Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ভালোবাসার চেয়ে বড় বিনোদন আর হয় না-হৃদয় খান

গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর অনেক সঙ্গীত শিল্পীকে অভিনয়ে আগ্রহী হতে দেখার বিষয়টি বেশ পুরনো। অনেকে শখে অভিনয় শুরু করলেও কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করে সফলতাও অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা আগুন, পার্থ বড় য়া, জন কবির সহ অনেকে। তবে গত কয়েক বছরে শিল্পীদের মধ্যে ব্যাপক সফলতা ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সঙ্গীত তারকা তাহসান। তার ধারাবাহিকতায় এবার যোগ হয়েছেন আরেক মিউজিক সেনসেশন হৃদয় খান। গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক ভাবে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন এ তারকা। এবার রোজার ঈদে প্রথমবারের মতো নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এরই মধ্যে তার বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। এক সন্ধ্যায় আনন্দ আলোকে বলেছেন তার বর্তমান ব্যসৱতা ও সঙ্গীত জীবন নিয়ে নানা কথা। লিখেছেন মোহাম্মদ তারেক।

আনন্দ আলো: গেল ঈদে মোহাম্মদ মোসৱফা কামাল রাজের পরিচালনায় ‘রূপকথা’ নাটকের মাধ্যমে প্রথবারের মতো অভিনেতা হিসেবে ছোটপর্দায় হাজির হলেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই?

হৃদয় খান: নতুন এক পরিচয়ে দর্শক-শ্রোতার সামনে আসতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি গানের মানুষ। শখের বসে নাটকে অভিনয় করেছি। আমার অভিনয় দেখে সবাই প্রশংসা করেছে। সবার দোয়া পাচ্ছি এতে খুবই ভালো লাগছে। এ ছাড়া এস এ হক অলিকের পরিচালনায় ফিরে যাওয়া হলো না নামের টেলিছবিতে আমি অভিনয় করেছি চিত্র নায়িকা পূর্ণিমার সঙ্গে। মোটকথা অভিনয়টা খুব উপভোগ করেছি।

আনন্দ আলো: আপনি গানের জগতের মানুষ। কিন্তু হঠাৎ করে অভিনয়ে এলেন কেন?

হৃদয় খান: অভিনয় নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আমার আগেও ছিল না এখনো নেই। নাটকে কাজ করার প্রসৱাব অনেক দিন ধরে পেয়ে আসছি। তবে রাজ ভাই যখন ‘রূপকথা’ নাটকের গল্পটি শোনালেন তখন গল্পটি আমার এতো ভালো লেগে যায় যে তাকে না করতে পারিনি। এভাবেই আসলে আমার অভিনয় জগতে আসা। এ ছাড়াও তানভীর খানের একটি নাটকে অভিনয় করেছি।

আনন্দ আলো: নাটকে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়?

হৃদয় খান: মিউজিক ভিডিও করার সময় কাছ থেকে নাটকের কাজ গুলো দেখেছি। আমি নিজেও মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছি। তবে নাটকের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওর পার্থক্য আছে। নাটকে সংলাপের সঙ্গে অভিনয় করতে হয়। মিউজিক ভিডিওতে গানের সঙ্গে ঠোট মেলাতে হয়। সব কিছু সহজ হয়েছে পরিচালকদের সহযোগিতার কারনেই।

আনন্দ আলো: ভবিষ্যতে নাটকে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে?

হৃদয় খান: সংস্কৃতির যে কোনো শাখায় কাজ করতে আমি আগ্রহী। যেহেতু আমার পরিচিতি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে, তাই সবার আগে গানকে প্রাধান্য দিতে চাই। বর্তমানে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয়ের প্রসৱাব রয়েছে আমার কাছে। ব্যাটে বলে মিলে গেলে সে গুলোতেও অভিনয় করবো।

আনন্দ আলো: সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে আপনার নতুন মিউজিক ভিডিও। সাড়া পাচ্ছেন কেমন?

হৃদয় খান: কবির বকুল ভাইয়ের লেখা ‘বাংলাদেশ তোমারই জন্য’ ও ‘তুমি আমার’ গান দুটির মিউজিক ভিডিও এরই মধ্যে টিভি চ্যানেলে ও শ্রোতা মহলে দারুন সাড়া ফেলেছে। ‘ফিরে তো পাব না তোমাকে কভু আর হবে না তুমি তো আমার’ শিরোনামের এ গানের মিউজিক ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশ করেছি। গানটির বেশ সাড়া পাচ্ছি। গানে আমার সঙ্গে মডেল হয়েছেন শ্রীলঙ্কান মডেল আয়েশ উইজার্নি। ভিডিওটির শুটিং হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গানের কথা লিখেছেন গুঞ্জন রহমান। আর সঙ্গীতায়োজন করেছেন শ্রীলঙ্কার সঙ্গীত পরিচালক রাজ থিলাইয়ামপালাম। এ মিউজিক ভিডিওটি একেবারে নতুন ও ভিন্ন রূপে করা হয়েছে। সবাই নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন এখানে। ভিডিওটি প্রকাশের পরপরই সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি।

আনন্দ আলো: নিজের সুর-সঙ্গীতের বাইরে তেমন একটা গান গাইতে পছন্দ করেন না তাই তো?

হৃদয় খান: সচরাচর আমি অন্যের সুরে গাইনা। এবারই ব্যতিক্রম হলো। এর আগে ব্ল্যাক ছবির জন্য অন্য সুরকারের গান করেছি।

আনন্দ আলো: বর্তমানে আপনার ব্যসৱতা কী নিয়ে?

Hridoy-Khan-1হৃদয় খান: বর্তমানে গান নিয়েই বেশি ব্যসৱ আছি। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে পারফর্ম করছি। জিঙ্গেলের কাজ করছি নিয়মিত। পাশাপাশি কিছু ছবির গানও করছি। স্টুডিওতে তো প্রতিনিয়তই নতুন গানের কাজ হচ্ছে। এছাড়া দেশে-বিদেশে স্টেজ শো করছি।

আনন্দ আলো: আপনার নতুন একক অ্যালবামের কী খবর?

হৃদয় খান: আমার নতুন একক অ্যালবামের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছি। কারণ আমার একক অ্যালবামের প্রতি শ্রোতাদের আগ্রহ অনেক। তাই সময় নিয়ে ভিন্নধর্মী কিছু গান করতে চাই। সেটা হবে আমার নিজস্ব স্টাইলে।

আনন্দ আলো: আপনার হৃদয় মিক্স-৪ অ্যালবামের কী খবর?

হৃদয় খান: হৃদয় মিক্স-৪ অ্যালবামের কাজ শুরু করবো খুব তাড়াতাড়ি। আগের অ্যালবাম গুলোর সাড়া অনেক ভালো ছিল। অবশ্য চার নম্বর অ্যালবামটি করতে একটু দেরি হয়ে গেল। এবারও সারা দেশ থেকে বাছাই করে মেধাবী কিছু শিল্পী নির্বাচন করবো অ্যালবামটির জন্য। অ্যালবামের জন্য এখন ট্র্যাক তৈরি করছি। আশা করছি অ্যালবামটি কোরবানি ঈদে প্রকাশ করবো। তার পরই আমার নতুন একক অ্যালবামের কাজ শুরু করবো।

আনন্দ আলো: এক সময় গান ছিল শুধু শোনার বিষয়। এখন দেখার বিষয়ও। এ ব্যাপারে আপনার মনৱব্য কি?

হৃদয় খান: কথাটার সঙ্গে আমি একমত। অতীতে তো দেখার মাধ্যম বেশী ছিল না। শুধু ছিল শোনার মাধ্যম। রেডিওর গান শুনেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। তারপর দেখার মাধ্যম এলো টেলিভিশন। যিনি গান গাইছেন তাকেও দেখার প্রয়োজন হলো। এখন মানুষ শুধু গান শুনে তৃপ্তি পায় না, যিনি গান গাইছেন তাকেও দেখতে চায়। কাজেই দেখার ব্যাপারটা কম গুরুত্ব নয়।

আনন্দ আলো: চলচ্চিত্রের গানের কী খবর?

হৃদয় খান: চলচ্চিত্রের গান করছি নিয়মিত। তবে বেছে বেছে কাজ করার চেষ্টা করছি। ‘সুইট হার্ট’ চলচ্চিত্রে করা গানটি মানুষ বেশ পছন্দ করেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েখটি চলচ্চিত্রের গান করেছি। নতুন আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রের কাজের কথা চলেছে। সে গুলোর কাজও শুরু  করবো।

আনন্দ আলো: অডিও আর চলচ্চিত্রের মধ্যে কোন মাধ্যমে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

হৃদয় খান: দুটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা দুই ধরনের। অডিওতে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যায়। আর ছবিতে গল্প ও পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নজর দিতে হয়। তবুও নিজের জায়গা থেকে নতুন কিছু করার চেষ্টা থাকে।

আনন্দ আলো: নিজেই সুর দেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেন এবং কণ্ঠও দেন। এক সঙ্গে সব কিছু করতে সমস্যা হয় না?

Hridoy-Khanহৃদয় খান: আমি মনে করি যিনি কণ্ঠ দেন, তিনি সুর করলেই সুরটা ভালো হয়। সঙ্গীত পরিচালনায়ও অ্যাডভান্টেজ পাওয়া যায়। নিজে সব কিছু করলে ইচ্ছামতো ভাঙ্গা যায়, গড়া যায়।

আনন্দ আলো: মিউজিকের প্রতি আকষর্ণ হলেন কীভাবে?

হৃদয় খান: মিউজিকের প্রতি আকষর্ণ সম্ভবত উত্তরাধিকার সূত্রেই। আমার দাদা ওসৱাদ মইনুল ইসলাম খান ক্ল্যাসিক গানের চর্চা করতেন। বাবা রিপন খানের কথা আপনারা সবাই জানেন। গান অনেকটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ। মিউজিক প্র্যাকটিসের জন্য যা যা দরকার, একদম ছোটবেলা থেকেই সে সব আমি হাতের কাছে পেয়ে আসছি। আমার দাদার আছে ক্ল্যাসিক গানের বিশাল সংগ্রহ আর বাবার সংগ্রহে আছে মডার্ন মিউজিকের বিশাল ভান্ডার। বোঝার বয়স থেকেই আমি ছিলাম সব ধরনের গানের শ্রোতা। পড়াশোনা আর গান এই নিয়েই আমার বড় হয়ে উঠা।

আনন্দ আলো: গানের বাইরে আরজে হিসেবেও কাজ করেছেন, কেমন লেগেছে?

হৃদয় খান: ব্যাপারটা দারুন, আগে রেডিওতে শো করেছি। এখন আমি নিজে আরজে। এবিসি রেডিওতে প্রাণলেয়ার দ্য ‘এইচ কে শো’ নামের অনুষ্ঠান করছি। অনেক ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো গানের শিল্পীর হঠাৎ করে আরজে হওয়া অনেক কঠিন। বিষয়টি বেশ উপভোগ করছি। তবে এটা করছি একানৱই শখের বসে।

আনন্দ আলো: আরজে হিসেবে শ্রোতাদের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?

হৃদয় খান: যখন কনসার্টে গান করি তখন শ্রোতারা আমার সামনে থাকলে সবার সঙ্গে আলাদা করে কথা হয় না। এ অনুষ্ঠানে শ্রোতারা মুঠোফোনের মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলেন, আমার গানের ব্যাপারে শ্রোতাদের অনুভূতি সহজেই জানার সুযোগ পাচ্ছি। তাদের পছন্দ বুঝতে পারছি। সেভাবে ভবিষৎতের জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারছি।

আনন্দ আলো: এই সময়ে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে?

হৃদয় খান: আমার তো মনে হয় ভালোর দিকে যাচ্ছে। এখন তো গান ডিজিটালি প্রকাশ পাচ্ছে। মাধ্যম পরিবর্তন হয়েছে গান প্রকাশের। সিডি খুব একটা চলছেনা। শ্রোতারা এখন নানা প্রযুক্তির মাধ্যমে গান শুনছেন ও দেখছেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে শিল্পীরা আয় করতে পারছেন। এটা অনেক ইতিবাচক একটি দিক। আমার মনে হয় সামনে ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা আরো ভালোর দিকেই যাবে।

আনন্দ আলো: আপনি গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন আপনার বিনোদন কী?

হৃদয় খান: বিনোদন আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমি বিনোদিত হই যখন মানুষ আমাকে ভালোবাসে, আমার গান শোনে। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় বিনোদন আমার কাছে অন্য কিছুতে নেই।