Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

যা কিছু মহৎ এবং ভালো তার সাথেই আনন্দ আলো

রেজাউল হক রেজা:
কিছুদিন আগের কথা। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক, মিডিয়ার পরিচিত মুখ ইরেশ যাকের এর বিবাহর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম সস্ত্রীক। সেনা মালঞ্চের বিশাল অডিটরিয়ামে যেন সেদিন বসেছিল তারার মেলা। সেই অডিটরিয়ামে দোতলায় দেখা হয় তারকা শিল্পী বিপাশা হায়াতের সঙ্গে। বিপাশা হায়াতের নামের আগে আর কোনো বিশেষণ দিতে হবে বলে মনে করি না। আমাকে দেখেই মুচকি হেসে একটু এগিয়ে এসে বললেন, কেমন আছেন? খুশি মনে বললাম, ভালো আছি। বেশ ভালো। দু’জনের কুশল বিনিময় হলো। অনেকদিন আমাদের দেখা হয় না, কথা হয় না। বিপাশা হায়াত বর্তমানে অভিনয়ের চেয়ে লেখালেখি আর আঁকা আঁকি নিয়েই বেশি ব্যস্ত। পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করা। যার কারণে মিডিয়ার সঙ্গে বেশি কথা বলেন না। বিশেষ করে কোনো পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতেই চান না। অনেকের ধারণা এই সময়ে বিপাশা হায়াত সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে তার আন্তরিক ব্যবহার। দেখে একবারও তা মনে হয়নি। স্ত্রীর ইচ্ছেতে তিনজনে মিলে সেলফিও তুললাম কয়েকটা। এই দেখে পাশ থেকে একজন পরিচালক এবং প্রযোজকও সেলফি তুলতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে না করলেন তিনি। বললেন, এইভাবে আমি সেলফি তুলি না।
এই দৃশ্য দেখে মনে মনে চিন্তা করলাম তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে বেশ মূল্যায়ন করেছেন তিনি। মনের মধ্যে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি অনুভব করলাম। ভাবলাম, সাংবাদিকতা জীবনে হয়তো কিছু কাজ করেছি যা অনেকেই ভালো চোখে দেখেছেন কিংবা মনে রেখেছেন।
আনন্দ আলোয় অনেকবার বিপাশা হায়াতকে নিয়ে লিখেছি। কখনো অভিনেত্রী হিসেবে। কখনো নাট্যকার হিসেবে আবার কখনো চিত্রশিল্পী হিসেবে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তারকার সত্যি জীবন নামে জনপ্রিয় একটি সেগমেন্ট ছিল আনন্দ আলোতে। দেশের এহেন কোনো তারকা নেই যাদের নিয়ে ওই বিভাগে কাজ হয়নি। বিপাশা-তৌকির আহমেদ দম্পতি নিয়েও সেই বিভাগে লিখেছিলাম। মনে পড়ে এই দম্পতি এত ব্যস্ততার মধ্যেও সারাদিন আমাদের ছবি তুলতে সময় দিয়েছিলেন।
নিজেদের ব্যস্ততম সময় থেকে এমন করে অনেক তারাকাই সময় বের করেছিলেন আনন্দ আলোর জন্য। বর্তমান সরকারের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রী, আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদও এমনিভাবে সময় দিয়েছিলেন আমাদের। তখন তিনি বিরোধী দলীয় সাংসদ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি অনীহা নিয়ে জানালেন, রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিনোদন ম্যাগাজিনে কি লিখবা? তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। সমাজের সকল সেক্টরের যে কোনো সফল মানুষই আনন্দ আলোর চোখে তারকা। সুতরাং আমরা তারকাদের নিয়েই কাজ করি। সাক্ষাৎকার এবং ছবি তুলতে রাজি হলেন তোফায়েল আহমেদ। একদম ঘরোয়া পরিবেশ আর আন্তরিক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে কাজ করে ছিলাম তার বনানীর বাসায় গিয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে বেশ স্টাইলিশ মানুষ তিনি। তার রয়েছে প্রচুর স্যুট আর টাই এর কালেকশন। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে আমরা তার শৈশব কৈশর আর বর্তমান জীবনের গল্প শুনেছি। মেয়ে, নাতনী কিংবা মমতাময়ী মায়ের সঙ্গে তার দৈনন্দিন জীবনের গল্প শুনেছি। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছবি তুলেছি। মনে আছে তাকে নিয়ে যে ফিচার লিখেছিলাম তার শিরোনাম ছিল, ‘মাথার উপরে আছেন আমার মা’। আনন্দ আলোর ২য় বর্ষ ১ম সংখ্যায় ছাপা হওয়া একই সংখ্যায় তৎকালীন বিএনপি সরকারের মাননীয় মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে নিয়েও একই রকম আরেকটি ফিচার লিখেছিলাম। একজন মন্ত্রী মহোদয় তার ব্যস্ততম সময় বের করেছিলেন আনন্দ আলোর জন্য। তার ব্যক্তিগত বিনোদন, গান গাওয়া, খেলাধুলা ছাড়াও যৌথ পরিবারে বেড়ে ওঠাসহ নাজমুল হুদা আনন্দ আলোর কাছে বলেছিলেন নিজের অনেক না বলা কথা।
মনে আছে তোফায়েল আহমেদ এবং ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে নিয়ে লেখা ছাপা হওয়ার পর আনন্দ আলোর প্রচলিত স্টাইলে ফুলের ডালা সাজিয়ে ম্যাগাজিন পাঠানো হয়েছিল তাদের কাছে। পত্রিকা দেখে এবং তাদের নিয়ে লেখা পড়ে তারা দুজনেই মুগ্ধচিত্তে আনন্দ নিয়ে তারা প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন।
রাজনীতিবিদ হিসেবে বহু পত্রিকায় এবং টেলিভিশনে জীবনে অনেক সাক্ষাৎকার দিয়েছি। কিন্তু আমাদের রাজনীতির বাইরে যে একটা সাধারণ জীবন আছে,। কোমল মন আছে, যে মনে খেলা করে নানান ধরনের বিনোদন স্ত্রী-সন্তান আর পরিবারকে সময় দেয়া ইত্যাদি। সেই সব অজানা কথা আনন্দ আলো জানিয়ে দিয়েছেন। পাঠক পড়ে বিনোদিত হয়েছে। ব্যতিক্রম ধর্মী সেই লেখার জন্য আনন্দ আলোর সম্পাদক এবং তাদের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই।
আনন্দ আলো প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান অতিথি হবে দুই নেতা এসেছিলেন শুভেচ্ছা জানাতে। রাজনৈতিক বিরোধিতায় যারা একজন আরেকজনের মুখ দেখেননা আনন্দ আলোর অনুষ্ঠানে তাদের পাশাপাশি চেয়ারে হাসিমুখ দেখে অনেকের মন্তব্য ছিলো আনন্দ আলো পক্ষেই এটা সম্ভব।
Speakerএই রকম ধন্যবাদ পেয়েছি দেশের অনেক গুণীজনদের থেকেই। মিডিয়া কিংবা মিডিয়ার বাইরের অনেক সফল মানুষের থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন কিংবা আন্তর্জাতিক ধারা ভাষ্যকার আতাহার আলী খানও আনন্দ আলো পরিবারের সদস্য। এই ম্যাগাজিনটিকে তারা নিজেদের পত্রিকা মনে করেন। বহুবার নানা ভাবে তারা এবং তাদের পরিবারের কথা এসেছে আনন্দ আলোর বিভিন্ন বিভাগে। আনন্দ আলোর বিশেষ সংখ্যাও তারা সস্ত্রীক মডেল হয়েছেন। আরেক সাবেক অধিনায়ক এবং দেশ সেরা উইকেট কিপার খালেদ মাসুদ পাইলট প্রচ্ছদেও এসেছেন আনন্দ আলোর। তাদের মতে, দেশের মানুষ কিংবা পাঠককে নানা তথ্য বিনোদন আকারে উপস্থাপন করে আনন্দ আলো। তাই সব সময়ই পাশে আছেন তারা।
চিত্রনায়িকা মৌসুমী, আফসানা মিমি আর চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে নিয়ে এক সংখ্যায় শীর্ষ কাহিনী ছাপা হয়। আমাদের এক সময়ের ফটোসাংবাদিক সাফায়াত খান সাফুর স্টুডিওতে শুরু হয় আড্ডা। সেই আড্ডা থেকে বেরিয়ে আসে নানা ধরনের গল্প। আফসানা মিমিকে আমি ‘মিমি আপা’ বলেই ডাকি। তিনিও ছোট ভাইকে ¯েœহের পরশ দিয়ে ‘তুই’ সংবোধন করেন। মনে হয় যেন একই পরিবারের আমরা। আনন্দ আলো যে পরিবারের কথা বলে তখন মনে হয় আমাদের চেষ্টা সার্থক।
টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র পর্দায় অনেকদিন নেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সার। নিজের ব্যবসা নিয়েই এখন তার যত ব্যস্ততা। তাই তার আশেপাশে সাংবাদিকরা নাই। ব্যবসায়িকদের আনা গোনা। পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের অনেকের সঙ্গেই তার মিটিং হয়। সম্প্রতি একজন পরিচিত বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা জানালেন। একটি মিটিংয়ের মধ্যে প্রসঙ্গক্রমে শমী কায়সার জানালেন, আনন্দ আলোতে কথা বলতে কিংবা সাক্ষাৎকার দিতে এখনও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি ভালো আছি কিনা। অনেকদিন দেখা নেই শমী আপার সঙ্গে। তাতে কি! প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ফোন করলেই রিসিভ করেন তিনি। তখন মনে হয় বিনোদন সাংবাদিকতার কিছু সুখ স্মৃতি অবশ্যই আছে যা আমাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে। তেমন অনেক খÐ খÐ মধুর স্মৃতি আছে চিত্রনায়ক সোহেল রানা, নায়িকা ববিতা, রোজিনা এই সময়ের তারিন জয়া আহসান প্রমুখ এর সহিত কাজ করে। আনন্দ আলোর জন্য সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বলিউড সুপার সুশ্মিতা সেন এবং মিঠুন চক্রবর্তীর। ম্যাগাজিন দেখে তারা দয়শী প্রশংসা করেছিলেন। আন্তর্জাতিক জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ তো ভীষণ মুগ্ধ পাঠক আনন্দ আলোর। তার জীবনের অনেক অভিজ্ঞতার কথা নিজেই লিখেছেন আনন্দ আলোয়। তারকার সত্যিজীবনে তিনি বলেছেন একান্তই ব্যক্তিগত জীবনের গল্প।
নানা ধরনের গল্পই বিনোদন আকারে লেখনির মাধ্যমে হাজির করেছি পাঠকের সামনে। তেমনি এক ভিন্ন স্বাদের গল্প ছিল দেশের প্রথম এবং একমাত্র প্যারাটুপার দম্পতি মেজর মঞ্জুরুল এবং মেজর নুসরাতের। তাদের ক্যারিয়ারে নানা ধরনের সাহসী গল্প প্রেম, পরিচয়, পরিণয় আর বর্তমানকে নিয়ে দীর্ঘ ফিচার লেখেছিলাম আনন্দ আলোতে। যেহেতু তারা দু’জনেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা তাই তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগের অনুমতি দরকার হয়েছিল। মনে আছে সাক্ষাৎকার ছাপা হওয়ার পর আমার ডাক পড়ে ছিল আর্মি সদর দপ্তর থেকে। তৎকালীন সেনা প্রধান খুশি হয়েছিলেন লেখা পড়ে। আমার জন্য উপহারও সেনা সগর থেকে।
তেমনি এক আনন্দময় স্মৃতি বর্তমান জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড: শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গেও আছে। আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান মনে করলেন দেশের প্রথম নারী স্পীকার যার ব্যক্তিগত ইমেজ সর্বজন গ্রহণযোগ্য। সুতরাং তার কথা পাঠককে জানানো প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকে দায়িত্ব অর্পিত হলো আমার উপর। রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকার নেয়া ঝক্কি ঝামেলাও কম নয়। সব ঝক্কি ঝামেলা আর নানা ধরনের নিয়ম মেনে বিরক্ত মনে ঢুকেছিলাম স্পীকারের রুমে। কিন্তু পরিচয়ের শুরুতেই তার হাসিমাখা মুখ আর আন্তরিক ব্যবহার আমার পেছনের সকল কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। সংসদ ভবনের নিজ কার্যালয়ে বসে যখন তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম ঠিক তখন রুমে ঢুকেন ডেপুটি স্পীকার ডা: ফজলে রাব্বী। আন্তরিক পরিবেশে গল্প হলো। ছবি তুললাম। আমাদের কাছে মন খুলে কথা বললেন, ড: শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছোট বেলা থেকে বেড়ে ওঠা জীবনের কথা, লেখাপড়ার জন্য দেশ-বিদেশে যাওয়া শিক্ষা জীবনে কখনো দ্বিতীয় হননি তিনি। দাম্পত্য জীবন এবং রাজনীতি সব কিছুরই কিছু অজানা গল্প ছিল। সেই সব কথা আনন্দ আলোর মাধ্যমে জানলো পাঠক কিংবা দেশবাসী। এই সব সত্যি জীবনের গল্পের সঙ্গে আমাদের প্রয়োজন সত্যি জীবনের ছবিও। তাই তিনি ছবি তুলতে আমাদের সময় দিয়েছেন একাধিকবার। এক বৈশাখের সকালে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম তার ব্যক্তিগত এবং সরকারি বাসভবনে। একজন পরিপূর্ণ বাঙ্গালী নারীর মতই বৈশাখী ফ্লেবারের সুতী শাড়ি পরে আমাদের জন্য অনেশ্বন করেছিলেন তিনি। খুব আপন মানুষের মত দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলাম তার পরিবারের সঙ্গে। ছবি তোলা আর গল্পের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল বড় বোন আর ছোট ভাইয়ের বৈশাখী আড্ডা চলছে। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেলে একটু শক্ত হয়ে যাই। ভেতর থেকে যেন কেউ একজন অভয় দিয়ে বলে উঠলো, আরে ভাই, উনি জাতীয় সংসদের স্পীকার হয়েছেন তো কি! তিনি তো কারো মেয়ে। কারো স্ত্রী কিংবা কারো বোনও বটে।
লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, আনন্দ আলো