Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

ব্রণ মুক্ত সুস্থ ত্বক

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় ব্রণ। আমাদের ত্বকের তৈল গ্রন্থি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এর আকৃতি বৃদ্ধি পায় তখন এর ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে, যা ধীরে ধীরে ব্রণের আকার ধারণ করে। সাধারণত টিনেজার মেয়েরা ব্রণের সমস্যায় বেশি পড়লেও অনেক সময় পরিণত বয়সের মানুষদেরও ব্রণের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। তাই ত্বককে সবসময় রাখতে হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। চারদিকে ধূলাবাালির উপদ্রব বেশি হওয়ায় ত্বকের মধ্যে খুব সহজেই সংক্রমনের সৃষ্টি করে। এতে করেও ত্বকে ব্রণ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর এজন্যই ত্বককে সবসময় এমনভাবে পরিস্কার রাখতে হবে যেনো কোনো অবস্থাতেই জীবাণু সংক্রমন না হয়।
আজকাল বাজারে বেশকিছু ভালো মানের ফেস ওয়াশ পাওয়া যায় যা ব্রন শুধু দূরই করে না এর ফিরে আসা থেকেও রক্ষা করে। এসব ফেসওয়াস ব্যবহারের ফলে ত্বক পরিস্কার করার পাশাপাশি জীবাণুমুক্তও থাকবে।
ব্রণের প্রাকৃতিক সমাধান
রূপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানের উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রাকৃতিক উপাদানের কোন ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় পৃথিবীজুড়ে নারীদের কাছে তা অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রাকৃতিক রূপচর্চার কিছু নিয়ম কানুন আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। যা অনুসরণ করলে আপনার ত্বক সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে পারবেন।

মুলতানি মাটি ও নিম প্যাক: গোলাপ পানি এবং লেবু পানি মুলতানি মাটিতে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে নিম গুড়া যোগ করুন। নিম পাতা এন্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বকের বø্যাকহেডস দূর করার জন্যও নিম পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ব্রণের চিকিৎসায় এই নিম পাতা বেশ উপকারি। এই প্যাকটি মুখে দেয়ার পর ১০/১৫ মিনিট রাখুন। তারপর নিম ও মুলতানি মাটি যুক্ত ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। কারো ত্বক জ্বালাপোড়া করলে নিম ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এই প্যাকটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে তৈলাক্ত ত্বকের উপকার করে। এটি ত্বককে স্পষ্ট এবং নিখুঁত করে তোলে। ব্রণ চিকিৎসার জন্য নিম পাতার ভূমিকা বেশ প্রাচীনতম। এটি সব ধরনের সংক্রমণ থেকে ত্বককে মুক্ত করতে সক্ষম।
নিম এবং হলুদের ফেস প্যাক: নিম পাতা আর হলুদের গুড়া মিক্সড করে পেস্ট বানাতে পারেন। সেই পেস্টটি মুখের মধ্যে লাগান। ১০/১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন। ঠান্ডা পানি দিয়ে অবশ্যই মুখ ধুতে হবে। নিম পেস্টের পরিবর্তে কেউ চাইলে নিম পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন। এই নিম পাউডার কয়েকদিন সূর্যের আলোতে রেখে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করলে আশা করা যায় ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
নিম স্ক্রাব: নিম পাতার পেস্টের সঙ্গে কয়েকটি তুলসি পাতার মিশ্রন করতে হবে। দুটো মিলিয়ে একটি পেস্ট বানাতে হবে। এরপর সেখানে কিছু মধুর ফোঁটা দিতে হবে। এতে কয়েক ফোঁটা মুলতানি মাটি যোগ করলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে। পুরো পেস্টটি মুখের মধ্যে ঘষা শুরু করতে হবে। প্রায় ২০ মিনিট মুখে ঘষার পর ঠাÐা পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে ত্বকের মৃত কোষগুলো সরে যায় এবং ত্বক বেশ ঔজ্জল দেখায়।
মধু ও দারুচিনি ফেসমাস্ক
যা যা লাগবে: দারুচিনি পাউডার, মধু
রেসিপি: ১ চা চামচ দারুচিনি পাউডার একটি বাটিতে নিন, ২ চা চামচ মধু যোগ করুন এবং এবার এই দুই উপাদান একটি চা চামচ দিয়ে ভালোভাবে নাড়–ন। মিশ্রণ ঘন করতে প্রয়োজনে আরও একটু মধু যোগ করতে পারেন। মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশে গেলে আপনার হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে মুখের ত্বকে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে আপনার ত্বক হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন আর মুখে যেকোন টোনার লাগিয়ে নিন। আর যদি টোনার না থাকে সেক্ষেত্রে একটু লেবুর রস, একটু অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আর দুই ভাগ ডিস্টিল ওয়াটার মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ফেলুন।
উপকারিতা: এই মাস্ক আপনার ত্বকের ব্রণ সারতে সাহায্য করবে। সাথে আপনার ত্বকে ব্রণের রেখে যাওয়া দাগ ও অমসৃণ ত্বক মসৃণ করে তুলবে। আপনি চাইলে এটি রেগুলার ফলো করতে পারেন।
হলুদ, দুধ
ও মধু ফেস মাস্ক
হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-সেপটিক ও অ্যান্টি- ইনফ্ল্যামেটরিপ্রোপারটিস যা স্কিন প্রবলেমস, বিশেষ করে ব্রণ দূর করতে বেশ ভালো কাজ করে। তবে, ফেস প্যাক বানানোর জন্যে রান্না ঘরে গিয়ে হলুদের কৌটা থেকে হলুদ গুঁড়ো নিয়ে আবার ব্যবহার করতে যাবেন না যেন। সবসময় হলুদ কেনার পর স্কিন কেয়ারের জন্যে ছোট একটি আলাদা কৌটায় হলুদ গুঁড়ো রাখবেন। মধুকে ন্যাচারাল বিøচিং এজেন্ট বলা হয় এবং এটি স্কিনের পিগমেন্টেশনস লাইট করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আমাদের স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে।
যা যা লাগবে: হলুদ পাউডার, মধু, কাঁচা দুধ
রেসিপি: প্রথমে বাটিতে ১ চা চামচ হলুদের পাউডার নিন। ১ চা চামচ মধু নিন আর শেষে ২ চা চামচ কাঁচা দুধ ঢেলে দিন। সব উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে একটা পাতলা পেস্ট বানান। এবার এই পেস্ট একটি মেকআপ ব্রাশের সাহায্যে আপনার মুখে ও গলায় লাগান। ব্রাশ ব্যবহার না করলে আপনার হাত ও হাতের নখে হলুদের দাগ লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই পেস্ট আপনার ত্বকে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং শুকিয়ে গেলে একটি কটন বল দুধে ভিজিয়ে মুখ থেকে পেস্ট মুছে নিন। পরে পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এই মাস্ক সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন লাগাতে পারেন।
উপকারিতা: হলুদ, মধু ও দুধের সমন্বয় আপনার ত্বকের ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করে, ব্রণের দাগ লাইট করেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তাড়াহুড়ো করবেন না, একটু সময় নিন। এটি কোন ম্যাজিক নয় যে, মুহূর্তেই আপনার ত্বকের ব্রণ আর ব্রণের দাগ ভ্যানিশ করে দেবে। একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন ঘরোয়া ফেস মাস্ক ধীরে ধীরে কাজ করলেও আপনার স্কিনের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ব্রণ প্রতিরোধক সেল গঠন করবে।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল স্কিনকে হাইড্রেট, ময়েশ্চারাইজ করে স্কিনকে একটা সুদিং ফিল দেয়। এছাড়াও এটি ব্রণ দূর করতে বেশ কাজে দেয়। একটি ক্লিন বাটি নিয়ে এরমধ্যে এক চা চামচ মধু, এক চিমটির একটু বেশী হলুদগুঁড়ো, এক চা চামচ এলোভেরা জেল নিয়ে ভালোভাবে সবকিছু মিশিয়ে নিন। মুখ ধুয়ে, স্কিন টাওয়েলের সাহায্যে প্যাটড্রাই কর নিয়ে একটি ব্রাশ/আঙ্গুলের সাহায্যে প্যাকটি পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। ১৫মিনিট অপেক্ষা করে নিয়ে মুখ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন এবং এই প্যাকটি অবশ্যই রাতের বেলা ব্যবহার করবেন।
কিছু টিপস
স প্রতিদিন ৯-১০ গøাস পানি পান করুন।
স প্রতিদিন রাতের খাবারের পর যেকোনও ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে। যতটা সম্ভব তেলযুক্ত বা ফাষ্ট ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
স সব সময় বাইরে থেকে আসামাত্র মুখ ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া হালকা গরম পানির স্টীম নিতে পারেন। এতে করে ত্বকে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
স আমাদের মধ্যে অনেকেরই নখ দিয়ে ব্রণ খোটার বাজে অভ্যাস রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে এটা কোন সমাধান না। উল্টো এতে ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এর ফলে ব্রণ লাল হয়ে যাবে। এমনকি তা ফেটে গিয়ে মুখে দাগের সৃষ্টি করবে। ব্রণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুখে মেকআপ ব্যবহার না করাই উচিত। দিনে অন্তত দুই বার তেল মুক্ত ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।