Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রাজনীতিতে নতুন তারকা

রেজানুর রহমান
অনেকে একথা শুনে হয়তো অবাকই হবেন। বাংলাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করতেও অনেকে কোটি টাকা খরচ করে। আর সেখানে জাতীয় সংসদের নির্বাচন বলে কথা। কেউ কেউ কোটি কোটি টাকাও খরচ করেন নির্বাচনে জিতে যাওয়ার জন্য। মাশরাফির বিন মর্তুজা, আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র। এখন তিনি জাতীয় সংসদের একজন প্রতিনিধি। অর্থাৎ মাশরাফি নামের সাথে আরও একটি স্বীকৃতির পালক যুক্ত হয়েছে। এতদিন ছিলেন ক্রিকেট খেলোয়াড়। এখন হয়েছেন এমপি অর্থাৎ জাতীয় সংসদের একজন সদস্য। মজার ব্যাপার হলো মাশরাফি বিন মর্তুজা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজে তেমন কোনো অর্থ খরচ করেননি। দলের নেতা-কর্মীরাই পালা করে তার জন্য মিছিল মিটিং এর আয়োজন করেছে। নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে মাশরাফি যেখানেই গেছেন সেখানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই উৎসব মুখর পরিবেশে তাকে নিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করেছে। এজন্য মাশরাফিকে অর্থের জন্য কোনো টেনশনে পরতে হয়নি। দলের নেতা-কর্মীরাই তার জন্য অর্থ খরচ করেছে। জনসভার স্টেজ বানিয়েছে। মাইক জোগাড় করেছে। পোস্টার ছেপেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাশরাফির জন্য ভোট চেয়েছে। মাশরাফির জন্য এ এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা তো বটেই। দেশের মানুষের জন্যও নতুন অভিজ্ঞতা বটে। জাতীয় নির্বাচনে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ না করেও নেতা হওয়া যায় অতীতকালে এমন ঘটনা ছিল স্বাভাবিক। এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সাধারন জনগনই চাঁদা তুলে তার জন্য চ্যাম্পেইন করতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে দাঁড়াবেন কিন্তু কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করবেন না তা কি করে হয়। অনেকটা ফেল কড়ি মাখো তেল এর মতো! কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজাকে কড়ি ফেলতে হয়নি। তার ভক্তরাই বরং তার জন্য কড়ির জোগান দিয়ে দলমত নির্বিশেষে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদের নেতা বানিয়েছে। সত্যি মাশরাফির কোনো তুলনা হয় না। মাশরাফি নিজেই নিজের তুলনা।
কে না জানে দেশে যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছিল তখন মাশরাফি ছিলেন খেলার মাঠে। এক সময়ের শক্তিধর ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ক্রিকেটের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বলা বাহুল্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাভ‚ত করেই মাশরাফি রাজনীতির মাঠে পা বাড়ান। ততদিনে ভোটের ক্যাম্পেইন প্রায় শেষের পথে। তবুও মাশরাফিকে কাছে পেয়ে নড়াইলে তার নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবের ঢল নামে। পুরুষরা তো বটেই মহিলারাও মাশরাফিকে এক নজর দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অনেক পরিবারে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করেছে মা- বোনেরা। মাশরাফি যদি তাদের সাথে এক বেলা খায় সেটা হবে অনেক আনন্দের। আর তাই ভোট চাইতে গিয়ে মায়ের বয়সী অনেক মহিলার হাতের ভাতের লোকমা খেতে হয়েছে। অনেকে শরবৎ নিয়েও মাশরাফির জন্য অপেক্ষা করেছে। মাশরাফিকে শরবৎ খাইয়ে পরম আনন্দ খুঁজেছে অনেকে। মাশরাফিকে এক নজর দেখেই গল্পের ডাল-পালা বিস্তৃত করেছেÑ কি সুন্দর দেখতে। একেকবারে রাজপুত্র!
আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র মাশরাফি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের বহুল আলোচিত তারকা। বাংলাদেশের এমন কোনো পরিবার পাওয়া যাবে না যে পরিবারের সদস্যরা মাশরাফিকে চিনে না। মাশরাফি শুধু একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় নন। তিনি এখন জাতীয় সংসদের একজন প্রতিনিধি। সব চেয়ে বড় কথা একজন মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন দেশের কোটি কোটি তরুণের আইডল। প্রতিটি সৃজনশীল পরিবারে আস্থার একটা জায়গা তৈরি করেছেন মাশরাফি। কারণ মাশরাফির মতো হতে চাইলে কারও কোনো আপত্তি নাই। বরং মাশরাফির মতো হতে চাইলে পরিবারে যেন আনন্দ থই থই করে ওঠে। কেন এটা হচ্ছে? কারণ মাশরাফি এখন একটা বিশ্বাসের নাম। মাশরাফি মানেই আস্থা আর বিশ্বাসের অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। কাজেই যে হতে চায় মাশরাফির মতো। তাকে তো স্বাগত জানাতেই হয়।
মাশরাফি জাতীয় রাজনীতিতে নামছেন এই খবর ছড়িয়ে যাবার পর গোটা দেশে এক ধরনের নেতিবাচক সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মাশরাফি জাতীয় রাজনীতিতে নামলে আমাদের ক্রিকেটের কি হবে? কারণ এখনও দেশের ক্রিকেট মানেই মাশরাফিকে চাই। সেখানে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি হয়ে মাশরাফি কি ক্রিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারবেন? এই ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তার ডালপালা যখন ক্রমশ বড় হচ্ছিলো তখন মারশরাফিই তা কেটে দেন পরম যতেœ। জাতীয় সংসদের নেতা হয়েছেন। এখন তো তার উচিৎ এমপি হিসেবেই নানা ধরনের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকা। কিন্তু ক্রিকেটের মাশরাফি ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। বিপিএল এর ৬ষ্ঠ আসরে রংপুর রাইর্ডাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রথম খেলায় হেরে যাবার পরই যেন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কারণ এমপি নির্বাচিত হবার পর সেটাই ছিল মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথম কোনো ক্রিকেট লড়াই। কিন্তু প্রথম লড়াইয়ে মাশরাফি হেরে যান। তার ভক্তরা সেটা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় খেলায় ঠিকই জিতেছে মাশরাফির দল। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তৃতীয় খেলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়াসকে বলতে গেলে মাশরাফি একাই নাস্তানাবুদ করেছেন। সে কারণে একটি শ্রেষ্ঠ দৈনিকে শিরোনাম হয়েছে ‘মাশরাফি ম্যাজিকে রংপুরের জয়’।
মাশরাফি এখন শুধু একটি নাম নয় মাশরাফি একটি বিশ্বাসেরও প্রতীক। মাশরাফি তার জীবদ্দশায় অনেকটাই একটা ‘মিথ’ এ পরিণত হয়েছেন। মাশরাফি সাথে থাকলেই বিজয় অনিবার্য। মাশরাফি যেখানে বিজয়ও সেখানে। সে কারণে মাশরাফিকে ঘিরে নড়াইল অঞ্চলের মানুষদের তো বটেই পাশাপাশি দেশের মানুষের মাঝেও একটা ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছেন। আর তাই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটের মাঠে মাশরাফি যে বিশ্বাস ছড়িয়েছেন, সবার প্রিয় হয়েছে রাজনীতির মাঠে তিনি কি তেমনই পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন। রাজনীতির নতুন তারকা মাশরাফি কি ক্রিকেটের মতোই রাজনীতিতেও জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠতে পারবেন?

কঠিন প্রশ্ন। এর নানামুখি বিশ্লেষণ হতে পারে। দেশের একজন জনপ্রিয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বললেন, রাজনীতির মাঠে এই মুহূর্তে তরুণ এমপি হিসেবে মাশরাফিকে ঘিরে তুমুল আলোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছিল জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হবার পর মাশরাফি ক্রিকেটে আদৌ মনযোগ দিতে পারবেন? নিঃসন্দেহে বলা যায়, মাশরাফি এই প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন। ক্রিকেট মাঠে তার বর্তমান পারফরমেন্স দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি সদ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী একজন সংসদ সদস্য। বরং খেলার প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি মনোযোগী তিনি। এটাতো গেল খেলার মাঠের জায়গা। রাজনীতির মাঠে বাস্তবে নেমে মাশরাফি কি করেন এখন সেটাই দেখার বিষয়। এক অর্থে বলা যায় রাজনীতির মাঠে বর্তমান মুহূর্তে মাশরাফি একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। কারণ রাজনীতির মাঠেও ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ তাকে অনেক ভালোবাসে। এটাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কারণ এতদিন এলাকার মানুষ তার কাছে কিছু চায়নি। এখন তরা চাইতে শুরু করবে। নির্বাচনের সময় এলাকার যে সব নেতা নিজ খরচে মঞ্চ বানিয়েছেন, মাইক জোগাড় করেছেন কর্মীদের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন তাদের অনেকে ধীরে ধীরে হয়তো চাহিদা পত্র তুলে ধরতে চাইবেন মাশরাফির কাছে। আমাদের এটা চাই, ওটা চাই… চাহিদার লম্বা ফিরিস্তিও হয়তো এসে যাবে মাশরাফির সামনে। সামনে এটাই হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের বিশ্বাস মাশরাফি বিন মর্তুজা রাজনীতির মাঠে নতুন চ্যালেঞ্জেও জয়ী হবেন। কারণ জনগণের আস্থা আছে তার প্রতি। সবচেয়ে বড় কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহেই মাশরাফি রাজনীতির মাঠে পা রেখেছেন। কাজেই রাজনীতির মাঠে মাশরাফি আরও ভালো করবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।
ক্রিকেটের মতো রাজনীতির মাঠেও মাশরাফি যদি জিতে যান তাহলে এক অর্থে দেশই উপকৃত হবে। সেটা কেমন? বুঝিয়ে বলছি! একটু খেয়াল করলেই দেখবেন এবার জাতীয় রাজনীতিতে তরুণদেরই জয়-জয়কার। অর্থাৎ তরুণদের প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে দেশের মানুষের। নেতা হয়ে ওঠা তরুণেরা যদি রাজনীতির মাঠে শেষ পর্যন্ত জিতে যান তাহলে প্রিয় দেশ উন্নয়ন অগ্রাযাত্রায় আরও বেশি এগিয়ে যাবে।
আমরা আশাবাদি মাশরাফির মতো রাজনীতিতে আসা নতুন তারকাদের নিয়ে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতির এই নতুন তারকারা অনেক আলো ছড়াক দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।