Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

শাহরুফ খান-দ্য সুপার স্টার

মামুনুর রহমান

যখন মুম্বাইতে এসেছিলাম জীবন জীবিকার খোঁজে ততদিনে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে। আমার বাবা-মা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আমার পকেটে টাকা নেই। বিয়ে করেছি। বউ নিয়ে থাকার ঘর নেই। মাঝে মাঝে এমনও দিন গেছে না খেয়েই কাটিয়েছি। কিন্তু একবারের জন্যও ভাবিনি যা হচ্ছে আমার সাথে সব খারাপ কিছু হচ্ছে। মনে বিশ্বাস ছিল যা হবে অবশ্যই ভালো হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই কঠিন দিনগুলোতে প্রত্যেকটি নেতিবাচক ঘটনা গুলো আমাকে শক্তি যোগাতো। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতাম আজ যে অবস্থায় আছি এর থেকে নিশ্চয়ই খারাপ অবস্থা আসবে না। ঘুরে আমি দাঁড়াবোই। আমাকে এগিয়ে চলতে হবে। কথা গুলো বলিউডের কিংবদন্তী তারকা শাহরুখ খানের জীবনী থেকে নেয়া।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ দৌড়াচ্ছেন। প্রত্যেকের এই দৌড় শুধু অর্জন করার জন্য। আমাদের অসংখ্য স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই সবাই সামনের দিকে দৌড়ে যাচ্ছি। এই দৌড়ে আমাদের সাথে আরও বেশ কিছু মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। কারণ তারাও সামনেই দৌড়াতে থাকে। অনেক সময় সেই সামনে থাকা মানুষেরা আমাদেরকে সাথে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করেন। আমাদের স্বপ্ন পূরনে সাহায্য করেন। আর আমরা কি করি স্বপ্ন পূরনের পর সাহায্য করা সেই মানুষটি ভুলে যাই। নিজের জীবনের স্ট্রাগলের কঠিন সয়টি সম্পর্কে বলার শুরুতে বলিউড তারকা শাহরুখ খান বলতে শুরু করেন এভাবেই।
টেলিভিশনের জন্য কাজের শুরুটা হয় আজীজ কুন্দন ও সাঈদ ভাইয়ের কোম্পানি আমাকে কাজ দেয়। মুম্বাইয়ে এসে যেখানে যাবো তার ঠিকানা জানা নেই। রাতে কোথায় থাকবো জানা নেই। সেখানে কুন্দন, আজীজ, বকুল, সাঈদ ওদের বাড়ির শিশুরা-হারুন, রাহেলা, নির্মলা ওরা অমাকে নিজেদের বাড়িতে থাকার জায়গা দিয়েছিল। আমি ওদের অফিসে থাকতাম। খুব সমস্যা হতো অফিসে থাকতে। কারণ অফিস খুলবে সকাল ন’টায় তাই আমাকে এর আগেই ঘুম থেকে উঠতে হতো। হয়তো কোন দিন ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না তবে উপায় ছিলো না। তবে ঘুম থেকে ওঠার পর হায়দ্রাবাদি সকালের নাস্তার সাথে চা পানের পর আর সেই না ঘুমাতে পারার কষ্টটা কাজ করতো না।


যখন আমি নায়ক হইনি, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করি তখনই বিয়ে করতে হয়েছে আমাকে। বিয়ের পর শুরু হলো আরেক বাস্তবতা। বিবাহিত জীবনে নিজের জন্য বাড়ি দরকার। পাশে দাঁড়ালেন আজীজ মির্জা। তার থাকার ঘর আমাদের জন্য দিয়ে দিলেন।
আমি এই কথাগুলো এজন্যই বলছি কারণ এরা আমার চলচ্চিত্র জীবন তৈরি করে দিয়েছেন শুধু তাই নয় এরা আমাকে তৈরি করেছেন আমার জীবনকে তৈরি করে দিয়েছেন। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সবই তাদের অবদান। এসব বলছি তাদেরকে বড় করার জন্য তা নয়। যা বলেছি সব আমি বিশ্বাস করি বলেই বলেছি। পৃথিবীর যেখানেই যাই এখন শাহরুখ, শাহরুখ বলে লোকজন চিৎকার করে, জড়িয়ে ধরতে চায়, কথা বলতে চায়, অসম্ভব ভালোবাসা পাই। বিশ্বের মানুষেরা চিনতে পারে। এসব সম্ভব হয়েছে এই মানুষদের জন্য। নেপথ্যের এই মানুষ গুলো যদি সেসময় আমার পাশে না থাকতো তাহলে আজকের এতো প্রবাব প্রতিপত্তি কোন কিছুই সম্ভব হতো না। একদিন আজীজের প্রয়োজনে বাসা ছাড়তে হলো। অন্যদিকে রাজীভ আমার জন্য আগেই ভাড়া বাসা খুঁজে রাখলো। সে সময় রাজীবই বাড়িটার ভাড়া পরিশোধ করতো। আর এই ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা গুলো আমাকে বলে দিতো, আমি মুম্বাইতে একদিন সুপারস্টার হতে পারবোই। আমি খুব সাহস করে একদিন বলেছিলাম আমি মুম্বাইতে রাজত্ব করবো। বলেছিলাম আর সাথে এতো গুলো শুভাকাঙ্খি এতো গুলো ভালো মানুষ ছিল এবং আছে বলেই। তখনো নায়ক হই নাই। রাজীবের বাবা আমাকে বললেন তুমি বিয়ে করতে যাচ্ছোÑ কিন্তু বিবাহিত নায়ক তো ইন্ডাস্ট্রিতে চলে না। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। বিয়ে করলাম। কারণ বিয়ের সব গোছ গাছ হয়েই গিয়েছিল আগে। রাজীব আমাদের বিয়ের সকল দায়িত্ব পালন করেছিল। আব্বাস মাস্তানের দৃঢ় বিশ্বাসে আমাকে নিয়ে তৈরি হলো বাজীগর। শুধু তৈরি হলো বললে ভুল বলা হবে। ব্লক বাস্টার মুভি হলো। জীবনের প্রথম পুরস্কার হাতে পেলাম। সেরা নায়ক চরিত্রের জন্য। বদলে যেতে শুরু করলো জীবন একের পর এক চলচ্চিত্রের অফার আসতে শুরু করলো। আমিও এগিয়ে যেতে থাকলাম। কিন্তু এই সকল সফলতার উপরে আমার জীবনের এই মানুষেরা। যারা আমাকে পরিচিতি দিয়েছেন। আমার জীবনের প্রতি ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময়ে এই মানুষেরা যুক্ত করেছেন। ইয়াশ চোপড়া, আদী, করণ জোহর, মনিরত্মম স্যার, হেমাজি তারা যদি আমার উপর বিশ্বাস না রাখতেন তাহলে এ পর্যন্ত আসা হতো না।
চলচ্চিত্রের পর্দায় আসার আগে ইন্ডিয়ান টেলিভিশন সিরিয়াল ফৌজিতে ধারাবাহিক কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন শাহরুখ। কেমন ছিল টিভি সিরিয়ালের অভিজ্ঞতা চলুন জানি সুপার স্টার শাহরুখ খানের মুখ থেকেই। সম্পূর্ণ সিরিয়াল আমার চরিত্রটা ছিল একজন আর্মি সিপাহীর। আমি বারংবার ভুল করি। আর প্রত্যেক এপিসোডে আমার ভুলের শাস্তি স্বরুপ আমার কর্নেল আমাকে বলতেন- যাও ঐ গাছে কত গুলো কাক বসে আছে দেখে আসো। আমি দৌড়ে যেতাম কাক দেখে যোগ করতাম। কর্নেল স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে উত্তরে বলতাম চারটি স্যার। তখন কর্নেল স্যার বলতেন, ‘ঠিক হয়ে জাওয়ান আব সাবধান’। সম্পূর্ণ সিরিয়ালে এটাই ছিল আমার চরিত্র। ভিষন আজব লাগতো। বারবার মাথায় প্রশ্ন আসতো বাড়ি গিয়ে কিভাবে সবাইকে বলবো- আমি কাক যোগ করার রোল পেয়েছি। ফৌজির সিনেমাটোগ্রাফি ও অভিনয় দুটোই এক নাগাড়ে করে যাচ্ছিলেন কর্নেল কাপুরের ছেলে। হঠাৎ তিনি বলে র্উঠলেন এক সাথে দুটো কাজ করতে পারছেন না তিনি। এতে করে একটাও ভালো হচ্ছিলো না। হুট করে অভিমান্যু চরিত্রের জন্য নতুন শিল্পী পাওয়াটাও কঠিন সে সময়। কর্নেল কাপুর আমার দিকে তাকালেন। আর রাতারাতি আমি কাক গুনে দেখার কাজ থেকে হয়ে গেলাম ফৌজির কেন্দ্রীয় চরিত্রের একটি। হয়ে গেলাম অভিমান্যু রায়। সেখানেও একটি পরিবার পেলাম। পারিবারিক আবহতেই কাজ গুলো হতো। ভীষন ভালোবাসাও পেয়েছি সেই পরিবারটির। আমার ৫৫ বছরের জীবনে আজ সফলতা আমার সাথে। আমি অনেক সুখী। মহান আল্লাহ আমাকে আমার পরিবারকে খুব ভালো রেখেছেন।
আমি নাচ জানতাম না, আমাকে নাচতে শিখিয়েছেন আমার নারী শিল্পীরা। আমি গাইতে জানতাম না আমাকে গান গাইতে শিখিয়েছেন অসংখ্য সহযোগী শিল্পীরা। আজ শাহরুখ দ্য সুপার স্টার এজন্যই সুপারস্টার কারণ আমার সাথে যে নারী চরিত্র কাজ করেছে সে সুপারস্টার হতেই কাজ করেছে। আমি মনে করি আমার সুপার স্টার হবার পেছনে আমার পাশাপাশি আমার সহযোগী শিল্পীরাও অসামান্য অবদান রেখেছেন।