Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সিটি ব্যাংক এন এ’র গুণীজন সম্মাননা এই না হলে গুরু শিষ্য!

রেজানুর রহমান: একেই বলে গুরু শিষ্য পরম্পরা। যারা মাঝে মাঝে মন্তব্য করেন, আড্ডা, আলোচনায় হয়তো দুঃখ করে বলেন, আমাদের শোবিজে অর্থাৎ নাটক, সিনেমা ও সঙ্গীত জগতে গুরু-শিষ্যের মাঝে সেই আদরণীয়, পূজনীয়, বিনীত ও শ্রদ্ধার সম্পর্কটি এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা আসলে ভুল বলেন। শিল্পীদের মাঝে বিশেষ করে গুরু আর শিষ্যের মাঝে এখনও সেই ঈর্ষণীয় সু-সম্পর্ক বিদ্যমান। গুরুর দেখানো পথ ধরেই হাঁটছেন শিষ্যরা। আর তাই নাটক, চলচ্চিত্রে ও গানের জগতে সাফল্যের পর সাফল্যের আলো দেখছি আমরা। গুরু আর শিষ্যের এমনি এক আলো ছড়ানো মায়াময় সম্পর্কের মায়াজালে সেদিন আবিস্ট হয়ে উঠেছিলেন নগরীর কয়েকশ সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, সাহিত্যিক, নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীরাতো বটেই। দেশের অগ্রগণ্য বাণিজ্যিক ব্যাংক সিটি ব্যাংক এন-এর আয়োজনে ৫ নভেম্বর রেডিসন হোটেলের উৎসব হলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লাকে সম্মাননা জানানোর জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রুনা লায়লা বলে কথা। আর তাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের প্রায় সকল সেক্টরের জ্ঞানী, গুণী ব্যক্তিবর্গ। প্রথম পর্বে ছিল রুনা লায়লাকে সম্মাননা জানানোর আন্তরিক আনুষ্ঠানিকতা। শেষ পর্বে ছিল বর্তমান সময়ের আলোচিত সঙ্গীত তারকা চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ খ্যাত কোনালের একক সঙ্গীত পরিবেশনা। অনুষ্ঠান ক্রম অনুযায়ী গুণী শিল্পীর হাতে সম্মাননা পদক প্রদান, তারপর গানের পরিবেশনাই ছিল নির্ধারিত। কাজেই অনুষ্ঠানটি তো এমনও হতে পারত- গুণী শিল্পী রুনা লায়লা সম্মাননা গ্রহণ করলেন। তারপর মঞ্চে গান গাইতে এলেন কোনাল। জরুরি কাজের ব্যস্ততা তুলে রুনা লায়লা হয়তো চলে গেলেন অনুষ্ঠানস্থল থেকে। গানের ভাঙা হাটে গান গাইতে থাকলেন কোনাল। না, এমনটি হয়নি। রুনা লায়লা বলে কথা। যিনি আমাদের সঙ্গীত জগতের জীবন্ত কিংবদনৱী। বলতে গেলে কোনাল তো তারই শিষ্য। চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ প্রতিযোগিতায় কোনাল ছিল প্রতিযোগী। অন্যতম বিচারক ছিলেন রুনা লায়লা। প্রতিযোগিতার নানা পর্বে ধরে ধরে বিচারকরা গানের ভাষা শিখিয়েছেন কোনালকে। শিষ্যের গান না শুনে রুনা লায়লা নড়বেন না বোধকরি এমনটাই মনস্থির করলেন।

ততক্ষণে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব অর্থাৎ গুণী শিল্পী রুনা লায়লাকে সিটি ব্যাংক এন-এর পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে রুনা  লায়লার হাতে সম্মাননা স্মারক ও চেক তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সিটি ব্যাংক এন এ বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাকসুদ।

সম্পর্কিত

অনুষ্ঠানটি ছিল গুরু-শিষ্যের মায়া জড়ানো এক দুর্লভ ছবির মতো। যেন গুরু শিষ্যের সু-সম্পর্ক নিয়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা হয়ে যাচ্ছে এক বিশাল ক্যানভাস। সম্মাননা গ্রহণের জন্য গণী শিল্পী রুনা লায়লা মঞ্চে উঠার সময় পাশেই বসা কিংবদনিৱ তুল্য শিল্পী ফেরদৌসী রহমানের পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। আর তক্ষুণি অনুষ্ঠানস্থলে ছড়িয়ে গেল গুরু-শিষ্যের সেই মায়াময়  সম্পর্কের দূতি। অতিথিদের চোখে মুখে বিস্ময়, আর ভালোবাসা। এই না হলে রুনা লায়লা!

এক পর্যায়ে মঞ্চে রুনা লায়লা সম্পর্কে বলতে এলেন প্রিয় শিল্পী ফেরদৌসী রহমান ও তরুণ সঙ্গীত পরিচালক ইমন সাহা। তাদের বক্তব্যেও উঠে এলো গুরু আর শিষ্যের সু-সম্পর্কের কথা। অনুষ্ঠানে শেষ চমক দেখালেন বর্তমান সময়ের আলোচিত তরুণ সঙ্গীত শিল্পী কোনাল। আগেই জানানো হয়েছিল অনুষ্ঠানে কোনাল গাইবেন রুনা লায়লারই গাওয়া কয়েকটি জনপ্রিয় গান। কণ্ঠে সুর তুললেন কোনাল। রুনা লায়লার সামনেই রুনা লায়লারই গাওয়া জনপ্রিয় গান গেয়ে চলেছেন। দর্শক সারীতে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো কোনালের গান শুনছিলেন রুনা লায়লা। এক পর্যায়ে গানের ফাঁকে ফাঁকে গুরু-শিষ্যের মাঝে শুরু হয় মধুর আলাপচারিতা। কোনাল একটা করে গান গেয়ে শোনান। রুনা লায়লা সেই গানের স্মৃতি তুলে ধরে প্রিয় শিষ্যের সঙ্গে মধুর রসিকতায়ও মেতে ওঠেন। পর পর দুটি গানে তিনি শিষ্যের সঙ্গে কণ্ঠও মেলান। গুরু শিষ্যের এই যুগলবন্দী অনুষ্ঠানে আগত সকল শ্রোতা-দর্শকের মাঝে বিপুল আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। সকলে রুনা লায়লা ও কোনালের পাশাপাশি সিটি ব্যাংক এন-এরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উল্লেখ্য, ‘গুণীজন সম্মাননা’ শীর্ষক সিটি ব্যাক এন-এর এটি ছিল ১৩তম বাৎসরিক আয়োজন। এর আগে সঙ্গীত শিল্পী নীলুফার ইয়াসমিন, ফরিদা পারভিন, ফিরোজা বেগম, সনজিদা খাতুন, সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুবীর নন্দী, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, সৈয়দ আব্দুল হাদী এবং মিতালী মুখার্জিকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।