Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

যে কারণে আনন্দ আলো এখনো এগিয়ে…

অনুরূপ আইচ

বইমেলার সময় মাছরাঙা টিভিতে আমি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলাম ‘বিনোদন সারাদিন’ অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থাপিকা নন্দিতা আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনার লেখা ‘তুমি আমার’ শিরোনামের একটি গান সাত বছরে দুই কোটি ভিউ হয়েছে- এ নিয়ে আপনার অনুভূতি কি?

উত্তরে আমি বলেছিলাম, নরমালি একটি গানের দুই কোটি ভিউ হতে সাত বছর সময় লাগার মানে হচ্ছে, এখন যেসব গান অনায়াসে কোটি ভিউ পেরুচ্ছে তারা গুগুলকে টাকা দিয়ে লাইক কিংবা ভিউ কিনছে। তাছাড়া ‘তুমি আমার’ গানটির ভিউ দুই কোটি পেরিয়েছে মানে এই নয়, এই গানটি আমার লেখা ‘এক জীবন’ গানের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

এ প্রসঙ্গ ধরে বলছি, আমি জানি না আনন্দ আলো ম্যাগাজিনের সার্কুলেশন কত! এটা আমার জানার কথাও নয়। অথবা আমার এত কিউরিসিটি নেই। আমি শুধু এটুকু জানি, আনন্দ আলো একটি ভালো পত্রিকা।

একটি পত্রিকা দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায় প্রথমে সেই পত্রিকার সম্পাদকের নামে। অর্থাৎ, সম্পাদক যদি স্বনামধন্য হন তাহলে পত্রিকা প্রকাশের আগ থেকেই মানুষের চাহিদার তালিকায় থাকে। এক্ষেত্রে আনন্দ আলো কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই আমি। তারা আজ থেকে ১৪ বছর আগে আনন্দ আলো পত্রিকার জন্যে একজন যোগ্য সম্পাদক খুঁজে নিয়েছেন।

জন্মলগ্ন থেকে আজোবধি আনন্দ আলোর সফল সম্পাদক রেজানুর রহমান। আনন্দ আলোর সম্পাদক হওয়ার আগে তিনি ছিলেন ইত্তেফাক পত্রিকার বিখ্যাত সাংবাদিক। তবে রেজানুর রহমান ইত্তেফাকের সাংবাদিক থাকাকালীন সাংবাদিকের চেয়েও দেশজুড়ে সুপরিচিত ছিলেন লেখক ও নাট্য নির্মাতা হিসেবে। তার লেখা ও পরিচালনায় অনেক নাটক আমারও অনেক প্রিয়। তবে তার ‘ইলিশ’ নাটকের কথা আমি যেমন এখনো ভুলিনি, তেমনি যতদিন এদেশের মিডিয়ার লোক টিভি নাটকের ইতিহাস চর্চা করবেন ততদিন ‘ইলিশ’ নাটকের নাম উচ্চারিত হবে।

আমি একজন ছোটখাট লেখক। আমার লেখার পরিসর বৃদ্ধির তাগিদে আমি যুগান্তর পত্রিকার চাকুরি ছেড়ে দিয়েছি। আমি খুব অবাক হই, আমার চেয়ে বহুগুণ জনপ্রিয় লেখক ও নির্মাতা রেজানুর রহমান গত ১৪ বছরে নিজের লেখা বা নাটক নির্মাণ অনেকাংশে হ্রাস করেছেন, শুধুমাত্র আনন্দ আলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে। একজন মানুষ তার পেশার প্রতি কতটা সৎ থাকলে, এতবড় ছাড় দিতে পারেন একবার ভাবুন।

আমার ২৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে বহু লেখককে বিভিন্ন পত্রিকা বা টিভিতে কাজ করতে দেখেছি। তাদের বেশিরভাগই চাকুরির চেয়ে নিজের লেখক জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বলা চলে, চাকুরির বেতন হালাল করে খাননি।

আবার এও দেখেছি, কোনো রকমে পত্রিকা বা টিভিতে চাকুরি নিয়েই অনেকে গায়ের জোরে (প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা দেখিয়ে) গীতিকার, নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনেতা কিংবা লেখক হওয়ার কত প্রচেষ্টা। এ নিয়ে আবার এমনতর হাইব্রিড গীতিকার ও নাট্যকার-নির্মাতাদের দলাদলিও দেখে যাই এখনো।

এ সময়ের এসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখি আর আমাদের সিনিয়রদের কথা মনে করি, তখন রেজানুর রহমানের কথা মনে এলে শ্রদ্ধায় আমি অবনত হই। এই যুগেও এমন নির্লোভ লেখক আছেন! যিনি প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে আনন্দ আলোর জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজের লেখক বা নির্মাতা ক্যারিয়ারকে অনায়াসে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তবুও ভক্তদের চাহিদার কারণে তিনি লেখালেখি কিংবা নাটক নির্মাণ একদম বাদ দিতে পারেননি। সংখ্যায় কম হলেও এখনো প্রতি বছর রেজানুর রহমানকে একাধিক নাটক বানাতেই হয়- দর্শক চাহিদার কারণে।

শুধু একজন রেজানুর রহমানের নেতৃত্বে আনন্দ আলোর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে এটা বলা যাবে না। এই অগ্রযাত্রায় রেজানুর রহমানের সারথি ছিলেন ১৪ বছরে আনন্দ আলোতে যারা যারা কাজ করেছেন সবাই। বলতে গেলে এ প্রজন্মের অনেক সাংবাদিকের ক্যারিয়ার গড়ে দিয়েছে আনন্দ আলো। যারা এখন আনন্দ আলোতে নেই, তাদের অনেকেই বর্তমানে ক্যারিয়ারে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। পত্রিকাটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দেশ বরেন্য শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর ও শাইখ সিরাজ। তারা সম্পাদক রেজানুর রহমানকে স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই রেজানুর বোধকরি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন আলোর জন্য।

আনন্দ আলোতে এখন যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই আমার ঘনিষ্ঠ। তাদের কাছে যখন জানতে চাই আনন্দ আলোর সফলতার মূলে কী- তারাও একবাক্যে বলেন, আমাদের সম্পাদক রেজা ভাই। এমনও সময় মাঝে মাঝে যায়, রেজানুর ভাই আমাদের সবাইকে ছুটি দিয়ে সারারাত বসে আনন্দ আলোর কাজ করে যান। ভাবী বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসেন। আমরাও সে খাবার খাই।

আনন্দ আলো নিজস্ব স্টাফ ছাড়াও বিখ্যাত লেখকদের লেখায় পাঠককে সমৃদ্ধ করেছে কিংবা সাহায্য করেছে জ্ঞানের আলো দিতে। আনন্দ আলোর মাধ্যমে দেশে বহু তারকার প্রতিষ্ঠা এসেছে।

আনন্দ আলো সবসময় যোগ্যতা সম্পন্নদের প্রচার কিংবা বিকাশে সাহায্য করেছে। কারো অনুরোধে বা বিজ্ঞাপনের লোভে কখনো হাইব্রিড তারকাদেরকে প্রচ্ছদে আনেনি আনন্দ আলো।

তাই চৌদ্দ বছরে আনন্দ আলোর ধারাবাহিক এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক চৌদ্দশ’ বছর অব্দি- এই কামনা করি।

লেখকঃ গীতিকার, নাট্যকার