Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শীতের সবজির অনেক উপকার

আমাদের দেশে শীতকালে প্রায় সব সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি এই শাক-সবজিগুলো থেকে আমরা কি কি উপাদান পাই কিংবা এর উপকারিতা কি? আপনি জানেন কি কিছু কিছু সবজিতে এমন উপাদান আছে যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধক? আবার কিছু সবজি আপনার উচ্চরক্ত চাপ কমিয়ে জটিল রোগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখে? যদি আপনি না জানেন কিংবা আপনি জানতে আগ্রহী হন তাহলে জেনে নিন কিছু জনপ্রিয় শীতকালীন সবজির উপকারিতা।
মুলা: মুলা একটি অন্যতম শীতকালীন সবজি। সাধারণত দুই রকমের মুলা আমাদের দেশে বেশি জন্মায়। সাদা মুলা ও লাল মুলা। আপনি চাইলে মুলা কাঁচা এবং রান্না উভয় অবস্থায় খেতে পারেন। সালাতে ব্যবহার করতে পারেন ইচ্ছামতো। মুলা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। মুলাতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে। এটি আমাদের শরীরের ওজন হ্রাস করে। মুলা আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আমাদের শরীরে কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। এছাড়াও হুপিং কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং শরীরের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মুলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সবজি হিসেবে তরকারি, সালাদ, ভাজি ছাড়াও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ফুলকপি: শীতের সবজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুলকপি। শীতের খুবই সুস্বাদু একটা সবজি হল ফুলকপি। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী একটা সবজি। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। ফুলকপি তাই কোলেস্টেরলমুক্ত যা কিনা আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনের জন্য উপযোগী। ফুলকপি পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকরী। এছাড়া আমাদের শরীরের মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে থাকে। ফুলকপিতে থাকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভ‚মিকা রাখে। ফুলকপির সালফোরাফেন ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। এর সালফোরাফেন উপাদান রক্ত চাপ কমায় এবং কিডনি ভালো রাখে। তাছাড়া ধমনির ভিতরে প্রদাহ রোধ করতেও সাহায্য করে ফুলকপি।
বাঁধাকপি: শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু সবজি। বাঁধাকপি সালাত, ভাজি, তরকারি বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখে। শীতকালীন এই সবজি যারা নিয়মিত খায় তারা বয়সজনিত হাড়ের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পায়। আপনি যদি ডায়েট করতে চান তাহলে নিয়মিত বাঁধাকপি খান কেননা ওজন কমাতে সহায়ক খাবার বাঁধাকপি। শুধু কি তাই বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। আপনারা যারা ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের জন্য নিয়মিত সালাদ খাওয়ার বিকল্প নেই। আর আপনি চাইলে এখন থেকে প্রতিদিনের সালাদের সঙ্গে রাখুন বাঁধাকপি। এতে করে একটা উপকার হবে আপনার। সালাদে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি থাকলে অতিরিক্ত ক্যালোরি বাড়ে না বললেই চলে। বাঁধাকপি দুরারোগ্য ব্যাধি আলসার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপির জুড়ি নেই।
শিম: শীতকালীন একটা সবজি। শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। আমরা কম-বেশি সবাই শিম খেতে পছন্দ করি। এটি প্রধানত সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। শিম সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকাংশে কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলির শক্তি বাড়ায়। মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে এবং শরীরে পুষ্টি প্রদান করে থাকে। শিমের ফুল সাধারণত রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
সব ধরনের শাক-সবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে, ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এছাড়া শাক-সবজিতে থাকে প্রচুর পানি যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করে। শাক-সবজির আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। আঁশজাতীয় খাবার শাক-সবজি গ্রহণে শরীর মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। তাই আজই বাড়িতে আনুন অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শীতের সবজি। তবে কেনার আগে ফরমালিনমুক্ত কিনা তা যাচাই করবেন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।