Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে আমাদের মনোসংযোগে বিচ্যুতি ঘটেছে! -সাকিব আল হাসান

মামুনুর রহমান
সাকিব আল হাসান অনেকটা ক্ষুব্দ ভঙ্গিতেই বললেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলে আমাদের এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টটা রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখিনা আমি। সারা বিশ্ব যেখানে ফুটবল নিয়ে মাতোয়ারা সেখানে ক্রিকেট নিয়ে মনোসংযোগ করি কিভাবে আপনিই বলেন?
আনন্দ আলো: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণেই ক্রিকেটে আপনাদের মনোসংযোগ নষ্ট হয়েছে?
সাকিব আল হাসান: অবশ্যই। এটাই যৌক্তিক কারণ। সারা বিশ্ব যেখানে ফুটবল উৎসবে মেতে উঠেছে সেখানে আপনি ক্রিকেটের আয়োজন করলে তো হবে না। আপনিই বলেন, এই যে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগায় ক্রিকেট খেলতে এসেছি, দেশের প্রচার মাধ্যম কি সেইভাবে আমাদেরকে তুলে ধরেছে? না ধরে নাই। দেশের প্রায় সব দৈনিক পত্রিকাও ক্রিকেটের ব্যাপারে সর্বদাই সোচ্চার থাকে। অথচ সব পত্রিকাই আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ব্যাপারে কেমন যেন উদাসীন। নিয়ম অনুযায়ী প্রায় প্রতিটি দৈনিকের প্রতিনিধি আমাদের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসার কথা। অথচ তারা কোনো প্রতিনিধি পাঠায় নাই। দেশের একটি বড় পত্রিকা ভিতরের পাতায় আমাদের নিউজ করেছে। নিউজের হেডিংটা দেখেনÑ বিশ্বকাপের বাইরে… অ্যান্টিগায় আজ শুরু প্রথম টেস্ট… আপনিই বলেন এই ধরনের রিপোর্টিং এর কোনো মানে হয়? বিশ্বকাপের বাইরে কথাটা লিখেই তো আপনি আমাদেরকে এক ধরনের গুরুত্বহীন করে তুললেন। যত কথাই বলেন ভাই… যে কোনো কাজে উৎসাহ লাগে। উৎসাহ ছাড়া কিছু হয় না। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে আসার আগে দেশে কারও পক্ষ থেকে কোনো উৎসাহ পাই নাই। পাব কি করে? সবাই তো ভাই বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়াই ব্যস্ত। ক্রিকেট নিয়ে ভাববার সময় কোথায়?
আনন্দ আলো: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলে পড়ে আপনারা ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন নাই…
সাকিব আল হাসান: এটাই প্রধান কারণ নয়। তবে এটা একটা কারণ হতে পারে।
আনন্দ আলো: তাহলে প্রধান কারণ কি? টেস্ট ম্যাচে ১৮.৪ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট হলো। রান মাত্র ৪৩… এর ব্যাখ্যা কি আপনার কাছে?
সাকিবল আল হাসান: (একটু ভেবে নিয়ে) আমার কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নাই। আমার তো ভাই টাসকি খাওয়ার মতো অবস্থা। ১৮ রানে ৫ আর ৩৫ রানের মধ্যেই বাংলাদেশের ৯ উইকেট হাওয়া। একজন একজন করে মাঠে যায় আর ফিরে আসে। পরে আমি অবশ্য এর কারণ খুঁজে পেয়েছি। একই সময়ে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ছিল বলে খেলার মাঠে আমাদের ক্রিকেটারদের মনোসংযোগ নষ্ট হয়েছে। একটা সত্য কথা তো ভাই অস্বীকার করার উপায় নাই। ক্রিকেট খেলি ঠিক আছে। কিন্তু আমাদেরও তো সাধ আহলাদ আছে। পছন্দ অপছন্দ আছে! আমাদের অনেকেরই প্রিয় খেলা ফুটবল। আমার তো ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার কথা ছিল ফুটবল দিয়েই। অবশ্য আল্লায় বাঁচাইছে… ফুটবলের জগতে থাকলে কিছুই করতে পারতাম না। বাংলাদেশের ফুটবলের যা অবস্থা… তাতে তো ভাই কেউ আমারে চিনতোও না। আল্লা যা করে ভালোর জন্যই করে…
আনন্দ আলো: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আপনারা ক্রিকেটে তেমন মনোসংযোগ রক্ষা করতে পারছেন না?
সাকিব আল হাসান: আপনাকে তো আগেই বললাম এটাই প্রধান কারণ নয়। তবে এই প্রসঙ্গটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আনন্দ আলো: ঠিক আছে আমরা ধরেই নিলাম বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে ক্রিকেট খেলায় কিছুটা হলেও আপনাদের মনোসংযোগ নষ্ট হয়েছে। তাই বলে প্রথম সেশনে মাত্র ৪৩ রানে বাংলাদেশের মতো একটি ক্রিকেট দলের সকলে অল আউট হয়ে যাবে?
সাকিব আল হাসান: (একটু যেনো ক্ষুব্দ ভঙ্গিতে) শোনেন, ক্রিকেট আসলে অনিশ্চয়তার খেলা। যে কোনো দিন যে কোনো দলের বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রথম সেশনে এতো কম রানে অল আউট হওয়ার রেকর্ড শুধু বাংলাদেশ করে নাই। আরও অনেক দেশ করেছে। কাজেই এটাকে আমি খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না…
আনন্দ আলো: কিন্তু পরের সেশনেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একই ‘খেল’ দেখিয়েছে… আগের সেশনের মতো মাঠে খেলতে নেমেই ফিরে এসেছে। একজন যায় তো অন্যজন ফিরে আসে… এখানেও কি বিশ্বকাপ ফুটবল দায়ী?
সাকিব আল হাসান: আপনি তো ভাই একটু তেরা ভাবে প্রশ্ন করতেছেন? বিশ্বকাপ ফুটবল দায়ী হতে যাবে কেন? আমি আপনাকে যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা বোধকরি আপনি বুঝতে পারেননি। শোনেন আপনাকে একটা সহজ কথা বলি। এখন বিশ্বকাপ ফুটবল ছাড়া আর কোনো বিষয়ের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ আছে?
আনন্দ আলো: না, নেই…
সাকিব আল হাসান: ঘরে ঘরে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল আনন্দের ঢেউ…?
আনন্দ আলো: অনেকটা তাই…
bangladesh-shakib-al-hasan-c-celebrateসাকিব আল হাসান: তার মানে সারা বিশ্ব এখন ফুটবল আনন্দে বিভোর ঠিক কিনা?
আনন্দ আলো: হ্যা, ঠিক…
সাকিব আল হাসান: এমন সময় আপনি যদি ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি করেন তা কি ভালো দেখাবে?
আনন্দ আলো: কিন্তু ভাই ফুটবলের মতো ক্রিকেটও তো একটা খেলা। এই সময়ে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজে নয় অন্য দেশেও ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। কাজেই আপনার উদাহরণটা ‘নাচতে না জানলে, উঠান বাঁকা’র মতো হয়ে যাচ্ছে না?
সাকিব আল হাসান: (ক্ষুব্দ ভঙ্গিতে) ভাই আপনার সাথে আমি আর কথা বলব না। আপনি এখন যান। যান প্লিজ…
আনন্দ আলো: ভাই আপনি যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করবেন। বাংলাদেশে ক্রিকেটই একমাত্র খেলা যার জন্য গোটা দেশের মানুষ একমঞ্চে দাঁড়ায়। সে কারণে ক্রিকেটের জয় পরাজয় দেশের মানুষের মাঝে অনেক প্রভাব ফেলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশ দলের শোচনীয় পরাজয়ে দেশের মানুষ অনেক কষ্ট পেয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তো ভাই এত দূর্বল দল নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে আসার আগে ক্রিকেট ওয়েব সাইটে ক্রিকইনফোকে আপনি বলেছিলেন ‘এবারের চ্যালেঞ্জটা আগের বারের চেয়ে সহজ বলে মনে হয় আমার। কারণ আমাদের দলটা এখন অনেক ভালো করছে’। এই কি ভালোর দলের নমুনা?
সাকিব আল হাসান: এই প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ২০০৯ সালের একটা সিরিজ বাদ দিলে ক্যারিবিয় দীপপুঞ্জ বাংলাদেশকে কোনো সুখস্মৃতি উপহার দেয়নি। অধিনায়ক হিসেবে এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা আমার কাছে অন্য এক আবেগের। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকেই। দ্বিতীয় মেয়াদেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকেই আমার দায়িত্ব শুরু হলো। দূর্ভাগ্য বলতে হবে। আমরা প্রথম টেস্টে ভালো করতে পারিনি। আশাকরি দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াবে?
আনন্দ আলো: তখন তো বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা চলবে। খেলোয়াড়দের মনোসংযোগ নষ্ট হবে না?
সাকিব আল হাসান: অতীত থেকেই তো মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। আশাকরি এবারে আর কোনো ভুল হবে না।
আনন্দ আলো: এবার একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই।
সাকিবল আল হাসান: আপত্তিকর প্রশ্ন করবেন না…
আনন্দ আলো: ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম টেস্টের পরাজয়ের প্রেক্ষিতে আপনাকে ঘিরে অনেক সমালোচনা হচ্ছে…?
সাকিব আল হাসান: (থামিয়ে দিয়ে) আমাদের ভাগ্যটাই এমন। জয় পেলে মানুষ মাথায় রাখে। পরাজয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়… কাজেই এসব নিয়ে ভাবিনা…
আনন্দ আলো: অভিযোগ উঠেছে আপনি ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন বলে ক্রিকেটের প্রতি আপনার আর কোনো টান নাই…
সাকিব আল হাসান: (থামিয়ে দিয়ে) যারা এই ধরনের কথা বলে তারা হয় মুর্খ্য না হয় আমাদের ক্রিকেটের শত্রæ। আপনি আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেন তো… আমি কি একবারও বলেছি যে জাতীয় রাজনীতিতে নামব? অথচ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমার তো সেই অধিকার আছে নাকি? যারা বলেন ক্রিকেটের প্রতি আমার কোনো টান নাই তাদের উদ্দেশে শুধু একটা কথাই বলব, অতীতকে ভুলে যাবেন না, প্লিজ…
হঠাৎ গোল… গোল… শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তার মানে স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নে দেখা সাকিব আল হাসানের সাথে সাক্ষাৎকার গ্রহণের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভাসছে। সাকিব আল হাসানের শেষ বাক্যটি বার-বার মনে পড়ছে। অতীতকে ভুলে যাবেন না প্লিজ… তো অতীতকে কারও ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়। অতীত ভুলে গেলে তো পজিটিভ অর্জনের কিছুই থাকে না…
ব্রাজিল গোল খেয়েছে। তার মানে বিশ্বকাপ ফুটবলের গুরুত্ব কমে গেল নাকি? ব্রাজিল নেই আর্জেন্টিনাও নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এবার মনযোগ থাকুক প্রিয় দলের প্রতি। গুডলাক বাংলাদেশ…