Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বিয়ে বদলে যাওয়া সময়

আনন্দ আলো প্রতিবেদন: কনে পক্ষের বাবা জানতে চাইলেন- বিয়েতে আপনারা আসলে কি কি করেন? বাবার প্রশ্ন শুনে এম সলিউশনের তরুণ এক্সিকিউটিভ রাফাত বিনীত ভঙ্গিতে পাল্টা প্রশ্ন করলো- বিয়েতে আপনারা আমাদের কাছ থেকে কি কি করিয়ে নিতে চান সেটা আগে বলুন, তারপর আমরা আমাদের সামর্থ্যটা জানাব।

রাফাতের প্রশ্ন শুনে বাবা আবারও একই প্রশ্ন করলেন- আমি আগে বুঝতে চাইছি আপনারা আসলে কি কি করতে পারবেন… বিয়ের ক্ষেত্রে তো অনেক ঝামেলা, অনেক অনুষ্ঠান, অনেক আনুষ্ঠানিকতা। এর মধ্যে আপনারা আসলে কি কি করবেন, অর্থাৎ করতে পারবেন?

রাফাতের মনে হলো- এবার বোধকরি ঝেড়ে কাশা দরকার। ব্যাপারটা বুঝিয়ে না বললে কাজের কাজ কিছুই হবে না। অযথাই দু’বার কাশলো সে। এটা নিজেকে প্রস্তুত করার একটা পদ্ধতি।

রাফাতকে কাশতে দেখে কনে পক্ষের বাবা জানতে চাইলেন- আপনার কী শরীর খারাপ?

রাফাত মৃদু হেসে বলল- না, না… আমি ঠিক আছি…

তবে যে কাশছেন? চা খাবেন? আদা চা। বলেই রাফাতের সম্মতির অপেক্ষা না করে ভেতর বাড়ির দিকে

হাঁক দিলেন- অ্যাই… কে আছিস? আমাদের জন্য চা পাঠা। আদা চা। সঙ্গে একটু মসলাও দিস।

আদা চা প্রায়ই খায় রাফাত। কিন্তু মসলা চা সেটা আবার কেমন? ভাবতে গিয়ে তার মনে হলো অযথা মসলা চা নিয়ে মেতে থাকা ঠিক হবে না। যে কাজে এসেছে সেটার দিকে এগুতে হবে। অফিস থেকে জোর তাগাদা এসেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য এই ক্লায়েন্টকে রাজি করাতেই হবে। গ্রামীণ এলাকায় অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ের বিয়ে। শহুরে কায়দায় অনুষ্ঠানগুলো করানো গেলে ভবিষ্যতে ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়বে।

চা এসে গেছে। আদা চা। কনে পক্ষের বাবা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন- খোকন অ্যাই খোকন… এটা কেমন চা? মসলা চা দিতে বলেছিলাম… খোকন, অ্যাই খোকন…

খোকন নামের এক তরুণ ভেতর বাড়ি থেকে দৌড়ে এসে কাচু মাচু হয়ে বলল- চাচাজান মসলা চা বানাতে একটু দেরি হবে। চাচি আম্মা বললেন- এখন আদা চা-ই খান। পরে মসলা চা পাঠাবে। বাবা আবার রেগে যাচ্ছিলেন। রাফাত তাকে শান্ত করার ভঙ্গিতে বলল- মসলা চা- দরকার নাই। আদা চা-ই ভালো। আমরা বরং কাজের কথায়  আসি।  আপনি জানতে চেয়েছেন বিয়েতে আমরা আসলে কি কি করতে পারি? আপনি চাইলে আমরা আসলে বিয়ের সব কিছুই করে দিতে পারব। এই যেমন ধরেন… আপনি তো কনে পক্ষ?

বাবা বললেন- হ্যাঁ আমরা কনে পক্ষ। আমার মেয়ের বিয়ে। ভালো ছাত্রী। এবার অনার্স পাস করেছে। রাফাত বাবার কথা কেড়ে নিয়ে বলল- পাত্রতো রেডি?

হ্যাঁ। পাত্র ডাক্তার। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পোস্টিং… ছেলে ভালো… অমায়িক, ভদ্র। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সনৱান। বোনের সংখ্যা অনেক, সাতজন। সাত বোনের এক ভাই…

আবারও বাবার কথা কেড়ে নিল রাফাত। বলল- বর কনে রেডি। তার মানে এখন দরকার গায়ে হলুদ, বিয়ের অনুষ্ঠান, খাওয়া দাওয়া, বিয়ের কার্ড ছাপানো। অতিথির তালিকা করা। তাদের কাছে বিয়ের কার্ড পাঠানো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা…

রাফাতকে থামিয়ে দিয়ে বাবা প্রশ্ন করলেন- অ্যাই মিয়া থামো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা বলতেছ কেন? আমরা কি পহেলা বৈশাখ পালন করবো নাকি বিজয় দিবস? এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা উঠতেছে কেন?

marrage-cartoon-1রাফাতের যেন মনে হলো-এবার আলোচনাটা আসল জায়গায় এসেছে। এখন দরকার মটিভেশন। বিয়েতে কেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দরকার তা বোঝাতে পারলেই কাজের কাজ হয়ে যাবে। কনে পক্ষের বাবার মুখের দিকে তাকালো সে। বিনীত হয়ে বলল- স্যার আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে বিষয়টা আরেকবার বুঝিয়ে বলতে চাই।

বাবা বললেন- বল।

রাফাত এবার সত্যি সত্যি কাশলো। তারপর বলল- স্যার একটা বিয়েতে যা যা দরকার আমরা আপনাকে সব কিছুই করে দিতে পারব। যেমন ধরেন কার্ড ছাপানো এবং তা বিলি করা। নো প্রোবেলেম। আমাদেরকে শুধু অতিথিদের নাম ঠিকানা দিবেন। একদিনের মধ্যে বিয়ের কার্ড পৌঁছে যাবে। এবার আসি স্যার বিয়ের ক্ষেত্রে তো কেনাকাটার ব্যাপার থাকে। আপনাদের কি কি দরকার, অর্থাৎ শাড়ি কেমন চাই। গহনা কেমন হবে, গায়ে হলুদের শাড়ি, পাঞ্জাবি কেমন হবে শুধু আপনারা স্যাম্পল দিবেন, আমরা তা বানিয়ে দিব। এবার আসি স্যার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে। কতজন অতিথি খাবেন। খাবারের তালিকায় কি কি থাকবে, আমাদেরকে একটা লিস্ট দিবেন আমরা সবকিছু রেডি করে দিব। আরও আছে স্যার। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় গান বাজনা থাকলে ভালো হয়। এটা স্যার ইদানিংকার রেওয়াজ। বিশেষ করে গায়ে হলুদ ও পানচিনি অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাস্ট। আপনারা চাইলে আমরা সেটাও করে দিতে পারব। এজন্য বাড়তি খরচ হবে। স্টেজ কেমন হবে আপনারা তার ডিজাইন দিলেই আমরা তা করে দিব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আপনি যদি চান তাহলে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদেরকেও আনা যেতে পারে। ইদানিং বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিয়ের অনুষ্ঠানও সরাসরি সম্প্রচার করে। আপনি চাইলে তারও ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

রাফাতের কথা শুনে যার পর নাই অবাক হচ্ছিলেন বাবা। রাফাতকে থামিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। রাফাত বিনীত ভঙ্গিতে বলল- স্যার ঘটনা  আরও আছে। বিয়ের পর বর-কনের হানিমুন বলে একটা ব্যাপার আছে। আমরা সে ব্যবস্থাও করে দিতে পারি। আপনি শুধু বলবেন ওরা কি দেশের ভেতরে কক্সবাজার নাকি কুয়াকাটায় যাবে? নাকি দেশের বাইরে  যাবে? এরেজমেন্ট সব আমাদের। আপনি শুধু স্যার অর্ডার দিবেন। চোখের পলকে সবকিছুই হাতের কাছে পেয়ে যাবেন।

বলেই বাবার মুখের দিকে তাকাল রাফাত- স্যার আমি কি আপনাকে সবকিছু বুঝাতে পারলাম। বিয়ের এ টু জেড আমরা করে দিব। এজন্য বাজেট অনুযায়ী আপনি শুধু বাজেটটা ঠিক করে দিবেন। এনি মোর কোশ্চেন স্যার?

মসলা চা এসে গেছে। রাফাতের  দিকে মসলা চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বাবা প্রশ্ন করলেন- তার মানে ঘটনা দাঁড়াল বিয়ের কার্ড বিলি থেকে শুরু করে কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া সবকিছুর দায়িত্ব নিবে তোমরা। আমরা শুধু টাকা দিব। আমাদের আর কোনো দায় দায়িত্ব নাই এইতো…

রাফাত বিনীত হয়ে বলল- জ্বি স্যার। আপনি শুধু টাকা খরচ করবেন। তারপর দায়-দায়িত্ব আমাদের। আপনি স্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছুই বললেন না? ওটা কি স্যার বাদ?

বাবা বললেন- হ্যাঁ ওটা বাদ। আমাদের পারিবারিক কিছু ঐতিহ্য আছে। বিয়েতে বাড়ির মেয়েরা গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওটা সে ভাবেই থাকুক। আপনারা অন্যান্য বিষয়ের একটা বাজেট দেন। তারপর আমি হ্যাঁ না ফাইনাল জানাব। বলেই আলোচনা শেষ করতে চাচ্ছিলেন বাবা। রাফাত বিনীত ভঙ্গিতে বলল- স্যার আমার একটা আইডিয়া আছে, বলব?

হ্যাঁ বল।

আপনি স্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটাও রাখেন। ঐ যে স্যার গীতের ব্যাপারটা বললেন সেটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাঝে যুক্ত করা সম্ভব। এজন্য স্যার বেশি টাকা খরচ হবে না। আমরা রিজেনেবল একটা বাজেটে কাজটা করে দিব। গায়ে হলুদের দিন প্যান্ডেলের ভেতর মঞ্চ থাকবে। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেখানে গীতের পাশাপাশি এলাকার শিল্পীরা গান, নাচ করবেন। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে জাতীয় পর্যায়ের দুই একজন শিল্পীকেও আনা সম্ভব। ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন স্যার। আপনার এলাকায় এর আগে এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় নাই। আপনি শুরু করেন। এলাকায় আপনার নাম ছড়িয়ে পড়বে…

রাফাতের কথা শুনে বাবা কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন- তোমরা আগামীকাল পুরো বাজেটা নিয়ে আমার কাছে আসো। আমি আজকের দিনটা ভেবে দেখি।

marrage-rannaএর পরের ঘটনা। এলাকার সাজসাজ রব পড়ে গেল। বিয়ের অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হবে এটা এলাকার মানুষের কাছে নতুন খবর। সমস্যা দেখা দিল বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে। কার্ড ছাড়াতো যাওয়া যাবে না। বিয়ের কার্ড পাওয়ার জন্য দেন দরবার শুরু হয়ে গেল। নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠান স্থলে ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।

এটা হলো- মফস্বলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বদলে যাওয়ার চিত্র। শহরের মতো মফস্বলেও ইদানিং বিয়ের অনুষ্ঠানে করপোরেট কালচার ভর করেছে। প্যান্ডেলের নীচে খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রচলন এখন সর্বত্র। আর শহুরে বিয়ের ব্যাপারটাতো একে বারেই অন্যরকম। জৌলুসে ভরা। গানে-নাচে ভরপুর…

একসময় বিয়ে হতো ঘটকের মাধ্যমে। সে কারণে ‘ঘটকালী’ নামে একটা পেশারও সূত্রপাত হয়। ছায়াছবিতে এমন ঘটকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেশের অনেক জনপ্রিয় তারকা। ‘পাখি ভাই’ নামে এক ঘটক তো এক পর্যায়ে তারকার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ফেসবুক, ইন্টারনেটের আধুনিক এই সময়ে ঘটকের ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট।

বিয়ের এই মওসুমে অনেক পরিবারেই দেখা দিয়েছে সীমাহীন ব্যস্ততা। অনেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা কীভাবে সারবেন এজন্য দুশ্চিনৱায় ভোগেন। তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজই হলো চাহিদা অনুযায়ী বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা। এজন্য ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন সহজেই। খুঁজে নিন আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠান। তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিন। দেখবেন সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এজন্য অবশ্য আপনার আধুনিক মানসিকতাও জরুরি।