Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

লক্ষ্য স্থির থাকলে টার্গেটে পৌঁছানো সহজ হয়

সৈয়দ আলমগীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসিআই কনজ্যুমার ব্রান্ড

সৈয়দ আলমগীর। দেশের কর্পোরেট সেক্টরে অতি পরিচিত একটি নাম। ছাত্র জীবনেই অত্যন্ত মেধার স্বাক্ষর রাখা এই গুণী মানুষটির কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বিদেশী ঔষধ কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে। পরে তিনি যমুনা গ্রæপে অত্যন্ত মর্যাদাবান একটি পদে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দেশের শীর্ষ স্থানীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এসিআই গ্রæপে কনজ্যুমার ব্রান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে খÐকালীন শিক্ষকতাও করেন। সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। এরই ফাঁকে একদিন মুখোমুখি আড্ডায় বসেছিলেন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমানের সাথে। তারই চুম্বক অংশ আনন্দ আলোর পাঠকদের জন্য…

লম্বা ফ্লোরের টেবিলে টেবিলে মেধাবী তরুণ-তরুণীরা যে যার কাজে মগ্ন। বিনা কাজে সময় কাটানোর ফুরসৎ কারও নেই। কর্ম চাঞ্চল্যে ভরপুর গোটা অফিসের পরিবেশ। দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল। আড্ডার শুরুতে এই প্রসঙ্গটাই তুললাম আমাদের প্রিয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব এসিআই কনজ্যুমার ব্রান্ড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীরের কাছে। পেশাগত ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্যের অধিকারী সৈয়দ আলমগীর ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সদালাপী, বন্ধু বৎসল মানুষ। নিরহঙ্কার এই মানুষটি এসি আইতে যোগদানের আগে আরও দুটি বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর তাই আমাদের কর্পোরেট জগতে তাঁর কর্মময় জীবনের প্রশংসার অন্ত নাই। এক দুপুরে আমরা হাজির হয়েছিলাম তাঁর দফতরে। কথা ছিল বেলা ১২টায় তিনি আমাদের সাথে কথা বলবেন। এক মিনিটও দেরী করলেন না। কারণ আমাদের সাথে কথা বলতে দেরী হলে অন্য শিডিউলে সমস্যা হবে। কাজেই সময়ের কাজ সময়ে করাই শ্রেয়। পেশাগত জীবনে এটাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কাছে আমাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল, আপনার চারপাশে মেধাবী তরুণ-তরুণীদের ব্যস্ততা দেখছি। এই তরুণকর্মীদের ব্যাপারে কিছু বলুন। একটু যেন ভাবলেন সৈয়দ আলমগীর। পরক্ষনেই হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বললেন, আপনি যথার্থই বলেছেন, এখানে যাদেরকে দেখছেন তারা প্রায় সকলেই তরুণ। তাদের অনেকের বয়স হয়তো ৩০ বছরের নীচে। কিন্তু তাদেরকে নেতৃত্ব দেন অভিজ্ঞ কিছু মানুষ। যারা ভিতরে যার যার জায়গায় বসে কাজ করছেন। নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে আমরা কাজ করি। তরুণরা আমাদের পণ্যের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্ট ভালো করতে পারে। এবং সেভাবেই তারা বেড়ে উঠছে। আমরা এমনভাবে তাদেরকে তৈরি করছি যাতে করে তারা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও বড় দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়।
আনন্দ আলো: এই যে তরুণদের কথা উঠলো… আপনার নিজের তরুণ বেলাটা কেমন ছিল?
সৈয়দ আলমগীর: আমার তরুণ বেলা? ওহ মাই গড। আই হ্যাড এ লট অফ এক্সপেরিয়েন্স। আমি দশম শ্রেণী পর্যন্ত কেন্দুয়ায় থানা সদরের একটি স্কুলে পড়েছি। আমার ওই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশের নানা জায়গায় সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে বেশ গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দুয়া থেকে এসএসসি পাস করার পর আমি ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। কলেজের পড়াশুনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। শিক্ষা জীবনের পুরো জার্নিটা আমার জন্য যেমন ছিল চ্যালেঞ্জের তেমনি ছিল আনন্দেরও। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে অনেক আনন্দের মাঝে আমি আমার শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেছি।
আনন্দ আলো: আপনার প্রথম কর্মস্থলের ব্যাপারে কিছু বলুন।
সৈয়দ আলমগীর: বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করেই একটি বৃটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানীতে আমি যোগদান করি। প্রতিষ্ঠানের নাম রোনপোলেক। সেখানে মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে আমার ৭টি ধাপে পরপর প্রমোশন হয়। চীফ অব মার্কেটিং, চীফ অব ডিসট্রিবিউশন সহ এই প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপুর্ণ পদে আমি দায়িত্ব পালন করি। একসময় আমার মনে হয় ফার্মাসিউটিক্যাল এর কাজের ক্ষেত্রটা অনেক ছোটো। এখানে যা দেবার দিয়ে ফেলেছি। আমি এবার যমুনা গ্রæপে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করি। যমুনা গ্রæপ তখন এতো নামকরা ছিল না। আমার আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড় করে তুলতে চাই। যমুনা গ্রæপে আমি ৬ বছর ছিলাম। প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য আমার সর্বোচ্চ মেধাকে কাজে লাগিয়েছি। আমার ধারনা আমার চেয়ারম্যান যা চেয়েছিলেন আমি তার থেকে অনেক বেশিই দিয়েছি। অনেক অর্জনের মধ্যে ‘হালাল’ সাবানের কথা বিশেষ ভাবে বলতে পারি। যমুনা গ্রæপ থেকে আমি এসিআই কনজ্যুমার ব্রান্ড এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেই। এখানে আমি মাত্র ২টা প্রডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন আমাদের প্রডাক্টএর সংখ্যা আসলে কতো আমি নিজেই তা জানি না।
আনন্দ আলো: কর্পোরেট সেক্টরে এই যে আপনি একের পর এক সাফল্য দেখালেন এর পেছনে মূল স্পীডটা কি ছিল?
সৈয়দ আলমগীর: (একটু ভেবে নিয়ে) মূল স্পীডটা হল যে… আমার ইচ্ছা শক্তিটা বেশ প্রবল। নিজের যোগ্যতার ব্যাপারে আমি বেশ আস্থাশীল। আমি একটা জিনিস যখন ধরি তখন ভেবেই নেই যে আমি তা পারব। ফেইলর শব্দটা আমার অভিধানে নাই। আমি যখন যা করতে চেয়েছি তাই করতে পেরেছিও। ছাত্র জীবনে আমি ভালো রেজাল্ট করে বাবা-মাকে খুশি করার কথা ভেবেছিলাম। তাই করেছিও। মজার ব্যাপার হলো আমি কৃতিত্বের সাথে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেছি। অথচ চাকরি জীবনে কখনই আমার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে নাই। আমার শিক্ষাজীবনের সার্টিফিকেট আসলে কোথায় আছে তাও জানি না। আমি দুইটা ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াই। পর্যায়ক্রমে ৩টা প্রতিষ্ঠানের বড় পদে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমার কোনো সার্টিফিকেটের প্রয়োজন পড়ে নাই। কেউ আমার সার্টিফিকেট চায়ও নাই। ৩টি প্রতিষ্ঠানেই আমাকে ডেকে নিয়ে অনেক অনুরোধ করে চাকরিতে যোগদান করানো হয়েছে।
আনন্দ আলো: আপনার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে নিশ্চয়ই অনেক মধুর কাহিনী রয়েছে। তার কিছু গল্প শুনতে চাই। আপনি ক্রাইসিস গুলো মোকাবেলা করেন কিভাবে?
Syed-Alamgirসৈয়দ আলমগীর: ক্রাইসিস ফেস করা বেশ সহজ। আপনি যদি কোন কাজে ফোকাস থাকেন তাহলে তো কাজটার সাথেই সারাক্ষণ থাকেন। কাজেই কোনো ক্রাইসেসকেই তখন আর ক্রাইসেস বলে মনে হয় না। অর্থাৎ আপনি যদি সিলেবাসের মধ্যে থাকেন তাহলে তো দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। কারণ, প্রশ্ন তো সিলেবাস থেকেই আসবে। কিন্তু আপনি যদি সিলেবাসের সাথে না থাকেন। পড়াশুনা না করেন তাহলে ক্রাইসিস আপনার পিছু ছাড়বে না। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। আমি তো অনেক ফোকাস ছিলাম। আইবিএ’র একজন শিক্ষক ড: কাজী গোলাম মহিউদ্দিন… হি ওয়াজ এ ভেরি টাফ টিচার। একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি যা পড়িয়েছি সেটা থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে। পরীক্ষার পর আমি তাকে বললাম, স্যার আপনি তো কথা দিয়ে কথা রাখেন নাই। যা পড়ান নাই সেখান থেকে প্রশ্ন করেছেন। অনেকটা অভিযোগের সুরেই আমি কথাটা বলেছিলাম। তিনি অবাক হয়ে বললেন, কি বলো তুমি? এটা হতেই পারে না। আমি আবার প্রতিবাদের সুরে বললাম, স্যার আপনি যা পড়িয়েছেন তার থেকে প্রশ্ন করেন নাই। স্যার আমার সাথে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, তোমার কথা যদি সত্য হয় তাহলে তুমি প্লাস টেন পাবে। আর যদি মিথ্যা হয় তাহলে তুমি মাইনাস টেন পাবে। এখনও কি তুমি চ্যালেঞ্জ করতে চাও? আমি বললাম, হ্যা স্যার, আমি চ্যালেঞ্জ করতে চাই। স্যার অনেকটা রাগত চেহারায় তার নিজের রুমে চলে গেলেন। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি। অথচ তার দেখা নাই। তার মানে কি তিনি ভেগে গেছেন? কিছুক্ষণ পর তিনি এলেন। এসেই বললেন, আলমগীর ইয়েস… ইউ আর রাইট। ইউ গট টেন মার্কস মোর…
ছাত্র জীবনে এ ধরনের আরও কত যে ঘটনা ঘটেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। আর প্রফেশনাল লাইফে তো মজার মজার স্মৃতির পাহাড় জমেছে। এ নিয়ে আমি একটা বই লিখছি…
আনন্দ আলো: এবার আমরা একটু প্রসঙ্গ পাল্টাই। অনেকে বলেন জীবনে বন্ধুর ভ‚মিকা অনেক। আপনার জীবনে বন্ধুর ভ‚মিকা কেমন?
সৈয়দ আলমগীর: (একটু ভাবলেন। তারপর বললেন) আমার জীবনে বন্ধু কারা জানেন…? আমার দুই ধরনের বন্ধু আছে। একটা হলো আমার পরিবার। অন্যটা আমার অফিসের কলিগ। এছাড়াও অনেক বন্ধু আছে। ছাত্র-জীবনের বন্ধু। যারা এখন কেউ সচিব হয়েছেন, কেউ এম ডি হয়েছেন। তাদের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়। কথাও হয়। কিন্তু আমার পরিবার ও অফিসের কলিগরাই আমার জীবনে প্রকৃত বন্ধুর ভ‚মিকা পালন করে আসছে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হল জুনিয়র কলিগরা। তাদের সাথে আমি অফিসের প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয় নিয়ে মন খুলে কথা বলি। আমার পরিবারের সদস্যরা আমার খুব ভালো বন্ধু। সম্প্রতি একটা বাড়ি বানিয়েছি। এর দেখাশোনা করেছে আমার ছোটো ভাই। ওই তো আমার প্রকৃত বন্ধু!
আনন্দ আলো: বন্ধুত্ব টিকে থাকে কিসে?
সৈয়দ আলমগীর: স্বার্থপরতা না থাকলেই বন্ধুত্ব টিকে যায়। আমি দিলাম। অথচ তুমি দিলে না। এরকম চাওয়া পাওয়ার হিসেব করলে শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্ব টিকে না।
আনন্দ আলো: আপনার কাছে পরিবার কি?
সৈয়দ আলমগীর: আমার কাছে পরিবারই হল আসল। পরিবার হল শান্তির জায়গা। বিশ্বাসের জায়গা। পরিবারই মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে। জীবন গড়তে অনুপ্রেরণা দেয়। একটা ছোট্ট উাহরণ দেই। আমি যখন অফিসে কোনো সমস্যায় পড়ি তখন সরাসরি বাসায় চলে যাই এবং আমার স্ত্রীর মুখটা দেখি। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে কোনো সমস্যার সমাধানে আমার স্ত্রী আমাকে প্রকৃত পক্ষে সাপোর্ট দিবে। সমাধানের পথ বাতলে দিবে। ঘটেও তাই। আমার স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় আমি অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছি। এটাই হলো পরিবারের শান্তির জায়গা। পরিবার কিভাবে গড়ে তুলবেন তা নির্ভর করবে আপনার সঠিক পরিকল্পনার ওপর। একটি মানুষের পরিবারে সুখ শান্তি ও বিশ্বাস থাকলে সে তার কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পাবেই… আমি আসলে একজন পরিবার কেন্দ্রিক মানুষ। পরিবার ছাড়া আমি কিছুই বুঝি না। আমার কাছে সবার আগেই আমার পরিবার গুরুত্বপুর্ণ…
আনন্দ আলো: পরিবার টিকে থাকে কিভাবে?
সৈয়দ আলমগীর: পরিবার টিকে থাকে বিশ্বাস ও ভালোবাসার ওপর। স্বার্থপরতা না থাকলে পরিবার টিকে যায়। এমনও দেখা যায় মাত্র এক হাত জায়গার জন্য ভাই ভাইকে ঠগাচ্ছে। এটাই স্বার্থপরতা। এটা করলে তো পরিবার টিকবে না। রেষারেষি বাড়বে…
আনন্দ আলো; পরিবারই তো পরবর্তি প্রজন্ম অর্থাৎ জেনারেশন গড়ে তোলে। বর্তমানে জেনারেশন গ্যাপ চলছে। এর প্রকৃত কারণ কি বলে আপনার মনে হয়?
সৈয়দ আলমগীর: অনেক কারণেই জেনারেশন গ্যাপ হচ্ছে। সময়টা একটা বড় ফ্যাক্টর। আমরা একটা অস্থির সময়ে বসবাস করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে ঘরে বসেই আপনি গোটা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছেন। সে কারণেই পরিবারের কাউকেই আর ঘরে বসিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে ছেলে-মেয়েরা তরুণ বয়সেই সঙ্গী খুঁজে নিচ্ছে। বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ড না থাকলে যেন স্ট্যাটাস থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে জেনারেশন গ্যাপ দূর করবেন কিভাবে? সম্ভব না। তবে হ্যা, এর মধ্যেও অনেক পরিবারে পারিবারিক মূল্যবোধ গুরুত্ব পাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর চিন্তা চেতনার ওপরও জেনারেশন গ্যাপ নির্ভর করে। একটা কথা বলি, স্বামী কোনো বিপদে পড়লেই বোঝা যায় তার স্ত্রী আসলে কেমন? আবার স্ত্রী অসুস্থ থাকলেই বোঝা যায় তার স্বামী আসলে কেমন? আমার এক আত্মীয়ের কথা বলি। সম্প্রতি তার স্ত্রী মারা গেছে। দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ছিলেন। স্বামী বেচারা দিনের পর দিন হাসপাতালের বেডে অসুস্থ স্ত্রীর সেবা সুশ্রæষা করেছেন। এক পর্যায়ে ডাক্তার বলেছিল, রোগী হয়তো বাঁচবে না। রোগীকে বাসায় নিয়ে যান। আমার সেই আত্মীয় ডাক্তারের কথায় শায় না দিয়ে বলেছিলেন, হাসপাতালেই থাকুক। আল্লাহর রহমতে বেঁচেও তো যেতে পারে। রোগী বাঁচেনি। বহুদিন রাইফ সাপোর্ট এ ছিলেন। হাসপাতালে অনেক টাকা দিতে হয়েছে। তবুও তিনি শেষ ভরসায় ছিলেন… এটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা!
আনন্দ আলো: এই যে আপনি এতো ব্যস্ত সময় কাটান। তারপরও তো অবসর খুঁজে নেন। আপনার বিনোদন কি?
সৈয়দ আলমগীর: আমার বিনোদন… আমার প্রতিদিনের রুটিনটা বলি তাহলেই সব কিছু বোঝা যাবে। প্রতিদিন সকালে উঠে নামাজ পড়ি। তারপর একটু ঘুমাই। এবার নাস্তা সেরে অফিসে চলে আসি। অফিস শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশে পড়াতে যাই। সেখান থেকে বেড়িয়ে আমি জিমে যাই। বাসায় ফিরে নামাজ পড়ি। এবার আমি টিভি দেখতে বসি। বলতে পারেন টেলিভিশন অনুষ্ঠান আমার অন্যতম বিনোদন। দেশ-বিদেশের টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখি। দেশী-বিদেশী টিভি সিরিয়াল আমার বেশ পছন্দ। বাসায় থাকলে আমার স্ত্রীর ও আমার দুই গ্রান্ডসান আইয়ান, আসির সাথে সারাক্ষণই সময় কাটাই। হঠাৎ হয়তো মনে হলো পরিবারের কোনো সদস্যের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। তাদেরকে ফোন দেই। কোনো কোনো রাতে পরিবারের সকল সদস্য অর্থাৎ ভাই-বোন এবং তাদের ছেলে-মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলি। ছুটির দিনে সাধারণত বোনদের বাসায় বেড়াতে যাই। এসবই আমার আনন্দ-বিনোদনের ক্ষেত্র।
আনন্দ আলো: অনেকে বলেন টিভি নাটক আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আপনি তো বললেন টিভি সিরিয়াল দেখেন। আমাদের দেশের টেলিভিশনে নাটক নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাইÑ
সৈয়দ আলমগীর: আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল গুলোতে অনেক ভালো নাটক হচ্ছে। তবে আমাদের নাটকের বিষয় বস্তু নিয়ে ভাবা দরকার। আধুনিক দৃষ্টি ভঙ্গির নাটক দরকার।
আনন্দ আলো: সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনা কি? সিনেমা দেখেন?
সৈয়দ আলমগীর: না, সিনেমা দেখিনা। তরুণ বয়সে রাজ্জাক-কবরীর আমলে অনেক সিনেমা দেখেছি। এখন আর দেখা হয় না।
আনন্দ আলো: ব্যস্ততার কারণেই কি সিনেমা দেখেন না?
Syed-Alamgirসৈয়দ আলমগীর: না ঠিক তা নয়…
আনন্দ আলো: তারমানে আপনার জীবনে সিনেমা দেখা নিয়ে কোনো স্মৃতি নাই?
সৈয়দ আলমগীর: কি বলেন আপনি? স্মৃতি নাই মানে? বিরাট লাইনে দাঁড়িয়ে ‘সিরাজউদ্দৌলার’ প্রথম দিনের প্রথম শো দেখেছি। গুলিস্তানে… আনোয়ার হোসেনের ছবি… পর পর ৪ বার দেখেছি… আনোয়ার হোসেনের অভিনয় আমার খুব ভালো লেগেছে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
আনন্দ আলো: ছোটো বেলায় হতে চেয়েছিলেন কি?
সৈয়দ আলমগীর: হতে চেয়েছিলাম একজন পাবলিক সারভেন্ট। সিএসপি অফিসার হতে চেয়েছিলাম।
আনন্দ আলো: এজন্য কোনো আফসোস হয়?
সৈয়দ আলমগীর: না। মোটেই না।
আনন্দ আলো: গান শোনেন?
সৈয়দ আলমগীর: হ্যা, প্রচুর গান শুনি… আমার বিনোদনের বড় অংশই হলো গান। রবীন্দ্র সঙ্গীতের পাশাপাশি মডার্ন সংও আমার প্রিয়। এক নাগাড়ে কয়েক ঘণ্টাও গান শুনি আমি…
আনন্দ আলো: প্রিয় শিল্পী কারা?
সৈয়দ আলমগীর: প্রিয় শিল্পীর তালিকা অনেক বড়। গান ভালো লাগলেই শুনি। টাচি সং আমাকে খুব টানে। যেমন রবীন্দ্র নাথের ‘তুমি রবে নীরবে’… এই গানটা বোধকরি এক হাজার বার শুনেছি।
আনন্দ আলো: দেশের একটা বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জানতে চাই দেশ আপনার কাছে কি?
সৈয়দ আলমগীর: দেশটাই আমার কাছে অনেক গুরুত্বপুর্ণ। দেশটাই তো আমার পরিচয়। যখন দেশের বাইরে যাই, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষর করি, দেশের পতাকাটা আমার পাশে থাকে। তখন কি যে আনন্দ হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি আমার দেশকে অনেক ভালোবাসি। এমবিএ ডিগ্রী কমপ্লিট করার পর আমেরিকায় যাবার একাধিক সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেই সুযোগ গ্রহণ করি নাই। কারণ আমি দেশে থেকেই দেশকে কিছু দিতে চেয়েছি।
আনন্দ আলো: তরুণদের প্রসঙ্গ তুলেই আমরা এই আড্ডা শুরু করেছিলাম। দেশের একজন বিশিষ্ট করপোরের্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে তরুণদের উদ্দেশে কিছু বলুন…
সৈয়দ আলমগীর: তরুণদের উদ্দেশে আমার একটাই বক্তব্যÑ যা করবে বুঝে শুনে সিরিয়াসলি করবে। অমুকে এটা করে ফেলল। আমি বোধহয় পিছিয়ে পড়লাম… এই ভাবনাকে প্রশ্রয় দিবে না। তুমি কি পার সেটা আগে ভাবো। এমনও তো হতে পারে তুমি যা পারো অন্যেরা তা পারে না। কাজেই অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের মেধাকে কাজে লাগাও । লক্ষ্য স্থির থাকলে তুমি তোমার টার্গেটে পৌঁছাবেই। সবার জন্য রইলো শুভ কামনা।
ছবি: রাকিবুল হক