Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রুমানার ভালোবাসার মোড়া স্থাপত্য ভুবন

রুমানা মালিক, বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য স্থপতি। তিনি দীর্ঘ ২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থাপত্য শিল্পচর্চা করে যাচ্ছেন। ১৯৯০ সালে বার্মিংহাম স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন ব্যক্তিগত সংস্থা, সরকারি এবং কর্পোরেট সংস্থার জন্য স্থাপত্য শিল্পচর্চা চালিয়ে যান তিনি। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে এসে প্রথমে যোগ দেন বশিরুল হক এন্ড অ্যাসোসিয়েটস এবং ইনডেক্স আর্কিটেক্টস নামের প্রতিষ্ঠানে। ২০১১ সালে তিনি বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়া লিমিটেডে ডিজাইন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক হন। ২০১৩ সালে নিজে গড়ে তোলেন ‘রুমানা মালিক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এযাবৎ তিনি বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। স্থাপত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি রয়েল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (RIBA) এবং ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (IAB) এর সদস্য। তিনি লিডারশিপ ইন এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (LEED AP) সনদ প্রাপ্ত। এছাড়াও রুমানা মালিক ওমেন আর্কিটেক্টস, ইঞ্জিনিয়ার্স, প্লানার্স অ্যাসোসিয়েশন (WAEPA) এর মেম্বার। এবার শাহ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন।
লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
স্থপতি রুমানা মালিকের গ্রামের বাড়ি নীলফামারি জেলায়। তার বাবার নাম মরহুম খালেদুর রহমান চৌধুরী। তিনি ষাটের দশকে ঢাকা ইমপুরুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) বর্তমানে যা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নামে প্রতিষ্ঠিত, এর একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মা আনোয়ারা চৌধুরী গৃহিনী। স্কুল জীবন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন ক্রিয়েটিভ কিছু করার। ছোটবেলা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় স্থাপত্যশিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই তার বাবা স্বপরিবারে চলে যান যুক্তরাজ্যে। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা।১৯৯০ সালে তিনি বার্মিংহাম স্কুল অব আর্কিটেকচার থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন তিনি তার ব্যক্তিগত সংস্থা, সরকারী এবং কর্পোরেট সংস্থার জন্য স্থাপত্য শিল্পচর্চা চালিয়ে যান। ১৯৯৪ সালে বিয়ের পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাংলাদেশে চলে আসেন রুমানা মালিক। দেশে এসেই তিনি যোগ দেন বশিরুল হক এন্ড এসোসিয়েটস এবং ইনডেক্স আর্কিটেক্টস নামের প্রতিষ্ঠানে। সেখানে তিনি স্কুল, হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, আবাসিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্র প্রসারিত হলে, ২০০৬ সালে তিনি বিল্ডিং টেকনোলজি এন্ড আইডিয়া লিমিটেড (ইঞও) এ সিনিয়র আর্কিটেক্ট হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে তিনি বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়া লিমিটেডে ডিজাইন ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক হন। যেটি মূল প্রতিষ্ঠানের একটি পৃথক বাণিজ্যিক সহায়ক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

রুমানা মালিক ইন্টেরিওর ডিজাইন এবং আর্কিটেকচারাল অ্যানিমেশন পরিসেবা সমূহ মূল নকশার পাশাপাশি অন্তর্ভূক্ত করে কোম্পানির সেবা সম্প্রসারনের কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন বিভাগ থেকে ৭০ জনেরও বেশি কর্মীকে স্থাপত্য চর্চায় নেতৃত্ব করেন। তার মেয়াদে ২০০টিরও বেশি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স বিভিন্ন টিম দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রকল্প নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। ২০১৩ সালে তিনি গড়ে তোলেন রুমানা মালিক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। এই প্রতিষ্ঠান থেকে স্থাপত্য, কাঠামোগত প্রকৌশল, প্লাম্বিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইন্টেরিওর ডিজাইন সহ সব ধরনের ডিজাইন সলিউশান করে থাকেন। রুমানা মালিকের বিশাল ও বৈচিত্রময় কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা তার কোম্পানীকে রিয়েল এস্টেট সেক্টর, ব্যক্তিগত আবাসিক খাত, বাণিজ্যিক, কর্পোরেট প্রভৃতি খাতে গ্রাহকদের সেবা প্রদানে কার্যকর ভ‚মিকা পালনে সহায়তা করেছে। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে প্রগতি সরনীতে অবস্থিত বিটিআই প্রিমিয়ার প্লাজা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, কালসিতে রয়েল পাইনস কমপ্লেক্স বিল্ডিং, গুলশানের নর্থ স্টার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, বসুন্ধরার হার্ডকোর ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আশুলিয়ার তামিশনা প্রাইমারী এন্ড সেকেনডারি স্কুল, চট্টগ্রামের লিক ফুং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, সাভারের সাউথ চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, অ্যাকটর স্পোটিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, পেডডাস জিনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, গাজীপুর জয়দেবপুরের স্পোররোও অ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, চট্টগ্রামের এপোলোগিস্টিক বাংলাদেশ অফিসের ইন্টেরিয়র, ঢাকার ইউটি এ গার্মেন্টস গ্রæপ অফিসের ইন্টেরিয়র, উত্তরা মটরস লিমিটেড অফিসের ইন্টেরিয়র, আশুলিয়ার তামিশনা গ্রæপ ফ্যাক্টরি অফিসের ইন্টেরিয়র সহ অসংখ্য ভবনের ডিজাইন ও ইন্টেরিয়র করেছেন। এছাড়াও বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তিনি।
স্থপতি রুমানা মালিকের মতে, একজন পেশাজীবি নারীকে সফল ভাবে তার পেশা পরিচালনা করতে নিজের ডেডিকেশনের পাশাপাশি পারিবারিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার স্বামী এবং দুই মেয়ে তার কাজের ক্ষেত্রে অসাধারণ উৎসাহ ও সমর্থন দিয়েছেন। রুমানা মালিকের স্বামী ফয়সাল মালিক ১৯৮৯ সালে টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এই দম্পতির দুই মেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

নব দম্পতিদের গৃহসজ্জা নিয়ে স্থপতি রুমানা মালিক বলেন, নবদম্পতি বলতে আমরা বুঝি নতুন বিয়ে হয়েছে এমন দম্পতি। নব দম্পতির বাড়ির ডিজাইনটা যদি এমন হয়, যেখানে প্রকৃতির সাথে বাড়ির সম্পর্কটা অনেক বেশি তৈরি করা যায় তাহলে এই নতুনত্বটা তাদের জীবনকে বহুদিন পর্যন্ত প্রভাবিত করবে। এখন যদি আমরা চিন্তা করি, ঢাকা শহরের মত ব্যস্ত, কোলাহলময় ঘিঞ্জি পরিবেশের মধ্যে নবদম্পতির আমেজটা কিভাবে পাব? হতে পারে নব দম্পতি দুজনে মিলে কোন ফ্ল্যাট বাসায় উঠেছে, সেখানে কি করে বাসার আবহাওয়াকে রোমান্টিক করে তোলা যায়? এ ক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টা প্রায়রিটি পেতে পারে, তা হচ্ছে আমাদের নেচারাল এলিমেন্ট গুলোকে প্রপার ইউটিলাইস করা। রোদ, আলো, আকাশ, বাতাস, গছপালা প্রকৃতি এবং নেচারাল ভেন্টিলেশন কে গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন সলিউশন করা উচিত। নবদম্পতিকে যদি ছোট্ট একটি পরিবার মনে করি, তাদের বাসাটা ছোট্ট, রান্না ঘরটার সাইজ কি হবে, ডাইনিং এর সাথে তার দূরত্ব, বারান্দা, বারান্দায় একটি বসার জায়গা, লিভিং রুম ডেকোরেশন প্রভৃতি খোলামেলা হওয়া উচিৎ।
পুরো পরিবেশটা তৈরি করে ফেলার পর ছোট ছোট জায়গা গুলোতে নজর দিতে হবে। যেমন বেডরুম নব দম্পতির সবচেয়ে প্রাইভেট জায়গা, সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক, কথাবার্তা সর্বোপরি পরিবেশটিকে আরো উজ্জীবিত করার জন্য রুমের রঙ, ফ্লোরের কালার, লাইটিংটা খুব রোম্যান্টিক হতে পারে। নতুন বিয়ে হয়েছে মানে ঘরে গাঢ় রং করতে হবে, এমন কোনও ব্যাপার নেই। বরং ঘরের জন্য বেছে নিন হালকা শেডের কোনও রং। আপনার মনের রঙ দিয়ে ছিমছাম রোমান্টিক টাচ দিন আপনাদের একান্ত প্রিয় ঘরটিকে । এতে বেডরুমটাকে অনেক বড় মনে হবে। আজকালকার প্রযুক্তি নির্ভর মিউজিক সিস্টেম, অটোমেশন ইত্যাদি থাকতে পারে। এইসব কিছু বেডরুমের আবহাওয়ায় একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
তবে রুমের সঙ্গে যদি বারান্দা থাকে তাহলে কিন্তু নিজস্ব সময় কাটানোর ভালো একটা পরিবেশ তৈরি করা যায়। আসলে কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে খুব বেশি বাড়তি আয়োজন বা অনেক বেশি আনুষঙ্গিক জিনিসের সমারোহের দরকার নেই। শুধুমাত্র দু’জনের জন্য বারান্দায় ছোট্ট দু’টি বসার টুল রাখতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বারান্দায় একটা দোলনা ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। সাথে পছন্দের কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট… কমন স্পেস এর কোন ওয়াল হতে পারে মেমরি ওয়াল, বা থাকতে পারে দুই পরিবারের সদস্যদের ছবি (ফ্যামিলি ট্রি)। এতে করে পরিবার থেকে আলাদা থাকলেও সম্পর্কের একটা আন্তরিকতার আবহ তৈরি হয়।