Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

রবিউলের স্থাপত্য ভুবন

দেশপ্রেম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে কাজ করে চলেছেন মো: রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৮ সালে বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘ডোমাস’ নামের একটি ফার্মে। ২০১৩ সালে পার্টনারের দায়িত্ব ছেড়ে তিনি নিজেই গড়ে তোলেন ‘গ্রæপ অব আর্কিটেক্টস অ্যান্ড থিংকার্স’ (এঙঅঅঞ) নামের একটি ফার্ম। বর্তমানে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের দেখা শোনা, পাশাপাশি উত্তর সিটি করপোরেশনের পার্টটাইম কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আরবান ল্যান্ডস্কোপ ডিজাইনের উপর। তার ‘অরফানেজ’ ডিজাইনটি বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন ইন আর্কিটেকচার প্রতিযোগিতায় ইয়ং আর্কিটেক্ট ক্যাটাগরিতে সেরা পুরস্কার পেয়েছিল। এবার শাহ্ সিমেন্ট সুইট হোমে তাকে নিয়েই প্রতিবেদন। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।
আর্কিটেক্ট মো: রবিউল ইসলাম রবি প্রকৃতি প্রেমী একজন স্থপতি। ইট, কাঠ, বালু ও কংক্রিটের মাঝে খুঁজে ফেরেন প্রকৃতির সান্নিধ্য। আর তাই তার প্রতিটি স্থাপনায় থাকে সবুজের ছোঁয়া। প্রতিটি ডিজাইনের ক্ষেত্রে আলো, বাতাস, সবুজ প্রকৃতি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তিনি। স্থপতি মো: রবিউল ইসলাম রবি তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তার গ্রামের বাড়ি ল²ীপুর জেলায়। কিন্তু বেড়ে ওঠা কাপ্তাইয়ে। রবিউলের বাবার নাম মো: নুর হোসেন। তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। মা শাহীন আক্তার গৃহিণী। স্কুলে পড়াকালীন রবিউল ইসলামের খেলাধুলার প্রতি প্রচÐ নেশা ছিল। জাতীয় পর্যায়ে বাস্কেটবল খেলতেন। এমনকি বুয়েটে পড়ার সময়ও জাতীয় পর্যায়ে বাস্কেটবল খেলেছেন। বইপড়া, ফটোগ্রাফি তার পছন্দের বিষয়। ‘পাখির ছবি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি সোসাইটি থেকে তিনি পান পুরস্কার। ছোটবেলা থেকে কাপ্তাই থাকার কারণে প্রকৃতির প্রতি রবিউল ইসলামের একটা ভালোবাসা জন্মায়। সেই ভালোবাসা পরবর্তীতে তার কাজে প্রভাব ফেলে। ইচ্ছা ছিল স্থপতি হওয়ার। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আজ তিনি হয়েছেন সফল একজন স্থপতি।
রবিউল বিএন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে। এ সময়ে তার সহপাঠী বন্ধুদের মধ্যে আছেন স্থপতি রাসেল, দিপু, শাহিদ, সায়মুন, মিজান ও তানীম। এরা সবাই প্রতিষ্ঠিত আর্কিটেক্ট। প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় আছেন ড. খন্দকার সাব্বির আহমেদ ও মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদ। স্থপতি মো: রবিউল ইসলাম ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রিলাভ করেন ২০০৮ সালে। বুয়েট থেকে পাস করে বের হওয়ার পরই তিনি যোগ দেন ‘ডোমাস’ নামের একটি ফার্মে। সেখানে তিনি দুই বছর চাকরি করেন। ২০১৩ সালে নিজেই গড়ে তোলেন ‘গ্রæপ অব আর্কিটেক্টস অ্যান্ড থিংকার্স (এঙঅঅঞ) নামের একটি ফার্ম। বর্তমানে তিনি ফার্মটির কর্ণধার ও প্রিন্সিপ্যাল আর্কিটেক্ট। উত্তরায় খুব সুন্দর একটি অফিস সাজিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞ স্থপতিসহ মোট ৮জন কর্মী কাজ করছেন।
delwar-hossain-playfieldইতোমধ্যে রবিউল ইসলাম দেশের নামকরা কলেজ, পার্ক, মসজিদ, এতিমখানা, রিসোর্ট, খেলার মাঠ, অফিস কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য আবাসিক ভবনের ডিজাইন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে; চাঁদপুরের অরফানেজ এতিমখানা, সিলেটের নাজিম গড় রিসোর্ট, সাভারের প্রফেসর বশির আহমেদের অরুণা পল্লী রেসিডেন্স, হবিগঞ্জের লাক্সসারি রিসোর্টের ল্যান্ডস্কেপিং ও স্পা, চিটাগং এর এ কে রেসিডেন্সের ল্যান্ডস্কেপিং, চাঁদপুরের মিয়াজি বাড়ি জামে মসজিদ, গুলশান-১ অস্থায়ী বাজার পুনর্বাসন শেড, টাঙ্গাইলের হাজী ইসমাইল কলেজ, লালবাগের দেলওয়ার হোসেন খেলার মাঠ, আজিমপুর রসুলবাগের শিশুপার্ক, হাজারিবাগের গজ মহল পার্ক, লালবাগের বসিরউদ্দিন পার্কসহ আরো অসংখ্য স্থাপনা এবং ল্যাÐস্কেপ করেছেন। এছাড়া বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রজেক্টের কাজ করছেন তিনি।
রবিউল ইসলাম তার সব ধরনের কাজ স্থাপত্যনীতি ও রাজউকের নিয়ম মেনেই করেন। এবছরের ১৬ জানুয়ারি তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম নেহলিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি একজন আর্কিটেক্ট। বর্তমানে আমেরিকায় মাস্টার্স করছেন। স্থপতি রবিউল ইসলাম বলেন, বসতি স্থাপনের নিমিত্তে মানুষ পরিবেশের পরিবর্তন ঘটায়। যান্ত্রিক আরাম আয়েসের জন্য অবচেতন ভাবে বিদ্যমান পরিবেশের ভারসাম্য বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। আমরা বিশ্বাস করি সজীব এবং নির্জীব বস্তু দ্বারা গঠিত বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য মানুষের যেমন প্রয়োজন তেমন প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশে বিদ্যমান উদ্ভিদ ও পানিকুলের। পরিবেশের উপাদান গুলোর স্বার্থে মানুষ্য সৃষ্ট স্থাপণার সম্পর্ক নির্ধারণ করবে এবং বস্তু সংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না এমন ধারনাই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের প্রকল্পগুলো জীব এবং জড় উপাদানগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করে। এই নিমিত্তে আমাদের ডিজাইন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন স্থপতি, প্রকৌশলী, পরিবেশবিদ, সংরক্ষণবিদ, উদ্ভিদবিদ, পাখি বিশেষজ্ঞ এবং কারুশিল্পীরা। আমাদের সৃজনশীলতার মূলমন্ত্র পরিবেশের বাস্তুসংস্থান পরিবর্তন কিংবা ক্ষতিসাধন নয় বরং সমন্বিত সুস্থ, সুন্দর ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করণ আমাদের কাজের অংশ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও প্রকৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি কাজে নজর দেন স্থপতি রবিউল ইসলাম রবি। এই স্থপতি তার কাজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করতে ভালোবাসেন।