Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

যেমন আছি তেমনই থাকতে চাই-তাহসান খান

সৈয়দ ইকবাল
গত ঈদে তাহসান অভিনীত বেশ কয়েকটি নাটক প্রচার হয়। গানের মানুষ হলেও গত কয়েক বছর ধরে ঈদ আয়োজনে তাহসান অভিনীত নাটক দেখার জন্য তার ভক্তরাও যেনো অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। তাই তো তার ভক্তদের খুশী করার জন্য হোক কিংবা মনের খোরাকেই হোক তাহসানকে এখন নিয়মিত অভিনয়ে পাওয়া যাচ্ছে। বড় পর্দায়ও তিনি চমৎকার অভিনয় করে ইতোমধ্যে ভক্তদের কাছে তার অভিনয় গুণের প্রমাণ দিয়েছেন। গত ঈদে তাহসান ৯টি নাটকে অভিনয় করেন। ‘কোন এক বিকেলে হলুদ শাড়ি’, ‘ইনকমপ্লিট’, ‘মায়া সবার মত না’, আশ্রয়’, ‘লেডি কিলার ২’, ‘আমি মিস্টার পরিষ্কার’, ‘ডেইট’, ‘শেষ বিকেল’ ও ‘ফ্রাইডে লাভ’ শিরোনামের নাটকগুলো বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়। প্রত্যেকটি নাটকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে তাহসানকে দেখতে পেয়েছে দর্শক। এ নিয়ে বেশ খুশি তাহসান। কথায় কথায় বললেন, ‘রমজানের ঈদে সিনেমাসহ অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমি খুব বেশি টিভি নাটকে অভিনয় করতে পারিনি। তবে এবার কোরবানি ঈদে আমার নাটকগুলো প্রচার হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।’ অভিনয় ও গান নিয়ে তাহসান বর্তমানে কেমন সময় পার করছেন কিংবা সামনে তার কাজের কি কি পরিকল্পনা রয়েছে? সব বিষয়ে তাহসান আনন্দ আলোর সাথে কথা বলেছেন।
আনন্দ আলো: ঈদের ছুটিতে নিজের কাজ দেখেছেন?
তাহসান খান: আমি সবসময়ই চেষ্টা করি নিজের কাজটা দেখতে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে টিভি চ্যানেলে দেখতে না পারলেও ইউটিউব এ সময় করে কাজগুলো দেখেছি। নিজের কাজ দেখার মধ্যে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। অনেক সময় নিজের কাজ দেখার পর নানান জায়গায় নানান ভুল ধরা পড়ে। আমি শুধু নিজের কাজই দেখি না। অন্যদের কাজগুলোও দেখার চেষ্টা করি।
আনন্দ আলো: অভিনয় নিয়ে প্রত্যাশার জায়গাটা বলেবন?
তাহসান খান: প্রতিবারই ঈদ নিয়ে অনেক আয়োজন করি। গান থাকে, নাটক থাকে। এবার ঈদে ৯টি নাটকে অভিনয় করেছি। কাজগুলো করতে পেরে একটা তৃপ্তি তো অবশ্যই কাজ করেছে। কেননা প্রত্যেকটি কাজ একটি থেকে আরেকটি আলাদা। আমার ভালো লাগবে যখন মানুষ এই কাজগুলো দেখবেন। অনেকেই কাজগুলো দেখে আমাকে নানানভাবে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছেন। আমার ফ্যান পেইজ কিংবা বিভিন্ন নাটকের পেইজে নানান কথা লিখেছেন। এখনো অনেকে নাটক দেখছেন। এটা অবশ্যই একটা পজিটিভ দিক।
আনন্দ আলো: নয়টি নাটকের মধ্যে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
তাহসান খান: সবগুলো কাজই আমার মনের মতো হয়েছে। মাবরুর রশিদ বান্নাহ, ইমরাউল রাফাত, সাগর জাহান ও তপু খানের সঙ্গে কাজ করে বেশ ভালো লেগেছে। তাদের নাটকগুলোর গল্পে ভিন্নতা রয়েছে। একেকটির কাহিনী একেক রকম। তাই সবগুলো কাজকেই আমি এগিয়ে রাখবো। কেননা আমি গল্প এবং শুটিং এর প্ল্যানিং না শুনে কিন্তু ডেট দেই না। সেই হিসেবে আমি আগেই জানতাম কাজগুলো ভালো হবে।
আনন্দ আলো: বর্তমানে বেশিরভাগ নাটকে গল্পের মূল বিষয়বস্তু একই থাকে। কাহিনীতে বৈচিত্র্য তেমন একটা দেখা যায় না। এ বিষয় আপনি কী মনে করেন?
তাহসান খান: প্রতি ঈদে যেহেতু শত শত নাটক নির্মিত হচ্ছে। কাজেই সব ক্ষেত্রেই যে আন্তরিকতা থাকবে তা বলা মুশকিল। আপনি যখন দশটা সিনেমা বানাবেন, তখন হয়তো কাহিনীর বৈচিত্র্য একভাবে দেখা দেবে, আর যখন তিনশ’টা বানাবেন তখন মনে হবে কাহিনী সব এক হয়ে যাচ্ছে। আসলে বৈচিত্র্য এখানেও আছে, যেহেতু তিনশ’টা কাজ তাই ভালো কাজের সংখ্যা কম মনে করে মানুষের অভিযোগটা আসছে। তবে কিছু কাজ যে মানহীন কিংবা একরকম হচ্ছে না- আমি এটা বলবো না। হচ্ছে। তবে ভালো কাজের সংখ্যাটাই বেশি।

আনন্দ আলো: তাহলে সংশ্লিষ্টদের করণীয় কী বলে আপনি মনে করেন?
তাহসান খান: এখানে বাণিজ্যিক দিক থেকেই আসলে বিষয়টা ঠিক করতে হবে। কাজের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। মানসম্পন্ন কাজ করতে হবে। আমি যেটা মনে করি যে একজন শিল্পী হিসেবে ঈদে ৫ থেকে ৮টা কাজ হয়তো করা যায়। আমার যেমন অফার থাকে ৩০টা। অনুরোধ থাকে, তবু অনেককে না বলতে হয়, অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, কারণ তারা বোঝেন না। আমি এজন্যই কাহিনীর বৈচিত্র্য যেন ধরে রাখতে পারি সেজন্য কম কাজ করি।
আনন্দ আলো: তাহলে কী নাটকের মান কমে যাচ্ছে?
তাহসান খান: সেভাবে কোয়ালিটি কম হচ্ছে না, ভালো কোয়ালিটির কাজও হচ্ছে। কিন্তুসংখ্যায় যতগুলো কাজ হচ্ছে, তার তুলনায় ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ কম হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির যারা নীতিনির্ধারক তাদের চিন্তা করতে হবে।
আনন্দ আলো: ইউটিউবসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
তাহসান খান: এ জায়গায় সম্ভাবনাটা অনেক ভালো। এবার যতগুলো কাজ করেছি প্রায় সবগুলোই অনলাইন ও টিভি চ্যানেলের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। এর আগের ঈদেও এমনটি ছিল না। তখন চ্যানেলের প্রযোজনায় নির্মিত হতো, পরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো কিনে নিতো। আর এখন যৌথভাবে নির্মিত হয়। এটা সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আগে বলা হতো বাংলাদেশের মানুষ নাটক দেখে না, ভালো কোয়ালিটির নাটক হয় না। কিন্তু এখনতো দেখা যাচ্ছে মানুষ নাটক দেখে এবং ভালো কোয়ালিটির নাটকও হচ্ছে।
আনন্দ আলো: অনেক সময় ভিউর জন্য অনলাইনে অশ্লীল কন্টেন্ট নির্মাণ করতে দেখা যায়। এটা আপনাদের কাজের কোনো প্রভাব ফেলে কি?
তাহসান খান: অসুস্থ রুচির কনটেন্ট চিরজীবনই ছিল। যাদের অসুস্থ রুচির কনটেন্ট দেখার ইচ্ছা তারা দেখবেই। আগে হয়তো বিদেশি কনটেন্ট দেখতো, এখন এসব দেখছে। এটা নিয়ে আসলে এতো কথা বলার কিছু নেই। অসুস্থ রুচির কনটেন্ট যারা দেখে আমরা তাদের জন্যতো কাজ করি না। যারা আমার দর্শক তারা সুস্থ রুচির কনটেন্ট দেখেন। তাই এটা নিয়ে আমি এতো কিছু ভাবতে চাই না।
আনন্দ আলো: ‘যদি একদিন’র মাধ্যমে বড় পর্দায় আপনার অভিষেক ঘটলো। নতুন সিনেমায় কবে পাওয়া যাবে?
তাহসান খান: আমি সবসময় বলেছি একটা সিনেমা করার কথা ছিল, মানুষকে দেখানোর কথা ছিল যে, পরিবারকে নিয়েও হলে গিয়ে সিনেমা দেখা যায়। সেটা করেছি। প্রায় ১২ সপ্তাহ ধরে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে চলেছে। প্রযোজকরা খুশি, ভক্তরাও খুশি। আমিও আসলে আনন্দিত যে সিনেমাটি এতো ভালো হয়েছে। কিন্তু আমি যেহেতু ফুল টাইম এক জায়গায় নেই, পুরো বিনোদন জগতে আমার পদচারণা-বিষয়টি সেরকমই থাকবে। হয়তো ৩-৪ বছর পরপর আবার একটা সিনেমা করবো, টিভিতে নাটক করছি সেটা করে যাবো, গান করছি করে যাবো। একটা জায়গায় নিজেকে বেঁধে রাখতে চাই না। গানের ভক্তদের এক রকম, নাটকের ভক্তদের আরেক রকম আবার সিনেমার ভক্তদের অন্যরকম প্রত্যাশা। আমি সবার জন্যই অল্প অল্প করে কাজ করবো। আমি কৃতজ্ঞ, কারণ সব মাধ্যমেই মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছেন। সব মাধ্যমেই আমার হিট কাজ আছে।
আনন্দ আলো: গানের খবর কি?
তাহসান খান: আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটা অ্যালবাম রিলিজ দিতে চাই। এখন সেটার কাজ চলছে। তবে নাটকের কিছু গানের কাজও করেছি এরমধ্যে। সবমিলিয়ে গান নিয়েও আমার ব্যস্ততা আছে।
আনন্দ আলো: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলবেন-
তাহসান খান: আমি আসলে এখন যেই অবস্থায় যেমন আছি তেমনই থাকতে চাই। গান আর অভিনয় নিয়ে আছি। আর নিজের শিক্ষকতা পেশা তো আছেই। কি হবে বা কি করবো- সেটা হয়তো এখন চিন্তা করছি না। তবে ভবিষ্যতে কি হবে সেটা তো সময়ই বলে দিবে।