Ananda ALo
Ultimate magazine theme for WordPress.

প্রযুক্তি নির্ভর সেবা দেওয়াই এখন জরুরি

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, চেয়ারম্যান, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ, এবিবি

আনন্দ আলো: আমরা মিডিল ইনকাম কান্ট্রি হতে যাচ্ছি। আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর হাতছানি দিচ্ছে আমাদের। ২০২১ সালকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরও কীভাবে কাজ করছে?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান:  আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি ৭১ এ। ৪৭ বছর শেষে ৪৮ এ পদার্পণ করেছে দেশ। হ্যানরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট। সেই অবস্থা থেকে আমরা কোথায় চলে এসেছি? ক্রেডিট টু জিডিপি হ্যাভ হ্যাজ গন ফিফটি ওয়ান পারসেন্ট। ১৫ পারসেন্ট ছিল একসময়। এখন দেখেন পনের পারসেন্ট থেকে। প্রতিটি প্যারামিটারে আমাদের ইমপ্রæভ ঈর্ষণীয়। সারা দুনিয়ার কাছে ঈর্ষণীয়। মানুষ চিন্তা করতে পারে নাই বাংলাদেশ এতটুকু একটা দেশ ১৭ কোটি মানুষ, এক লক্ষ ৪২ হাজার স্কয়ার কিলোমিটার এতটুকু একটা দেশ। এই দেশে এত মানুষ এটি ম্যানেজ করা কিন্তু বিরাট দিক। সরকার এবং সবাই মিলে ম্যানেজ করে আজকে আমরা ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি গ্রোথ অর্জন করেছি এবং এই বছর আমরা ৭ দশমিক চার এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি একটি বিরাট অর্জন এবং এর পরে দেখেন বাংলাদেশ বর্তমানে সেকেন্ড লার্জেস্ট গার্মেন্টস এক্সপোর্ট কান্ট্রি। মাছের প্রোডাকশনে আমরা থার্ড কিংবা ফোর্থ? তুলা ইম্পোর্ট এ আমরা লার্জেস্ট। এই সব কিন্তু আমাদের অর্জনের কথাই বলে এবং সেই অর্জন আমরা আশা করছি এই মাসেই ডিক্লিয়ারেশন আসবে যে, আমরা মধ্যম সারির দেশে চলে যাচ্ছি। আশা করছি এই স্বাধীনতার মাসেই এই ঘোষণা শুনবো। কিন্তু এই যে এতগুলো অর্জন হয়েছে- এই অর্জনের পেছনে ব্যাংকিং সেক্টর অবশ্যই ছিল। এন্টারপ্রেনাররা এগিয়ে এসেছেন বলেই ব্যাংক রিস্ক নিতে পেরেছে। একটা ইকনোমি কিন্তু হাটে আর বসে থাকে ব্যাংক। ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি থেকে সবসময় চেষ্টা করা হয় যাতে দ্রæত সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা করে থাকি। যেমন ধরেন- একটা কমার্শিয়াল ব্যাংকের লং টাইম লেন্ডিং এর কোনো সুযোগ নাই। আমরা শর্ট টার্ম ফান্ড নিয়ে কিন্তু লং টার্ম লোন দেই। বড় রকমের রিস্ক আমরা আমাদের ব্যালেন্স শীটে রান করেছি। ইন্টারেস্ট রেট ফিক্সড কিংবা লিকুইডিটি বলেন রান করিয়েই কিন্তু আমরা এগিয়ে এসেছি।

আনন্দ আলো: গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাংকের বিনিয়োগ তো খুবই ইফেক্টিভ?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ৮০ এর দশক থেকে গার্মেন্টস-এর শুরু আর আজকে আমরা কোথায় চলে এসেছি?  সেকেন্ড লার্জেস্ট এক্সপোর্টারার আমরা।

আনন্দ আলো: ঝুঁকির জায়গা থেকে বলি সাম্প্রতিক কালে খেলাপি ঋণের যে ভয়ঙ্কর একটা অবন্থা এই ব্যাপারে অনেকেই ভীত হন যে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্যে এটি একটা থ্রেট।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আপনি যদি প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংক দেখেন- আমাদের খেলাপি ঋণ কিন্তু ৫ শতাংশ এর মতো। এখন মুশকিল হয়ে গেছে আমাদের সরকারি ব্যাংক এবং লিগ্যাসি ইস্যুজ নিয়ে কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিন্তু ২৬-২৭ শতাংশ। এর পেছনে কি শুধু ব্যাংকারই দায়ী? এর পেছনে অন্য বড় ইস্যু আছে। আমাদের প্রয়োজন হয় জুডিশিয়াল সিস্টেম। এই সিস্টেম আমাদের সার্পোটিভ হতে হবে। কারণ সার্পোটিভ না হলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- আমাদের যে ডিফলডাররা আছেন তাদেরকে কিন্তু নেগোসিশেন-এর টেবিলে নিয়ে আসতে হবে। এই টেবিলে তাদেরকে তখনই আনতে পারবো যখন আপনার জুডিশিয়াল সিস্টেম সাপোর্ট করবে। এখন দেখা যায় একটা কেস করলে ওনটি ডিসপোজ করতে ১০ বছর লেগে যায়।

আনন্দ আলো: এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: সরকার আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করে কীভাবে এটা আমরা বিজনেস এনভায়রনমেন্টের জন্যে উপযোগী করতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে? হাইকোর্ট এ অর্থ ঋণ-এর কোনো বেঞ্চ নাই? অনেক সময় অর্থ ঋণ আদালতে লোক থাকে না। সরকারের দোষ দেয়া যায়। এত হাজার হাজার মামলা। সেখানে লোকের ক্যাপাসিটি কম। তাই সমস্যা হয়।

আনন্দ আলো: ২০০৮ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে বর্তমান বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে। সেই প্রযুক্তির ব্যবহারে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং এবং ই-কমার্স-এর জায়গাগুলো ডেভলপড করেছে। আবার কিছু কিছু নতুন সমস্যাও দেখা দিয়েছে এই বিষয়ে সার্বিক মূল্যায়ন জানতে চাই?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: তারণ্য আমাদের শক্তি। আমাদের মিডিয়াম হলো ২৫ কিংবা ২৬।  একটা প্রচলিত শব্দ হয়ে গেছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট। এই তরুণ গ্রæপ এদের কাছ থেকে আমাদের নিতে হবে। দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাইলে এই তরুণরাই আমাদের এগিয়ে নিতে পারবে। সবাই মিলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল আউটফিট ব্যাংকার পুরো দেশ মিলেই এই সব তরণদের কাজ দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে গড়ে তুলতে হবে। তরুণরা যদি বসে থাকে তাহলে কিন্তু হবে না। এই সময়টা যদি আমরা হারিয়ে ফেলি তাহলে দেশ পিছিয়ে যাবে।

আনন্দ আলো: এই ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক মিলে তরুণদের জন্যে বিশেষ কি করছেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: আমরা যেটা করছি। তরুণ যারা স্টার্ট আপ তাদেরকে এন্টারপ্রেনার হিসেবে বিল্ড আপের চেষ্টা করছি। তরুণরা স্টার্ট আপ নিয়ে আসলে আমরা তার মূল্যায়ন করি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা কোলাটেরল নেই না। একটা সময় ছিল এসএমই ফাইন্যান্সিং এ ৮ লক্ষ কোটি টাকা যদি লোন বুক বা ব্যাংকিং অ্যাসেট ধরি তাহলে তার মধ্যে ২৫ পারসেন্ট কিন্তু এসএমইতে।

আনন্দ আলো: এসএমইতে কি তরুণদের জন্যে বিশেষ কিছু করছেন?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান:  এসএমই এর সুবিধা ভোগী মোস্টলি কিন্তু তরুণরাই। এখানে তরুণ মহিলার সংখ্যা অনেক। মহিলারা আমাদের ডেমোগ্রাফির ৫০ পারসেন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকও মহিলাদের অনেক সহায়তা দিচ্ছে। আমরা কিন্তু এখানে চেষ্টা করছি। আমরা অনেক করতে পারছি না কিন্তু করছি। কারণ ব্যাংক যে টাকা নিয়ে ডিল করে তা নিজের পকেটের টাকা না। আই হ্যাভ টু ডল উইথ পাবলিক মানি। আমাকে চিন্তা করতে হবে- এমন জায়গায় আমি টাকাটা দেব সেখান থেকে যাতে টাকাটা ফেরত আসে। একসময় বাংলাদেশের মানুষকে ব্যাংকিং করতে হলে ব্যাংকের ব্যাঞ্চে যেতে হতো, একটা টোকেন নিতে হতো। টাকা জমা দিতে বা চেক জমা দিতে বা তুলতে। সেই জায়গা থেকে আমরা বর্তমানে অনেক দূরে চলে এসেছি। আপনি ট্রানজেশনে এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন। বাসায় বসে ব্যাংকিং করতে পারেন। এটিএম আছে। এখন আর ব্যাংকিং সময়ের মধ্যেই কাজটা করতে হচ্ছে না। একটা ফান্ড ট্রান্সফার করতে চাচ্ছেন? রাতের বেলা বসে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ফোনেই কাজ করতে পারছেন। শুধু ইন্টারনেট কানেকশন প্রয়োজন। ইন্টার ব্যাংকিং ই আপনি বাড়িতে বসে করতে পারছেন। ঢাকা ব্যাংক থেকে ডাচবাংলা ব্যাংকে পেমেন্ট দিতে পারছেন। এই সব হচ্ছে। তারপরে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এসেছে। মোবাইলে ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এমএফএস কিন্তু বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা যেখানে ইনক্লুসিভ ২ কোটি জনগোষ্ঠি ছিল ব্যাংকের মধ্যে এখন কিন্তু এই সংখ্যা ৬-৭ কোটি হয়ে গেছে। এই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দিয়ে। বিকাশ বা রকেট-এর মাধ্যম দিয়ে। আগে যেটা কুরিয়ার সার্ভিস করতো এখন পেমেন্ট কিন্তু মোবাইলের মাধ্যমে হচ্ছে। যাদের প্রপার অ্যাপ্রæভ ছিল না কিন্তু এখন প্রপার ফরমাল  এসেছে। আজকে আপনার বাবাকে টাকা পাঠাতে পারছেন, বাড়িতে বসেই বাবা টাকা পাচ্ছেন। আরও আসছে সামনে। সমস্যাও আছে। সাইবার ক্রামই বাড়ছে। সাইবার সিকিউরিটি আছে। এই সব ক্ষেত্রে শুধু ব্যাংকেরই একার দায়িত্ব না। সবারই দায়িত্ব আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড শেয়ারিং হয়। যেমন পিয়নকে এটিএম কার্ড দিয়ে অফিসাররা বলতেন টাকা তুলে নিয়ে আসো। পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলাম। এখন ও যদি কোন ফ্রড করে আপনি যদি আপনার স্টেটমেন্ট ফলো না করেন? কোন সময় দেখবেন আপনার হিসাব মিলছে না। তখন ব্যাংকের উপরে দোষ চাপিয়ে দিতে পারেন না।

আনন্দ আলো: ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর আপনি চেয়ারম্যান- এই সংগঠনের কাজ কি?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: প্রথমত এই সংগঠনে আসতে হলে কোন ব্যাংকের সিইও হতে হবে। এটি বিজিএমইএ এর মতো সংগঠন না। আমরা একটি ব্যাংকিং এসোসিয়েশন এটি অ্যাডভোকেসি গ্রæপ এর মতো। এই মুহূর্তে ধরেন বাজারে লিকুইডিটি স্ট্রেচড আছে তাহলে কি করা যায়? আমরা ব্যাংকের সিইওরা বসে আলাপ করি এই এই প্রেক্ষিতে এটা এটা করা যেতে পারে। তারপরে সেইগুলো নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে যাই সরকারের কাছে যাই। কনসার্ন ডিপার্টমেন্টগুলোতে কথা বলি। এই সব কাজ আমরা করি। এই ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে যারা আছেন, সবাইকে নিয়ে সবার স্বার্থ রক্ষা করে কি করা যায় তাই আমরা করে থাকি।

আনন্দ আলো: সেকেন্ড জেনারেশন-এর ব্যাংক হিসেবে ঢাকা ব্যাংকের বিশেষত্ব কি?

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান:  আমরা প্রথমবারের মতো নিয়ে আসলাম ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের জন্যে টিউশন ফি পেমেন্টে। এটি  এমনভাবে হবে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীর বাবা বা মা টিউশন ফি জমা দেবেন। সাথে সাথে একটা এসএমএস চলে যাবে। ছাত্র এবং পেরেন্ট উভয়েই এই এসএমএস পাবেন এবং একটা ওয়েব সাইট করে দিয়েছি আমরা সেখানে বাবাকে একটা এবং ছেলেকে একটা আইডি দেয়া আছে তারা দেখতে পাবেন। ওই আইডি খুললে তারা জানতে পারবেন তার কয়টা পেমেন্ট ডিউ আছে। আমরা ট্রেড ক্লাউড এনেছি- ট্রেডকে ফ্যাসিলিটেড করার জন্যে। বøক চিন যে টেকনোলজির কথা বলা হচ্ছে। এটি ওয়েব বেজড সলিউশন। আপনি আপনার অফিসে বসে আপনার এলসি এর সমস্ত ডকুমেন্ট ওই সিস্টেমের মাধ্যমে আবার ব্যাকে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা সমস্যা আছে যে ডকুমেন্ট রাখতে হয়। আমরা ফিজিক্যাল ডকুমেন্ট নেব। কিন্তু ওই খানে বসেই কিন্তু এলসিটা চলে যাবে। আবার যে মুহূর্তে এলসিটা সাপ্লাইয়ার এর কাছে যাবে সাথে সাথে একটা কপি কাস্টমারের কাছে চলে আসবে। এটি আমরা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেছি। আশা করছি আগামী ২/১ মাসের মধ্যে সমস্ত গ্রাহকদের জন্যে আমরা এটি দিয়ে দেব। কারণ ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে গ্রাহককে যাতে ব্যাংকে আসতে না হয়। তাই আমরা প্রযুক্তি নির্ভর সেবা গড়ে তুলছি।