফারুক আহমদ দেশের নামকরা এয়ারপোর্ট, রিসোর্ট, হল, কমার্শিয়াল টাওয়ার, অফিস বিল্ডিং, কর্পোরেট অফিস, মসজিদ সহ অসংখ্য ভবনের নকশা ও ইন্টেরিয়র করেছেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ সিলেটে এমজি ওসমানী এয়ারপোর্টের ডিজাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বর্ধিত অংশের ডিজাইন, মিরপুর মাজার রোডে শেলটেক বীথিকা হাউজিং প্রজেক্টের ডিজাইন, গুলশানে কনকর্ডের পুলিশ প্লাজার বর্ধিত অংশের ডিজাইন, আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের বর্ধিত অংশের রিসোর্ট ডিজাইন, তেজগাঁও-এ এহসানুল হক খানের কমার্শিয়াল বিল্ডিং, চট্টগ্রামে কনকর্ডের খুলশি টাউন সেন্টার, নারায়নগঞ্জ ভোলতা রোডের জামে মসজিদ, খিলক্ষেতে কনকর্ড লেকসিটির বর্ধিত অংশের ডিজাইন, সাভারে নাভানার কুটুরিয়া গেটওয়ে, ধানমন্ডিতে ড: এনামুল কবির রেসিডেন্স বিল্ডিং, গুলশানে সাবেক বিচারপতি মোস্তফা কামালের রেসিডেন্স বিল্ডিং, শেলটেক প্রাইম, চট্টগ্রামে সেলিম রেসিডেন্স বিল্ডিং, নাসিরাবাদে ইস্ট রেসিডেন্স বিল্ডিং, ধনিয়া ওন হাউস, ধানমন্ডিতে অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলামের রেসিডেন্স বিল্ডিং, ডেমরায় রূপালী ব্যাংকের এজিএম মোতালেব রেসিডেন্স বিল্ডিং, বাংলাদেশের ৮টি জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অফিসার্স কোয়াটার সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।
২০০৩ সালে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম তামান্না খান। এই দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। স্থপতি ফারুক আহমদ বলেন, আমি মনে করি একটি বাসযোগ্য আবাসন মানে এই নয় যে, একটি সুরমা অট্টালিকা, যার দেয়াল থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত সর্বত্র শুধু দামি ফিনিশিং আইটেমের যথেচ্ছ ব্যবহার। বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজনের শেষ আছে, কিন্তু ভোগের শেষ নেই। তাই ভোগবিলাসের উর্ধ্বে প্রয়োজনকে আমি ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামত হিসেবে দেখার চেষ্টা করি। খুব ভালো দৃষ্টিনন্দন বিল্ডিং ডিজাইন করতে গিয়ে যদি তার অভ্যন্তরীন স্পেস আমরা নষ্ট করে ফেলি, তবে সেটা হবে বসবাসকারীর জন্য মূল্যহীন। শুধু উচ্চবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œবিত্ত সকলের জন্য বাসযোগ্য আবাসন আমার ডিজাইনের পূর্বশর্ত। এক্ষেত্রে আমি মনে করি আমাদের দেশের ডেভেলপার কোম্পানিগুলো এক ধাপ এগিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অভিষ্ট লক্ষ্যে বিরাট ভ‚মিকা রাখছে। সেই সাথে সকলের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকাটা বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি ফারুক আহমদ। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন। নিজের পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে চান।