Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

সাজ্জাদুর রশীদের স্থাপত্য ভুবন

সাজ্জাদুর রশীদ। বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের স্থাপত্য অঙ্গণে দৃপ্ত পদচারণা তার। আন্তরিক সদিচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রম তাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগ থেকে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পর পরই তিনি যোগ দেন ‘ডায়াগ্রাম আর্কিটেক্টস’ এ। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর নিজে গড়ে তোলেন ‘ত্রিমাত্রা’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি ফেলো মেম্বার। ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের এককালীন কোষাধ্যক্ষ। বর্তমানে তিনি বুয়েটের আর্কিটেকচার এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। স্থাপত্য ও শিক্ষকতার বাইরে বাংলাদেশের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সক্রীয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফেসবুক ভিত্তিক সেভ দ্য হেরিটেজ অব বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর ঐতিহ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক
এ দেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য নিয়ে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে যাচ্ছেন স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ। গ্রামের বাড়ি ল²ীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার নাগমুদে। জন্ম নোয়াখালী শহরে। তার বাবার নাম আব্দুর রশীদ। তিনি ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। মা নুরুন্নেসা বেগম গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই স্থাপত্যের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই আজ হয়েছেন দেশের সফল একজন স্থপতি। ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট বয়েজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮০ সালে। ১৯৮২ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর স্থাপত্য বিভাগে। ১৯৮৯ সালে তিনি ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি লাভ করেন। পাস করে বের হওয়ার পরপরই যোগ দেন ‘ডায়াগ্রাম আর্কিটেক্টস’ এ। সেখানে বছর খানেক কাজ করার পর নিজেই গড়ে তোলেন ‘ত্রিমাত্রা’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম।
খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। ২০০৮ সালে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর স্থাপত্য বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের তিনি স্থাপত্যের নানা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্থাপত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেশের নামকরা ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, কমার্শিয়াল বিল্ডিং, শপিং সেন্টার, এ্যামিউজমেন্ট পার্ক, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছেÑ নারায়গঞ্জের ফতুল্লায় ফতুল্লা ফেব্রিকস, চট্টগ্রাম, খুলনা, ও ঢাকার গুলশানের শিশুপার্ক বা ওয়াল্ডারল্যান্ড, ফেনীর শপিংসেন্টার মহিপাল প্লাজা, সাভারের দি অ্যাকসেসরিস ফ্যাক্টরি বিল্ডিং, গাজীপুরের এল জেড ফ্যাশনস, সাভার ইপিজেড এর স্টাইরেক্স ফ্যাশন, গাজীপুর কুনাবাড়ির এল জেড টেক্সটাইল, মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদীয়া হাউজিং লিমিটেড এ সুলতানাস ড্রীম অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, ইন্দিরা রোডের ত্রয়ী নীড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, মতিঝিলের বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন এর হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির হেড অফিসের ইন্টেরিয়র, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ডুপলেক্স, ট্রিপলেক্স অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন।

স্থাপনার কাজের বাইরে তিনি দেশে-বিদেশে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছেন। ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম সাবিনা তাবাসসুম চৈতী। এই দম্পতির তিন সন্তান। বড় ছেলে সৌম্য সুপ্রভ রশীদ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়াশুনা করছেন। মেঝ মেয়ে সেমন্তী সুদিপ্তা রশীদ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ছে। আর ছোট ছেলে সম্প্রীত সুস্ময় রশীদ একই স্কুলের ক্লাস সিক্স এর ছাত্র।
স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ বলেন, স্থাপত্য পেশায় আমি দেশীয় স্থাপত্য রীতি ও নির্মাণ কৌশল ব্যবহারে আগ্রহী। যেহেতু শিক্ষকতা পেশায় জড়িত সে ক্ষেত্রে দেশজ স্থাপত্য ও নির্মাণ পদ্ধতি শিক্ষাদানে সচেষ্ট থাকি। আমি মনে করি স্থাপত্যচর্চায় দেশজ সংস্কৃতি, আবহাওয়া, জলবায়ু নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ কৌশল স্থাপত্য চর্চাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি স্থাপত্যিক ঐতিহ্য নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। এ দেশের ঐতিহ্য স্থাপনা গুলো যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সে গুলোকে জনসম্মুখে তুলে আনার চেষ্টা করছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন সাজ্জাদুর রশীদ। পাশাপাশি পেশার কাছে দায়বদ্ধ থেকে সেটাকে সততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর থাকেন সর্বদা।
স্থাপত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থপতি সাজ্জাদুর রশীদ বলেন, স্থাপত্য শিল্পে আরো উৎকর্ষতা অর্জন করতে চাই। দেশজ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে আরও ভালো কাজ উপহার দিতে চাই। একই সাথে এ দেশের ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যেতে চাই।