Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শুধু অলিম্পিকে নয়, সিনেমাতেও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে : মিশা

বাংলা চলচ্চিত্রের ওপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। এরজন্য প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ সিনেমা হল, শুটিং বন্ধ। করোনাপরবর্তী সময়ে দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আশঙ্কায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার পদক্ষেপ না নিলে এরমধ্যে বড় আশঙ্কা, করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের অধিকাংশ হল ভবিষ্যতে আর নাও খুলতে পারে!  এমতবস্থায় সবচেয়ে শঙ্কায় চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। নির্মাতা, কলাকুশলী থেকে শুরু করে অভিনেতারাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন! তবে এরমধ্যে সহজ কথায় কিছু পদক্ষেপের কথা বললেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ও অভিনেতা মিশা সওদাগর। তিনি মনে করেন, সরকারিভাবে ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা যদি এ পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন তাহলে হয়তো দেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। মিশা সওদাগরের কথাগুলোর অনুলিখন করেছেন নাহিয়ান ইমন

১০০ সিনেমা হলে সরকারকে রেনোভেশন দিতে হবে। এসমস্ত হল থেকে আগামী ৩ বছর কোনোরকম কর নেয়া যাবে না। আমরা সাবসিডি দিয়ে যাচ্ছি হা-ডু-ডু, ফুটবলসহ অন্যান্য খেলায়। অলিম্পিকে আমরা কোনোদিন কিচ্ছু পাইনি, সরকার তাও ভর্তুকি দিচ্ছে। আমাদের সিনেমাতেও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে।

প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেলের দায়িত্ব নেয়া উচিত দুটো ছবি বানানোর জন্য। একটা ছবি হবে আমজনতার। যেখানে থার্ডক্লাশ থেকে ডিসি পর্যন্ত যেন ছবি দেখতে পারেন সব নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণি। আরেকটা বানাবে মাল্টিপ্লেক্সে বা পুরস্কার অর্জনের জন্য। তাহলে সব দর্শককে ধরা যাবে।

নতুন মুখের মাধ্যমে আমিসহ মান্না, দিতি, অমিত হাসান, সোহেল চৌধুরী ছাড়াও অনেকেই যারা এখানে এসে স্ব স্ব কাজের মাধ্যমে প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রতিবছর তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নতুন মুখ কার্যক্রম শুরু করবে হবে। এতে নায়ক নায়িকার পাশাপাশি ভিলেন, কমেডিয়ান, পার্শ্বশিল্পী, শিশুশিল্পীও পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে সিনিয়রদের এক করে সব সমিতি মিলে কাজ করতে হবে।

২০ বছর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি দুটো আর্টিস্ট পেয়েছে। শাকিব খান-মিশা সওদাগর যারা বক্স অফিসে মূলত অপরিহার্য। এছাড়া আরিফিন শুভ, বাপ্পী, ইমন, নিরব, সাইমন, জায়েদ খান অনেকেই আছে। কিন্তু অপরিহার্য শিল্পী আমরাই। আজও আমাদের সর্বোচ্চ ছবি রিলিজ হয় এবং সবচেয়ে বেশি হল পায়। শেষ ‘বীর’ ছবিটা আমি শাকিব কাজী হায়াৎ থাকার পরেও হল বেশি পেল না। কারণ বেশি হল নেই আমাদের। ভাবা যায়, শাকিবের প্রোডাকশনের ছবির এই অবস্থা!

কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে থিয়েটার রাখতে হবে। ছবি রিলিজ হলে সবাই সেখানে অল্প টাকায় ছবি দেখবে। প্রত্যেক জেলায় মার্কেট থাকলে সরকারকে মাল্টিপ্লেক্স করে দিতে হবে। সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোকে সম্মান দিতে হবে। কারণ মাল্টিপ্লেক্সে ৩০০-৪০০ টাকায় টিকেট কেটে সব দর্শক সিনেমা দেখবে না। মনে রাখতে হবে বাংলা সিনেমার মূল দর্শকদের জন্য ১০০টাকার মধ্যে টিকেটের মূল্য রাখতে হবে যা সিঙ্গেল স্ক্রিনেই সম্ভব।

করোনা পরবর্তী আগামী ৩ বছর সরকারকে ভর্তুকি দিতে এসব বিষয়গুলো দেখতে হবে। হলগুলো রেনোভেট করে যাকে কোনোভাবেই পাইরেসি না হয় সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। আবারও বলছি, অলিম্পিকে আমরা কোনোদিন কিচ্ছু পাইনি, সাতজনের একজনও হইনি। তারপরও সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আমরা তুলনামূলক কিছু বলছি না, তবে সিনেমাকে যেহেতু শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের সিনেমা বাঁচাতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

দর্শক বিনোদন চায়। মানুষ ভালো ছবি হলে অবশ্যই দেখে। গেল বছর শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ রোজার ঈদ থেকে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত একটানা চলেছে। এছাড়া মানুষ আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক দেখেছে। দর্শক ছবি দেখার জন্য অস্থির! মানুষকে ছবিতে ভ্যারিয়েশন দিতে হবে। মানুষের রুচি বদলে গেছে। মানুষ একেক সময় একেক জিনিস খায়। ছবিগুলোও মানুষকে খাওয়াতে হবে। খাওয়াতে গেলে ছবির গল্পে পরিবর্তন করতে হবে।

শাহরুখ খানের ছবি চলছে না। কেন চলছে না? সেখানে অক্ষয় এই বয়সেও ‘টয়লেট’ নিয়ে ছবি করে হিট করছে। আয়ুষ্মান নতুন একটা ছেলে চারাপাশের গল্প নিয়ে ছবি করে একের পর এক হিট দিচ্ছে। আলিয়া ভাট এখন চাহিদার শীর্ষে। আমাদের বাজেট সীমিত। এজন্য গবেষণা করে এক দুই কোটি টাকার মধ্যে কনটেন্ট ওরিয়েন্টেড ছবি বানাতে হবে। দর্শকের জন্য আমরা ছবি বানাই। তারা তথাকথিত ছবির গল্প আর দর্শক নেবে না।