সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2001-2021 - আনন্দ আলো
মোহাম্মদ তারেক: বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। তাই ঈদ উৎসবকে নিয়ে কতইনা উচ্ছ¡াস আয়োজন। ছোট-বড় সবাই মেতে উঠবে এই আনন্দ উৎসবে। ঈদের আনন্দটা শিশুদের ক্ষেত্রে একটু যেনো বেশিই। ঈদের ছুটি। স্কুল বন্ধ। শিশুরা কী আনন্দেই না কাটাবে দিনগুলো। কয়েকদিনের ছুটি পেয়ে শিশুরা এরই মধ্যে নানা বাড়ি কিংবা দাদা বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে। কেউ কেউ চলেও গেছে। সারা বছর সম্ভব না হলেও অভিভাবকরা ঈদের ছুটির এই সময়টিতে শিশুদের আবদার রাখার চেষ্টা করেন। পড়াশোনার কারণে শিশুরা সারা বছর চাপের মধ্যে থাকে। ঈদ উৎসবে ছুটির সময়টাতে কী করবে তার পরিকল্পনা করতে থাকে। নানা রকম বায়নায় বাবা-মাকে অস্থির করে তোলে। অনেক সময় ঈদের এই ছুটিটাই শিশুদের অসুখ-বিসুখের কারণ হয়। হঠাৎ করে বেশ কয়েকদিনের ছুটি থাকায় শিশুদের চলতে থাকা নিয়মে হুট করে পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনটা শিশুদের শরীর সহজে মেনে নিতে পারে না। এ সময় শিশুরা লাগাম ছাড়া দুরন্ত হয়ে ওঠে। খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে খেলাধুলাই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে যায়। আর এই অনিয়মের কারণে শিশুদের অনেকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই পরিবারের ছোট সোনামনি অর্থাৎ আদরের শিশুদের যতœআত্তির ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হওয়া অতি জরুরি। আর গরমে তো এই যতেœর মাত্রা আরো বেশি হওয়া উচিত। অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরমকাল শিশুদের জন্য কষ্টকর হয়ে থাকে। একদিকে প্রচÐ গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি। তাইতো গরম ঠান্ডার কারণে শিশুর শরীরে রোগ জীবাণু বাসা বাঁধে খুব সহজেই। ফলে এমন আবহাওয়ায় শিশুদের নানা অসুখ-বিসুখ হতে পারে। যেমন ঘামাচি, সর্দিজ্বর থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েঞ্জ, জলবসন্ত, ডায়রিয়া সাইনাসে প্রদাহ, টনসিল ছাড়াও দেখা দিতে পারে কানের নানাবিধ সমস্যা। একটু বেশি যতœই পারে তাদেরকে সুস্থ রাখতে। গরমের এই অসহ্য দিনগুলোতে অভিভাবকদের ওপরই শিশুর সুস্থ থাকাটা অনেকটাই নির্ভর করবে। তাই শিশুকে সুস্থ রাখতে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে সচেতন হতে হবে। বাবা-মায়ের সচেতনতায় বেড়ে ওঠে সুস্থ শিশু। শিশু অসুস্থ হলে বাবা মায়ের দুশ্চিন্তার সীমা থাকে না। শিশু সুস্থতা প্রতিটি বাবা-মায়ের কাম্য। তবে এ জন্য প্রয়োজন একটু বাড়তি যতœ। শিশুদের মতো বড়রাও ভোগে একইরকম স্বাস্থ্য সমস্যায়। বড়দের খেত্রে সমস্যা হচ্ছে রাস্তা ঘাটের নোংরা কাদা মাড়িয়ে অফিস আদালত করতে হয়। সারাদিনের কর্মক্লান্ত শরীরে ঘাম, ধুলাবালি, ময়লায় একাকার হয়ে যায়। ঢাকা শহরের যানজটে ইফতারের আগে বাসায় ফেরার যুদ্ধ এবং বাসায় এসে ক্লান্ত শরীরে পরিশ্রান্ত হন অনেকে। ইফতারের আগে তাই প্রয়োজন গোসল সেরে নেয়া। গায়ে শুধু পানি ঢেলে গোসল নয়। শরীরে দুর্গন্ধ,ঘাম, ময়লা পরিষ্কারের জন্য এন্টিসেপটিক সাবান ব্যবহার করা প্রয়োজন। অনেকেই কর্মক্লান্ত শরীরে সুবাস আনার জন্য সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করেন কিন্তু সুবাস ছড়ানো সাবান শরীরে লেগে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। তাই এই গরমে একটি ব্যাকট্রল এন্টিসেপটিক সাবান দিয়ে গোসল করলে যেমন প্রশান্তি পাওয়া যাবে তেমনি জীবাণুমুক্ত হওয়া যাবে। এই গরমে বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার আগে একবার এবং বাইরে থেকে বাসায় এসে একবার গোসল করা শরীরের জন্য উত্তম। গরমে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় ঘামাচি নিয়ে। প্রচÐ গরমে শরীরে ময়লা ও ঘাম জমে থাকার ফলে ঘামাচির সৃষ্টি হয়। আর এই ঘামাচি একসময় স্কিনে সৃষ্টি করে ফোড়া। ঘামাচি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রতিদিন গোসলে এন্টিসেপটিক সাবান ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
গরমে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়তে হয় শিশুদের। শিশুদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই গরম ও প্রচÐ রোদে স্কুলে আসা ও খেলাধুলার সময় শরীর ঘামে, ময়লায় একাকার হয়ে যায়। শিশুদের গায়ের স্কিন পাতলা হওয়ার কারণে চুলকানি ও ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ঘামে সৃষ্টি হয় ঘামাচি। তাই স্কুল থেকে বাসায় আসারপর ঘাম শুকিয়ে গেলে এন্টিসেপটিক সাবান দিয়ে গোসল করানো দরকার। খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা বাথরুমে পানি নিয়ে যেন খেলতে শুরু না করে। এতে শিশুর ঠাÐা লেগে যেতে পারে। তাই অল্প সময়ে শিশুকে কুসম গরম পানিতে গোসল করিয়ে পাতলা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দেয়া প্রয়োজন। শরীর শুকিয়ে ঝরঝরা হলে প্রিকলি পাউডার মেখে দিন শিশুর শরীরের স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে।
এন্টিসেপটিক সাবান ব্যবহারে যে সব উপকার পাবেন
শরীরে ফুসকড়ি বা ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
খাবার গ্রহণের আগে এন্টিসেপটিক সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলে জীবাণু আক্রমণের সম্ভাবনা কম।
গরমে চুলের গোড়ায় ফুসকড়ি হয় তাই এই সাবান দিয়ে চুলও পরিষ্কার করতে পারেন।
মুখের ত্বকে অনেকে সাবান ব্যবহার করতে চান না কিন্তু ত্বকের সুস্থতা ফিরিয়ে আনার জন্য মুখে এন্টিসেপটিক সাবান ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
শিশুদের গোসলে এন্টিসেপটিক সাবানের সাথে কুসুম কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন বাইরে থেকে এসে।
ডায়রিয়া আমাশয়
এ সময়ে অন্য অসুখের মতো নানা ধরনের পেটের অসুখ যেমন ডায়রিয়া, আমাশয় দেখা দেয়। পানি দ্বারা এই রোগ হয় বলে এটাকে পানিবাহিত রোগও বলা যায়। শিশু ও বয়স্ক সহ সব বয়সের মানুষের এই অসুখ হতে পারে। এই রোগ থেকে রেহাই পেতে হলে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। মূলত শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানিতে এন্টিসেপটিক সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও ফোটানো পানি পান নিশ্চিত করলে ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আর ডায়রিয়া সারাতে ঘন ঘন স্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
ত্বকের যতœ
প্রচÐ গরম ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা স্কিনের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাস ইনফেকশন, স্ক্রাবিজ জাতীয় কিছু ছত্রাক অসুখ হয়ে থাকে। ভিজে শরীর ভালো ভাবে না মুছে, ভিজে কাপড় ভালো ভাবে না শুকিয়ে গায়ে দেয়া, রোদ না থাকায় স্যাঁতস্যাঁতে ঘর ইত্যাদির কারণে এ সময়ে ত্বকের বেশ কিছু অসুখ হয়। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে সব সময় তোয়ালে, ব্রাশ, চিরুনি সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি শরীর এবং মাথা থেকে ভালো ভাবে মুছতে হবে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙ্গুল ভালো ভাবে ধুয়ে মুছতে হবে। রাস্তার নোংরা পানি এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার জীবাণুনাশক সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করা ভালো।
জ্বর সর্দি কাশি
জ্বর, সর্দি, কাশি সাধারণত বৃষ্টির পানি চারদিকে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের কারণে এসব খুব বেশি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম যেমন-বয়স্ক এবং শিশুরা বৃষ্টির পানিতে তারা খুব বেশি আক্রান্ত হয়। ভাইরাস জনিত কারণে পরিবারের একজনের এই রোগ হলে অন্যরাও ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়। খুব বেশি সর্দি বা ঠান্ডা লাগলে এবং বেশি দিন স্থায়ী হলে ও নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। তবে জ্বর খুব বেশি হলে এবং ৫-৬ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।