Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

প্রাক কথন

ফজলুল হক ছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমা-পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও প্রকাশক। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরুর আগেই সিনে সাংবাদিকতা বা চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ ছিল। এখনকার চলচ্চিত্র শিল্প বা অসংখ্য পত্র-পত্রিকার যুগে সেই সময়ের এই উদ্যোগ সম্পর্কে কল্পনা করাও কষ্টকর। ফজলুল হক সেই অসাধ্য কাজটি করেছিলেন। সেই দিন থেকে ফজলুল হককে এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার জনক বলা যায়।
১৯৫০ সালে বগুড়া থেকে সিনেমা পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশনা ঢাকায় স্থানান্তর হয়। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ২, এসি রায় রোড ঢাকা থেকে। পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৯ সালে। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় পত্রিকা সিনেমা।
ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন যা পাকিস্তান আমলে পুরস্কৃতও হয়েছিল। অনেকে হয়তো জানেন না, ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভ‚মিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর।
‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয় তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরো একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক সময় তিনি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যান।
এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তাঁর অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ প্রতি বছর একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সেরা চলচ্চিত্রের পরিচালককে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০০৪ থেকে প্রবর্তিত এই পুরস্কার ইতিমধ্যে পেয়েছেন ফজল শাহাবুদ্দীন, আহমদ জামান চৌধুরী, চাষী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূন আহমেদ, সাইদুল আনাম টুটুল, রফিকুজ্জামান, সুভাষ দত্ত, হীরেন দে, আবদুর রহমান, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, সৈয়দ শামসুল হক, আমজাদ হোসেন, চিন্ময় মুৎসুদ্দী, মোরশেদুল ইসলাম, ই আর খান, অনুপম হায়াৎ, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গোলাম সারওয়ার, নায়করাজ রাজ্জাক, রেজানুর রহমান, সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী, আরেফিন বাদল, মাসুদ পারভেজ, শহীদুল হক খান, আজিজুর রহমান, মোস্তফা জব্বার, আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভুঁইয়া। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শফিউজ্জামান খান লোদী।

ফারুকী ও লোদী পেলেন ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার

সম্পর্কিত

অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা বেলা ১২টায়। কিন্তু তার আগেই আমন্ত্রিত অতিথিদের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতিতে ওয়েস্টিনের বিরাট হল ঘরটি উৎসব মুখর হয়ে উঠল। টেবিলে টেবিলে শুরু হয়ে গেল আনন্দময় আড্ডা। অনেকদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে বিস্ময়ভরা কণ্ঠে আন্তরিক আহবানÑ আরে আপনি? কতদিন পর দেখা! কেমন আছেন? আবার হয়তো ‘তুই’ সম্মোধনের প্রিয় বন্ধুটির সাথে অনেক দিন পর দেখা হতেই পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময়ের পর্ব চলতে থাকলো। আবার হয়তো কেউ কেউ পাশাপাশি বসে দেশের সাংস্কৃতিক জগত বিশেষ করে চলচ্চিত্রের হালচাল নিয়ে মতবিনিময় শুরু করে দিলেন। কত কথা কত স্মৃতি। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের এটাই বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারের পনের তম আয়োজনটি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও আন্তরিক আরও বর্নাঢ্য আরও ঐতিহ্যমন্ডিত। পনের তম আয়োজন অর্থাৎ ২০১৮ সালের জন্য ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় গুনী চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শফিউজ্জামান খান লোদী। মঞ্চে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য আকবর উদ্দিন খান পাঠান ওরফে নায়ক ফারুক ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী সুজাতা। শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, চিত্র নায়ক রিয়াজ, ওমর সানী, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সানাউল আরেফিন, নরী উদ্যোক্তা কনা রেজা, বিশিষ্ট অভিনেতা মামুনুর রশীদ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, রন্ধনবিদ কেকা ফেরদৌসী, জনপ্রিয় উপস্থাপক ফরহাদুর রেজা প্রবাল, বিশিষ্ট অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর সহ ফজলুল হক পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদুল আলম সাচ্চুর পরিচালনায় ফজলুল হককে নিয়ে নির্মিত প্রামান্যচিত্র ‘দ্য ফ্রন্টিয়ার ম্যান’ প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন অপু মাহফুজ।
ছবি : শাহিনুর আহম্মেদ
আমি অভিভ‚ত!
শফিউজ্জামান খান লোদী
বহু বছর ধরেই চলচ্চিত্রের সথে আছি। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার আমার সাংবাদিকতা জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুব গর্ব বোধ করছি। যারা আমাকে এই পুরস্কারটি দিলেন তাদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা। সবার কাছে দোয়া চাই যেন আগামীতেও দেশের চলচ্চিত্রের বিকাশে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারি।
অনেক
কৃতজ্ঞতা!
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
কয়েকদিন আগে দৈনিক কালের কণ্ঠ এর জন্মদিন উপলক্ষে ‘ধন্যবাদ স্যার’ শীর্ষক একটি সম্মাননা পাই। তখন ভেবেছিলাম আমার কি অনেক বয়স হয়ে গেছে? বন্ধুরা এবার নিশ্চয়ই ক্ষেপাবে-কিরে তুই তো বুড়ো হয়ে গেছিস। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পাওয়ার ঘোষনায় তেমনটাই মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি এই পুরস্কার পেয়ে খুব খুশি। কারণ এই পুরস্কারটি একজন দেশ সেরা চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের নামে প্রবর্তণ করা হয়েছে। যার পথ ধরে আমরা চলচ্চিত্রের অঙ্গিনায় সাহস নিয়ে সামনের দিকে হাঁটছি। আমাকে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলা চলচ্চিত্রের জয় হোক।